Click the image to explore all Offers

ভ্রমণকাহিনি ।। ভ্রমণ একটি জ্বলন্ত কাহিনি ।। দীপক পাল


 
 

 

ভ্রমণ একটি জ্বলন্ত কাহিনি
                                                         
 

দীপক পাল 

       

      রাস্তার মোড়ে বাবলা অপেক্ষা করছিল সৌম্য ও বিশ্বরুপের জন্য ওরা ইউনিভার্সিটি থেকে ক্লাস করে ফিরবে বাসে করে প্রায় আধ ঘন্টা হয়ে গেলো দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার মোড়ে পর পর তিন চারটে বাস স্টপেজে আসলো, আবার চলে গেলো পঞ্চম বাসটা স্টপেজে থামতেই টুপ টুপ করে সৌম্য আর বিশ্বরূপ এমন ভাবে নামলো যেন বাস থেকে ওরা খসে পড়লো দুজনের পিঠেই একটা করে ব্যাগ পিঠের ব্যাগটা ঠিক ঠাক ওরা সামলে নিয়ে বাবলার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, 'কি খবর বাবলাদা? ' বাবলা বললো, ' খবর খুব ভালো রে, আমরা দুর্গা পুজোর সপ্তমীর দিন সন্ধ্যেবেলা হাওড়া স্টেশন থেকে কালকা মেলে চেপে বসবো, বুঝলি নবমীর দিন বিকেলে টয় ট্রেন থেকে সিমলা স্টেশনে নেমে গাড়ী করে ম্যালের কাছে হোটেলে ঢুকবো কালকা থেকে বাসে করে গেলে দুপুরের মধ্যেই হোটেলে পৌঁছতে পারতাম কিন্তু হোটেল ঠিক হয়ে যাওয়ার দরুন সিমলা ভ্রমণটা আরও সুন্দর করার জন্য টয় ট্রেনে করে সিমলা যাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না আমরা ফিরবো লক্ষ্মী পূজোর পরে রিটার্ন টিকিট কাটবো দিল্লি থেকে যে ট্রেনের টিকিট পাবো আমরা অগ্রার তাজমহল দেখবো চাঁদনী রাতে' সৌম্য ও বিশ্বরূপ একই সাথে চেঁচিয়ে উঠলো, ' থ্রি চিয়ার্স ফর বাবলাদা. জবাব নেই তোমার কোনও' ঠিক তারপরেই বিশ্বরূপ বলে, ' কিন্তু পূজোর সময় কলকাতার বাইরে থাকা খুব কষ্টকর' মুখ ভেংচে বাবলা বলে, ' এই তুই চুপ কর, এখন তো পঞ্চমী থেকেই দুর্গাপূজা শুরু হয়ে যায় পঞ্চমী ও ষষ্ঠীতে ঠাকুর দেখে নিবি তারপর সপ্তমীর দিন ট্যাক্সিতে হাওড়া যেতে যেতে ট্যাক্সির জানলা দিয়ে উঁকি মেরে যে কটা পারবি দেখে নিবি বুঝলি কিন্তু ট্রেনের টাইমের তিন ঘণ্টা আগে ঘর থেকে বেরোতে হবে' কথা বলতে বলতে ওরা বাড়ির দিকে পা বাড়ালো


          ঠিক সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার পরে সৌম্য ও বিশ্বরূপ পার্কের বেঞ্চে এসে বসলো বাবলা তখনো আসেনি সে আসলো একটু পরে বেশ খানিকটা গম্ভীর মনে হলো তাকে কয়েক মাস হলো বাবলা দুটো টিউশনি নিয়েছে একটা সকালে ও একটা বিকালে পরে আই টি আইতে পরীক্ষা দিয়ে ড্রফটসম্যানশিপ পড়তে থাকার জন্য সকালের টিউশনিটা ছেড়ে দিতে হয় কিন্তু তাকে গম্ভীর দেখে সৌম্য বলে, ' কি বাবলাদা চুপ চাপ কেন '? ' আরে কি বলবো, মনটা ভালো থাকায় ভাবলাম আজ বিশেষ কিছু পড়াবো না, পার্কে এসে জমিয়ে আড্ডা মারবো তো মেজাজটা গেলো বিগড়ে টুটুলকে বললাম,'পান্ডু পুত্র কতজন ও তাদের নাম কি? প্রথম উত্তরটা ঠিক দিল তারপর সমানে আঙুলের কর গুনতে লাগলো একসময় যেই ধমক দিয়েছি অমনি বলে কি জানিস ? যিশুখ্রিস্ট, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব হতবাক হয়ে যাই, রাগ করবো কি শুধু বললাম,' ভালো করে পড়, কালকে আমি কিন্তু আবার ধরবো ' বলে আমি উঠে আসলাম একথা শুনে সৌম্য আর বিশ্বরূপ  তো হেসেই গড়াগড়ি বাবলা বললো, ' তোরা হাসছিস, আমার তো রাগে পিত্তি জ্বলছে' ওরা কিছুক্ষণ পার্কে কাটিয়ে ভ্রমণ সম্বন্ধীয় কিছু কথা বার্তা সেরে বাড়ি ফিরলো

          যথারীতি সপ্তমীর দিন বিকেলে পৌনে তিন ঘণ্টা হাতে নিয়ে ওরা ট্যাক্সিতে চেপে বসলো চতুর্দিকে পূজোর ঢাকের আওয়াজ আর মাইকের সানাইয়ের সুরে মেতে উঠেছে কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের আগে থেকেই গাড়ির জ্যাম শুরু হলো চিৎপুর মোড় পেরোতেই দু ঘণ্টার ওপর লেগে গেলো হাওড়া স্টেশনে যখন পৌঁছলো তখন আর মাত্র ৩৫ মিনিট বাকি ট্রেন ছাড়ার ট্রেনে উঠে গুছিয়ে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিল বাবলা বললো, ' দেখেছিস তো কেনো তিন ঘণ্টা আগে আমি বেরোতে বলেছিলাম এই সৌম্যটা ঠিক দেরি করলো আর একটু হলেই ট্রেনটা মিস হতো আর আনন্দটা হতো বিশ্বরূপের কি আর বলবো তোদের ' ' এই চায়ে ..... এই চায়ে.... ' সৌম্য লাফ দিয়ে উঠে চাওয়ালাকে ডাক দিলো, 'এই চা ' কামরার অনেকেই চাওয়ালকে ডাকতে লাগলো ও সবাইকে হাত তুলে অপেক্ষা করতে বললো একসময় ওদের হাতে হাতেও চা পৌঁছে গেলো সৌম্য বিস্কুট বার করলো চা বিস্কুট হাতে পেয়ে বাবলার মাথাটাও ঠাণ্ডা হলো এটা সম্পূর্ন বাবলাকে ঠাণ্ডা করার সৌম্যর কৌশলচায়ে চুমুক দিয়ে বেশ আরাম করে বসে বাবলা বললো, ' বিশ্বরূপ তুই মনে কর তোর চোখের সামনে তুষারাবৃত হিমালয়ের উচু উচু শৃঙ্গ তার সঙ্গে একটা হিমেল হাওয়া বইছে আর তুই  জানলার ধারে হাতে গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছিস বসে তখন কি তোর মনে হবে যে কলকাতায় পুজো না দেখে মিস করেছিস ' বিশ্বরূপ বলে 'আগে গিয়ে দেখি তবেতো বুঝবো ' বাবলা বললো, ' এ বেটা ভাঙবে তবু মচকাবে না তোকে না নিলেই ভালো হতো মনে হয় '


