বাবলাদার মামার বাড়িতে
দীপক পাল
কলেজ স্ট্রিটে একটা ঝাঁকামুটের সাথে সংঘর্ষের পরে ডান পায়ে চোট পেয়ে সেই যে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাড়িতে ঢুকলো বাবলাদা। আজ কতদিন হলো তার আর কোনো দেখা নেই। এদিকে বাবলাদা ছাড়া বিশ্বরূপ সৌম্য দুজনের আড্ডাটা মোটেই জমছেনা। একটু কথাবার্তার পরেই ফিরে যায় ওরা বাড়িতে। মোটেই ভালো কাটছেনা। এক শনিবার সন্ধ্যায় ঠিক করলো ওরা কাল রবিবার পড়ার পর বাবলাদার বাড়ি যাবে। কথামত পরদিন সকালে বাবলার বাড়ির সদর দরজা খুলে সিঁড়ির নিচে থেকেই সমস্বরে ডাকল, ' বাবলাদা, বাড়িতে আছো '। বাবলাদার কোনো সাড়া শব্দ নেই, কিন্তু মাসিমা খুন্তি হাতে বেরিয়ে এসে একটু অবাক হয়ে বললো,
- ' ও সৌম্য বিশ্বরূপ এসেছিস, তো ভালো হয়েছে, আয় ওপরে উঠে আয়। বাবলা ওর ঘরেই আছে দেখ গিয়ে '।
- ' বাবলাদার কোনো পাত্তা নেই ভালো আছে তো '। সৌম্যর প্রশ্ন মাসিমাকে।
মাসিমা উত্তরে বললেন, - ' আর কি বলবো তোদের, একদিন খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাড়িতে ঢুকে আমাকে বললো পড়ে গিয়ে পায়ে চোট লেগেছে চুন হলুদ লাগিয়ে দাও। দেখলাম ডান পা টা বেশ ফুলেছে। বললাম আগে স্নান করে আয় আমি চুন হলুদ তৈরি করি। তুই স্নান করে ফিরলে লাগিয়ে দেবো। এখন কিন্তু ওর পা টা ভালো হয়ে গেছে। এই দেখ না সকালে বাজার করে আসলো। কিন্তু ঘর থেকে আর বেরোয় না। সারাদিন গল্পের বই নিয়ে বসে থাকে। কতদিন বিকেলে বলি যা পার্কে যা, সৌম্য বিশ্বদের সাথে একটু দেখা করে আয় দেখবি মনটা ভালো লাগবে। কিন্তু কে শোনে। তোরা এসেছিস, দেখ এবার নিশ্চই ওর ভালো লাগবে '। মাসিমা রান্নাঘরে ঢুকলেন। সৌম্য বিশ্বও বাবলার ঘরে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে দেখলো বিছানার ওপর খবরের কাগজটা বিছানো আর বাবলাদা তার ওপর হুমড়ি খেয়ে মনোযোগ দিয়ে কি যেন বিড় বিড় করে পড়ছে। ওরা বুঝতে পারলো মাসিমার সাথে ওদের কথপোকথন কিঞ্চিৎ বাবলাদার কানে গেছে তাই এত মনোযোগ। বিশ্বরূপ ও সৌম্য দুজন পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো ও একজন গলা খাকারি দিলো। বাবলা একবার মুখ তুলে তাকালো তারপর আবার কাগজের দিকে চোখ ফেরালো। সৌম্য, - ' কিগো বাবলাদা পাত্তা দিচ্ছ না যে আমাদের কি হলো?'
- ' কেনো রাগ করবনা তোদের ওপর বল দিকিনী, তোরা কি আমার কথার কোনো গুরত্ব দিস? আর বিশ্বটা তো একটা রাম ফচকে। ফোচকেটা সেদিন বাস ভর্তি লোককে শুনিয়ে আমাকে তাচ্ছিল্য করে কি বলে পালালো তুই তো সেটা দেখলি এবং শুনলি কিন্তু ওকে কিছু বললি না, তবে তোদের সাথে কি করে মিশি বল?'
-' ভারী ভুল হয়ে গেছে বাবলাদা,তুমি কিছু মনে করোনা।'
বিশ্ব, তুই এখন কি বলবি বল?'
