অণুগল্প ।। রূপান্তর ।। শংকর ব্রহ্ম
রূপান্তর
শংকর ব্রহ্ম
কিছুদিন ধরে আমার মধ্যে, একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করছি, আমি কোন কথা বলতে গেলেই, মুখ দিয়ে আমার বলার কথাগুলো না বেরিয়ে, মহাপুরুষদের মতো বাণী বেরিয়ে আসছে। ব্যাপারটা নিয়ে আমি বেশ চিন্তিত এবং বিভ্রান্ত।
প্রিয়াকে কথাটা বলতেই, সে ব্যঙ্গ করে বলল, দ্যাখো অতীশ তুমি আবার কবে মহাপুরুষ হয়ে যাও। বলেই সে তার হাতে ধরা মাটনরোলে বড় করে একটা কামড় বসাল।
আমার নাম অতীশ রায়। একটা সরকারী কলেজে পড়াই। প্রিয়া একসময় আমার ছাত্রী ছিল, এখন প্রিয় বান্ধবী, তবে মোটেই প্রেমিকা নয়। কিন্তু ওর আচার আচরণ অনেকটা প্রেমিকার মতো, বাইরের কেউ দেখে প্রেমিকা ভাবলেও ভাবতে পারে, আপত্তি করার মতো কোন জোড়ালো যুক্তি খুঁজে পাই না আমি।
প্রিয়া মুখের খাবারটা চিবোতে চিবোতে বলল, আচ্ছা তুমি মহাপুরুষ হলে আমি তোমার মূখ্য সেবিকা হবো। আপত্তি করবে না তো বলো? বলেই আবার মুখেের খাবার শব্দ করে চিবোতে শুরু করলো।
এ'দিকে আমি মরছি আমার জ্বালায়, আর প্রিয়া সুখাদ্যের স্বাদ নিতে নিতে রঙ্গে মেতে উঠেছে দেখে, আমার খুব রাগ হল মনে।
রাগ দুঃখ মহাপুরুষের সাজে না, মনে হতেই আমি আমার রাগ সংবরণ করলাম। মৃদু হেসে বললাম, আচ্ছা প্রিয়া তুমি আমার সেবিকা হয়ে কি করবে?
- এখন যা করি, তোমাকে সঙ্গ দেব, বলেই ঠোঁট টিপে হেসে আমার হাতের বাজুতে একটা চিমটি কাটল।
আমি মনে মনে ভাবলাম, মহাপুরুষ হতে গেলে প্রিয়ার সঙ্গ আগে ছাড়তে হবে আমাকে।
প্রিয়া খাবার শেষ করে, ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে, জলের বোতল বের করে দু ঢোক জল খেলো, পুনরায় বোতলটা ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে বলল, তুমি কি ভাবছ, আমি জানি।
- কি ভাবছি?
- আমাকে সেবাদাসী করলে, তোমার মহাপুরুষ হওয়ায় বিঘ্ন ঘটবে, এই তো?
- আশ্চর্য! তুমি জানলে কি করে আমার মনের কথা?
- মেয়েরা মনের সব ভাষা পড়তে পারে।
- আর ছেলেরা?
- শরীরের ভাষা। বলেই প্রিয়া আমার চোখে চোখ রেখে, লাস্যময়ভাবে হাসলো।
আমি বিস্ময়ে, বিমূঢ় হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওর মনের ভাষা বুঝবার চেষ্ট করলাম।
প্রিয়া শাড়ি ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে, রঙ্গের সুরে বলল, এবার চলুন মহাপুরুষ, বাড়ি ফিরতে হবে।
আমি শুনেছি, মহাপুরুষেরা নাকি শরীর ও মন দুটোর ভাষাই বুঝতে পারেন। আমি পারি না কেন? তবে কি আমার কোনদিনই আর মহাপুরুষ হয়ে ওঠা হবে না?
SANKAR BRAHMA.
8/1, ASHUTOSH PALLY,
P.O. - GARIA,
Kolkata