          বর্ধমান স্টেশন ছাড়তেই সবাই টিফিন বক্স বার করলো লুচি আলুর দম আর মিষ্টি সহযোগে রাতের খাবার সেরে নিয়ে বিছানা করে শুয়ে পরে সবাই শুয়ে শুয়ে গল্প করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পরে ট্রেনের দুলুনিতে ঘুমটাও জমে গেলো যেনো এমনি করে রাতটা আর পারের গোটা দিন কেটে গিয়ে রাত নটায় দিল্লিতে এসে পৌঁছলো ট্রেন বাবলা সৌম্যকে মালপত্র পাহারায় রেখে বিশ্বরূপকে নিয়ে বেরোলো রাতের খাবার জোগাড় করে আনতে কামরায় কোনো লোক নেই তাই সৌম্যর একদম ভালো লাগছিল না কিছুক্ষণ পরে একজন সুবেশ সুদর্শন পাঞ্জাবী ভদ্রলোক হাতে কটা এটাচি কেস নিয়ে কামরায় উঠলো সঙ্গে মাথায় একটা বোঝা নিয়ে একটা অল্পবয়স্ক ছেলে ওনার পেছন পেছন উঠলো বোঝাটা ব্যাংকের ওপর তুলে দিতে সর্দারজি ছেলেটার সাথে হাত লাগলো কাজটা শেষ হতে সর্দারজি ওই ছেলেটাকে হতে কিছু টাকা দিয়ে বললো, ' যা তু চলা যা ঘর যাকে পাহেলে নাস্তা করনা সমঝা খানা খাকে সব ঠিক ঠাক দেখনেকে বাদ শো যাও ঠিক হ্যায় '? ছেলেটা মাথা নেড়ে নেমে গেলো সর্দারজিও দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর ফিরে এসে সৌম্যকে জিজ্ঞেস করলো,' আপ কাঁহাতক যাইয়েগা '? সৌম্য বললো, ' হম তিনো ফ্রেন্ড সিমলা তক জায়েঙ্গে'


- ঔর সব কাঁহা ?


- রাতকো লিয়ে কুছ খানা লানে গিয়ে দোনো নে


- আচ্ছা আচ্ছা, সিমলামে কৌন হোটেলমে ঠেরেঙ্গে আপলোগণে ? সৌম্য হোটেলের নাম বললো


- আপভি সিমলা যাইয়েগা ক্যা ?


-
  নেহি নেহি ম্যায় চন্ডিগড়কে রহানিয়ালা অভি হাম ঘর কুছদিনকে লিয়ে লটেঙ্গে উধার মেরেকো এক শপ হ্যায় মেরে ছোটা ভাই দেখতে হ্যায় দিল্লিমে হামারে ঔর এক শপ হ্যায় স্পাইর পার্টস কি খুদ আপনি ওহী শপ দেখ ভাল করতে


          এমন সময় বাবলা আর বিশ্বরূপ রাতের খাবার নিয়ে ফিরলো কামরায় ঢুকেই বাবলা 'কোথায় রে সৌম্য? ঠিকঠাক আছিস তো? এই দেখ তরকা রুটি এনেছি, এই খেতে হবে আজকে ' সৌম্য বললো,


-
  ভালই তো এনেছ বাবলাদা দাও দাও ক্ষিদে পেয়েছে


- দাঁড়া দাঁড়া দিচ্ছি
এই  বিশ্ব বসে পর এখানে সৌম্য, তোকে আর নামতে হবে না, তোরটা ওপরে দিচ্ছি এইনে দেখিস ভেতরে একটা গোটা পেঁয়াজ আছে বুঝলি?


          ওরা গপাগপ গিলতে লাগলো খুব যে ওদের ক্ষিদে পেয়েছে খাওয়া দেখলেই বোঝা যায় ট্রেনও ধীরে ধীরে চলতে লাগলো খাওয়া দাওয়া সেরে থিতু হয়ে বসলো সবাই ওদিকে সর্দারজি ওদের সামনে এসে নমস্কার করে পরিষ্কার বাংলায় বললো,


-
  নমস্কার আমার নাম রণজিৎ সিং আপনারাত দেখছি বাঙালি কলকাতা থেকে আসছেন কি?


- আরে, আপনিতো দেখছি ভালো বাংলা জানেন
  হ্যাঁ, আমরা কলকাতা থেকে আসছি আমরা থাকি একদম কলকাতার সেন্ট্রালে অর্থাৎ সেন্ট্রাল ক্যালকাটা


- ও সেন্টাল ক্যালকাটা
সেন্ট্রাল ক্যালকাটার আনন্দ পালিত রোডে আমার এক বিজনেস পার্টনার ছিল সুজিত কর্মকার বলে ওই কটা বছর ওর বাড়িতে খুব যাতায়াত ছিল আমার এখনো যোগাযোগ আছে ওর সাথে অবশ্য ফোনে বা টুইটারে


 এতক্ষন বাবালাদা ওদের সব কথা মন দিয়ে শুনছিল এইবার তরাক করে উঠে বললো,


- আচ্ছা সুজিত কর্মকার কি দু নম্বার পোলের ঠিক নিচে থাকেন? তার একটা ছেলে আছে ছোট?


- হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন
সুজিত কি আপনার কেউ হয়? যে কটা বছর ওর বাড়িতে যাতায়াত ছিল আমার সেই সময়তো আপনাকে ওর বাড়িতে কোনোদিন দেখিনি

- না না, সুজিতদাকে আপনি আমার অনেক আগে থেকেই জানেন সুজিতদার ছেলেকে আমি পড়াই তাও ধরুন কয়েক মাস মাত্র


          রণজিৎ সিং বাবলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

- বহুত খুশি হলাম আপনাদের সাথে আলাপ হাওয়ায় সুজিতকে আমার কথা বলবেন


- অবশ্যই, তা আর বলতে


          রণজিৎ সিংয়ের সাথে কিছুক্ষন কথা হওয়ার পর রণজিৎ বললো,


- আমি এখন একটু শুয়ে রেস্ট নিয়ে নি
চন্ডিগরে ট্রেন আসবে রাত পৌনে দুটায়


- নিশ্চয় নিশ্চয়, সমস্বরে ওরা বলে ওঠে
নামার সময় একটু বলবেন


          রাত দেড়টার সময় রণজিৎ সিংহ বাবলাকে ডেকে বললেন, 'বাবলাবাবু, সৌম্যবাবু, চণ্ডীগড় এসে গেছে প্রায় এবার আমি নামবো রিমন আমার ভিজিটিং কার্ড, এতে সব দেয়া আছে আমি বলি কি ফেরার পথে একবার চণ্ডীগড় ঘুরে যান আমার বাড়িতে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনাদের চণ্ডীগড় খুব ভালো লাগবে স্টেশনে নেমে আমাকে একটা ফোন করবেন ব্যাস আমি সব ব্যবস্থা করে দেবো আপনাদের চণ্ডীগড় ঘোড়ার এখন আসি?'


- আপনার ওখানে যাই বা না যাই আপনাকে আমরা কোনো দিন ভুলতে পারবো না
' বাবলা হাত মেলালো একটা কুলির মাথায় মালপত্র চাপিয়ে নেমে গেলো রণজিৎ সিংহ রেখে গেলো ওদের মনে একটা ছাপ


          ভোর পাঁচটায় কালকা মেল কালকা স্টেশনে এসে দাঁড়ালো ট্রেন থেকে নেমে ওরা গিয়ে দেখে টয় ট্রেনের স্টেশন ভীড়ে ভীরাককার প্রথম ট্রেনটিতে বসার কোনো জায়গা নেই বয় স্কাউটের একটা বড় দল প্রায় পুরো ট্রেন দখল করে বসে আছে শুধু নয় চিৎকার চেঁচামেচি করছে আর সমনে হুইসেল বাজিয়ে চলেছে ওরা অগত্যা দ্বিতীয় ট্রেনের একটা ছোট্ট কামরায় গিয়ে উঠলো তিন জন বসে আছে কামরায় একজন ভদ্রলোক, দুজন মহিলা; তার মধ্যে একজন বিবাহিতা, ওনার স্ত্রী নিশ্চয় এর মধ্যে আবার এক ইয়াং কাপল উঠলো নববিবাহিত বোঝা যায় হানিমুনে যাচ্ছে নিশ্চয় বাবলাদা উঠে গিয়ে দরজাটা লক করে দিলো অনেকেই ওঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারলো না কামরায় মহিলাদের দেখে ভাবছে হয়তো কামরা টা রিজার্ভ করা প্রথম ট্রেনটা আগে ছেড়ে দিয়েছে, এখন দ্বিতীয়টা ছাড়লো


          কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেনের দুরত্ব ৯৬ কি.মি পথে যেতে পরে ১০২ টা টানেল ৩৩ নাম্বার টানেলের স্টেশনের নাম বারোগ, সবচাইতে বেশি লম্বা :৩৭৫২ ফুট একসময় এটি এশিয়ার সর্বৃহৎ টানেল ছিল টানেলে প্রবেশ করার আগে পুরো ইঞ্জিন গাড়ি চেকিং হয় দুজন লোক দুদিক দিয়ে লাইনে বালী ছিটাতে ছিটাতে টানেল এর কিছুটা ভিতর পর্য্যন্ত ঢুকে দিয়ে আসে তারপর একটা লম্বা হুইসল দিয়ে ট্রেন ছাড়ে টানেলের ভিতরে টয় ট্রেনের গতি খুব বাড়িয়ে দিয়ে ওপারে গিয়ে দাঁড়ায়টানেলের ভিতর ট্রেন চলাকালীন তীব্র শব্দ হয় কালকা থেকে সিমলা মোট ১৮ টা স্টেশন তার মধ্যে সোলান স্টেশনটা ভারী সুন্দর কোনো এক সামারে ইংরেজদের কেউ এই জায়গাটা দেখে মুগ্ধ হয়ে এখানে গরমকালের আবাসস্থল বানাবার উদযোগ নেয় কালক্রমে এখানে আবাসস্থলের সাথে ব্যবসাকেন্দ্র ও কারখানা গড়ে তোলেএরকম একটা কারখানার নাম সোলান এটা একটা বিয়ার কারখানা ব্রিটিশরা সামারে সিমলাতে রাজধানী বানিয়েছিল যাই হোক সোলান স্টেশনে নেমে চা খেতে খেতে বিশ্বরূপ বলে, ' দেখ সৌম্য জায়গাটা কি সুন্দর চারিদিকে কি সুন্দর পাহাড় কি সুন্দর রাস্তা দোকান পাট আমার তো এখানেই হলট করতে ইচ্ছে করছে অন্তত একদিনের জন্য সৌম্য বলে, ' ঠিক বলেছিস, বারোগ থেকে মাত্র ৪ কিলো মিটার দূরে সোলান, অথচ দেখ এখানে প্রকৃতি যেন সৌন্দর্য্য উপুড় করে ঢেলে দিয়েছে' লম্বা হুইসল দিয়ে গাড়িটা নড়ে উঠলো চটপট ট্রেনে উঠে গেল ওরা ট্রেন ছেড়ে দিল এরপর দাঁড়ালো সামার হিল নামেই বোঝা যায় কত সুন্দর এ জায়গা সিমলার ঠিক আগের স্টেশন এটা

অবশেষে এলো সিমলা স্টেশন ট্রেন থেকে নামার সাথে সাথেই গাড়ির ড্রাইভার ও নানা রকমের লোকেরা ছেঁকে ধরলো ট্রেন যাত্রীদের বাবলা একটা গাড়ি ঠিক করে সঙ্গের মালপত্র নিয়ে দুজনকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল স্টেশন থেকে বেশ চড়াই পথ ম্যালের উপর দিয়ে গাড়ি অতি ধীরে চলতে লাগলো এত বড় ম্যাল ভারতে আর কোথাও নেই যেতে যেতে বাম দিকে তাকিয়ে ওদের চক্ষু স্থির সারি দিয়ে দাড়ানো পাহারের  মাথাগুলো সব সাদা বরফে ঢাকা অপূর্ব দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে যায় ম্যাল পেরিয়ে একটু বাম দিকে গিয়ে পড়লো ওদের হোটেল প্রথমে গেট পেরোলেই একটা প্যাসেজ পরে প্যাসেজের দুদিকে দেয়াল ধরে সুন্দর সুন্দর নানা রকমের পাহাড়ি গাছ বহু বর্ণের ফুলে সমৃদ্ধ তারপর ছোট্ট সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই ডানদিকে অফিস ঘর রেজিষ্টারে সই করার পর ম্যানেজার একজন বয়কে চাবি দিলো সে আর একজনকে নিয়ে ওদের সব মালপত্র উঠিয়ে নিয়ে ওদের পেছনে পেছনে যেতে বললো সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে বাম দিকের প্রথম ঘরটার তালা খুলে ওদের আসতে বললো উল্টো দিকের ঘরটায় আলো জ্বলছে, দরজা বন্ধ ঘরে সোজাসুজি একটা মস্ত জানলা ছিটকিনি লাগানো কাঁচের বাম দিকে বাথরুম আর আছে তিন বেডের খাট আছে বড় ডাইনিং টেবিল চেয়ার সোফা সেট একটা টি টেবিল দেওয়ালে টিভি বয় এসে খাবার জল আর গ্লাস দিয়ে গেলো আর বিছানার চাদর পাল্টে দিলো ও চলে যেতে যেতেই আর একজন চা আর পাকৌরা দিয়ে গেলো যাবার সময় জানালার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,


- সব এহি খিড়কি খোলকে বাহার মাত জাইয়েগা, কিউ কি ওহী খিড়কি সে বন্দর ঘুষকে সব উল্টি কর দেঙ্গে
কুছ চরি ভি কর সেকতে বাহার যানেকে টাইম এ খিড়কি বন্ধ করকে জাইয়েগা সমঝে আপ সব রতকো ডিনার এহি করেনঙ্গে তো?

- চিকেন মিলেঙ্গে ক্যা? বাবলা বললো


- আজ নেহি হোঙ্গে সব
কাল রাতমে জারুর মিলঙ্গে


- ঠিক হ্যায়
অভি হামলোগ থোড়া বাহার ঘুমকে আতে রতমে ডিনার এহী খায়েঙ্গ হামলোগণে সমঝে?


- ঠিক হ্যায় আপলোগ ঘুমকে আইয়ে রাত সাড়ে আট বাজে খানা লাগৌনগা


          চলে গেলো হোটেল বয় ওরাও উঠে পড়ল তালা লাগিয়ে দরজায় ওরা বেরিয়ে পড়লো গেটের বাইরে একটু গেলেই ম্যাল বাম দিকে জাককু হিলস ডান দিকে মহাত্মা গান্ধীর স্ট্যাচু আর আছে একটা গীর্জা ম্যালটা যেমন লম্বা তেমনি চওড়া খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ম্যালে বসার খুব ভালো ব্যবস্থা আছে বসে বসে সামনে তুষার শুভ্র হিমালয়ের দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যায় না এখন অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ, তাই খুব ঠান্ডা হাওয়া বইছে এই হিমেল হাওয়ায় দেহে কাঁপুনি ধরে যাচ্ছে বাম দিকে ম্যাল থেকে সিঁড়ি নেমে গেছে নিচে বাজারে খুব জমজমাট রাস্তাটা কত দোকানপাট, হোটেল, রেষ্টুরেন্ট ব্যবসাকেন্দ্র যেমন হয় ডান দিকে রেলিংএর ওপারের দৃশ্য দেখার মত কিন্তু রেলিং ধরে দাঁড়াবার একটু উপায় নেই কারণ ওই দিকটা বানরদের দখলে রাজকীয় যেন ওদের চলাফেরা রেলিংয়ের ওপরে, রেলিংয়ের গায়ে ও রাস্তায় ওদের অবাধ বিচরন কেউ পায়ের ওপর পা তুলে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বসে, কেউ কারো মাথা বা গায়ের থেকে এটুলি খুঁটে খাচ্ছে, কেউ তার বাচ্চাকে পেটের নিচে ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বা বসে আছে নির্বিবাদে মানুষেরা বরং ভয়ে ভয়ে চলছে হাঁটতে হাঁটতে ওরা ম্যাল এর শেষে চলে এলো একদিকে কালীবাড়ি আগে থেকে বুক করে নিলে এখানে থাকাও যায় এদিকেই আছে বাস স্ট্যান্ড একটু এদিক সেদিক করে ওরা এবার ফিরতে লাগলো


