ছবিঋণ - ইন্টারনেট
সব্যসাচী
সুমিত হালদার
সাধারণ অর্থে আমরা 'সব্যসাচী' বলতে বুঝি যে ব্যক্তি উভয় হস্তে সমান ভাবে কাজ করতে পারেন। কিন্তু আমার এই রচনার মূল অর্থ কিন্তু অন্য রকম। তো জাই হোক মূল আলোচ্য বিষয়ের দিকে আলোকপাত করা যাক। আমার আজ এই রচনার আসল অর্থট কী হতে পারে তা ধীরে ধীরে এই রচনার মাধ্যমেই প্রকাশিত হবে। তাই সম্পূর্ণ ভাবে রচনাটি অতি অবশ্যই সম্পূর্ণ রুপে পড়াটা আবশ্যিক। মানব সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যেটি হল 'সর্বাঙ্গ সুন্দর', এই কথাটির প্রকৃতি অর্থ হল যে ব্যক্তির দেহের সকল অঙ্গই সুন্দর। কথাটি বাস্তব জগতে মাঝে মাঝে লক্ষ্য করা যায়। অনেক মানুষই সর্বাঙ্গ সুন্দর হন। কিন্তু আমার মনে হয় এই কথাটির মতো আরোও একটি কথা প্রচলিত থাকা উচিত ছিল। কথাটি হওয়া উচিত ছিল 'সর্বকর্ম সুন্দর'। একটি মানুষ সকল বিষয়ে/কর্মে পারদর্শী হলেই আমার মনে হয় এই সর্বকর্ম সুন্দর কথাটি বলা দরকার। কিন্তু আমাদের মানব সমাজে এমন ব্যক্তি খুব কমই আছেন। একটি ব্যাক্তির মধ্যে সর্বকর্ম তথা সর্বাঙ্গ তথা দয়ালু এবং সরলতা এক সঙ্গে যদি এতো গুলি গুন লক্ষ করা যায় তবে তাকে কী বলা যেতে পারে ? এই প্রশ্নটি আমি পাঠকদের কাছে রাখলাম। তো যাইহোক এতো কথা বলার আসল উদেশ্য হলো আমার এক খুবই কাছের মানুষ তথা প্রণম্য শিক্ষাগুরর সম্পর্কে একটি ছোট্ট স্মৃতি কথা লেখা। আজ আমি যে মানুষটির সম্বন্ধে লিখছি তাঁর নাম আমি প্রথমেই প্রকাশ করে বিষয়টিকে সহজেই শেষ করব না। মানুষটির সাথে আমার পরিচয় হয় যখন আমি ক্লাস ফাইভ-এ ভর্তি হই। এই মানুষটিকে আমি যখন প্রথম দেখি তখন থেকেই উনি আমার জীবনে প্রিয় শিক্ষক মহাশয় ছিলেন, আছেন আর ভবিষ্যতেও থাকবেন। উনি সদা সর্বদা আমার মনের মনিকোঠায় পূজ্যমান। কিন্তু প্রথমেই আমি জানতে পারিনি যে প্রকৃত পক্ষ্যে এই মানুষটি আসলে কেমন ব্যক্তি। যখন আমি ক্লাস ফাইভে আমার বিদ্যালয়ে ১৫ ই অগাস্ট উপলক্ষে প্রথম বক্তব্য রাখি তখন থেকেই আমি আসতে আসতে বুঝতে পারি যে আমার প্রিয় স্যার কেমন ব্যক্তি। নিজেকে বড়াই করে কথাটি বলব না আমি আমার স্কুল জীবনের প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। বিশেষ করে বক্তব্য ছিল আমার প্রাণ তার সাথে আমি তবলা, নাটক ইত্যদি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতাম। এই অনুষ্ঠান যেন আরো দৃঢ়ভাবে আমার আর স্যারের সম্পর্কটি বিশেষ ভাবে সুদৃড় করেছিল। আজ আমার ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে একটি ছোট্ট ঘটনা, একদিন স্কুলে পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে ওই দিনটি উৎযাপন হয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি শারীরিক অসুস্থতার কারনে ওই দিন স্কুলে অনুপস্থিত ছিলাম। কিন্তু তারপর দিন স্কুলে গিয়ে আমি শুনি যে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহাশয় সারা স্কুল চত্বরে আমাকে খুঁজে ছলেন আমাকে বক্তৃতা দেওয়াবেন বলার। এরপরেও বহুবার ওই মানুষটি আমাকে অনুপ্রাণিত করে তুলেছেন বক্তব্য দিতে। আমার জীবনে এই মানুষটির অবদান অবর্ণনীয়। এবার তবে স্যারের নামটি কী জেনে নেওয়া যাক। তিনি হলেন আমার মনের