মানস কুমার সেনগুপ্ত
খুব ছোটবেলা থেকেই আমি সঙ্গীত অনুরাগী। তার অনেক কারণও ছিল। আমার পাশের বাড়ির প্রতিবেশী দাদু - দিদার বাড়িতে আমার দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যেত। সেখানে ছিল আমার শৈশবের অন্যতম আকর্ষন একটি নামী কোম্পানির ভালভ সেট রেডিও। দাদু, দিদার তিন ছেলে মেয়ে, মানে দুই কাকু এবং এক পিসি আমাকে খুব ভালোবাসতেন। আমার যখন দশ বছরও পূর্ণ হয়নি , সকালে উঠেই ছুটতাম ওই রেডিওর আকর্ষণে বড় কাকু বলতেন রেডিওটা চালিয়ে দিতে, সকালের সংবাদ শুরুর আগে। এরপর গানের যে কোনও অনুষ্ঠান আমার কাছে ছিল এক ভালোলাগার বিষয়। যদিও স্কুলের সময় হলে আমাকে সেই আকর্ষণ ছেড়ে চলে যেতে হতো । আর রবিবার এলে তো কথাই নেই। শিশুমহল, অনুরোধের আসর সহ আরও কত আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। আমার রেডিও প্রীতি দেখে বাবা আমাকে একটি ট্রানজিস্টর উপহার দিলেন। আমাকে আর পায় কে? বাড়িতে বাবার ন' ভাই বাবু কাকার ছিল গান - বাজনায় অগাধ অনুরাগ। ভালো তবলা বাজাতে পারতেন। ছিল ভালো গানের গলাও। আসলে আমার গানের প্রতি অগাধ অনুরাগ ওই বাবু কাকার সুত্রেই পাওয়া। ছিলেন দক্ষ অনুষ্ঠান সংগঠক। দমদম অঞ্চলে ষাট এর দশকের শেষ দিকে মতিঝিল ইনস্টিটিউট এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে এলেন মান্না দে। সঙ্গে তবলায় রাধাকান্ত নন্দী। সেটাই আমার প্রথম ওই মাপের এক শিল্পীকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ। এ যেন সত্যিই জীবনে প্রথম মেঘ না চাইতেই জলের স্বাদ পেলাম। পরের বছর ওই একই সংস্থার অনুষ্ঠানে গাইতে এলেন আমার আর এক প্রিয় শিল্পী স্বর্ণ কন্ঠের অধিকারী গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। সেও আমার প্রথম জীবনে একজন সংগীতের ঈশ্বরকে কাছ থেকে দেখা। সত্তর দশকের শেষ দিকে বাবা একদিন একটি টিকিট নিয়ে এসে বললেন আগামীকাল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের অর্কেস্ট্রা সহযোগিতায় ভারতীয় সঙ্গীতে সাক্ষাত সরস্বতী লতা মঙ্গেশকরের অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ আমার জীবনে সত্যিই 'মেঘ না চাইতেই জল'। লতাজি শুরু করেছিলেন সেই বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান 'এ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো, জ্যারা আঁখো মে ভর লো পানি' গানটি দিয়ে। ওই রকম একটি গানের পর চলে গেলেন ' হরে রাম হরে কৃষ্ণ ছবির একটি বিখ্যাত গান 'ফুলো কা তারোকা সব কা ক্যাহনা হ্যায়'গানটিতে। রাহুল দেব বর্মনের সুরে দেব আনন্দের ছবিতে নবাগতা ষোড়শী জীনত আমনের লিপে সেই গান। লতাজির কন্ঠস্বরেও ধ্বনিত হতে লাগলো এক ষোলো বছরের কিশোরী কন্ঠ। যেন এক ঘোর লেগে যাওয়া অনুভব, যা আজও ভুলিনি। বেশ কয়েকটি হিন্দি ফিল্মি গানের পর শ্রোতাদের অনুরোধে গাইলেন কয়েকটি বাংলা গানও। সেই সঙ্গীত অনুষ্ঠান শোনার অভিজ্ঞতা আমার কাছে আজও স্বপ্নের মতো।
====================
মানস কুমার সেনগুপ্ত,
১৭/৮, আনন্দ মোহন বসু রোড,
দমদম,
কলকাতা।
To Know More Deals & Offers : CLICK HERE