অণুগল্প ।। স্যর ।। সাইফুল ইসলাম
ছবিঋন- ইন্টারনেট।
স্যর
সাইফুল ইসলাম
গ্রীষ্মের এক দুপুরে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে কিছু লোকের জটলা দেখে থমকে দাঁড়ালাম।রাস্তার একপাশে একটা নতুন মোটর সাইকেল, যার এখনও নাম্বার প্লেট বসেনি,শুয়ে আছে। রাস্তার নীচে একটা পুরনো সাইকেল মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।একজন বয়স্ক লোককে ধরাধরি করে তার চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছে কিছু লোকজন।
কারো মুখ থেকে অশ্লীল শব্দ বেরিয়ে আসছে-"মার শালাকে।" কেউ কেউ মারতে উদ্যত হচ্ছে একজন বছর আঠারোর ছেলেকে। ছেলেটি ভয়ে জড়োসড়ো। মারের হাত থেকে বাঁচতে অনেক কাকুতিমিনতি করছে।
জটলা বাঁধা মানুষের মধ্যে কিছু মহিলা হাতে জল আর হাতপাখা নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন।তাদের মুখ থেকে শোনা যাচ্ছে-"আজকাল রাস্তাঘাটে চলা দায়।এমন বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছে; কখন কে কীভাবে মরবে বলা খুব মুশকিল।"
শালারা সব শ্বশুরের কাছে গাড়ি আদায় করছে,আর রাস্তাঘাটে মানুষকে প্রাণে মারছে।এর একটা ব্যবস্থা হওয়া দরকার।-পাশ থেকে কার যেন আওয়াজ শোনা গেল।
বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত।এর মধ্যে ভিড় ঠেলে গিয়ে দেখি ভদ্রলোক আমাদের সকলের পরিচিত ভক্তিভূষণ মাষ্টারমশাই।এতটাই আঘাত পেয়েছেন যে বসার ক্ষমতাটুকুও নেই। বেশ কিছু লোক মিলে ধরাধরি করে পাশের আমগাছের তলায় যখন নিয়ে এল,মাষ্টারমশায়ের কন্ঠে শুনতে পেলাম-"বোধ হয় আমার কোমরটাই ভেঙে গেছে।আপনারা দয়া করে আমার বাড়িতে খবরটা দিন আর আমাকে একটু হাসপাতালে নিয়ে চলুন।"
এই তাড়াতাড়ি একটা গাড়ি দ্যাখ তো।স্যরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।-বলে কেউ বাতাস করছে,কেউ গাড়ির খোঁজ করছে।
আজকের ঘটনার অপরাধী ছেলেটাকে ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকজন, যেন সুযোগ বুঝে পালাতে না পারে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা অটোরিকশা এসে দাঁড়াতেই মাস্টারমশাইকে ধরে অটোতে ওঠানোর সময় তিনি বললেন-যে ছেলেটা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে আপনারা কেউ মারধর করবেন না।ওদের এখন রক্তের তেজ।সেই তেজে ওরা বিশ্ব জয় করে।এ বয়স সেই বয়স,ভুল করার আগে ওরা একটুও ভাবে না।ও নিশ্চয়ই আমার কোন ছাত্র হবে। ওকে ছেড়ে দেওয়া হোক।
একজন বলে উঠলেন- কী করে জানলেন স্যর,ও আপনার ছাত্র?
আমি এত বছর শিক্ষকতা করছি।সবে মাত্র অবসর নিলাম।এখনও যে ছাত্রগুলো আমার কাছে পড়ে,দেখেছি তাদের বাবাও আমার একসময়ে ছাত্র ছিল।তাই চোখ বন্ধ করে বলতে পারি ও আমার ছাত্র।
স্যরের কথাগুলো কানে যেতেই ছেলেটি হাউমাউ করে ভক্তিবাবুর পায়ের কাছে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলল-আমি আপনার ছাত্র অমিত স্যর।আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যর।
এটা তোমার কোন দোষ নয় বাবা।এ তোমার বয়সের দোষ বলতে পারো।আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।তুমি বরং আমার সঙ্গে হাসপাতালে চল।বড় বড় দাঁত বের হওয়া রাস্তায় আছাড় খেয়েছ।নিশ্চয় কোথাও তোমার লেগেছে।
আর দেরি নয়।এবার হাসপাতালে যাওয়াই উচিত-বলে স্থানীয় দুজন যুবক পাখার বাতাস করতে করতে হাসপাতালের দিকে এগিয়ে চলল।পাশে বসে রইল অপরাধী অমিত।
---------------------------------------------------
গ্রাম-বর্দ্ধনপাড়া
ডাকঘর-পঞ্চহর
জেলা-বীরভূম
পিন-৭৩১২২১
ফোন-৯৬৪১৭৭০০১৯