বাঁকুড়ার ওই লাল মাটি
(শেষপর্ব )
অঙ্কিতা পাল
প্রাতঃ ভ্রমণের সময় লাল সূর্যের আভা যেন কংসাবতীর জলে চকচক করছে। এবার সকালের খাওয়া দাওয়া সেরে মারুতি গাড়িতে শুশুনিয়া পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মুকুটমণিপুর থেকে শুশুনিয়ার দূরত্ব প্রায় ৬৬ কিলোমিটার। সুমো গাড়ি চলেছে চারিদিকে সকালের গ্রাম্য পরিবেশটা খুব ভালো লাগছে চারিদিকে ছোট ছোট মাটির লালবাড়ি স্থানীয় মানুষ কেউ কেউ আবার খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করছে। আমার কোথাও বা শাল গাছের সারী, কোথাও ধান জমি, কোথাও আবার সবজির ক্ষেত দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। হঠাৎ চোখ পরল মাইলস্টোনের দিকে আর মাত্র পাচ কিলোমিটার দূরত্ব বাকি আছে, ওই - ওই যে দেখা যায় পাহাড়ের চূড়া। এবার আস্তে আস্তে পাহাড় টা যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল, এবার পৌঁছে গেলাম শুশুনিয়ার পাদদেশে। রংবেরঙের পাথরের মূর্তি ও পাথরের থালা-বাসনের দোকান যেন চারিদিকে সাজানো, কেউ বা বনভোজন করছে নিজেদের মতো করেই। কথিত আছে এই পাহাড়ে নাকি প্রাকৃতিকভাবে একটা ঝর্ণা নেমেএসেছিল তাকে সুরক্ষিত করবার জন্য ঝর্ণার চারপাশে একটা সিংহের মূর্তি এমন ভাবে তৈরি করা হয় যেন দূর থেকে দেখে মনে হয় পশুরাজের মুখ থেকে জল বের হচ্ছে । সেখানকার স্থানীয় মানুষেরা বলে থাকেন - এই ঝরনার জল খেলে পেটের অসুখ দূর হয় এবং স্নান করলে অনেক পূর্ণ লাভ হয়,তাই ঝর্ণার চারপাশে অনেক ছোটখাটো মন্দির গড়ে উঠেছে। মন্দিরের পাশ থেকে পাহাড়ে ওঠার একটা অসমতল রাস্তা তৈরি করা আছে। শোনা যায় পাহাড়ের উপরে কিছু রাজ রাজাদের নিদর্শন, বাঘের গুহা, মুনি ঋষীদের থাকার জায়গা ও একটি সোনার কৃষ্ণমূর্তি আছে। এসব দেখার লোভ আর সামলাতে পারলাম না উঠলাম পাহাড়ের উদ্দেশ্যে, রাস্তাটা এতটাই অমসৃণ ছিল যে উঠতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। যাইহোক বেশি দূর ওঠা গেল না , বাচ্চাকাচ্চার কান্নাকাটি ঠেলায় সেখান থেকে নেমে আসতে হলো। তারপর যাওয়া হলো পাহাড় সংলগ্ন একটি সুসজ্জিত ফুলের পার্কে , পার্কের ভিতরে একটি গোলক আয়তনে আদিবাসী নৃত্য প্রদর্শনের জায়গা আছে , সেখানে বসে আমি একটি ফটো তুললাম। পরস্পর শাল গাছের সারী ও মাদল তালে তালে নৃত্য যদি দেখতে পারতাম এই ভাবনা ভাবতেই সমগ্র পার্ক টা দেখা হয়ে গেল।
এবার আবারো গাড়িতে উঠলাম চললাম বিষ্ণুপুরের উদ্দেশ্যে। শুশুনিয়া থেকে বিষ্ণুপুরের দূরত্ব প্রায় ৮৮ কিলোমিটার। চারিদিকটা দেখতে দেখতে সবাই মিলে গাড়িতে গল্প করতে করতে গান শুনতে শুনতে আড়াই ঘন্টার ব্যবধানে পৌঁছে গেলাম বিষ্ণুপুর। সেখানে রেল স্টেশন সংলগ্ন একটি হোটেলে উঠলাম, মধ্যাহ্নভোজন শেষ করে চলে গেলাম বিষ্ণুপুরের রাজ রাজাদের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য রাজ রাজাদের বাড়ি ও মন্দির দর্শনে | একটি টোটো তে উঠে একে একে দর্শন করলাম শ্যাম রায়ের মন্দির, রাধেশ্যাম মন্দির ,লালাজির মন্দির ,ঘুমঘর, রাস মঞ্চ , জোর বাংলা আরো ছোট ছোট রাজ রাজাদের মন্দির এর মধ্যে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করলাম যে প্রতিটি মন্দিরে রামায়ণ-মহাভারত অঙ্কিত আছে | বাঁকুড়ার দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মদনমোহন মন্দির যেটা ইতিহাসের পাতায় আজও মন কেড়ে নেয়| এছাড়া বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত মেলা সেই সময় চলছিল সেখানে পাওয়া যাচ্ছিল বাঁকুড়ার বিখ্যাত বালুচরী শাড়ি বিভিন্ন পোড়ামাটির জিনিস কাঠের তৈরি মূর্তি ইত্যাদি| মেলা থেকে কিছু জিনিস কেনাকাটার মজাটাই আলাদা সেই সময় সেখানে একটি নাটক উপস্থাপিত হচ্ছিল কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে দেখলাম বেশ ভালো লাগছিল | পরের দিন ভোরবেলা উঠে কলকাতা গামী ট্রেন ধরলাম এগারোটার মধ্যে হাওড়া এসে পৌছালাম সেখান থেকে গাড়িতে হাওড়া ব্রিজের ওপর দিয়ে মা ফ্লাইওভার ধরে অবশেষে বাড়ি ফেরা হলো |
-------------------------------------------------
নাম - অঙ্কিতা পাল
ভাঙ্গড় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা