স্বাধীনতার আঠাত্তর বছর
সমীর কুমার দত্ত
'স্বাধীনতা ' বড়ো কথা। না পেলে অস্বস্তিতে থাকা। পেলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মতো অবকাশ নেই। না পেলে পরাধীনতার গ্লানি বহন করা আর শাসকের গোলামী করে বেঁচে থাকা।এ ঠিক যেন দিল্লিকা লাড্ডুর মতো।জো খায়া ও পস্তায়া, জো নেহি খায়া ও ভি পস্তায়া।
অনেক কষ্টার্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। কতো না দেশপ্রেমী তাঁদের বহুমূল্যবান প্রাণকে দেশের জন্য উৎসর্গ করে গিয়েছেন তাঁদের কাছে আমরা ঋণী। তাঁরা আমাদের প্রণম্য।কিন্তু তাঁরা কি জানেন তাঁদের বহুমূল্যবান প্রানের মূল্যে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি তা পরাধীনতারও বেহাদ্দ? শুধু মাত্র আমরা একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক এটুকু পরিচয় দিতে পারি। খাতায় কলমে ভারত এক বৃহ্ৎ গণতান্ত্রিক দেশ। স্বাধীনতার আটাত্তর বৎসর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি আশানুরূপ হয়নি। ফলে বেকার সমস্যা আজও অক্ষয় অমর হয়ে আছে। রাষ্ট্রনেতাদের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সাম্প্রদায়িকতা প্রবল ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারসঙ্গে খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, শোষণ উল্লেখযোগ্য ভাবে ঘটে চলেছে। সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলতে হয় সৈয়দ আহমেদ খান ও মোহম্মদ আলী জিন্নাহ প্রণীত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে গেলো। তাতে হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায় কি পুরোপুরি আলাদা হতে পেরেছে? পারে নি। তখন দেশ নেতারা কিডাবে এটা মেনে নিয়ে ছিলেন। তার খেসারত ভারতীয় মুসলিমরা দেবেন কেন? ভারতীয় মুসলিমরা য়ারা ভারতে রয়ে গেলেন তাঁরা ভারতীয় নামে পরিচিত। তাঁরাও তো দেশের স্বাধীনতা জন্য লড়েছেন ,প্রাণ দিয়েছেন।সকল ভারতীয়দের সমান অধিকার , দায়িত্ব ও কর্তব্যকে প্রাধান্য দিয়ে সংবিধান তৈরি হলো। সুতরাং সকল নাগরিকের সংবিধানের মান্যতা দেওয়া উচিত এবং ভারতকে একটি বৃহৎ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করা উচিত আর এটাই হবে শত শত শহীদের প্রাণের মূল্য। ভারতের সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করলে গর্বে বুক ফুলে ওঠে। বিশ্বের অন্যতম সংস্কৃতির স্থল হলো আমাদের এই ভারতবর্ষ।
স্বাধীনতা লাভের পূর্বে স্বাধীনতার অক্লান্ত সৈনিক, যিনি তাঁর আই এন এ বাহিনীর সাহায্যে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে ইম্ফলে স্বাধীনতার প্রথম পতাকা পুঁতে ছিলেন, সেই নেতাজী সুভাষচন্দ্রকে দেশত্যাগী হতে হলো। ভারতের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য 'অহিংসা'। আর সেই অহিংসার পূজারী মহাত্মা গান্ধীকে নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হলো স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই। কিন্তু কাদের জন্য এই দুই মহান নেতাকে সরে যেতে হলো?এর উত্তর জানার অধিকার প্রতিটি ভারতবাসীর আছে। যীশুর উদ্দেশ্যে লেখা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে পারি —"একদিন যারা মেরেছিল তারে গিয়ে রাজার দোহাই দিয়ে/এ যুগে তারাই ধর্ম নিয়েছে আজি/মন্দিরে তারা এসেছে ভক্ত সাজি।"
আজ স্বপ্নের ভারতবর্ষের এ কি অবস্থা! কি নেই এদেশে এখন। বেকারি, দারিদ্র্য, খুন-জখম, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, দলাদলি, রাজনৈতিক হিংসা ইত্যাদিতে ভরে গেছে সারা দেশ। যা ব্রিটিশ রাজত্বেও দেখা যায় নি। তার কারণ ব্রিটিশ রাজত্বে শাসন ব্যবস্থা ছিলো কঠোর, যদিও লোকসংখ্যা তখন অনেক কম ছিলো। তবুও আমরা ইংরেজকে প্রতারক, শোষক, অত্যাচারী, আগ্রাসী প্রভৃতি নানা আখ্যায় ভূষিত করেছি। আজ যা দেখছি আমরা,তা ব্রিটিশকেও লজ্জা দেয়।
