ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া
এস এম মঈনুল হক
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বেগম রোকেয়া নামেই পরিচিত। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার অন্তর্গত পায়রাবন্দ গ্রামে। তার পিতার নাম ছিল আবু আলী হায়দার সাবের এবং মাতার নাম রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধীক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। বহু বাধা পেরিয়ে তিনি নিজের জীবনে এগিয়ে এসেছিলেন এবং নিজের পাশাপাশি সমাজের নারী জাতিকে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আজ এই মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জীবনের কয়েকটি দিক তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বেগম রোকেয়া ছিলেন বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম নারীবাদী মহিলা। ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার "সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি" হিসেবে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেন নির্বাচিত তিনি। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে নারী অধিকারের একজন প্রবক্তা ছিলেন বেগম রোকেয়া। তিনি ক্যারিশম্যাটিক এবং স্থিতিস্থাপক নেতৃত্বের মাধ্যমে সমাজের দ্বারা স্থাপন করা সমস্ত বাধা যা মহিলাদেরকে নিজের স্বপ্ন অনুসরণ করতে বাধা সৃষ্টি করেছিল সেগুলোকে অস্বীকার করেছিলেন। তাই মুসলমান নারী জাগরণের কবি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সে নিজের মায়ের সঙ্গে কলকাতায় থাকাকালীন সময় একজন মেম শিক্ষয়িত্রীর থেকে লেখাপড়া করার সুযোগ পান। কিন্তু সমাজ ও আত্মীয়-স্বজনদের দ্রু কুটির কারণে তা বন্ধ করে দিতে হয়। তবে রোকেয়া কখনো দমে যাননি। তিনি বড় ভাই-বোনদের সমর্থন ও সহায়তায় বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি এবং আরবি প্রমুখ ভাষা আয়ত্ত করেন। ১৯০৫ সালে তিনি নিজের ইংরেজি দক্ষতা অনুশীলন করার জন্য "সুলতানার স্বপ্ন" শিরোনামে একটি অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। ১৮৯৮ সালে তিনি ভাগলপুর নিবাসী উর্দুভাষী সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেনকে বিয়ে করেন। তার স্বামী পেশায় ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তার স্বামী উদার ও মুক্ত মনের মানুষ ছিলেন। তিনি স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় বেশি-বিদেশি লেখকদের রচনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছিলেন। রোকেয়ার সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত মূলত স্বামীর অনুপ্রেরণায় ঘটেছিল। তিনি ১৯১১ সালের ১৬ই মার্চ কলকাতার ১৩ নম্বর ওয়ালীউল্লাহ লেনের একটি বাড়িতে মাত্র ৮ জন ছাত্রীদের নিয়ে নবপর্যায়ে "সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল" প্রতিষ্ঠা করেন যা আজও বিদ্যমান। তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের সংগঠন "আনজুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম" প্রতিষ্ঠা করেন ১৯১৬ সালে। বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময় তিনি "নারীর অধিকার" নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। বাঙালি নারীবাদী লেখিকা রোকেয়া নিজের সাহসিকতার মাধ্যমে সকলের মনে এক আলাদা স্থান দখল করে আছেন। তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের ইতিহাস থেকে বহু মানুষ অনুপ্রেরণা পায়। তার চেষ্টায় আজ নারীগণ সমাজের এতটা এগিয়ে আসতে পেরেছেন।
==================================
গ্রাম : ফুলসহরি, ডাক: রমনা শেখদিঘি, মুর্শিদাবাদ।