অণুগল্প ।। কনে দেখা ।। উত্তম চক্রবর্তী
কনে দেখা
- উত্তম চক্রবর্তী।
"মেয়েদের কি বিয়ে না করলে চলে, বয়স হলে পর তোকে দেখবে কে ? আমরা তো আর চিরকাল বেঁচে থাকব না। ভাইও তো বিদেশে থাকে, ওরও তো নিজের সংসার আছে। তোর বিয়ে করাটাই শ্রেয় দিয়া, জিদ করিস না মা।" মায়ের মুখে রোজ এই একই কথা শুনে শুনে অবশেষে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল দিয়া। সেই থেকেই বাবা মা শুরু করেছিল সম্বন্ধ দেখা। আর আজই তার প্রথম সম্বন্ধের লোকেরা এসেছে বাড়িতে মেয়ে দেখতে। মেঝ মাসি সকালেই এসে গেছে গড়িয়া থেকে। দিয়াকে সাজিয়ে রেডি করছেন উনি।
ছেলের বাড়ি হাতি বাগানে। কলেজের প্রোফেসর। বাড়িতে মা, রিটায়ার্ড বাবা, বিপত্নীক বড়দা, একজন পাঁচ বছরের ভাইপো, আশি বছরের ঠাকুরমা আর সবসময়য়ের কাজের লোক হারুদা। এই সংসারের একেক জনের একেক রকমের চাহিদা। শাশুড়ি চান বৌমা তার বুড়ি শাশুড়ির সেবা যত্ন করবে, শ্বশুর মশাই চান বৌমা ভাল মন্দ রান্না করে তাদের খাওয়াবে, ঠাকুরমা চান বৌমা বড় নাতির মা মরা ছেলেটাকে নিজের ছেলের মত করে কোলে পিঠে মানুষ করবে আর বড়দা চান বৌমা বাবা মায়ের সেবা যত্ন করবে।
মেয়ে দেখতে এসেছে ছেলে তার বড়দা আর হবু শ্বশুর শাশুড়ি। বাবা মার সাথে মিষ্টি খেতে খেতে ওনারা বলছিলেন যে কী ধরনের মেয়ে ওনারা খুঁজছেন। সোফার এক কোনে বসে থাকা দিয়ার মেঝ মেসো মুচকি মুচকি হাসছিলেন, কারণ সম্বন্ধটা উনিই এনেছেন। পাশের ঘর থেকে সব শুনছিল দিয়া। মনে মনে গুমরে শুধু ভাবছিল যে এরা মেয়েদের কী মনে করে কী ? তাদের নিজেদের কোন ইচ্ছা অনিচ্ছা নেই ?
মিষ্টির পর্ব চুকে গেলে পর মেয়ে দেখবার পালা। দিয়াকে নিয়ে আসবার ডাক পড়ল পর মেঝ মাসি দিয়াকে নিয়ে ঢুকল বসবার ঘরে। বাবা পরিচয় করে দেবার পরেই দিয়া হাত তুলে নমস্কার করে হাসি মুখে নিজের হবু শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল,"আচ্ছা, চাকরিটা আসলে কিসের চাকরি জানাবেন প্লিস ?" ঘরের মধ্যে একটা বোমা ফাটল যেন। ছেলে বাবার দিকে তাকিয়ে , তার মা ও দাদা দুজনেই হতভম্বের মত দিয়ার দিকে তাকিয়ে আর হবু শ্বশুর মশাই অবাক হয়ে কিছু বুঝতে না পেড়ে জিজ্ঞাসা করলেন,"তার মানে ? তুমি ঠিক কী বলতে চাইছ মা ? কীসের চাকরি ? আমরা তো তোমাকে দেখতে এসেছি এখানে...।" দিয়া একই ভাবে দৃঢ় কিন্তু নিচু স্বরে বলল," না, আমি মানে পাশের ঘর থেকে শুনছিলাম আপনাদের কাদের কীরকম বৌ চাই। তা আপনারা কি একজন নার্স চান ঠাকুমার জন্য নাকি একজন রাঁধুনি চান বাবার জন্য, নাকি একজন আয়া চান শুধু ঐ বাচ্চাটার জন্য নাকি একজন সর্বক্ষণের আয়া চান বাবা মার জন্য ? একসঙ্গে তো সবকটা চাকরি করা সম্ভব নয়, তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম আর কী।"
রাজা,মানে দিয়ার হবু বর বুঝে গেল দিয়া কী ধরনের মেয়ে আর ঠিক কী বলতে চাইছে। বুদ্ধিমান ছেলে, ঠিক এরকমই স্পষ্ট বক্তা খোলা মনের মেয়েই খুঁজছিল নিজের জন্য। মা বাবা কিছু বলার আগেই হাত তুলে তাদের থামিয়ে বুদ্ধি করে বলে উঠল,"বিয়েটা তো আমি করব। আর আমি একজন বুদ্ধিমতী, সহজ সরল উদার মনের সহধর্মিণী খুঁজছি। আপনি রাজি থাকলে এই চাকরিটা করতে পারেন। বাকিটা আপনার উপর।" দিয়ার ছেলেকে দেখে পছন্দ হয়েছিল। এখন ওর এই সুন্দর কথা বলা দেখে হেসে জবাব দিল,"বেশ, আমি রাজি। এই চাকরিটা করতে আমার কোন আপত্তি নেই।" এই কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল সবাই।
---------শেষ---------