উই ওয়ান্ট জাস্টিস
অশোক দাশ
আগস্ট মাস। বিপ্লবের মাস। অনেক স্মৃতি অনেক রক্ত অনেক চাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাবার এই মাস। এই মাসেই ভারত ছাড়ো আন্দোলন, এ মাসেই ভারতের তরুণতম স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়েছিল।এই মাসেই ব্রিটিশের দুশো বছরের দাসত্বের শৃংখল চূর্ণ করে ভারত স্বাধীন হয়েছিল।এই মাসেই ঘটেছিল পৃথিবীর ইতিহাসে মর্মান্তিক রক্তলেখা কাহিনী। আমেরিকার বোমা বর্ষণে জাপানের দুটি সাজানো গোছানো শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল ।লক্ষ লক্ষ প্রাণ রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন হয়েছিল।
কাকতালীয়ভাবে এই মাসেই ঘটে গেল এক লোমহর্ষক মর্মান্তিক করুন কাহিনী। যা পৃথিবীর মানচিত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করলো।
কি সেই কাহিনী ?যা শুনলে হৃদয় উদ্বেলিত হয় , অশ্রুর শ্রাবণ ধরা গড়িয়ে পড়ে ভিজে শরীরে। মেয়েটির নাম তিলোত্তমা । ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত। তার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা। অত্যন্ত দারিদ্র পরিবার বাবা-মা সেলাই মেশিন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক কষ্টে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য জীবনপণ লড়াই করে। মেয়েটি সাফল্যের সাথে ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, পরবর্তী উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য নামকরা সরকারি চিকিৎসালয়ে সুনামের সাথে কাজ করতে থাকে।
ইতিমধ্যে ওই চিকিৎসালয়ের অনেক দুর্নীতির সে হদিস পায়। একটা অশুভ চক্র নিরন্তর মানুষের ক্ষতি করে চলেছে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে।
এই কাজের সে প্রতিবাদ করে বিভাগীয় প্রধানের কাছে। এটাই হলো তার কাল। সে বুঝতে পারেনি এই অশুভ চক্র তার এত বড় ক্ষতি করে দেবে। সেদিনটাও ছিল নয় আগস্ট। টানা ছত্রিশ ঘন্টা রোগীদের সেবার ডিউটি করার পর, বন্ধুদের নিয়ে একসাথে খাবার খায়, গল্প করে, তারপর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে চলে যায়। দুর্বৃত্তরা এই সুযোগটাই খুঁজছিল। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় উন্মত্ত হায়েনার দল ঝাঁপিয়ে পড়ে কুসুম কোমল শরীরটার উপর। নিশংসভাবে তাকে আঁচড়ে কামড়ে ছিঁড়ে গলা টিপে ধর্ষণের পর ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়। তার আর্তনাদ বাঁচার আকুতি চার দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ থেকে যায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বাবা-মার কাছে খবর পাঠালো মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরবর্তীকালে সমস্ত প্রমাণ লোপাটের জন্য তিলোত্তমার মৃতদেহ তড়িঘড়ি করে পুড়িয়ে দেওয়া হল। চলছে তদন্ত রাজ্য পুলিশ, সিবিআই। কাদের আড়াল করতে রাজ্য সরকার এত তৎপর সুপ্রিম কোর্টে জনগণের অর্থ ব্যয়? বিচার পাবে কি তিলোত্তমার হতভাগ্য বাবা-মা! বিচার পাবে কি নির্যাতিতা নারী জাতি!!
ইতিমধ্যে গ্রাম শহর নগর দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও চলছে প্রতিবাদ চলছে বিক্ষোভ উই ওয়ান্ট জাস্টিস এর দাবিতে।
ন্যায়বিচারের আশায় প্রহর গুনছে যেমন নির্যাতিতার জনক- জননী তেমনি সারাদেশ সারা বিশ্ব। আঁধার অবসানে উঠুক নতুন সূর্য--------।
================================
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।