হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
কমল দরজায় টোকা মারার শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলল। এক তরুণী দরজার ওপারে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছে। কমল তাকে চেনে। নাম তার রসবতী। তাকে দেখে কমল অবাক। বড়োলোকের বেটী এখানে কী করতে এসেছে!
তাকে দেখে কমল বলল,"ভিতরে এসো।"
রসবতী দেমাক দেখিয়ে বলল,"ভিতরে যাবার জন্য আসি নি।"
কমল বলল,"তাহলে কি করতে এসেছ?"
রসবতী বলল,"পাড়ার মেয়েরা মিলে কালি ঠাকুর তুলেছি। চাঁদা চাই।"
রসবতীর সঙ্গে আরো দুটি মেয়ে এসেছে। তাদের একজনের হাতে বিল। তাকে উদ্দ্যেশ্য করে রসবতী বলল,"বিলটা কেটে দে।"
মেয়েটি একটি বিলে লিখতে শুরু করল। কমল ভাবল, কত আর চাইবে। বড়োজোর কুড়ি টাকা। সুন্দরী মেয়ে ঘরে এসেছে চাঁদা নিতে। তাতে কুড়ি টাকা চাঁদা দেওয়াই যায়।
মেয়েটির হাত থেকে বিল নিয়ে রসবতী বিলটি কমলের হাতে দিয়ে বলল,"কাল এসে টাকা নিয়ে যাব।"
কমলের ইচ্ছা ছিল সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা দিয়ে দেবে। যখন তারা স্বেচ্ছায় পরের দিন চাঁদা নিতে ইচ্ছুক, তখন কমল খুশি। মেয়েগুলোর মুখ ঘরে বসে আগামী কালও দেখতে পাওয়া যাবে। নিদেন পক্ষে রসবতীর। কমল বিলটি হাতে নিয়ে বলল,"আবার কাল আসবে?"
রসবতী চট করে প্রশ্ন করল,"আজ চাঁদা দেবেন? তাহলে কাল এসে আর বিরক্ত করব না।"
কমল বলল,"না না কাল আসুন। আমার কোনো সমস্যা নেই।"
রসবতী সরাসরি উত্তর দিল,"আমরা এই মেয়েরা কাজ করি না। আমরা চাঁদা দেব না। চাঁদা আদায় করব।"
"তোমরা ঠাকুর তুলবে আর আমরা দেব চাঁদা?" জিজ্ঞেস করল কমল।
রসবতী বলল,"মাকে আপনারা আনতে পারলেন না। আমরা উদ্যোগ নিয়ে আনছি। আপনারা টাকাটা দিয়ে মুক্ত হতে পারছেন না?"
কমল বলল,"তা বলে এতো টাকা?"
রসবতী বলল,"বললাম, তুমি স্পেশাল ক্যান্ডিডেট।"
কমল বলল,"একটু বুঝিয়ে বল।"
রসবতী বলল,"আমি যখন কলেজে যাই, আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কেন?"
কমল বলল," তুমি সুন্দরী বলে।"
রসবতী বলল,"আমি রাস্তা দিয়ে গেলে আপনি আমার পেছন পেছন যান কেন?"
কমল উত্তর দিল," তোমাকে ভালোলাগে বলে?"
রসবতী বলল,"আপনি আমাকে রাস্তায় একা পেলে খাবার খেতে দিতে চান কেন?"
কমল বলে ফেলল,"তোমাকে ভালোবাসি বলে?"
এবার রসবতী তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,"আমিও তোমাকে ভালোবাসি। পুজোয় এসো। দুজনে একসাথে মায়ের পয়ে পুষ্পঞ্জলী দেব।"
কমল বলল,"আমার চাঁদা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা কর।"
সবাই হেসে ফেলল।
===================
হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
গ্রাম ও পো- আমতলা,
থানা-ক্যানিং,
জেলা-দক্ষিণ ২৪ পরগনা,
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ,