ছবিঋন- ইন্টারনেট
লাউঞ্জে
প্রতীক মিত্র
হোটেলে বুকিং ছিল। লাউঞ্জে বসে। লাগেজ কম নয়। ঘর পরিষ্কারের তখনও একটু বাকি। লাউঞ্জটা বড়। সেখানেই ছোট্ট ছেলের সাথে খেলায় ব্যস্ত ছিল তুহিন।ইপ্সিতা বাথরুমে গেছে।ট্রেনের বাথরুম যা নোংরা !ফেরার সময় দ্যাখে তুহিন মশগুল এক মহিলার সাথে কথা বলতে।দুর থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বোঝা না গেলেও এটুকু আন্দাজ করাই যায় মহিলা বেশ আকর্ষণীয়া।এবং হাত পা নেড়ে কথা বলার ধরণটাও দারুণ।তুহিনের অগুন্তি বান্ধবীর একজন ভেবে গুরুত্ব না দিয়ে হোটেলের চারিদিকটা একটা চক্কর লাগিয়ে ফিরে দ্যাখে তুহিনের মুখভার। কি ব্যাপার? এ যে সে বান্ধবী নয়। এ সেই নবমিতা যার কথা তুহিন বিভিন্ন সময়ে বলেছিল। ইপ্সিতার বাবা-মা'র প্রায় হাতে পায়ে ধরে তুহিনের বাবা-মা এই বিয়েটা ঠিক করেছিল। ছেলেকে দাম্ভিক শয়তান নবমিতার হাত থেকে বাঁচাতেই হবে।যে করেই। পাত্রীর একটাই শর্ত।সুন্দরী হতে হবে। অবশ্য ইপ্সিতার মধ্যে আরো অনেক বাড়তি গুণ আছে।
সে যাই হোক, এই সেই মহিলা যার সাথে খটমটির পর ইপ্সিতা আসে তুহিনের জীবনে। ফলে মহিলাকে অতটা হালকাভাবে না নেয়াই ভালো।এবং এখন তো একদমই নয় যেহেতু তুহিনের মুখটা গোমড়া হয়ে গেছে। তুহিন আলাদা করে ইপ্সিতাকে যেটা মনে করাচ্ছে সেটা হল নবমিতার বাচ্চাটা। কি মিষ্টি অথচ কি অসহায়! নবমিতা স্বামীর সাথে থাকে না।অথচ ডিভোর্স হয়নি। এত আত্মবিশ্বাসী তুহিন হঠাৎই কেমন যেন ঘাবড়ে গেছে বলে মনে হয়।বলে, ওদের বোধ হয় না এলেই ভালো ছিল।ইপ্সিতা বোঝানোর চেষ্টা করে, এখানে ওদের কিছু করার নেই,নবমিতাই তো যেচে তুহিনের সাথে দেখা করেছে।তুহিন মানতে চায় না।সে ছোট্ট ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর হাতটা ধরে ইপ্সিতার। সেদিন রাতটা অস্বস্তির মধ্যেই কাটে।কোথাও আলাদা করে ঘোরা হয়না।সকাল হলে ইপ্সিতারা ঘুরতে বেরোলে সেখানে হাজির হয় নবমিতা। ইপ্সিতা তৈরিই ছিল জবাব দেওয়ার জন্য যদি সে ঝুলে পড়তে চায়। নবমিতা সেইসব কিছু না করেই শুধু একটু গলা তুলে নিজের মেয়ের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে তুহিনকে বলে, " এ সোনাই নয় গো! ভয় নেই! সোনাই বাঁচেনি!" বলে সে বেরিয়ে যায়। না, ইপ্সিতা আর তুহিনের দিকে তাকায়নি। কেননা সে জানে তাকালে তুহিনকে আরো দিশেহারা মনে হবে। এখন অবশ্য ইপ্সিতারও মনে হচ্ছিল ওরা এখানে ঘুরতে না এলেই পারতো।
----------------------
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235,