  ম্যালের মাঝামাঝি এসে একটু বসলো সন্ধ্যে নেমেছে শীতের কামড় আরও বেড়েছে ওরা ভ্রমণ সূচি নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো আজকে স্টেশন থেকে যে ড্রাইভার ওদের হোটেলে পৌঁছে দিয়েছে বাবলা তার সাথে চুক্তি করে নিয়েছে যে আগামীকাল ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে সকাল নটায় এসে ওদের লোকাল ট্যুরটা করিয়ে দেবে পথে ওরা লাঞ্চটা সেরে নেবে  সিমলা দেখে ওরা ফিরবে দিল্লি দিল্লিতে লোকাল টুর করে ওরা তাজ এক্সপ্রেসে যাবে আগ্রা থাকবে তিন দিন তাজমহল দেখবে চাঁদনী রাতে একদিন যাবে ফতেপুর সিক্রি তারপর চতুর্থ দিন সকাল ৮.৪০ মিনিটে আগ্রা ফোর্ট থেকে উঠে ভোর ৫ টায় হাওড়ায় নামবে অনেক চিন্তা করে রিটার্ন টিকিট বাবলা দিল্লি থেকে না করে আগ্রা থেকে করেছে যদিও আর এ সি ৫, ৬ ও ৭ কাউন্টারে বলেছে টিকেট কনফার্ম হবে আলোচনা প্রায় সারা, হঠাত্ বিশ্বরূপ বলে উঠলো 'শোন বাবলাদা আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে শুনবে '?


- বলে ফেলো, শুনি কি তোমার বুদ্ধি?


- ড্রাইভার তো গাড়ি নিয়ে সকাল নটায় আসবে
আমরা যদি ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠে ছটা সওয়া ছটায় হোটেল থেকে বেরিয়ে জাক্কু হিলসটা ঘুরে আসি হোটেল বয়কে বলে দেব গাড়ি আসলে ড্রাইভার যেন একটু অপেক্ষা করে আমরা জাক্কু হিলস থেকে এসে বেরোব


- আইডিয়াটা মন্দ দিস নি বিশ্ব
হোটেল বয়দের কাছে জেনে নেবো জাক্কু ঘুরে আসতে কতক্ষণ লাগতে পারে


- এখন চল হোটেলে ফিরে জামাকাপড় পাল্টে কম্বলের তলায় ঢুকে একটু থিতু হয়ে বসি
বাইরে যা ঠাণ্ডা


          দরজায় টোকা দিয়ে ঘরে ঢুকলো একজন বয়


- সাব ডিনার সাড়ে আট বাজে মিলেগা
ঠিক হ্যায়?


- কই বাত নেহি
বাবলা বলে লেকিন হামকো এক বাত বাতাও, সবেরে ছও বাজে এহিসে নিকাল নেকে বাদ কেতনা টাইম লগ স্যাকতা জাক্কুহিলস দেখকে ফির ইহা ওয়াপাস অতে?


- আগার হামলোগোকো শ্রীফ্ দো ঘণ্টা লগতা
লেকিন অপ্লোগোকো ফির আধা ঘন্টা সে এক ঘন্টা জ্যাদা লগ স্যাকতা জ্যায়সি তারহা আপ ঘুমেঙ্গে

- তব তো ঠিকই হ্যায় কাল সাবেরে তুমকো দো কাম করনা হ্যায়

- বলিয়ে সব ক্যায়া কাম?


- এক তো কাল সবেরে ছ বাজে চায়ে চাহিয়ে
 


- জরুর মীলেগা সাব
ইহি কামরেকে অপজিট কামরে মে তিন বেঙ্গলি ট্যুরিস্ট আয়ে হ্যায় উনলোগোকো ভি দেনা পাড়েগা ঔর?


- কাল সবেরে ন বাজে এক গাড়ি আয়গা হামলোগো কো লোকাল ট্যুর পয়েন্ট দিখানে কে লিয়ে
উও ড্রাইভার কো বলনা হ্যায় কুছ টাইম ঠের্ণেকে লিয়ে সমঝ গিয়ে?


- আচ্ছা কাল যো ড্রাইভার অপ্লোগকো স্টেশনসে ল্যায়া?
 

- ঠিক ঠিক


- উয়ো ড্রাইভার শর্মা কো সাথ হামারা জান পেহেছন হ্যায় বহুত
হম উসকো বল দেঙ্গে জরুর আচ্ছা অভি অপ্লগোকো লিয়ে খানা লে এতে


          সাড়ে আটটা বাজার পরে পরেই খাবার এসে গেল গরম গরম ধোঁয়া উঠছে ডাল আলুভাজা, ফুল কপির তরকারি, ডিমের কারি দুটো করে আর ভাত খেয়ে দেয়ে ওরা কম্বলের তলায় বয় খাবারের ডিস টিস গুলো নিয়ে যেতেই সৌম্য গিয়ে দরজা বন্ধ করলো তারপর ডাবল কম্বল চাপিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো সারাদিন পরিশ্রম হয়েছে, তার ওপর কাল ভোরে উঠতে হবে চতুর্দিকে নিস্তব্ধতা পাহাড়ও ঘুমিয়ে পড়েছে


          ভোর ছয়টার মধ্যে বেড টি দিয়ে গেলো গুড মর্নিং বলে কম্বলের তলায় বসে বসেই বেড টি সেরে নিয়ে উঠে পড়লো সবাই খুব দ্রুততার সাথে ওরা রেডী হয়ে বেরিয়ে পড়লো হোটেল ছেড়ে তখন বাজে প্রায় সাড়ে  ছ়টা একটু এগিয়ে গেলেই বাম দিকে জককু হিলস দেখা যায় পাহাড়ের পাক দন্ডি রাস্তার একদিকে পাইন গাছের সারি আর এক দিকে খাদ পাইনের জঙ্গলে বিভিন্ন রঙের পাখিদের কিচির মিচির শব্দের আওয়াজ মনে হয় গান ময়ূর ময়ূরী দেখা গেলো কয়েকটা তাদের কর্কশ ডাকও শুনতে মধুর লাগছে এই সুন্দর পরিবেশে আর আছে গাছে গাছে বানরের দল হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার বাঁকে বাঁকে তুষার শুভ্র হিমালয় চোখে পড়ে একসময় টপে উঠে গেলো ওরা গল্প করতে করতে উপরে রাস্তাটা তিন ভাগে ভাগ হয়েছে ডান দিকের রাস্তায় আছে একটা জলের কল বাম দিকে একটা আছে মন্দির এখন বন্ধ আর সোজা গেলে আছে সিনিক পয়েন্ট এখান থেকে গোটা সিমলা শহরটা ছবির মত লাগে দেখতে সকালের সোনালী রোদ শহরের কিছুটা পোরসান আলোকিত করেছে এখানকার সিনিক বিউটি অপূর্ব ফটো তুললো সবাই মোবাইল ক্যামেরায় ওখান থেকে সরে এসে ওরা এলো মন্দিরের দিকে মন্দিরের থেকে কিছুটা দূরে একটা বিরাট মনে হয় প্রায় তিরিশ ফুট হবে রাবণের মূর্তী তৈরি করা হয়েছে

বাবলা বললো, ' বিশ্ব, আজকে পশ্চিম বঙ্গে বিজয়া দশমী দেখ পুজোটা ফুস করে শেষ হয়ে গেলো আমাদের কিন্তু সবে শুরু ' বিশ্ব বলে,' তা যা বলেছ ' এবার ওরা নামতে শুরু করলো হোটেলের দিকে নামার সময়টা অনেক কম লাগলো নটার আগেই ওরা হোটেলে পৌঁছে গেলো তখনো শর্মা গাড়ি নিয়ে আসেনি বয়কে ডেকে দু পিস করে বাটার টোস্ট একটা করে ডিম সিদ্ধ আর চা দিতে বলে ওরা চট পট গিজার চালিয়ে স্নান করে নিলো বয় ব্রেক ফাস্ট দিয়ে বলে গেলো শর্মাজী গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে ব্রেকফাস্ট সেরে ওরা গাড়িতে চেপে বসলো গাড়ি ছাড়ার আগে শর্মাজী বললো, ' শুনিয়ে, পহেলা হাম অপ্লোগক ইকো ফ্লাওয়ার হাউস লেকে জায়েঙ্গে উধর সব উঁচা উঁচা পাহাড় হ্যায় থোড়া নজদিগমে আপ লোগ উধর জোরসে কুছ বলিয়েগা তো ওহী বাত আপকো পাশ ওয়াপস আ জায়েঙ্গে ইকো হকে বাদমে আপকো লে জায়েঙ্গে ইন্ডিয়াকে সবসে পুরানা স্কি খেলনেকা জায়গা কুফরী ইস কে বাদ জানা হ্যায় চিনি বাংলা ইয়ে সবসে উঁচা পয়েন্ট, ,৩০০ ফুট ইধার লঞ্চ
কিজিয়েগা
সবকে বাদ জানা হ্যায় প্রসপেক্ট হিলস চলিয়ে অব ' শর্মা গাড়িতে স্টারট্ দিলো

