পত্রিকা পর্যালোচনা।। লিটল্ ম্যাগাজিন: বিশ্বতান (বৈশাখ- ১৪৩১) ।। গোবিন্দ মোদক
লিটল্ ম্যাগাজিন: বিশ্বতান
(বৈশাখ- ১৪৩১)
পাঠ প্রতিক্রিয়া: গোবিন্দ মোদক, কৃষ্ণনগর।
একটি লিটল ম্যাগাজিন দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশ পাওয়া কম কথা নয় — আর অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এই অসাধ্যসাধনের কাজটি করে চলেছেন বিশ্বতান পত্রিকার সম্পাদক শ্রী রাজীব কুমার জানা। নিতান্ত একনিষ্ঠ সাহিত্য নিবেদিতপ্রাণ মানুষ না হলে এ কাজ মন থেকে করা সম্ভব নয়। আর তাই তিনি নিজেই যখন অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে লেখক কপিগুলো ডাকযোগে (স্পিড পোস্ট মারফত) লেখক-কবিদেরকে পাঠিয়ে দেন তখন তাঁকে কুর্ণিশ না জানিয়ে উপায় থাকে না।
চমৎকার রঙিন প্রচ্ছদের ৪১-তম বছরের বিশ্বতানের বার্ষিক এই সংখ্যাটি হাতে নিলে মন ভালো হয়ে যায়। শুরুতেই সম্পাদকীয় কলম পাঠকের মন কাড়ে। "একটু ভেবে দেখবেন, প্লিজ" শীর্ষক এই সম্পাদকীয়টি যেমন সময়ানুগ তেমনই সমাজ সচেতনতামূলক। মাননীয় সম্পাদক মহাশয় সমাজের জন্য যেমন ভাবেন, তেমনই শিশু-কিশোরদের জন্যও কম ভাবেন না। তাই তাঁর পত্রিকা বিশ্বতানের শুরুতেই শিশু-কিশোর বিভাগ (সবুজ সাথী / সুর প্রভাতী) আলোকিত হয়ে উঠেছে এমন কয়েকটি সুনির্বাচিত অনবদ্য ছড়া-কবিতাতে যেগুলি শুধু শিক্ষণীয় বা আদর্শমূলকই নয় বা শুধুমাত্র ছোটদের উপযোগী তাও নয়, সেগুলি বড়দেরকেও সমানভাবে ভাবাবে এবং শিক্ষা দেবে। এই প্রসঙ্গে সবুজ সাথী বিভাগে কবি রাম রচিত 'শিশু-কিশোর', মোহাম্মদ আলী বুলবুল রচিত 'আকাশ মাটি সাগর নদী', গোবিন্দ মোদক রচিত 'খেলাধূলা' প্রভৃতি ছড়া-কবিতাগুলি বিশেষভাবেই উল্লেখযোগ্য। বস্তুতপক্ষে দেশ কাল সমাজ নির্বিশেষে এই ছড়া-কবিতাগুলি সর্বক্ষেত্রেই আদরণীয় হবে।
পত্রিকার দ্বিতীয় অংশ 'সাধারণ বিভাগ' যেখানে সুনির্বাচিত বেশ কিছু গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য-কবিতা, পদ্য-কবিতা, রম্য গল্প, ভ্রমণ গল্প প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা বিভাগে কবি সুজিত কুমার রায় (কারা-কষ্ট), ডাঃ শান্তনু গুড়িয়া (বিচিত্র প্রেম), ডঃ হরিপদ মাইতি (খুঁজে বেড়াই), স্বপন দত্ত (সম্পর্ক), রিনা সৎপতি (অধরা বসন্ত ধ্বনি), ডাঃ প্রকাশ অধিকারী (কিছু করা..), ইন্দ্রনীল জানা (যাযাবর সুখ) প্রমুখ কবি উপহার দিয়েছেন ফিরে পড়বার মতো কিছু সুপাঠ্য কবিতা।
