ঝরা পাতার চিঠি
জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রী শ্রী দুর্গা সহায়
লন্ডন
১৫ ই অক্টোবর ২০২৪
(২৮ শে আশ্বিন ১৪৩১)
প্রিয় ডলি দি,
শুভ বিজয়া। তুমি ও জামাই বাবু আমার প্রণাম নিও । বুলবুলি আর বাবলি কে আমার ভালোবাসা দিও । আশা করি সব ভালো ।
প্রতিবার মা দুর্গার বিজয়ার পর একটা বিষন্নতার সুর যেন আকাশে বাতাসে মিশে থাকে তাই না ? রুক্ষ শুষ্ক গাছপালা ঘেরা নির্জনতার ছাপ মাখা প্রান্তরে পাতা ঝরা দের উড়িয়ে দিয়ে হিমেল বাতাস কি যেন খুঁজে চলে !
এখানে আলাদা করে সোনা রোদ মেখে হেমন্ত আসে আসে না দুপুর বিকালে বাউল বৈরাগী হয়ে ! বাতাসে নেই হেমন্তের পাকা ধানের সুঘ্রাণ। টেমস নদী মনে করায় দামোদর কে! মেঘলা আকাশ, একটু রোদ্দুর,ঝিরঝির বৃষ্টি তো কখনো বৃষ্টির ঝর্ণা,কোথাও স্নো ফলস,শীতল আবহাওয়া লন্ডনের প্রায় সময়ের দৃশ্য আর অনুভূতি। ছাতা সবার রোজকার সঙ্গী । তার সাথে চলা ফেরা । আজ হাইড পার্কে এসে দেখি হলুদ হয়ে ম্যাপল পাতা ঝরতে শুরু করেছে । কেউ সাইকেল চালাচ্ছে,গল্প করছে হাঁটছে বই পড়ছে। জুলু তার কাকার ছেলে টুলু র সাথে বাড়িতেই রয়ে গেলো । টুলুর মা বাবার ডিভোর্স টা বোধায় আর আটকানো গেল না । সোদ পুরের মেয়ে !আমাদের মতো গ্রাম বাংলার না তো। আমরা কত অ্যাডজাস্ট করেছি ,করি বলো ! জীবনে সব পাওয়া যায়না কিংবা ঐ যে গান এর লাইন ' সব পেলে নষ্ট জীবন '!
দিল্লিতে একাকিত্বে ভুগছিল উদিত। অদিত বলল টুলু কে নিয়ে এখানে কদিন কাটিয়ে যেতে । দু ভাই ওদের কিছু বন্ধু বা জুলু টুলু ওরা সময় কাটালে মন অনেক হালকা হবে । না ববি আসেনি । ও আর ফিরবে না বুঝে গেছি । অথচ ওর কেরিয়ার গড়ার পিছনে উদিতের পুরো অবদান ! কি না করেছে উদিত ওর জন্য! আর এখন ভুলে গেল সব কিছু কত সহজে অন্য কে পেয়ে । ওর খুড়তুতো বোন পপি একদিন ফোন করেছিল আমায় , মেয়েটি ভালো ।দিদির ব্যবহারে লজ্জিতা।কাঁদছিল। আমার মনে হয় পপির একটা সফট ফিলিংস আছে উদিতের প্রতি ওদের বিয়ের আগে থেকেই ইনফ্যাক্ট পপির সূত্রেই উদিত ববির আলাপ হয়ে ছিল। তার পর প্রেম হয়তো পপি আর কিছু জানাতে পারেনি তার ফিলিংস। যদি পপি আর উদিতের ভবিষ্যতে বিয়ে হয় টুলু টা মা পাবে ।আর একান্ত ওদের কিছু না হলে উদিত যদি একা সামলাতে না পারে টুলু কে এখানে রেখে জুলু র সাথেই মানুষ করব । দুভাই একসাথে বড়ো হবে।ছেলে টাকে তো অবহেলা করা যায়না ।এই চ্যাটার্জি বংশের ই তো সে । আর যদি ববি নিয়ে যায় সে ক্ষেত্রে কি আর করা ! আফটার অল সেই তো ওর মা। সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই ।
ঝরা পাতার স্তুপে একটা কাঠ বেড়ালি খাবার খুঁজছে । একটি বাচ্ছা মেয়ে একটু দূর থেকে তাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে । সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার কাঠবেড়ালি টা খাবার খুঁজতে লাগল ।তাদের দেখে খুকি ও কাঠবেড়ালি কবিতা টা মনে এলো । একটা ছবিও তুললাম।পাঠাব হোয়াটস অ্যাপে দেখো । লেকের জলে হাঁস , ফ্লেমিগো কিছু চড়ে বেড়াচ্ছে। এদিক ওদিক পায়রা ঘুরছে। ইউরোপের দেশ গুলোতে একটা জিনিস বেশ আছে নির্জনতা। হবে না কেন ছোট ছোট দেশ । বেশিরভাগ ই আমাদের ভারতের রাজ্য গুলোর থেকে অনেক ছোট, পপুলেশন ও কম । যায় হোক এই নির্জনতা টুকু বেশ লাগে আমার, কোনো জনহীন হল্ট স্টেশন কি নিরিবিলি পার্ক ! শান্তিতে আমি লিখতে শুরু করি সুযোগ পেলেই ।ছাতার মতোই ব্যাগে ডায়েরি খাতা থাকে এখন যেমন তোমায় লিখছি । সব কথা সব অনুভূতি কি বলে প্রকাশ করা যায় ? লিখতে সহজ লাগে । তুমিই আছো যাকে এখনও চিঠি লিখি বিজয়া তে। হ্যাঁ পুজো দেখলাম এখানে থেকে যেটুকু করা যায় উপভোগ । আমাদের পশ্চিমবঙ্গ এর কি আমাদের বর্ধমানে র গাঙপুরের আমেজ কি পাওয়া যায় ? আর জি করের ঘটনাতেও মনটা খারাপই লাগে। তিলোত্তমা বিচার পাক এই কামনাই করি ।
আনন্দ করতে কেমন যেন অপরাধ বোধ হয় কিন্তু মা র কাছে যেতে তো দোষ নেই । শান্তি লাগে । সেটুকু করেছি নতুন শাড়ি ভেঙে ই। সেই যেটা পিসি মণি দিল এবারে দেশে ফিরে। একই দেখতে তোমার হলুদ আর আমার টা পেস্তা কালারের, ছবি দেবো পুজোর দেখো ।
দেশে এই সময় বেলা পড়ে যায় তাড়াতাড়ি। অবেলায় হেমন্তের ম্লান আলো টা বেড়ালের মতো টপ করে ঢুকে যায় ঘরে । দিগন্ত বিস্তৃত চরাচর জুড়ে চারদিকে কমলা রঙ ছড়িয়ে ঈষৎ কুয়াশার নীল চাদরে কেমন মায়াবী নিঝুম পরিবেশ গড়ে তুলে টুপ করে ডুবে যায় সূর্য।
সার দিয়ে পাখিদের নীড়ে ফিরতে ফিরতে শিশিরের শব্দের মতো কখন যেন সন্ধ্যা আসে নেমে।
শিশির স্নাত হেমন্ত শান্ত সৌম্য উদাসীন মগ্ন নিভৃত ও প্রখর রৌদ্র মুক্ত । তাকে অনুভব করতে হয় । শূন্যতা আর তৃপ্তি র মিশেলে বোনা এক শাল যেন হেমন্ত তার গায়ে জড়িয়ে রাখে । মন এর ভীষণ মন খারাপ করে । সবুজ ঘাসে ঝরে পড়া সোনালী, বাদামি লাল রঙের পাতা দের দল তো জীবনের পুরোনো দিনের ছায়া ছবি !অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয় বেলা শেষের হেমন্ত ...অনেক কথা ...!
তোমার মনে আছে ডলি দি পিসে মশায়ের খামারে সেই ধান পাহারা দিতে যাওয়া ? তুমি আমি কৃষাণু দা টিটো পাশের বাড়ির তোমার বন্ধু বকুল দি ,মুকুল একটু থেকেই কৃষানু দা ছটফট করত মাঠে যাবার জন্য তমাল দা ডাক দিত ওকে । পিসে মশায় এর চোখ এড়িয়ে দে দৌড়। সেই কেমন বাঁকুড়া পুরুলিয়া থেকে আসা সাঁওতাল দলটি খামারে পাটাতে/ মেশিনে ধান ঝাড়াই এর কাজ করতো ।খামারে পুকুরের এক পাশে ওদের জন্য করা ঘর গুলোতে কেমন চলতো সেই ওদের ঘরকন্না! সেই পুকুরে উপুড় ঝুপুর স্নান সেরে ভাত আলু সেদ্ধ কাঁচা লংকা পেঁয়াজ কখনো বেগুন পোড়া টমেটো পোড়া । তৃপ্তির হাসি , ঘাট থেকে ভেসে আসত লাইফ বয় সাবানের সুগন্ধ , মস্ত পুকুরে হাঁসের দলের কলতান ; খেয়ে উঠে মিঠে রোদে খড়ের চৌকির ওপর জীর্ণ কম্বল বিছিয়ে তাদের একটু জিরোনা, গল্প ,যাযাবরের সংসার।
পিসেমশাই রাজেন্দ্র মুখার্জি একদিকে দাপুটে একদিকে যেন ভোলেভালা। ওরা শ্রদ্ধা করত ।
কি মিষ্টি লাগতো ওদের ঐ সরল জীবন টুকু দেখে । ওদের নারী দের কেমন সুখী সুখী স্বামী সোহাগিনী লাগত । কর্মঠ পুরুষ রা কর্ম সেরে নিশ্চিন্তে স্ত্রী সন্তান দের কাছে ফিরতো কখনো কোনো পরবে একটু আধটু নেশা !