-' আমি না ঠাট্টা করতে গিয়ে একটু ভুল করে ফেলেছি। বাবলাদা, আর কোনোদিন হবেনা। মাফ করে দাও, তুমি আবার পার্কে আসো। তোমাকে ছাড়া আড্ডা জমে না ।' বিশ্বরূপ বলে ।
এমন সময় মাসিমা একটা বড়ো রেকাবি করে তিন জায়গায় গরম লুচি আর আলুর তরকারি এনে হাজির আর তা থেকে সুন্দর সুবাস বেরোচ্ছে। সবাই রেকাবি থেকে একটা করে প্লেট উঠিয়ে নিল। মাসিমা বললেন,
-' তোমরা সবাই খেতে থাকো আমি বাবলার বাবাকে খাবারটা দিয়ে আসি '। মাসিমা বেরিয়ে গেলেন। ওরাও এই মুখরোচক খাওয়ায় মন দিল। খেতে খেতে সৌম্য ও বিশ্বরূপ বাবলাদাকে বেশ হাসিমুখে খেতে দেখলো। তার মানে বাবলাদার রাগ কমে গেছে। খাওয়া শেষ হতেই মাসিমা আবার লুচি তরকারি নিয়ে এলো। সৌম্য বিশ্বরূপ আর নিলো না,বাবলা আরও চারটে লুচি তরকারি নিলো। খাওয়া শেষ করে বাবলাদা একটা ঢেঁকুর তুলে বললো,
-' ঠিক আছে আজ বিকেল থেকেই পার্কে তোদের সাথে দেখা হবে রোজ। মাফ করে দিলাম তোদের।'।
-' কোথাও কাছেপিঠে বেড়াতে গেলে হয়না, কি বল সমু?' বিশ্ব বলে।
-' ঠিক বলেছিস বিশ্ব, বাবলাদা কি বলে?'
-' কথাটা তোরা মন্দ বলিস নি কিন্তু যাবো কোথায় '?
-' কেনো বড়ো মামার বাড়ি রাঁচিতে ঘুরে আয় না দিন পাঁচেকের জন্য '। চায়ের ট্রে হাতে ঘরে ঢুকে মাসিমা বললেন। একটা ছোট টেবিল টেনে বিছানার কাছে এনে চায়ের ট্রে টা তার ওপর রেখে আবার রাঁচিতে ঘুরে আসার কথা বললেন।
-' ওরাতো বারেবারে যেতে বলে, ঘুরে আয়না সৌম্য আর বিশ্বকে সাথে নিয়ে। ওখানে হুড্রু আর জোনা ফলস দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে, দেখবি '।
-' যাবো বলছো? কিন্তু দুর যে বড়ো, কি করে যাবো '?
-' সে তোর বাবাকে বলে আমি ব্যবস্থা করে দেবো, তোরা খালি মনস্থির কর বুঝলি '?
বাবলাদাকে বিকালে পার্কে আসতে বলে ওরা মাসিমাকে প্রণাম করে বেরিয়ে এলো।
প্রাক সন্ধ্যায় বাবলা পার্কে গিয়ে বিশ্বরূপ আর সৌম্যকে কোনের বেঞ্চিতে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলো। ওদের পাশে বসতে বসতে বললো,
-' জানিস আমাদের রাঁচি যাওয়ার একটা ব্যবস্থা হচ্ছে। দুপুরে খেতে বসে মা বাবাকে আমাদের বড়ো মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে রেলের টিকিটের কথা বললো। বাবা খাওয়ার পর ফোনে কার সাথে যেনো রেলের টিকিটের কথা নিয়ে আলোচনা করছিল। বাবা ইস্টার্ন রেলের এক প্রাক্তন অফিসার হাওয়ার সূত্রে ভিআইপি কোটায় একটা চেষ্টা করছে। দেখা যাক কি হয়। টিকেট হাতে পেলে পরে প্ল্যান করা যাবে, কি বল '?