 

          গাড়ি সোজা ম্যাল পেরিয়ে, কালীমন্দির ছাড়িয়ে ডান দিকে বেঁকে শতদ্রু নদীর ওপর একটা ব্রিজের ওপর দিয়ে যাবার সময়  নিচের দিকে তাকিয়ে সৌম্য বলে ওঠে, ' দেখেছিস বিশ্ব নিচের দিকে তাকালে ভয় লাগেনা '?


- সত্যি ভয় লাগারই কথা
বিশ্বরূপ জবাব দেয়


          আরও কিছুটা গিয়ে গাড়িটা থামলো নেমে দাঁড়ালো সবাই নেমে ডান দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলো সবাই এ যেন এক ফুলেদের সাম্রাজ্য  চন্দ্রমল্লিকা ডালিয়া ছাড়া কত রকমের যে ফুল গাছ ও কত রঙের যে ফুল ফুটে আছে তাতে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা যে কত রকমের রঙের হতে পারে সেটা ওরা আগে জানতো না এছাড়া আছে কত রকমের ক্যাকটাস, ঝাউ গাছের মত দেখতে যা তারা জানে না ইংরেজিতে গাছের নাম লেখা সাইন্টিফিক নাম পড়তে দাঁত ভেঙে যাবার উপক্রম বেশ বড়ো নার্সারী একটা একটা সুন্দর কারুকাজ করা কাঠের বাড়ি বাম দিকে হিমালয়ের রেঞ্জ যেনো কিছুটা সামনে হঠাৎ ওদের মনে পড়লো ইকো হওয়ার কথা তাই সৌম্য ডাকলো জোরে, বাবলা...দা......., বিশ্ব...... দূরে পাহাড়ের গায়ে গায়ে গিয়ে আবার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এলো, বাবলা...দা... বিশ্ব..... অপূর্ব সবাই কিছুক্ষণ  এই প্রতিধ্বনির খেলায় মেতে উঠলো. মোবাইলে ছবি তুললো শর্মাজী গাড়ির হর্ন বাজাতেই ওদের সম্বিত ফিরল গাড়িতে গিয়ে উঠলো গাড়ি আবার ছাড়লো কুফরীতে গাড়ি দাঁড়াতেই নামলো সবাই একটু এগিয়ে যেতেই দেখে একটা সাইন বোর্ড ওতে স্কি সংক্রান্ত সব কিছুই লেখা আছে ওরা আর একটু এগিয়ে গেলো জল কাঁদায় চলা দায় ফিরে এসে গাড়িতে উঠলো বাবলা মজা করে বললো,


- আফসোস হচ্ছে রে সৌম্য স্কি খেলাটা এ যাত্রায় আর হলো না
  কি বলিস?


- ত যা বলেছ
কি আর করা যাবে, ভাগ্যটাই খারাপ


          গাড়ি এসে দাঁড়ালো চিনি বাংলোয় এখান থেকে চীনের বর্ডার খুব কাছে প্রশস্ত জায়গাটা বেশ এখান থেকে প্যানারমিক  ভিউ চোখ চেয়ে দেখার মতো অতি অপূর্ব দৃশ্য বলে বোঝানো যায় না ড্রাইভার শার্মাজী আঙুল দিয়ে দেখাল, ' উয়ও দেখিয়ে শিবজিকি কৈলাশ পর্বত, কিতনা সুন্দর দিখাতা'  সত্যি ভারী সুন্দর


          বাবলা গাড়ি থেকে নেমেই লাঞ্চের অর্ডার আগেই দিয়েছিল পনেরো বিস মিনিট পরে যেতে বলেছিল ওই সময়টা কাটিয়ে ওরা লাঞ্চ খেতে ঢুকলো মোটামুটি আধ ঘন্টা লাগলো তারপর একটু এদিক ওদিক করে গাড়িতে উঠে বসলো বেলা তখন দেড়টা

         গাড়ি এসে দাঁড়ালো কালীবাড়ির গেটে এই মন্দির স্থাপিত হয় ১৮২৩ সালে কথিত আছে এক বাঙালি সাধু পশ্চিম বঙ্গ থেকে এখানে এসে থাকে তারপর একরাতে স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্যামলা গ্রাম থেকে দুটো পাথর এনে মূর্তী গড়ে পুজা করে ও শ্যামলা দেবীর মন্দির গড়ার সূত্র তৈরি করে এই ভাবে শ্যামলা দেবীর মন্দির গড়ে ওঠে আর এই শ্যামলা মায়ের নামেই এই শহরের নাম হয় সিমলা পরে ১৯২৪ সালে জয়পুর থেকে আনা কালী ও দেবী চন্ডী এনে এই মন্দিরে স্থাপন করে পুজা পাঠ শুরু করে একমাত্র এই মন্দিরেই সিমলায় কালী পূজা হয় লাইব্রেরিও আছে একটা আগে থেকে বুক করে নিয়ে থাকাও যায় এখানে মন্দিরের নিচে একটা ঘোর দৌড়ের মাঠ আছে অনেকটা নামতে হয় বলে ওরা যেতে রাজি হল না গাড়ি এবার গিয়ে থামলো প্রসপেক্ট হিলসে এটা একটা পিকনিক স্পট এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য অসাধারণ লাগতে বাধ্য পর্যটকদের কাছে এছাড়া আছে কামনা দেবীর মন্দির দেবী খুবই জাগ্রত দেবীর কাছে কোনো কিছু মানত করলে দেবী তার মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।।তাইতো সে কামনা দেবী পূর্ণিমার দিন এখান থেকে একই সময় সূর্যাস্ত ও চান্দ্রদয় হয় তাই এই স্থান খুবই পবিত্র সূর্য্যদ্রুত পশ্চিমে ঢলে পড়ছে ঠান্ডাও বারছে পাহাড়ে ওরা নেমে আসে নিচে গাড়ির পাশে শর্মাজি বলে, ' অভি বলিয়ে অপ্লগকো কাঁহা উতার দেনা হ্যায় হোটেল, ম্যালকি উপর না মারকেটমে? যাহা অপ্লোগ বলেঙ্গে ওহী হম উতর দুঙ্গা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ওরা ঠিক করলো এখুনি হোটেলে না ফিরে বরং মার্কেটটাতে একটু ঘুরে দেখা যাক তার সাথে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক সেই কথাটাই শর্মাজিকে বলতেই সে গাড়ি ছাড়লো মার্কেটে নামিয়ে দিয়ে টাকা পয়সা বুঝে নিয়ে শর্মাজী চলে গেলো


          সারাটাদিন গাড়িতে চড়ে কোমর ও হাত পা গুলো প্রায় অসার হয়ে গিয়েছিল পাটা ঠিক মত চলছিল না বাবলা বললো, ' আগে কিছুটা হাঁটা চলা করেনি বুঝলি তারপর একটা খাবার দোকানে ঢুকে গরম গরম কিছু খেয়ে নিয়ে চা খাবো যা শীত পড়েছে আবার ক্ষীদেও পেয়েছে বেশ কিরে তোদের ক্ষিদে পায় নি '?


-' ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে বাবলাদা, চায়ের দোকান খুঁজতে হবে যেখানে গরম কিছু পাওয়া যায় ' বিশ্বরূপ বলে

          ওরা হাঁটতে শুরু করলো আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হবো হবো প্রায় দু ধরার দোকান গুলোতে পটা পট চরা আলো জ্বলে উঠলো হোটেলও আছে কটা দিনের আলোর মত দেখাচ্ছে পুরো বাজারটি এই শীতেও পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট গরম জামা কাপড়ের দোকান আছে অনেক দোকানের বাইরে ঝোলানো সুন্দর সুন্দর শাল দেখে বিশ্ব একটার দাম জিজ্ঞেস করে হাত সরিয়ে নিল মনে হলো হাতে যেনো ছ্যাকা লাগলো বিশ্বরূপের এরপরেই একটা মনের মতো খাবারের দোকান দেখতে পেল দোকানে মস্ত বড় করাইতে গরম গরম বড় বড় সমসা অর্থাৎ সিঙ্গারা ভাজা হচ্ছে আর এক জায়গায় চা বানানো হচ্ছে দোকানে ঢুকে পড়ল ওরা বেশ ভিড় দোকানে টেবিলে টেবিলে অর্ডার করা খাবার পৌঁছে যাচ্ছে বেশির ভাগ লোক পুরি তরকারি খাচ্ছে তার মানে সিঙ্গারা ভাজার আগে পুরি ভাজা হয়েছে টেবিলে বসে বাবলা বললো,


- আজকে রাতে হোটেলে চিকেন খাওয়াবে
তাও সাড়ে আটটায় তাই বেশি খাবো না বুঝলি দুটো করে পুরি আর একটা করে সিঙ্গারা খাই আর তার সাথে চা কি?


- বাবলাদা, আমি খালি দুটো সিঙ্গারা খাবো আর চা


- আমিও তাই বাবলাদা সৌম্যর মতো


- ঠিক আছে, তোদের জন্য তাই অর্ডার দিচ্ছি
এ ভাই...

          বয় আসতে বাবলা অর্ডার দিলো কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার এসে গেলো খুব গরম হাত লাগানোই  যাচ্ছে না খাওয়া তো দূরের কথা এদিকে আবার চাও দিয়ে গেলো বাবলা রেগে গিয়ে বললো,


- এদের কি বলবো বলতো, একদিকে ক্ষিদে এদিকে খাবারে হাত দেওয়া যাচ্ছে না তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া চাটাও সাথে সাথে দিয়ে গেলো
কেমন ল্যাঠাবলতো নাও সবাই মিলে এখন ল্যাঠা সামলাও


          যাই হোক কোনো মতে ম্যানেজ করে টাকা মিটিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সবাই তারপর সিঁড়ি বেয়ে ম্যালে উঠে এলো ম্যালে আরও শীত হোটেলটা ম্যালের থেকে সামান্য উচুতে হোটেল অন্ধকার মনে হয় লোডশেডিং চলছে সরবত্র বড়ো বড়ো মোমবাতি জ্বালান আছে সিঁড়িতেও তিনটে জ্বলছে রুমের তালা খুলতেই একজন এসে ঘরে দুটো মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো বলে কোথায় নাকি ট্রান্সফরমার জ্বলে গেছে সারাবার কাজ চলছে জিজ্ঞেস করলো চা দেবে কিনা ওরা না বলায় তখন বলে সাড়ে আটটা থেকে নটার মধ্যে ডিনার দিয়ে যাবে তার মধ্যে আলো এসে পড়বে ঠিক ও বেরিয়ে গেলে দরজায় ছিটকিনি দিয়ে দিলো তারপর জামা কাপড় পাল্টে বিছেনায় টান টান হয় শুয়ে শুয়ে গল্প করতে লাগলো ভোর হতে সারাদিনের যেসব জায়গা দেখা হয়েছে সেসব নিয়ে গল্প করতে করতে কখন যেনো সব ঘুমিয়ে পড়ল


জোরে দরজার ধাক্কায় ধরমর করে উঠে পড়ল
দরজা খুলতেই একজন রাতের ডিনার নিয়ে প্রবেশ করে টেবিলে সাজিয়ে রাখলো বললো, ' অভি ইলেকট্রিক আ রাহা হ্যায় উসিলিয় কুছ দের হো গেয়া সাব ' চলে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা ভেজিয়ে দিল ঘড়িতে তখন জাস্ট নটা বাজে আলো আসায় বেশ স্বস্তি হচ্ছে টেবিল থেকে চিকেনের গন্ধ বেরোচ্ছে সুন্দর বসে পড়লো চেয়ারে বেশ পরিপাটি করে খেয়ে সব ডিস টিশ গুলো দরজার বাইরে রেখে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় সৌম্য বলে,


- বড়ো ভালো খেলাম রে বিশ্ব অনেকদিন পর


- যা বলেছিস সৌম্য
এখানে যদি কিছুদিন থেকে যাওয়া যায় তাহলে গায়ে গত্তি লেগে যাবে কি বলো বাবলাদা ?


- থেকে যা না তুই কে বারন করেছে


- কি যে বলো বাবলাদা , তোমাদের ছেড়ে, আর রেস্ত?


          এইভাবে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে এরপরেই ছন্দপতন রাত কত তখন কে জানে, একটা শোরগোলের আওয়াজ পেয়ে ধরমর করে উঠে বসলো বাবলা দেখলো ছায়ামূর্তি এক বাথরুমের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে আছেদরজার বাইরে হৈচৈ বাবলা ভাবলো কোনো চোর তাড়া খেয়ে নিশ্চয় কোনোভাবে ওদের রুমে ঢুকে পড়েছে ভয়ে ক্ষীণ গলায় বললো, ' কে ওখানে '? কোনো সাড়া নেই ওখান থেকে সন্দেহ বাড়ায় আবার জিজ্ঞেস করে ' এই কে ওখানে? এই বিশ্ব, দ্যাখত কে ওখানে? এই বিশ্ব, বিশ্ব ' এইবার ছায়ামূর্তিটা বলে ওঠে, ' ও বাবলাদা একটু চুপ করোনা বাইরের গোলমালটা একটু বুঝতে দাও' বাবলা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ' সৌম্য তুই! বড়ো ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম রে সৌম্য আর এই হতচ্ছারা বিশ্বটাকে কতবার ডাকছি তবু ওর কানেই ঢোকে না ' এইবার বিশ্বরূপ আড়মোড়া ভেঙে উঠলো ইতিমধ্যে সৌম্য দরজা খুলে বাইরে গিয়েই কাশতে কাশতে ফের ঘরে ঢুকে ভয়ার্ত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো, ' বাবলাদা সর্বনাশ হয়েছে, হোটেলে আগুন লেগেছে কি করবো এখন সিঁড়িতেই যে আগুন লেগেছে, বেরোব কি করে '? 'বলিস কিরে সৌম্য ' এক লাফে বাবলা ও বিশ্বরূপ খাট থেকে নেমে বাইরে এলো প্যাসেজ ও সিঁড়িটা ধোয়াঁয় আচ্ছন্ন ভালো করে কিছু দেখা যাচ্ছেনা  ভীষণ কাসি হচ্ছে উল্টো দিকের ঘর থেকে ছেলেরা বালতি করে সিঁড়িতে জল ছুঁড়ছে ঘরে ঢুকে বাবলা বললো, ' কোনো উপায় নেই জল দিতে হবে বাথরুমে সৌম্য আগে থেকেই একটা বালতিতে জল ভোরছিল ভর্তেই বালতিটা নিয়ে ছুটলো বাইরে  আরও একটা বালতি থাকায় বাবলা সেটাকে ভরে নিয়ে ছুটলো সৌম্য খালি বালতি এনে কলতলায় পাততে পাততে বলে, ' হাফ বালতি করে নিয়ে যেতে হবে বুঝলি বিশ্ব, ভরা বালতি ছুড়তে অসুবিধা' বাবলা ফিরে এসে বললো, ' ঠিক বলেছিস সৌম্য ' বিশ্বরূপ আর কি করে মগে করে জল নিয়ে ছুঁড়ে দিতে থাকলো দুই ঘরের চেষ্টায় একটা গর্তের ভিতরের আগুন ছাড়া বাকি আগুন নিভে গেলো দুদিকে দুটো কাঠের স্লিপারের মাঝে একটু ফাঁক করা আছে কি করে যেন মধ্যখানের ওয়ালে একটা গর্ত ছিল সেটার ফাঁক দিয়ে গন গনে আগুনটাকে দেখা যাচ্ছিল কিছুতেই সেটাকে নেভানো যাচ্ছিল না ওই রুমের একটা ছেলে কোথা থেকে একটা কুঠারের মতো জিনিস এনে দামাদ্দাম মেরে গর্তটাকে অনেকটা বড় করে দিয়ে বার বার জল ঢালতেই নিভে গেল কিন্তু খুব ধোঁয়া বেরোতে থাকলো যেই ছেলেটি কুঠাড়ের মতো জিনিসটা নিয়ে কাঠের স্লীপারটা ভাঙলো সে বাবলার দিকে চেয়ে বললো, 'আমার নাম শ্যামল এরা কার্তিক ও অশোক আমরা থাকি শোভাবাজার আপনারা '? বাবলা বলে,
- আমরা থাকি এন্টলিতে


