বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫
নভেম্বর ২১, ২০২৪
মানুষের মুক্তির মহানায়ক লেনিন
পাভেল আমান
পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মায় যারা ক্ষণিকের দিন যাপনে এমন কিছু কর্মধারার স্বাক্ষর রেখে যান যা তাদের চিরস্মরণীয় ও অমর করে তোলে মানবজাতির মাঝে। তারা শুধু মানবতার কল্যাণ উত্তরণ স্বাধীনতা সংগ্রাম সমতা সাম্যের কথা বলেন। প্রতিটা মুহূর্তেই নিজের জীবন বাজি রেখে প্রতিষ্ঠা করতে চান যথার্থ মানবতা। বিদ্বেষ বিভাজন হিংসা বিভেদ বৈষম্য সরিয়ে রেখে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব সংহতি সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ভাবনাকে চালিয়ে তোলায় তাদের প্রধান কাজ। বিশেষত নিপীড়িত বঞ্চিত শোষিত সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার দাবি-দাওয়া ন্যূনতম অধিকারগুলোকে প্রতিষ্ঠা করতেই তাদের দিন যাপন। সেরকমই এক বহুমুখীন ব্যক্তিত্বের অধিকারী লেনিন। বিশ্বের এমন কোন জায়গা নেই এমন কোন মানুষ নেই যেখানে তাকে নিয়ে চর্চা হয় না আলোচনা হয় না ।তার দর্শন চিন্তা ভাবনা নিয়ে শ্রেণী সংগ্রাম নিয়ে সাধারণ মানুষের লড়াই ঐক্যবদ্ধতা। তিনি খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রমিক সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের প্রাণপুরুষ ও অনুপ্রেরণা।সারা পৃথিবী জুড়ে অগুনতি বিপ্লবীর প্রেরনা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন । ১৮৭০ সালের এই দিনে ভোলগা নদীর অদূরে সিমবির্স্ক শহরে, অসংখ্য শোষিত ও নিস্পেশিত মানুষের কান্না, চেতনার অবিশ্বাস্য ব্যতিক্রমে বিপ্লবের স্ফূলিংগ হয়ে যায়, যার নামে, সেই লেনিন জন্ম নেন । রাশিয়ার শোষিত মানুষকে অত্যাচারী জারের শাষন থেকে মুক্ত করে, সারা পৃথিবীর মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মুক্তির । তার অসাধারন অত্মত্যাগ, অবিষ্মরণীয় । নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দের কথা ভাবেন নি, চিরকাল কাটিয়েছেন দারিদ্রের মাঝে । জীবনের অনেকটা সময় নির্বাসনে কাটিয়েছেন, হয়েছিলেন দেশছাড়া ও । জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা । পণ ছিল মানুষের মুক্তি । জীবনের শেষ পর্যন্ত এ লক্ষ্যেই কাজ করে গেছেন ।সমাজ, রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিজীবনে মার্কসবাদের প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি রুশ বিপ্লবকে সার্থক করে তোলেন। তার আদর্শের কারণে গোটা বিশ্বই কেঁপে উঠে। মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি পুঁজিবাদের ভিত্তিকে সরাসরি আঘাত করেন।সমাজতান্ত্রিক জাগরণের মাধ্যমে রুশ বিপ্লবের নায়ক কমরেড ভি আই লেনিনের বলশেভিক বিপ্লব আলোড়িত করেছিল গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে। তার আদর্শে মার্কসবাদকে বুকে ধারণ করে লাল পতাকাতলে একীভূত হয়ে সমাজ পরিবর্তনের শপথ নিয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ।
১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি ব্যক্তি লেনিনের মৃত্যু হয়। কিন্তু তার আদর্শকে ধারণ করে আজও বিশ্বের বিপ্লবীরা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন। লেনিনের এই সব গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে ধারণ করে আজও বিশ্বের দেশে দেশে সংগ্রামী শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণ শ্রেণী সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে অগ্রসর করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। লেনিনবাদ বিশ্বের দেশে শ্রমিক শ্রেণী ও নিপীড়িত জাতি জনগণের মুক্তির সংগ্রামে পথ নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে চলেছে। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে সমাজতন্ত্র তথা সর্বহারা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই ও নয়া ঔপনিবেশিক দেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় মুক্তির লড়াই এক অভিন্ন লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।সারা দুনিয়ার শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য কমরেড লেনিন যে শিক্ষা রেখে গেছেন, তা চিরকাল অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, 'শ্রমিকশ্রেণীর চেতনায় ও সংগ্রামে তিনি চিরভাস্বর, প্রথপ্রদর্শক। মানবমুক্তির লড়াইয়ে অনন্ত প্রেরণার উৎস কমরেড লেনিন। দুনিয়াকে বদলে দেওয়ার এক অপ্রতিরোধ্য রাজনৈতিক হাতিয়ার হচ্ছে কমিউনিস্ট ইশতেহার। এই পুস্তিকাটি এখনো পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে আলোকিত করে চলেছে। মার্কস-এঙ্গেলস-এর পথ ধরেই লেনিন অগ্রসর হয়েছেন। মার্কসবাদের বিকাশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নিজে তত্ত্ব নির্মাণ করেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে। আজও সারা দুনিয়ার শোষিত, বঞ্চিত, নিষ্পেষিত মানুষের কাছে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব উজ্জ্বলতম প্রেরণা এবং দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। সারা পৃথিবীর খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ এখনো লেনিনের হার না মানা মানসিকতা প্রতিবাদী চেতনা আদর্শবোধকে মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পাই।
লেনিনকে স্মরণ করে বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য 'লেনিনের জন্মদিন' শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন, '...দিকে দিকে কোণে কোণে লেনিনের পদধ্বনি/ আজো যায় শোনা,/...বিপ্লব স্পন্দিত বুকে, মনে হয় আমিই লেনিন।'বিশ্বের প্রথম স্বার্থক মহান বিপ্লবী, শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির মহানায়ক ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিনের ১৫৫ তম জন্মবার্ষিকী। এই মহান জননায়ক মানবতার পূজারী শ্রমজীবী মানুষের প্রেরণা লড়াইয়ের দিশারী লেনিনের আদর্শ চিন্তাভাবনা শ্রেণী সংগ্রাম পথ চলা আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই তীব্রভাবে জেগে উঠুক। বিশেষত বিদ্বেষ বিভাজন সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে আজকের এই সংকটের মুহূর্তে লেনিনের জীবন সংগ্রাম আমাদের প্রত্যেকের মেনে চলা একান্ত জরুরী। শুধুমাত্র তার জন্মদিনে বড় বড় গাল ভরা কথা প্রতিকৃতিতে মাল্যদান নয় তার আদর্শনিষ্ঠ সত্যবাদিতা প্রাত্যহিক জীবনে স্মরণ করায় আমাদের জন্মদিন পালনের যথার্থতা। আবারো একটি কথা লেনিনের মত মানুষেরা চির অমর চির অক্ষয়। তারা যুগ যুগ ধরে শতাব্দীকাল ব্যাপী মানুষের মাঝে রয়ে যাবেন।================================
রচনা- পাভেল আমান- হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