-' ঠিক বলেছো বাবলাদা ' সৌম্য বলে।
কিন্তু তারপরেও তাদের আলোচনা সেই রাঁচিকে নিয়েই হতে থাকলো। কিন্তু পরের দিনই সন্ধ্যেবেলা বাবলা দুটো রেলের রিজার্ভেশন টিকিট এনে হাজির। onward & return দুটো টিকেট। সৌম্য ও বিশ্বরুপের চোখের ওপর দোলাতে দোলাতে বললো,
-' এই দেখ আমাদের রাঁচি যাওয়ার আর অসার টিকেট। শুক্রবার রাত দশটা দশের ট্রেন রাঁচি স্টেশনে পৌঁছব পরদিন সকাল সাতটার পরে ও আবার বুধবার রাত দশ টায় ছেড়ে হাওড়ায় পৌঁছব বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছটায়। আর বৃহস্পতিবার জন্মাষ্টমী অতএব ছুটি '।
একসাথে সৌম্য আর বিশ্বরূপ চিৎকার করে উঠলো,
-' থ্রি চিয়ার্স ফর বাবলাদা, যুগ যুগ জিও '।
শুক্রবার রাত নটার মধ্যে ওরা হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে গেলো। পৌনে দশটার মধ্যে ট্রেনও প্লাটফর্মে দিয়ে দিলো। সিট, আসলে ব্যাংক খুঁজে মালপত্র ঠিকঠাক গুছিয়ে নিয়ে শোওয়ার বিছানা পেতে হাত মুখ ধুয়ে ওরা ব্যাংকে উঠে পড়লো। ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। ব্যাগ থেকে খাবার বার করে খেয়ে হাত ধুয়ে শুয়ে পড়লো আর শোয়া মাত্র ঘুম।
সকাল সওয়া সাতটায় ট্রেন এসে রাঁচি স্টেশনে দাঁড়ালো। ট্রেন থেকে ঝটপট নেমে একটা কাঁকে যাওয়ার শেয়ার গাড়িতে উঠলো। ড্যামের ঠিক একটু আগে বাবলা গাড়িটা থামাতে বললো। গাড়ি থেকে নেমে একটু এদিক ওদিক তাকালো তারপর উল্টো দিকের একটা হলুদ রংয়ের দোতলা বাড়ি দেখিয়ে বললো,
- ' মনে হচ্ছে ওটাই বড়ো মামার বাড়ি। আয় তোরা রাস্তা ক্রস করে। বাড়ির কল্লিং বেলটা বাজিয়ে দেখি '। কলিং বেল বাজাবার পর একটু অপেক্ষা, তারপর যিনি বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে তিনিই কি বাবলার বড়ো মামা। মাথায় কাঁচা পাকা চুল যার মধ্যে পাকা চুলের সংখ্যাই বেশি ও এলোমেলো, মোটা গোঁফ কাঁচা পাকা না ছাঁটা, গায়ের রং ফর্সার দিকে, চোখে মোটা কাল চশমা আর তার ভেতর থেকে তীব্র দৃষ্টি, রাগের কিনা বোঝা যায় না, গায়ে মোটা গেঞ্জি ও পরনে পাজামা দুটোই সাদা। বারান্দার গ্রীলের গেটটা খুলে দিয়ে ভারী গলায় বললেন, ' ভেতরে আয় '।
বাবলা বারান্দায় উঠে প্রণাম করে জিজ্ঞেস করলো,
-' ভালো আছো মামা '?
- ' আছি। তোর বাবা মা কেমন আছে '?
-' ভালো আছে। মামা, এরা আমার বন্ধু সৌম্য আর বিশ্ব।
সৌম্য আর বিশ্বরূপ মামাকে প্রণাম করলো। মামা বললেন, ' যা ওপরে যা মামী অপেক্ষা করছে তোর জন্য।'
বাবলা দুজনের হাত ধরে টানলো ' চল চল ওপরে চল '।
ওপরে উঠতেই সিঁড়ির মাথায় মামীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো বাবলা। মামিমা বললেন,
-' এলি তাহলে বাবলা আমাদের বাড়ি। আয় বন্ধুদের নিয়ে সোফায় এসে বস। আমি তোর মাকে একটা ফোন করে আসি '।
-' দাঁড়াও মামী একটু, আগে প্রণামের পর্বটা সারি পরে তুমি মাকে ফোন করো।' বলেই ঢিপ করে মামিমাকে একটা প্রণাম করলো। দেখা দেখি বিশ্বরূপ আর সৌম্যও নিচু হয়ে প্রণাম করলো ও নিজেদের পরিচয় দিলো।
-' বাহ্ তোরা কি ভালোরে সব, এখনতো প্রায় প্রণামের চল উঠে গেছে। ঠিক আছে তোমরা বসো আমি আসছি।'
ওরা সোফাতে বেশ আরাম করে বসলো। মামিমা ফোন সেরে ওদের কাছে এসে বাবালাকে বললো,
-' সেই তুই কবে এসেছিলি বলতো তোর মা বাবার সাথে। আর এত বছর পরে এই এলি। মামা মামীর কথা কি মনে পরেনা একটুও। ' মামিমা সৌম্য আর বিশ্বরুপের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ কি মনে করে কাকে ডেকে ওঠে,
-' এই সুমতি, কিরে তোর ময়দা মাখা হয়েছে?'
-' হয়ে গেছে মা, তুমি আসো।' রান্নাঘর থেকে ভেসে এলো কথাটা।
- ' চলিরে, তোদের তো খুব ক্ষিদে পেয়েছে নিশ্চয় '। বলে মামিমা রান্নাঘরে ঢুকে গেলো।
তিনজন নিচু গলায় কথা বলতে লাগলো। ওদিকে
রান্নাঘর থেকে লুচি ভাজার গন্ধ আসছে। আর এর পরে বড়ো ডিসে করে ধোঁয়া ওঠা লুচি আর আলুর দম মামী আর সুমতি টেবিলে রেখে ওদের টেবিলে এসে বসতে বললো মামী। ওরা উঠে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো কিন্তু এত গরম লুচিতে হাত লাগাতে পারল না।
-' খুব গরম নারে '? মামিমা বললো। তারপর মেয়েটাকে
বললো, ' যা নিচে গিয়ে বাবাকে নিয়ে আয় '। মেয়েটা নিচে চলে যেতে মামিমা আবার বললো,
-' জানিস বাবলা ও যখন একেবারে ছোট্ট ছিল তখন তোর মামা ওকে আমার কাছে এনে বললো,
-' একে তুমি যত্ন করে রাখতে পারবে '? আমি অবাক হয়ে বললাম, ' সেকি, এক দীপকে নিয়েই আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছে তার ওপর ওকে আমি কি করে দেখভাল করবো বলতো '? মামা তখন যা বললো সেটা মর্মান্তিক।
-' দেখো ওর বাবা ওর পাগলী মাকে central instt. এ ভর্তি করে দিয়ে একটু আসছি বলে সেই যে চলে গেলো আর আসলো না। এদিকে ওই পাগলা গারাদে কে ওকে দেখে। তাই ওকে নিয়ে এলাম তোমার কাছে। ওর মা ভালো হয়ে গেলে ওকে নিয়ে যাবে। ততদিন আমরা ওকে দেখি। এরপর থেকে ও আমাদের কাছেই থাকে। আমাকে মা আর তোর মামাকে বাবা বলে ডাকে '। বাবলা বলে,
-' সেকি ওর মা আর ভালো হয়নি '?
-' হয়েছে তো, ভালো হয়ে একবার এলো, বললো ঘরটাকে একটু ঠিকঠাক করে নিয়ে ওকে নিয়ে যাবে। তারপর আরো একবার এসেছিল কিন্তু মেয়েটা ওর কাছে কিছুতেই যায়নি। চিৎকার করে মাত করে দিয়েছে। বলেছে আমি রোজ আসবো ওকে নিতে, কিন্তু সফল হয়নি। এখন ওর মা আর একটা বিয়ে করে সংসারী হয়েছে।
নে তোরা খেতে থাক, তোর মামা এসে গেছে। ওনার খাবারটা নিয়ে আসি '।
মামিমা রান্নাঘরে ঢুকলো। বড়মামা হাতে একটা ইংরেজী বই নিয়ে বাবলার উল্টো দিকে বসলো। বসে একদৃষ্টে কিছুক্ষণ বাবলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। বাবলা খেতে খেতে একটু যেনো অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো। বড়ো মামা এরপর সৌম্য ও বিশ্বরুপের দিকেও তাকালেন। ইতিমধ্যে মামার লুচি আলুরদমের প্লেট এসে যেতেই বাবলা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। মামা খেতে খেতে হঠাৎ সৌম্য ও বিশ্বরুপের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-' তোমরা কি সব এক জায়গায় থাকো '?
-' হ্যাঁ '। দুজনেই একসাথে উত্তর দিলো।
-' তোমরা কি পড় '?
