ছবিঋন- ইন্টারনেট
শালুর মা
অশোক দাশ
হা -হা হো- হো করে হাসছে পাগলিটা, হাততালি দিচ্ছে মহানন্দে। ডেকে ডেকে সকলকে শুধায়, দেখ- দেখ কেমন মজা, বলে হা- হা করে হাসতে- হাসতে বড় রাস্তা দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। পাগলীর কথা শুনে সকলে বিস্ময় হতবাক। এইমাত্র এলাকার দ্রর্দন্ড প্রতাপ প্রভাবশালী কানাইবাবুকে, গ্রেফতার করে হাতকড়া দিয়ে পুলিশ জিপে করে নিয়ে গেছে। সারা গ্রামে স্বস্তির হাওয়া বইছে।
আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে কানাই বাবুর নির্দেশে তার দলবল প্রকাশ্য দিবালোকে শালু সোরেন কে কুপিয়ে -কুপিয়ে খুন করে। কি ভয়ঙ্কর বীভৎস সে দৃশ্য! তার চোখ উপড়ে নেওয়া হয়। মাথা থেঁতলে ঘিলু বের করে রক্ত গঙ্গা বহিয়ে দেওয়া হয়।
তারপর শালুর ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত মৃতদেহ গ্রামের চৌরাস্তার মোড়ে ফেলে রাখা হয়। এবং ঘোষণা করা হয় ওই মৃতদেহ কেউ ছোঁবে না । কেহ অন্তোষ্টিক্রিয়া করবে না । যে করবে তার অবস্থা শালু সোরেনের মতো হবে। ভয়ে কেউ ও পথ মাড়ায় না। পথে পড়ে পড়ে মৃতদেহ পচা দুর্গন্ধ বের হয়। শেয়াল শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়।
শালু ছিল আদিবাসী যুবক। তার অপরাধ তাদের এলাকার সকলকে বনাঞ্চলের অধিকার নিয়ে লড়াইয়ে মহাজনদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। তাই মহাজনের চোখে সে ছিল শত্রু।তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
সেদিন থেকেই শালুর মা ,সন্তান হারার বেদনায়, কেঁদে কেঁদে উন্মাদ হয়ে গিয়েছে। আজ শালুর হত্যাকারীকে পুলিশ ধরেছে শুনে সে আর স্থির থাকতে পারেনি। তার পোড়া ভগ্নপ্রায় গৃহ হতে রাস্তায় চলে এসেছে। এবং আনন্দে আবেগে হাততালি দিয়ে সকলকে ডেকে -ডেকে চিৎকার করে বলে চলেছে ,হলো তো সাজা কেমন মজা, পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।
শালুর মায়ের গগনভেদি চিৎকার আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে--- শালুর লড়াইয়ের রক্ত ভেজা ভূমিতে। দাবানল হয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে অত্যাচারীর অহংকার।
=======================
অশোক দাশ
ভোজান ,রসপুর ,হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
মোবাইল নম্বর-৮৩৪৮৭২৫৩৩৩