পত্রিকার গদ্য বিভাগটিও যথেষ্ট বলিষ্ঠ। গল্পকার বিষ্ণুপদ আচার্য উপহার দিয়েছেন 'রাখী বন্ধন' শীর্ষক একটি সুন্দর গল্প যেটি সত্য ঘটনা আধারিত এবং চমকপ্রদ। রণেন্দ্রনাথ দাসের 'সমাজসেবী' শীর্ষক রম্য গল্পটি আকারে ছোট হলেও বাস্তব পটভুমিকায় লেখা এবং সুপাঠ্য। মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে মনীষা দাশগুপ্ত উপহার দিয়েছেন তথ্যবহুল সুপাঠ্য প্রবন্ধ — "এক জ্বলন্ত জ্যোতি, যুগাচার্য প্রণবানন্দ"। ডাঃ রাম ভট্টাচার্যের গবেষণামূলক প্রবন্ধটি (হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রবীন্দ্রনাথ) সর্বস্তরের সনিষ্ঠ পাঠকের মন কাড়বে। পত্রিকার একমাত্র ভ্রমণ গল্পটি লিখেছেন নিরঞ্জন কুণ্ডু যেখানে গনগনি ভ্রমণের বিভিন্ন দিক উদ্ভাসিত হয়েছে গল্পকারের বলিষ্ঠ কলমে।
এই নিয়মিত বিভাগগুলি ছাড়াও তিন ফর্মার এই পত্রিকাতে রয়েছে পুস্তক পর্যালোচনা বিভাগ, রয়েছে পত্র-পত্রিকা-পুস্তক প্রাপ্তি স্বীকার বিভাগ, পাঠক-পাঠিকার মতামত বিভাগ প্রভৃতি। পত্রিকার আর একটি উল্লেখযোগ্য ভিন্নধর্মী সংযোজনা — বিশ্বতানের সূচনা লগ্ন থেকে লেখক-লেখিকাদের বর্ণানুক্রমিক তালিকা প্রকাশ যা খুব কম পত্রিকাতেই দেখতে পাওয়া যায়। সেই দিক থেকে বিশ্বতান অবশ্যই পৃথক কৃতিত্বের দাবিদার।
লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে একটি আপ্তবাক্য চালু আছে, সেটি হল — সম্পাদকের অনির্বাণ চেতনার অনিবার্য বহিঃপ্রকাশ এক একটি লিটল ম্যাগাজিন। আপ্তবাক্যটি বিশ্বতান পত্রিকা সম্পর্কে সর্বৈব সত্য — কারণ সম্পাদক শ্রী রাজীব কুমার জানা আপন অনুভববেদ্যতা এবং সৃজনশীলতা দিয়ে বিশ্বতানকে সৃজন করেছেন এবং ৪১ বছর ধরে লালন পালন করে চলেছেন বাহ্যিক কোনও সহযোগিতা ছাড়াই। এমন "ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো" সম্পাদক আছেন বলেই আমরা আজও ক্ষুদ্র পত্র-পত্রিকার ঘ্রাণ পাই আর সাহিত্য জগৎ তথা পৃথিবী থেকে লিটল ম্যাগাজিন নামক বস্তুটি এখনও বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। কাজেই, কোনও ধন্যবাদই শ্রী রাজীব কুমার জানা এবং বিশ্বতান সম্পর্কে যথেষ্ট নয়। আমরা সাগ্রহে তাকিয়ে থাকব বিশ্বতানের ৪২-তম সংখ্যার দিকে।
-----------------------
সম্পাদক: শ্রী রাজীব কুমার জানা
প্রকাশ স্থান: মেছেদা বাইপাস, পোস্ট- কাঁথি,
জেলা- পূর্ব মেদিনীপুর।
মূল্য: ১৫ টাকা
=============================
গোবিন্দ মোদক, কৃষ্ণনগর।
___________________________
স্বরচিত মৌলিক অপ্রকাশিত রচনা।
প্রেরক: গোবিন্দ মোদক।
সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা।
রাধানগর, ডাক- ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।
পশ্চিমবঙ্গ, ডাকসূচক - 741103