অল্প পয়সা ,কিন্তু ভালোবাসা থাকতো ।
আর ওদের দেখে আমার নেশা লাগত চোখে ..!
সেই বিকাল বেলা তে শিমুলতলার মাঠে এক পাশে ভাঙা পোড়ো মন্দির , সমাদ্দার দের পুকুর সেই খানে রোজ বিকালে চলত কৃষাণু দার ফুলবল প্র্যাকটিস। দু চোখে স্বপ্ন একদিন মোহন বাগানে খেলবে ।
দিদার র আদরের কৃষ্ণ। হ্যাঁ হেমন্ত এলেই কৃষাণু দা কে খুব মনে পড়ে জানো। চোখের সামনে সেই ঝরা পাতা দের সবুজ থাকার দিন গুলো মনে আসে বারবার! আমার চোখ দিয়ে জল আসছে জানো ডলি দি। তোমারও কি চোখ ভিজলো? জানি ভিজছে নিঃশব্দে!
তুমি ১০ বছর বয়সে বাবা কে হারিয়েছিলে ।আর আমি তো জন্ম থেকেই মা হারা। ঠাকুমা মণি তোমায় আর আলো পিসীকে নিয়ে এলো । শক্ত সমর্থ সাহসী ব্যক্তিত্ব এর ঠাকুমা মণি র মুখের ওপর কারোর কিছু বলার সাহস থাকত না । সর্বাণী দেবী মুখার্জি যেন স্বয়ং দেবী জগদ্ধাত্রী। সবার দিকে নজর থাকতো । ছেলে / মেয়ে /বৌমা সবাই সমান ।
মস্ত বাড়ি,পুকুর বাগান জমি র হিসাব জগদ্ধাত্রী পুজো সব সামলাতেন আর বৌমা ও মেয়েকে শিখিয়ে দিতেন সব। শুনে ছিলাম তোমার বাবা চলে যাবার পর ওনার প্রাইমারি স্কুলের চাকরি টা করতে ঠাকুমা মণির আপত্তি ছিল পরে পিসিমনি বুঝিয়ে রাজি করায়। টাকার দরকার থাকে । ঠিকই করেছিল ।
পিসেমশাই এর ব্যাংকের চাকরি সময় কম তাই সব দিক ধরে রাখতে ঠাকুমা মণি আর পিসিমণি খুব করেছে। তবে কি জানো ডলি দি পিসিমণির কোথাও একটা নিজের কলেজের জব টা করতে না পেরে আক্ষেপ ছিল ।হতেই পারে বেশ শিক্ষিতা তো! সেই যুগে অঙ্কে এমএস সি মানে মস্ত ব্যাপার ।হয়তো আমরা দুই জন না এলে পিসিমণি ও করতে পারতো জব । আমাদের জন্যই পারেনি। যেই ভাবে আমাদের দুই জন কে টিটোর সাথে নিজের মেয়ে দের মতো বড়ো করে তুলেছে এর জন্য পিসি মণির প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ।
মা ভাই / ভাই এর বৌ এর সাথে আলো পিসিও সম মর্যাদায় থাকতে লাগলো। সংসারের অনেক কাজে পিসি মণিকে আলো পিসিও অনেক হেল্প করতো । আলো পিসি আভা পিসি যেমন স্নেহ করতেন ভাই এর বউ কি তেমনি পিসিও শ্রদ্ধা করত তার দুই ননদ কেই। আসলে সেই হারিয়ে যাওয়া যুগে এমনই ছিল মানুষ গুলো অকৃত্রিম। পিসির কাছে শুনেছি ঠাকুমা মণি বলেছিল ঐ দুধের শিশু কে নিয়ে তোমার দাদা এখন সামলাতে পারবে ? তুমি বাপু নিয়ে এসো ।এখানে আমরা সবাই আছি ঠিক থাকবে । যতদিন না তোমার দাদা আবার বিয়ে করছে থাক না ও এখানে। আমি তো আছি । পিসি শুনে ঠাকুমা মণি কে প্রণাম করেছিল কৃতজ্ঞতায় পিসির চোখ ছল ছল করে উঠেছিল। আমার কোনো মামা ছিল না । মায়েরা তিন বোন । মাসি রা চায়লেও বড়ো মাসী মেজো মাসী এদের শ্বশুর বাড়িতে যদি আমায় না রাখে সেই নিয়ে পিসির চিন্তা ছিল । গরীব দিদা। দাদু আগেই চলে গেছিল পৃথিবী ছেড়ে । বড়ো মাসী ই দিদাকে নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে রাখতো আবার আমার ভার! শুনেছি বাবা খুব ভালোবাসত মা কে কিছুতেই আর বিয়ে করতে চায়নি । ঘরে মন টিকতো না ।