-' আমরা বারো ক্লাসে পড়ি '। আবার একসাথে বললো।
ওই মেয়েটি এসে মামাকে বললো,
-' বাবা তুমি আগে খেয়ে নাও আর ওদের খেতে দাও '।
-' আচ্ছা তোমরা খাও '। মামিমা মুচকি মুচকি হাসছিল।
-' এই সুমতি, দুটো চেয়ার টেনে নিয়ে আয় এদিকে, আয় আমরাও খেয়েনি । তারপর সবার উদ্দেশ্যে বললো,
-' সুমতি টেবিলে আরও লুচি আর আলুরদম রেখেছে, সেখান থেকে চামচে করে তুলে তুলে নাও যার লাগবে '।
নিঃশব্দে খাওয়া চললো কিছুক্ষণ। আবার মামী বললো,
-' তোরা তো বাবলা বেড়াতে এসেছিস, আমি চা বানিয়ে দিচ্ছি চা খেয়ে নিচে গিয়ে রাস্তা ক্রস করে ওপারে যাবি তারপর সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে দেখবি একটা মাছের বাজার, তার পাশ দিয়ে বাম দিকে যে রাস্তা গেছে সেটা দিয়ে সোজা যাবি, দেখবি দুপাশে তরিতরকারি বিক্রি হচ্ছে। সামনে একটা গেট পাবি। ঢুকে যাবি ভিতরে দেখবি কি ভালো লাগবে। ' তারপর মামার দিকে তাকিয়ে বললো, ' কালকে ওদের বেড়াবার জন্য একটা গাড়ি ঠিক করে দাও না '। মামা বললেন,
-' ঠিক আছে দেখবো '।
চা খেয়ে বেরোলো ওরা যখন তখন সাড়ে দশটা বাজে। কিছুদূর গিয়ে ওরা মাছের বাজারটা দেখতে পেল। বেশ বড়ো মাছের বাজার। অনেকটা কলকাতার অস্থায়ী বাজারের মত। মামিমার কথা মতো ওরা বাম দিকের রাস্তা ধরলো। দুপাশে সবজির বাজার দেখতে দেখতে ওরা পার্কে পৌঁছে গেলো। ভেতরে ঢুকে সত্যি ওদের খুব ভালো লাগলো। অনেকটা বড়ো পার্ক। বাম দিকে কাঙ্কে ড্যামের বিরাট জলাধার। তার পাড় কংক্রিটের তৈরি। বেশ চওরা আর অনেকটা লম্বা। অনেক লোক জলের দিকে মুখ করে বসে আছে । জেলেরা জাল ফেলে মাছ ধরছে। কত যে মাছ উঠছে তার ইয়াত্তা নেই। দলে দলে সেই মাছ একেবারে ওপরে উঠিয়ে আনছে। নৌকা করেও ধরে আনছে মাছ। ওরা হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর এলো আবার বাম দিকের ড্যামের পাহাড়ের গা বেয়ে ফিরতে লাগলো। কি সুন্দর যে এই দৃশ্য ওদের খুব খুব ভালো লাগলো। বিপ্লবী বিরসা মুন্ডার একটা বেশ বড় ও সুন্দর স্টাচু দেখলো। কিছুটা জায়গা জুড়ে ঘেরা আর উল্টো
দিকে অনেক চেয়ার পাতা। হর্ডিংএ লেখা সন্ধ্যে সাতটায় সাউন্ড এন্ড লাইট দেখানো হয়। ওরা স্থির করলো ওরা আজ সন্ধ্যাতেই সাউন্ড অ্যান্ড লাইট দেখবে।
বেলা সাড়ে বারটার মধ্যেই ওরা ফিরলো। দেখলো নিচের একটা ঘর ওদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্নান সারার পর ওরা ওপরে উঠে এলো। মামিমা বললেন,
-' এসে গেছিস যখন তখন বসে পর টেবিলে খাবার রেডি
কেমন লাগলো তোদের ওখানে '। বাবলা বললো,
-' আমাদের সবারই খুব ভালো লেগেছে মামী। সন্ধ্যেবেলা আমরা সাউন্ড অ্যান্ড লাইট দেখবো ঠিক করেছি '।
-' নিশ্চই দেখবি, এখন খেতে বস। সুমতি এদিকে আয়। তুমিও খেতে বসে পরো।' কথটা বললো মামার উদ্দেশ্যে।
খাওয়ার ব্যবস্থাটা হয়েছে ওদের মনের মত। শাক,ডাল সাথে দুরকমের ভাজা, মুরগির মাংস ও চাটনি। খেতে খেতে বড়ো মামা বললেন,
-' কাল সকালে একটা গাড়ি ঠিক করেছি। সে হুদ্রু, জোনা ও দশম ফলস দেখাবে। আসবে ঠিক সকাল সারেআটটা।'
-' কদিন পর পর বৃষ্টি পড়ায় দেখবি ফলস গুলোর রূপ কি সুন্দর লাগছে। তবে একদিনে তিনটে ফলস দেখা খুব কঠিন। কষ্ট হবে খুব '। মামিমা যেনো সন্দেহ প্রকাশ করলেন। মামাকে আজ একটু সহজ লাগছে। বললেন,
-' আমি যখন ১৯৬২ সালে Instt. of Psychiatry তে জয়েন করি তখন এই সমস্ত জায়গা ছিল একদম খালি। জোনা ফলস দেখতে গিয়েছিলাম এক বন্ধুর সাথে ট্রেনে করে গৌতম ধারা স্টেশনে নেমে কয়েক কিলোমিটার পথ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটে। জোনা হচ্ছে গৌতম ধারা
ফলস। সূর্য্য পশ্চিমে ঢলে পড়লে এই গৌতম ধারা ফলসে রামধনুর ছায়া পড়তো। আর দশম ও সিতা ফলস দেখতে গিয়েছিলাম অনেকে মিলে লাঠি হাতে ডাকাতের ভয়ে। অবশ্য দুটো দেখেছিলাম দু বছরে গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সে ভারী রোমানচকর যাত্রা ছিল।'
