ভূতের ভয়ে
:
শ্যামল হুদাতী
আমরা চার বন্ধু, অর্ণব, দেবদূত,অমর এবং আমি,কার্শিয়াং-র উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেকারে করে কার্শিয়াং শহরে পৌছালাম। এক সুন্দর ছিমছাম শৈল শহর - মনে অমোঘ আকর্ষণ দেখতে তার রূপের বহর। আনমনে ফিরে পাই নতুন জগৎ প্রাকৃতিক অনিন্দ্য সুন্দর বাস্তবতা। সবুজ সৌন্দর্যের ডালি, ঢালে সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ পুরোপুরি নেচে ওঠে মায়াবী আলোয় মেঘ রোদ্দুরে লুকোচুরি।
আমরা গেস্ট হাউসে পৌঁছে স্নান সেরে নিলাম সবাই। গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার বিশু আমাদের জন্য ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করল। আমরা বেরিয়ে পড়লাম টাইগার হিল অবসেরভেসন স্টেশনের উদ্দেশ্যে। একটা জিপ ভাড়া করলাম। রাস্তায় দেখলাম নিচে এক অপরূপা পাহাড়ি নদী খিল খিল মুক্ত ঝরা ঝর্ণা হাসি নিয়ে বয়ে চলেছে । ফেরার পথে আমাদের জিপের ড্রাইভার এক অর্কিড বাগানে নিয়ে গেলেন। খুব সুন্দর সুন্দর অর্কিড আর সাকুলেন্ট গাছ আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করলো। আমরা ঠিক করলাম আবার বিকেলে অর্কিড বাগানে আসবো। ড্রাইভার সতর্ক করে বললেন, " না বাবু এখানে সন্ধ্যেবেলা অব্দি আমি থাকবো না"।
অর্ণব প্রশ্ন করল কেন ?
"জায়গাটা সুবিধার নয়" ড্রাইভার বললেন
"আমরা চারজন আছি তোমার ভয় কিসের", দেবদূত বলল।
"আমাদের সাথে অর্ণব বক্সার আছে তুমি কোন চিন্তা করো না", অমর বলল।
"না বাবু কোন পালোয়ান বা বক্সারের কাজ নয়, এ এক ভৌতিক খেলা" ড্রাইভার বলল।
এ কথা শোনার পর আমরা বেশ কৌতূহল চোখে ড্রাইভারকে প্রশ্ন করতে লাগলাম।
"তুমি কি কোনদিন ভূত দেখেছো ?
দেখতে কেমন?
তুমি কি আমাদের ভূত দেখাতে পারবে?"
আমরা একের পর এক প্রশ্ন করে গেলাম।
" হ্যাঁ বাবু হ্যাঁ, সন্ধ্যেবেলায় আসলেই দেখতে পাবেন এখানে ভূত নাচানাচি করে"
ড্রাইভার জোর গলায় বলল।
আমরা সমস্বরে হো হো করে হেসে উঠলাম।
আমরা সবাই ঠিক করলাম সন্ধ্যেবেলায় এখানে আমরা আসবো আর ভূত দেখবো। ড্রাইভার বারবার আমাদের নিষেধ করল।
কে শোনে ড্রাইভারের কথা!
সন্ধ্যেবেলায় ড্রাইভার কিছুতেই এই অর্কিড বাগানে আসবেনা। আমরা বুঝিয়ে সুঝিয়ে অনেক কষ্টে রাজি করালাম এক শর্তে, গাড়ি একটু দূরে থাকবে।
সবাই ক্যামেরা নিয়ে অর্কিড বাগানের গেটে পৌঁছালাম। একটু ভেতরে ঢুকতেই প্রচন্ড বৃষ্টি। আমরা দৌড়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম।
ড্রাইভার শুধু হাসলো।
"দেখুন বাবু কোথায় বৃষ্টি নেই , শুধু বাগানটার সামনেই বৃষ্টি হলো, এটা হয় না কি?"
ড্রাইভারের প্রশ্ন আমাদের দিকে।
আমরা ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না। শুধু বললাম, হতেও তো পারে?
পরের দিন নব উদ্যোগে পৌঁছালাম অর্কিড বাগানে। ক্যামেরা হাতে অর্ণব একটু আগে এগিয়ে গেল। আমরা হঠাৎ দেখলাম ,আমাদের কোন ক্যামেরা কাজ করছে না। আমরা একটু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
"আমি আছি চল এগিয়ে", অর্ণব দৃঢ় কন্ঠে বলল। একটু পরে হঠাৎ অর্ণব যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো। পিঠে কে যেন তাকে আঁচড়ে দিয়েছে। অর্ণবকে দেখলাম খুব ভয় পেয়ে গেছে। আমরা দৌড়ে গাড়িতে উঠলাম।
জ্যাকেটের ওপরে কোন দাগ নেই, জামাতেও কোন চিহ্ন নেই। কিন্তু ভেতরে পোড়ার/আঁচড়ানোর দাগ স্পষ্ট। মনে হচ্ছে কোন হিংস্র প্রাণীর নখের আঁচড়। এ কোন রহস্য!
আমরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমত, আমাদের সবার ক্যামেরা কেন একসাথে কাজ করল না।
দ্বিতীয়তঃ, অর্ণবের জ্যাকেট বা জামায় কোন আঁচড়ের দাগ নেই। এতো এক চরম রহস্য!
আমরা সবাই মিলে যখন এই বিষয়ে আলোচনা করছিলাম তখন হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গেল।
একটু পরে, কেয়ারটেকার বিশু মোমবাতি নিয়ে দৌড়ে এসে বললো "আমাদের এখানে কোনদিন লোডশেডিং হয় না"। হঠাৎ দেখি আমাদের পাশের বাড়িতে লাইট জ্বলছে। " ফিউজটা দেখ" সবাই মিলে বিশুকে বললাম।
'এখানে আসার আগে আমি ফিউজটা দেখে এসেছি, কোন গোলমাল নেই' - বিশু জোর দিয়ে বলল।
হঠাৎ দেখি, জানালাগুলো বন্ধ হচ্ছে আবার খুলছে।
মনে হলো বাইরে হয়তো খুব ঝড় উঠেছে।
'না কোন ঝড় তো হচ্ছে না' বিশু জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে বলল।
বারবার এরকম জানলা গুলো বন্ধ হচ্ছে আবার হুট করে খুলেও যাচ্ছে। 'এ তো এক ভৌতিক ব্যাপার' বিশু একথা বলে চলে গেল।
আমরা বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। সবাই মিলে এক বিছানায় একসাথে বসে কালকে ফিরে যাওয়ার প্রোগ্রামটা ঠিক করলাম। আমরা বাথরুম যেতেও ভয় পাচ্ছিলাম।
কলকাতা এসে অর্ণবকে ডাক্তার দেখানো হলো। ডাক্তারবাবু জোর গলায় বললেন, "সেন্টিপিড, এক পাহাড়ি বিষাক্তপোকা অর্ণবের পিঠে কামড়েছে" - ভূত বলে কিছু হয় না।"
আমরা স্বস্তি পেলাম।
--------------------------------------------------------------------
শ্যামল হুদাতী
৩৫৭/১/১৩/১, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড
কলকাতা - ৭০০০৬৮
To Know More Deals & Offers : CLICK HERE