গন্ধর্ব
অনিন্দ্য পাল
ঘরটাতে ঢুকে কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেল লোকটা। এর আগে কখনো কোনো দেহ ব্যবসা করা মানুষের ঘর এত সাজানো গোছানো দেখেনি। ঘরময় একটা মাধুর্য্য আর প্রেম ধূপের ধোঁয়ায় ভেসে আছে। আর সেটাই তার পছন্দ হচ্ছে না। সে প্রেম চায় না, শরীর চায়। লতানো আদর তার সহ্য হয় না, তার দরকার প্রচন্ড কঠিন আর রক্তক্ষয়ী একটা সহবাস। তাতে যদি সে আহত হয় সেও ভালো। সমস্ত দিন ধরে প্রেম আর উপচে পড়া ভালোবাসা তাকে পাগল করে দিয়েছে।
একটা সস্তার প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে যাবে, ঠিক তখনি শুনল,
-- না, না ওই চেয়ারে বসবেন না, এদিকে আসুন।
আরেকটা ধাক্কা খেল আধ-বয়সি লোকটা। এত দিনের অভিজ্ঞতায় এই প্রথম কেউ 'আপনি' বলে ডাকল। 'তুমি' আর 'তুই' থেকে এই অদ্ভুত উত্তরণ ঠিক কেমন লাগা উচিত সেটা সে নিজেই বুঝতে পারছিল না। একবার ভাবলো, আমাকে কি খুব সম্মান করছে? পরক্ষণেই তার মনে হল, না! আমি কি এখানে সম্মান নিতে এসেছি? এবার তার ধৈর্য্য হঠাৎ করে বাস্প হয়ে গেল। চিৎকার করে কিছু বলতে গেল, কিন্তু ঘড়ঘড় আওয়াজ ছাড়া তার শব্দযন্ত্র থেকে আর কিছু বের হল না।
ঘরের যে দরজা দিয়ে সে ঢুকেছিল, তার ঠিক উল্টোদিকে ঝোলানো গাঢ় নীল রঙের পর্দাটা এবার আস্তে আস্তে সরে গেল। ঘরের হাল্কা আলোয় ভিজে যে মানুষটা তার সামনে এসে দাঁড়াল তাকে সে জড়িয়ে ধরবে বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠল কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পরেই লোকটা মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তারপর বিড়বিড় করে কিছু বলতে বলতে মেয়েটির মুখের দিকে হাত জোড় করে তাকিয়ে থাকল।
এক মধ্য-বয়স্ক পুরুষের এরকম ব্যবহারে মেয়েটি হয়ত অবাক হত যদি ঘটনাটা পাঁচ বছর আগে ঘটত। তাই সে একটুও সময় নষ্ট না করে লোকটিকে দু-হাত ধরে তুলে নিয়ে গেল নীল কাপড়ের আড়ালে রাখা সিঙ্গল বেডটার দিকে। লোকটাকে বসালো বেডের এক কোণে। তারপর ভাবলেশহীন মুখ নিয়ে একে একে সমস্ত পোষাক খুলে উঠে গেল বিছানায়। কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বললো, এবার চলে আসুন। আমার আরও কাস্টমার আছে।
লোকটার হঠাৎ মনে হল, তার পেটের ভিতরটা একেবারে চুপসে যাচ্ছে। এটা কি খিদে? তাহলে সে এখানে এসেছে কেন? তার তো কোন রেস্তোরাঁ বা পাইস হোটেলে থাকার কথা এই সময়! লোকটা মহা ফাঁপরে পড়লো।
মেয়েটা বুঝল তাকে কী করতে হবে।
কয়েক মিনিট পর লোকটা যখন সম্পূর্ণ নগ্ন হয়েছে এবং উত্তেজনাহীন উপগত হয়ে আছে মেয়েটার ঠিক উপরে, তখনি একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। ঘরের ভিতরে জ্বলতে থাকা প্রায় অস্পষ্ট আলোতে লোকটা দেখল, মেয়েটির মাখনের মত বুকে একটি মাত্র স্তনের বৃন্ত আছে, অন্যটি যেন লজ্জায় নিজেকে লুকোতে চাইছে।
বজ্রাহতের মত উঠে পড়ল লোকটা! তার সমস্ত স্নায়ু অবশ হয়ে গেল। কঠিন হতে থাকা মাংসপেশি শিথিল হয়ে পড়তে লাগলো। ঘামে ভিজে উঠলো সমস্ত শরীর। দশ বছর আগের বস্তির জীবনটা মনে পড়ল। যখন সে রুমির ডান বৃন্তে কামড়ে রক্তাক্ত করছিল, অচেতন মেয়েটা কোন শব্দ করেছিল কিনা শুনতে পায় নি। প্রতিশোধ নিয়েছিল, এমন খুঁত করে দিলাম যে তোকে পাবে, আমার মত সেও ঠকবে। রুমি তাকে ছেড়ে এক বাবুকে বিয়ে করবে বলেছিল। সেদিন ভাবে নি যে সে ও এই ভাবে ঠকবে, নিজের কাছে, ভাগ্যের কাছে।
মেয়েটার মুখের দিকে তাকানোর সাহস নেই তার। কোন রকমে নিজেকে তার শরীর থেকে মুক্ত করে বিছানা থেকে নামতে যাবে, তখনি শুনল
-- যেও না গন্ধর্ব, আজ তোমাকে ঠকাতে না পারলে আমি শান্তি পাব না।
===================
চম্পাহাটী, দক্ষিন চব্বিশ পরগনা।
মো: 9163812352