টেবিল ছেড়ে সবাই উঠে পড়ল। নিচে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় উঠে পড়ল তিনজন। সন্ধ্যার আগে চা খেয়ে ওরা আবার গেলো পার্কে। তারপর আবার গোটা পার্কে এক চক্কর দিয়ে সাউন্ড এ্যান্ড লাইটের টিকেট কেটে একটা ভালো জায়গা দেখে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পরেই
শুরু হলো সাউন্ড এ্যান্ড লাইট। বিরসা মুন্ডা ছিলেন এক আদিবাসী ফ্রিডম ফাইটার। অন্য দিকে তিনি ছিলেন এক জন সমাজ সংস্কারক। মুন্ডা সমাজের অধিকারের জন্য তিনি অত্যাচারিত ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত মুন্ডা সমাজকে নিয়ে আন্দোলন করে ছিলেন। ধরা পড়ে তার বিচার হয় ফাঁসি। কিন্তু ফাঁসির আগেই কলেরায় জেলের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।
খাওয়ার টেবিলে মামীমার উপদেশ, পেট ভরে খা আর তাড়াতাড়ি শুয়ে পর। মশারী টানিয়ে শুবি। ভোরে শীত লাগলে চাদর গায়ে দিবি। সকালে তাড়াতাড়ি উঠবি। সাড়ে আটটায় তোদের গাড়ি ছাড়বে, তার আগে এখানে ব্রেকফাস্ট করে নিবি অবশ্যই স্নান করে নিয়ে।
সকাল সাড়ে আটটায় গাড়ি ছাড়ার আগে বাবলা ড্রাইভারকে বললো আগে হুদ্রুতে যাবো। তারপর জোনা ফলস। মাথা নেড়ে ড্রাইভার গাড়ি ছাড়লো। হুদ্রুতে পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা দশটা বেজে গেলো। এখানে এন্ট্রি ফি ৫০ টাকা করে প্রতিজন। টিকেট কেটে ঢুকে প্রপাতের দৃশ্য দেখে আনন্দ আর ধরেনা ওদের। সুবর্নরেখা নদী এখানে ৩২০ ফুট নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কি আওয়াজ। এরপর কম করে ৭৫০ টা সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে গেলো। প্রচন্ড গর্জন করে বেগে জল পরার শব্দ। জলরেনুগুলো ওপরে উঠে ছড়িয়ে পড়ছিল, হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছিল আর ভিজিয়ে দিচ্ছিল ওদের। কিযে ভালো লাগছিল ওদের। জলারেনুর মতো ওদের মনও ভেসে চলেছিল যেনো। মুক্তির আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। এরপর ওঠার পালা। ওপরে উঠে বাবলা বললো,
-' একটু না বসলে হবে নারে। চল ওই চায়ের দোকানে ঢুকে চা খাই। চা খাওয়াও হবে আবার পাদুটোকে বিশ্রাম দেওয়াও হবে। কি বলিস।' দুজনেও তাই মানলো।
ওরা যখন গাড়িতে উঠলো তখন বাজে সওয়া বারটা। এরপর পৌঁছলো জোনা ফলসে। এখানে আবার ৭২২টা সিঁড়ি। নিচে নামার পরে আবার মুগ্ধ হবার পালা। অপূর্ব সুন্দর এই জলপ্রপাত। ১৪০ ফুট উঁচু। এই প্রপাত একদম সামনে গিয়ে দেখা যায়। সূর্যের বিভিন্ন রং ফুটে
ওঠে এর ধারাগুলোতে। ওপরে উঠে ওরা ক্ষিদে অনুভব করলো। একটা ভাল খাবারের দোকানে ঢুকে খাবারের অর্ডার দিল। খেয়ে গাড়িতে উঠলো পৌনে চারটায়। দশম ফলস দেখে ফিরতে ফিরতে ছটা বেজেগেলো। পায়ে যা ব্যথা হয়েছে ওদের ওরা তাই দশমে বেশি নিচে নামে নি। ওদের নামিয়ে দিয়ে ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো কালকে কোথাও যাবে নাকি। বাবলা বললো মামা বলবে। সাড়ে ছ়টায় ওরা মামার বাড়ি ঢুকলো। দরজা খুলে দিল সুমতি। জামা কাপড় পাল্টে ফ্রেস হয়ে নিয়ে ওপরে যেতে বললো। ওরা তাই করলো। সন্ধ্যে সাতটা বেজে গেলো ফ্রেস হয়ে ওপরে উঠতে উঠতে। সোফায় সবাই আরাম করে বসলো। সুমতি তিন প্লেট ম্যাগী এনে রাখলো টি
টেবিলে। ওরাও গপাগপ খেতে থাকলো। ক্ষিদে পেয়েছে যে। প্লেটে চামচের খটা খট আওয়াজ চলছে। মামিমা ট্রেতে করে চার কাপ চা এনে রাখলো টেবিলে। সুমতি ম্যাগীর প্লেটগুলো আগেই সরিয়ে ফেলেছিল। মামী পাশের সোফাতে বসে পড়লো এক কাপ চা হাতে নিয়ে।
-' তোদের আজ জার্নি খুব হেকটিক হলো। একদিনে তিন তিনটে ফলস দেখা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আবার উঠে, ওই অতগুলো সিঁড়ি, ভাবতেই পারি না আমি। কি করে পারলি রে তোরা?' তিনজনের মুখে তখন গর্বিত হাসি।
- ' পারলাম '। এক রহস্য হাসি হাসলো বাবলা।
-' তোরা সব ইয়ং ছেলে তাই পেরেছিস। কাল তোদের কি প্রোগ্রাম করেছিস '?