- আমরা জানেন, তাস খেলছিলাম
রাত সাড়ে দশটার সময় আমরা শোয়ার ব্যবস্থা করছি কিন্তু কেমন একটা পোড়া পোড়া গন্ধ পেলাম ওদের জিজ্ঞেস করতে ওরা বললো যে ওরাও পাচ্ছে এলিকট্রিক পয়েন্টগুলো সব পরীক্ষা করলাম, দেখি সব ঠিক আছে তখন ভাবলাম বাইরে কিছু হয়নি তো দরজা খুলে বাইরে তাকাতেই দেখি সিঁড়ি জ্বলছে আপনাদের দরজায় ধাক্কা দিলাম, কোনো সাড়া পাইনি নিচের দিকে মাথা নিচু করে জোরে ডাকলাম কোনো সাড়া পেলাম না তারপর উপায় না দেখে জল ঢালতে লাগলাম আপনারাও আসলেন, জল ছুড়লেন অবশেষে অনেক চেষ্টায় নিভলো আগুন '


- আপনারা ওই অবস্থায় আমাদের রুমের দরজায় ধাক্কা মেরেছেন অথচ আমরা শুনতে পাইনি এর জন্য সত্যিই আমরা দুঃখিত


- তবে তার কিছুক্ষণ পরেই আপনারা বেড়িয়েছেন
তখন আপনারা না বেরোলে কি হতো কে জানে কিন্তু আর একটা ব্যাপার দেখুন, এই ছোট কুঠারটা অদ্ভুত ভাবে এটা আমাদের খাটের তলায় ছিল কিন্তু কেনো? এটা না পেলে আগুনটা বোধহয় নেভানো যেত না


          এবার সৌম্য বলে, ' আমরা সব কিছু ফেলে হয়তো কিছুটা পুড়ে গিয়েও হয়তো হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু তার পরে কোথায় যেতাম? কলকাতার ছেলে আমরা বাইরের এই ঠান্ডাতেই মরে যেতাম ' ওদের অশোক বললো, ' ঠিক বলেছেন তারপরেও পুড়ে গিয়ে থাকলে তার জ্বালা, সেটা যাবে কোথায়? আমরা তো এখানে কিছুই চিনি না তবে '?  বিশ্বরূপ বলে, - আগুন নিভে গেলেও আমাদের আরও কিছুক্ষণ এখন এখানে থাকা দরকার কাঠের ভিতরে কোথাও আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছে কিনা কে বলতে পারে


          সবাই একমত হলো হঠাত নিচে ভারী পায়ের শব্দ শোনা যেতে লাগলো ভারী বুটের আওয়াজ ওপরে উঠে আসতে দেখা গেলো দুজন ফায়ার ব্রিগেডের লোক কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, 'অপ্লোগণে কই রিপোর্ট কিয়া হোটেলমে আগ লগ্নেকো '?

- নেহি তো! অনেকেই একসাথে বলে ওঠে


- তব কৌন দিয়া বল স্যক্তে?


- নেহি
লেকিন নিচেসে কই বোর্ডার দে স্যাক্তে


- নিচে তো কই বোর্ডার নেহি দেখা
আচ্ছা ছোড় দিজিয়ে, ক্যয়া হুয়া ইধর বলিয়ে স্মেলতো বহুতি আ রাহা হ্যায়


          শ্যামল সম্পূর্ণ ঘটনাটা পুঙ্খানপুঙ্খভাবে বললো সব কিছু শুনে ওরা সিঁড়িটা ভালো করে দেখলো পোড়া অংশগুলো ভালো করে পরখ করলো নিচে গিয়ে দুজন হোটেলের পেছনে গিয়েও দেখলো তারপর আবার তারা উপরে উঠে এসে বললো, ' সব কুছ হামলোগনে আচ্ছাসে  দেখ লিয়া ঔর কই ডরনেকা বাত নেহি অভি আরাম কিজিইয়ে লেকিন আপলোগ বহুত আচ্ছা কম কিয়ে আপ বাঁচ গিয়ে, হোটেল মালিক বাঁচ গ্যয়ে আর হামলোগ বহুত ধিক্কতসে বাঁচ গিয়া আচ্ছা শুকরিয়া' গট গট করে ওরা চলে গেলো ওরাও সবাই পরস্পরকে বিদায় জানিয়ে ঘরে গিয়ে ঢুকল টাওয়েল দিয়ে হাত পা ভাল করে মুছে সব কম্বলের তলায় ঢুকে পরেও হি হি করে কাঁপতে লাগলো সৌম্য বলে, ' আর আমি একদিনও সিমলায় থাকতে রাজি নই বাবলাদা, কাল সকালেই চল দিল্লিতে চলে যাই' বিশ্বরূপও বলে,' আমারও এক মত' বাবলা বললো, ' কেনো তুই তো খানিক আগেই আরও কিছুদিন সিমলায় থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলি, হয়ে গেলো তবে দাঁড়া সকাল হতে দে, ব্রেকফাস্ট করে বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি বাস কিছু পাওয়া যায় কিনা দিল্লি বা আগ্রা যাবার যদি পাই তবে বেরিয়ে যাবো আজই তবু আমাদের তো আরও একটা দিন এখানে থাকার কথা ছিল সেদিকের সমস্যাটাও মেটাতে হবে যাই হোক সেটা দেখা যাবে পরে এখন একটু সবাই ঘুমিয়ে নে ' সবাই চোখ বন্ধ করলো


           দরজায় টোকা পড়তেই ঘুম ভাঙলো সবার ঘড়ি দেখে আটটা বেজে গেছে দরজা খুলতেই দেখে বয় একেবারে ব্রেকফাস্ট  নিয়ে হাজির বাবলা বললো, ' থোড়া ঠ্যরও, বহত বাত হ্যায় তুমারে সাথ '


- সাব, আপ মু ধোকে খানা খাইয়ে, হাম অভি আ যাতে
আপকো সব বাত হাম শুনেঙ্গে ' চলে গেলো সে


          মুখ ধুয়ে ওরা ব্রেকফাস্ট নিয়ে পড়লো বাটার টোস্ট, ডিম সেদ্ধ আর চা খাওয়া শুরু করার মধ্যেই বয় এসে সামনে দাঁড়ালো ' বলিয়ে সাব ক্যা বলনা হ্যায় '?  -কাল রাত হোটেলমে কই  নেই থা, কাঁহা গ্যায়ে থে তুম সব লোক '?