একে তো স্বাধীনতার পরেই দেশ পিছিয়ে পড়ার পিছনে রয়েছেন আমাদের তথাকথিত পরিকল্পনাকারীরা যাদের দূরদৃষ্টির অভাবে এ দেশের খনিজসম্পদ সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযোগ্য সদ্ ব্যবহার করা হয়নি অথচ এদেশ প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদে পরিপূর্ণ। ফলে না হয়েছে কৃষির উন্নতি আর না হয়েছে শিল্পের উন্নতি। দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য। তার ফলে বেকারি বেড়েছে, খুন খারাবি, চুরি ডাকাতি বেড়েই চলেছে। স্বাধীনতা অতিক্রান্ত হতে চললো আটাত্তর বছর।এই সুদীর্ঘ সময়কালে সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি হয়েছে নৈতিকতার। নৈতিক চরিত্র হলো আমাদের ব্যাকবোন যা না থাকলে সোজা হয়ে কেউ দাঁড়াতে পারে না।
যে দেশে দুর্নীতি বিরাজ করে সে দেশ কোন দিনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। ব্রিটিশ শাসনাধীনে ভারতীয়দের নৈতিক চরিত্র তলানিতে এসে ঠেকেছে। আজ শিক্ষা থেকে শুরু করে সর্বস্তরে যে দুর্নীতি চলেছে তাতে দেশ অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে।এর আমূল সংস্কারের দরকার। সুভাষচন্দ্র চেয়ে ছিলেন গণতন্ত্রের পূর্বে ভারতীয়দের নৈতিক চরিত্র সুগঠিত করার। কারণ গণতন্ত্রে এটি অপরিহার্য। একটা ভোটের মূল্য অনেক। কিন্তূ দুর্ভাগ্য এই যে তাঁকে দেশ স্বাধীন হবার অনেক আগেই নিরুদ্দিষ্ট হতে হলো। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই দেশ হারালো মহাত্মা গান্ধীকে। স্বাধীনতার মহান সৈনিক সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান ও কবি রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু স্বাধীনতার পূর্বেই। যা হোক শিক্ষা আনে চেতনা আর চেতনা আনে বিপ্লব, বিপ্লব আনে পরিবর্তন। সর্বাগ্রে চাই শিক্ষা। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। সেই শিক্ষা যে শিক্ষা নৈতিক শিক্ষা দেয়। ন্যায় নীতির চেতনা জন্মে। স্বার্থপরকে করে তোলে নিঃস্বার্থ পরায়ন। বেকারি দারিদ্র্য নিয়ে বেঁচে থাকা দেশের যুব সম্প্রদায় রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে যতটা না ভালবাসায়, ততোটা ক্ষমতা ও অর্থের লোভে। এখন রাজনীতি হলো বিনা মূলধনের ফাটকা ব্যবসা। তাতে কারো কপাল খোলে আবার কারো কপাল পোড়ে। ওপর তলার নেতা মন্ত্রীরা থাকেন বহাল তবিয়তে। থাকেন অক্ষত। প্রাণ দেয় গ্রাস রুট লেভেলের গরীব সদস্যরা। ফল ভুগতে হয় তাদের পরিবারকে। দেশের যুব সম্প্রদায়কে সঠিক পথে চালিত করার আর একজন বিবেকানন্দ নেই। তাই দেশের আজ বড় দুর্দিন।
পরিশেষে বলি আইন শৃঙ্খলার যা দূরাবস্থা তাতে গণতন্ত্র কতোদিন বেঁচে থাকবে তা দেখার। কিন্তু এভাবে তো দুষ্কৃতিদের জন্য কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অবহেলিত হতে দেওয়া যায় না। দেশকে যে কোন মূল্যে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে ।আজ এই স্বাধীনতা দিবসের পুণ্য লগ্নে তাই আমাদের শপথ হোক দারিদ্র্য মোচনের, প্রকৃত শিক্ষা প্রসারের, ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হওয়ার। আমাদের শপথ হোক উন্নয়নের। আমাদের শপথ হোক দূর্নীতি মুক্ত প্রশাসন ও শোষণমুক্ত সমাজ আর শপথ হোক চরিত্র গঠনের।দেশকে প্রগতিশীল,মহান দেশে পরিণত করতে আপামর ভারতবাসীকে শপথ নিতে হবে।
============================
Samir Kumar Dutta
Pune, Maharashtra
To Know More Deals & Offers : CLICK HERE