-' আমরা কি বলবো, আমরা কি জানি কোথায় কি আছে দেখবার। তুমি বলো আর কি আছে দেখার '।
-' তোরা একটা কাজ করতে পারিস, আর একদিন গাড়ি করে রাজারাপ্পা ঘুরে আসতে পারিস। ওখানে আছে এক কালি মন্দির, মা কালী ওখানে ছিন্নমস্তা। শক্তিপীঠ এটা। তার পর দেখবি পাত্রাতু ড্যাম। পাহাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তা। খুব ভালো লাগবে তোদের। এছাড়া আছে সূর্য্য মন্দির,
জগন্নাথ দেবের মন্দির, ডিয়ার পার্ক ইত্যাদি। যাবি?
-' যাবার ইচ্ছেতো আছে খুব কিন্তু .....
-' ঠিক আছে, তোর মামাকে রাজি করিয়ে নেব আমি।'
পরের দিন সকাল সাড়ে আটটায় সেই ড্রাইভার এসে হাজির। ওরাও ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়িতে উঠে পড়ল আর গাড়ি ছুটে চললো রাজারাপ্পার উদ্দেশ্যে। সবটাই হল বড়মামার নির্দেশে আর বড়ো মামীর ইচ্ছেতে। কাঁখে থেকে রাজারাপ্পার দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটারের ওপরে। পাহাড়ের রেঞ্জ পেরিয়ে রামগড় হয়ে যেতে প্রায় সকাল এগারোটা বাজলো। এখানে দামোদর নদ ও ভৈরবী নদীর মিলিত ধারা ওপর থেকে নিচে পড়ছে। দেখতে ভালো লাগে। আর একটা আছে সুন্দর মন্দির। এখানে মা ছিন্নমস্তার অধিষ্ঠান। দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। মন প্রাণ দিয়ে যদি তাকে ডাকা যায় তাহলে দেবী সারা দেন। বেদে আর পুরাণে নাকি তার উল্লেখ আছে। এখানে কিছু হোটেল আছে আর আছে ধর্মশালা। বহু ভক্তের ভিড় সব সময় লেগে থাকে। ওরা এখানে দেবীর পুজো দিলো। গলা দিয়ে দেবীর শোণিত ধারা আর মাথা দেবীর হাতে এই দৃশ্য দেখে বাবলা পেছন দিকে চলে গেলো। যাই হোক পূজা সেরে বেরিয়ে এলো ওরা। এদিকে আরও মন্দির আছে। শিব মন্দির, সূর্য্য মন্দির ইত্যাদি। ঘুরে ঘুরে দেখতে বেশ ভালো লাগে। পরিবেশও সুন্দর লোকের ভিড় হয় বেশ। এরপর গেল পত্রতু ড্যাম। এটাও দেখার মতো। বিশাল জলাধার। ফেরার সময় ড্রাইভার এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করাল। এটা একটা টুরিস্ট পয়েন্ট। এখান থেকে নিচের রাস্তার পাকদান্ডি দেখা যায়। এখানে একটু চা টা খেয়ে একটু সময় কাটাল। রাঁচি সমুদ্রতল থেকে প্রায়
দু হাজার ফুট ওপরে। তাই এই পাকদন্ডি। এরপর আর একটা ব্যারেজ দেখলো। রাস্তার দুপাশে এর জলাধার কনো রেলিং নেই তাই ভয় করে। তবে এই ড্যাম এমন কিছু নয় দেখার তাই ওদের কোনো উৎসাহ নেই। শেষে জগন্নাথ মন্দির দেখে ওরা বাড়ি ফিরলো সেই সন্ধ্যে সাতটায়। বাড়িতে ঢুকেই বাবলা বললো,