- দেখিয়ে সাব, এহি হোটেল একদম নয়া
1st অক্টোবর ওপেন কিয়া হ্যায় উসিকে লিয়ে টুরিস্ট লোককো য্যাদা জানকারী নেহি হ্যায় ইহি হোটেলকে বারেমে রাতমে হোটেল ম্যানেজার ঔর এক আদমি রাহা করতে হম সব রাত দশ বাজে ঘর যাতে ফির সবেরে পাঁচ বাজে আয়া করতে এহি সাল দুর্গা পূজামে শ্রীফ্ চার রুম ভরা থা


- ও বাত তো ম্যায়নে সামঝা লেকিন কাল হোটেলমে রাতকো ম্যানেজার আউর ও আদমি কাঁহা গিয়া থা? হোটেল কি সিঁড়িমে আগ লাগ গিয়া থা
হম সব ঘরসে নীকালতা ক্যায়সে বতাও? হাম সবতো মার যাতে


- হা সাব, আপ সব কে লিয়ে হোটেল ভি বাঁচ গিয়া ঔর ম্যানেজার ভি বাঁচ গিয়া
কাল দশেরা থা ম্যানেজার মালিককে বোলকে দো ঘনটেকে লিয়ে ছুটটি লিয়া থা পাহাড় কি উপর দশেরা উৎসব দেখনিকে লিয়ে ও আদমিকো ভি লে গিয়া থা রাত তিন বাজে ম্যানেজার আয়া থা বোলা ইসিকা টাইম মে হোটেল মে আগ লাগ গেয়ে থা সাব হাম অভি চলতে বহুত কাম পড়া হ্যায় নিচে মেরেকো


- ঠিক হ্যায় জানেকা পহেলা এতো বাতাকে যাও আগ লাগা ক্যাইসে?


- সাব, ইয়ে হামলোগোকা ভুল সে হুয়ে যারুর
বিচকা ওয়াল মে কই এক বাত্তি বুতানা ভুল গিয়াআউর উসিসে আগ লাগ গিয়া হোগা


- তব সচো, তুমারে নোকরী ভি বাঁচ হ্যায়
ঠিকহ্যায় যাও


          বয় চলে যেতেই ওরা চটপট রেডী হয়ে বেরিয়ে পড়লো ম্যালের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাবলা বলে,

- এত সুন্দর আর এতো বড়ো ম্যাল কেমন পরিষ্কার পরিছন্ন দেখছিস এখানে বসে সারাদিন দূরের তুষার শুভ্র হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় অথচ আমরা আজকেই চলে যেতে চাইছি দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে


- ঠিক বলেছো বাবলাদা '
দুজনেই একবাক্যে বলে


          হাঁটতে হাঁটতে ওরা কালীবাড়ির পাশ দিয়ে বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছলো দিল্লি যাবার বাসের খোঁজ খবর করলো রাত আটটার আগে কোনো বাসের টিকিট পেল না দিল্লি পৌঁছবার টাইম সকাল ছটায় টিকিট কাটার পর বিশ্বরূপ বললো, ' আমাদেরতো বারোটায় রুম ছেড়ে দিতে হবে, তাহলে এই আট ঘণ্টা মালপত্র নিয়ে কোথায় যাবো? এত রেল স্টেশন না যে ক্লোক রুমে রাখা যাবে?'


- কিচ্ছু ভাবিস নারে বিশ্ব কিছুতো একটা করতেই হবে
ধর বারোটার পারে মালপত্র নিয়ে অফিস রুমে রেখে এখানেই লাঞ্চটা করে নিলাম এইভাবে দুটো পর্য্যন্ত কাটিয়ে দিলাম তারপর ম্যালে গিয়ে বসে থাকবো ছটা পর্য্যন্ত এটাইতো বেস্ট প্ল্যান ম্যালে ওরা কিছুক্ষণ বসে ধীরে ধীরে হোটেলে ফিরলো বেলা এগারোটায় কিন্তু অফিস রুমে বেশ ভিড় কি ব্যাপার? বাবলা ভিড়টা একটু সরিয়ে উঁকি মারতেই দেখে ম্যানেজারের চেয়ারে একজন সুবেশ সুন্দর লোক বাসে আছে সামনে ম্যানেজার দাঁড়িয়ে আছে টেবিলের ওপর বুকিং রেজিষ্টার খোলা দুজনের মধ্যে কথপোকথান চলছে বাবলার দিকে চোখ পড়তেই উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন তাই দেখে ম্যানেজার বাবলার পরিচয় দিলেন ওনাকে তৎখনাৎ উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে বাবলার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ' আইয়ে আইয়ে স্যার, আউর সব কাঁহা বাবলা ইশারায় সৌম্য ও বিশ্বরূপকে ডাকতেই ওরা ঘরে ঢুকলো
বোঝা গেলো ইনি হোটেলের মালিক
সবার সাথেই উনি করমর্দন করে বললেন,


- মেরা নাম রাহুল শর্মা
ইয়ে হোটেল হ্যায় মেরে আপ সবকি বাত হাম শুনা ক্যা বলু আপলোগোকি শুকরিয়া বলকে ছোটা নেহি করুঙ্গা ম্যায় লেকিন আপলোগ মেরে হোটেল ঔর হমকো ভি বাঁচা দিয়া জান আপলোগোকি বহুত খতেরেমে থা ঔর তিন বেঙ্গলি ভি আপলোগ কে সাথ থি বরা আফসোষ কি বাত উনলোগোকে সাথ দেখা নেহি হোয়ে ইন থি early morning ও লোগ্ চলা
গিয়া হোটেল ছোড়কে
এক পুলিশ ওয়ালা আয়ে থি  মালুম হোতা ফাইয়ার বিগ্রেড সে ফোন কিয়া হোগা   থোড়া ইধার উদার দেখকে চলা গিয়া কুছ নেই বলকে আচ্ছা আপলোগ কিতনা দিন তক ঠ্যারেনগে?


- আজ রাত আট বাজে দিল্লি জানেকা জো বাস সিমলা বাসস্ট্যান্ড সে ছুটেঙ্গী ওহী বাসসে দিল্লি জানা হ্যায় হাম সবকো
দিল্লিসে আগ্রা দেখকে কলকাতা লটনা হ্যায়


- আচ্ছা আচ্ছা, তব আপকোনে বারা বাজে হোটেল ছোরনা নেহি হোগা
হাম এক গাড়ি দে দেঙে সাত বাজে আপ্ ওহী গাড়ি লেকে বাস স্ট্যান্ড যাকে ও গাড়ি ছোড় দিজিয়েগা সমঝে


- বহত বহত সুকরিয়া আপকো


          এরপর রাহুল শর্মা গট গট করে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে গেলো বাবলা আধ ঘন্টা পরে দুপুরের খাবার দিতে বললো রুমে খুব স্বস্তি হলো সবার অন্তত দুপুরে বেরোতে হবে না হোটেল ছেড়ে সৌম্য বললো,


- দেখেছো বাবলাদা শ্যামলরা ঠিক ভোরে উঠেই পালিয়ে গেছে
আমাদের একবার বলতেই পারতো


- আসলে কালকে এত রাত হয়ে গিয়েছিল শুতে, হয়তো ওই জন্য আর ডিস্টার্ব করতে চায়নি
হয়তো দেখ ওরা মানালি চলে গেছে বাসে করে ওই বাস তো ভোরে ছাড়ে যাই হোক খেয়ে দেয়ে দুপুরে একটা ঘুম দেওয়া যাবে


          দরজায় টোকা পড়তে দরজা খুললে চা সিঙারা নিয়ে বয় ঢুকলো আপ সব টিফিন খাকে রেডী হো জাইয়ে সাত বাজেসে পহেলে গাড়ি আ জায়গা সত্যি সাতটার আগেই গাড়ি এসে গেলো গাড়িতে মালপত্র উঠিয়ে দিল বয় ওকে কিছু বকশিস দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো সকলে ম্যাল এর ওপর দিয়ে গাড়ি ছুটছে বাবলা হঠাত বলে উঠলো,


- বিদায় ম্যাল বিদায়,
 সিমলা বিদায়, বিদায় বানরকুল    

 
  ঠিক আটটার সময় বাস স্টার্ট দিলো সিমলা স্টেশনের পাশ দিয়ে যাবার সময় সবাই একসাথে বলে উঠলো, ' বিদায় সিমলা বিদায় ' বাসের গতি বাড়লো



                   -
---------

Address:-
--------
Dipak Kumar Paul,
DTC Southern Heights,
Block-8, Flat-1B,
Diamond Harbour Road,
Kolkata - 700104.
Contacts :-.  9007239853

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.