মনিকোঠায় সদা সর্বদা পূজনীয় ও প্রণম্য দেবমূর্তি সৌম্য শান্ত ব্যক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় শ্রীযুক্ত মাননীয় 'অমিত কিরণ দাস' মহাশয়। রচনার প্রথমার্ধের যে কথাগুলির উল্লেখ আমি করেছি তার আসল অর্থগুলি এবার প্রকাশ করা যাক। আমার প্রণম্য স্যারের সঙ্গে পরিচয় না হলে আমি জানতেই পারতাম না যে একটি মানুষের মধ্যে সর্বাঙ্গ সুন্দর, সর্বকর্ম সুন্দর এবং দয়ালু সহ একাধিক বৈশিষ্ট গুলি বর্তমান থাকতে পারে। স্যার হলেন প্রতিটি বিষয়েই পারদশী এক ব্যক্তি। স্কুলের প্রতিটি অনুষ্টানে স্যার পরিচালকের ভূমিকা পালন করতেন এবং সেই সঙ্গে স্যার ছিলেন একজন সুকণ্ঠশস্বর যুক্ত গায়ক। তিনি বহু বর বহু গান গেয়েছিলেন স্কুলের অনুষ্ঠানে এবং স্যার তবলা, মৃদঙ্গ, গিটার সহ একাধিক বাদ্য যন্ত্র বাজাতে সক্ষম ছিলেন। আমার প্রিয় স্যার ছিলেন আমাদের স্কুলের ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক। যখন আমি ক্লাস xi -এ পড়তাম তখন আমি স্যারের কাছে প্রাইভেট টিউশন পড়তে যেতাম। স্যার কোনোদিন এর আগে কাউকেই টিউশন পড়াতেন না কখনই। আমি স্যার এর কাছে ক্লাস xi ও xii এই দুটো বছর পড়েছি কিন্তু ওই দেবতুল্য মানুষটি জার গুন অসীম তিনি কখনই আমাদের থেকে বেতন নিতেন না। উনি সদা একটি কথা বলতেন যেটি আমার আজীবন স্মরণে রয়ে যাবে যেটি হলো " অপচয় করো না অভাবে পড়বে না"। স্যার আমাদেরকে নিজের সন্তান সমতুল্য হিসেবেই মনে করেন। তিনি সর্বদাই আমাদের কে বলতেন যে তোমরা পড়াশোনা কর বড়ো হও আর মানুষের মতো মানুষ তৈরী হও সেটাই হবে আমার দক্ষিনা। স্যার আমাকে যে ঋণে রিনি করেছেন তা আমি চাইলেও কখনই শোদ করতে পারবনা। একটি ছোট্ট ঘটনার মাধ্যমেই আজ এই রচনার অন্তিম পর্যায় পৌঁছাব। আমার হস্তাক্ষর পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে এই দেবতুল্য ব্যক্তির এক বিশেষ ভূমিকা। প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত আমার হাতে লেখার অর্থ সহজে উদ্ধার করা ছিল এক দুঃসাধ্য ব্যাপার, কিন্তু নবম শ্রেণী থেকে আমি আমার চির প্রণম্য স্যারের হস্তাক্ষরের অনুকরণ ও অনুসরনের সাহায্যেই আমার হাতে লেখার পরিবর্তন আনতে পেরেছি। তাই আজ যদি এমন এক গুরুর আমার জীবনে আগমন না ঘটত তাহলে হয়তো আমি আর বর্তমানের আমি হতে পারতাম না। স্যারের অসামান্য কৃতিত্ব কোনো দিনও ভোলার নয়। স্যার এমন এক ব্যক্তিত্ব যার ঋণ সারা জীবন চেষ্টা করলেও শেষ করা সম্ভব নয়। আজ আমি এই টুকু নিশ্চিত যে যারা আমার লেখা এই রচনাটি পড়বে তাদের মধ্য দিয়েই চিরকাল অমর হয়ে থাকবে আমার এই ঘটনাগুলি। আজ আমার এই রচনার নামকরণটি 'সব্যসাচী' রাখার কারন হলো আমার শ্রদ্ধেয় স্যার শ্রী অমিত কিরণ দাস মহাশয় এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁর মধ্যে সমস্ত দিকে পান্ডিত্ব আছে তাই যেমন একটি মানুষের দুটি হাত সমান ভাবে চললে তাকে সব্যসাচী বলে তেমনি আমার মতে আমার স্যারের হাত ও সমানভাবে সমান মাপে সমস্ত বিষয়ে সঠিক ভাবে পারদর্শী। তাই তিনি হলেন এক সব্যসাচী।
=====================
গ্রাম:- ভৈরবী নগর
পোস্ট:- কেওড়াতলা
থানা:- ঢোলাহাট
মহাকুমা:- ডায়মন্ড হারবার
জেলা:- দক্ষিণ ২৪ পরগনা