-' ওরে সৌম্য, ওরে বিশ্বরূপ রাঁচি দর্শন যে আমাদের শেষ হয়ে গেলো। কিন্তু দুদিন যা পরিশ্রম হলো, কালকে মনে হয় বিছানা থেকে উঠতে পারবো না। ঘুমিয়েই কাটাবো সারাদিন '। বিশ্বরূপ বলে,
-' এটা কিন্তু বাবলাদা তুমি ঠিক বলেছো। দুদিন ধরে যে হারিকেন টুর হলো তার জন্য খুব ক্লান্ত লাগছে '।
-' যা বলেছিস বিশ্ব ভীষণ ক্লান্ত লাগছে আমারও। আর বাবলাদা তোমার মামা মামী এত ভালো এত সুন্দর করে আমাদের গাইড করেছে আর টাইমে টাইমে আমাদের খাইয়েছে যে এ কথা আমি জীবনেও ভুলবো না '।
সৌম্য একেবারে অভিভূত। বিশ্বও বলে,
-' ঠিক বলেছিস সৌম্য এই সহযোগিতা ভোলার নয় '।
এমন সময় মামিমা আর সুমতি ট্রেতে করে চা আর গরম গরম বেগুনি এনে হাজির। বলে,
-' এই দেখ আমার সুমতি তোদের জন্য বেগুনি বানিয়ে এনেছে। ও বেগুনি ভালো ভাজে। আজ চা টাও ও করেছে দেখ তোরা খেয়ে কেমন হয়েছে। তোরাতো খুব পরিশ্রান্ত তাই নিচেই তোদের টিফিনের ব্যবস্থা করলাম। কি রকম ঘুরলি আজ তোরা '? বিগলিত গলায় বাবলা বললো, -'ভীষণ ভালো ঘুরেছি মামী দুদিন। তবে পরিশ্রান্তও হয়েছি খুব। এতক্ষণ এইসব নিয়েই আমাদের আলোচনা হচ্ছিল। জানো সৌম্য ও বিশ্ব তোমার আর মামার খুব ভক্ত হয়ে গেছে। ওরা বলছে জীবনে কোনোদিন নাকি তোমাদের ভুলতে পারবে না '।
-' তাই নাকিরে ছোঁড়ারা? জীবনে কতটুকু দেখেছিস? আরো কত কি যে দেখবি এ জীবনে, তখন দেখবি আর আমাদের কথা মনে নেই '।
-' কি যে বলেন মামীমা, এ কথা কি কখনো ভোলা যায়।' ওরা খুব লজ্জিত হলো।
- ' আচ্ছা ভালো। এবার আমাদের ওপরে উঠতে হবে। চলরে সুমতি ওঠ এবার '।
যথারীতি বুধবার রাতে খেয়ে দেয়ে ওরা রাঁচি স্টেশনে এসে রাত দশটার গাড়িতে উঠে পড়ল কলকাতা ফেরার। খুব সুন্দর কাটলো কটাদিন। গতকাল বিকেলে বড় মামা নিজের গাড়িতে করে শহরে এসেছিল মামীকে নিয়ে কিছু কেনা কেটার জন্য। সঙ্গে ওদের তিনজনকে
নিয়েও এসেছিল শহর দেখবার জন্য। কেনাকাটার পর একটা রেঁস্তোরায় নিয়ে গিয়ে ওদের মোমো খাইয়েছিল। তারপর কিছুক্ষণের জন্য রাঁচি লেকেও নিয়ে গিয়েছিল। খুব ভালো লাগছিল রাঁচি লেকটা।
ট্রেনে যেতে যেতে একসময় বাবলাদাকে সৌম্য জিজ্ঞেস করলো, ' আচ্ছা বাবলাদা মামী যে দীপের কথা বলেছিল সে তো মামিমার ছেলে। সে এখন কোথায়, কি করছে '?
-' ও তোদের বলিনি বুঝি। ওতো জুয়েল ছেলে। এখন লন্ডনে FRCS করতে গেছে।
-০-০-০-০-০-০-০-০-
Dipak Kumar Paul,
DTC Southern Heights , Block-8, Flat-1B
Diamond Harbour Road,
Kolkata - 700104.