বাউন্ডুলে বাবা অভিনয়ের নেশায় যাত্রা দলে ভিড়েছিল।
আচ্ছা ডলি দি আমায় কি বাবা অপয়া ভাবতো? আমায় জন্ম দিতে গিয়েই মা চলে গেছিল , আমার মুখ টানতো না বাবা কে ? আমি পিসির ওখানে বাড়তে লাগলাম । তবে বাবা ঠিকই নিয়ম করে টাকা পয়সা পাঠাতো। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো পিসিদের সবার প্রতি। পিসির বাড়ি যখনই আসতো সবার জন্য জিনিস আনতো। কাকার কাছে আসতো জমির হিসাব দেখতে ।
তোমার মনে আছে কিছু ডলি দি বাবা আমার টানে আসতো কিনা? জানো একবার নাকি পিসি দেখেছিল না বলে হঠাৎ বাবা এসে আমায় নিয়ে পিসেমশাই দের পুকুরে বাঁধানো ঘাটে বসে বসে খুব কাঁদছে আর আমায় আদর করছে আমি তখন দুই বছর । বাবা কাঁদছিলো আর বলছিল তুমি কেন গেলে মোহর । তুমি ছাড়া আমি সত্যি অসহায় আমি তো বাউন্ডুলে ।তুমি সেই দেখেই ঘর বেঁধেছিলে আমার সাথে মোহর । তবে কেনো চলে গেলে তাড়াতাড়ি। কি অভিমান ছিল? মা ই নাকি নাম রেখে গেছিল আমার রাইকান্তা।
শুনেছিলাম মামার বাড়ির গ্রামে নাকি যাত্রা করতে গিয়ে কোন ভাবে মা কে দেখে বাবার পছন্দ হয়েছিলো। তখন বিভাস সান্যালের নাম খুব ।লোক মারফৎ বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় বাড়ি থেকে । মা তখন উচ্চ মাধ্যমিক পড়ছে আর্টস নিয়ে।
গ্রামের স্কুল ছিল মাধ্যমিক । দূরে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ,মায়ের পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে মায়ের মামা বর্ধমানে ভারতী স্কুলে নিজের কাছে রেখে ভর্তি করিয়ে দেয় । দাদু ছিল না, দিদা আগের দুই মেয়ে মণি আর মুক্তার বিয়ে দিয়েছিল ভালো পালটি ব্রাহ্মণ ঘরেই । এলাকার নিষ্ঠাবান পূজারী ও টোলের সংস্কৃতে র পন্ডিত মশাই রামেশ্বর হালদার কে সবাই ভীষণই শ্রদ্ধা করত তখন কার চেনা পরিচিত মানুষরা অনেক সাহায্য ও করতো। উনি চলে গেলেও ওনার স্ত্রী সুধারাণী দেবী আর সন্তান দের খোঁজ খবর নিতেন । তখন কার দিনে চেনা পরিচিত কি আত্মীয় দের জন্য সবাই ভালো সম্বন্ধ নিয়ে আসতো।বিয়েতে আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশী রা পাশে থাকতো।এখন কার মতো স্বার্থপর ছিলো না । তাই ছোট মেয়ে মোহরের ও যখন পালটি ব্রাহ্মণ ঘর থেকে সম্বন্ধ এলো দিদা খুব একটা আপত্তি করেনি । অতীব স্বচ্ছল বনেদী বাড়ি । জমি ব্যবসা পুকুর বাগান ।ঠাকুমা মেয়ে দেবিকা কে দিয়ে দুই ছেলে বিভাস বিকাশ এর স্ত্রী দের জন্যও ভালই কিছু গয়না রেখে গেছিলেন । শুধু ছেলে চাকরি কি পারিবারিক ব্যবসায় না নেমে ঐ অভিনয়ের নেশায় বাউন্ডুলে ছিল ।সবাই ভেবেছিল সংসার হলে ঠিক মন বসবে বাড়িতে । কিন্তু ঘরের লক্ষ্মী ই ফাঁকি দিয়ে চলে গেল । জন্ম নিয়েই আমি হলাম মাতৃ হারা। দিদা বুকে তুলে নিলো । পরে পিসি নিয়ে এলো । তোমায় পেলাম দিদি । মাসীর ছেলে মেয়ে মিতু দি, অভি দা, অপু দা,কাকার ছেলে জয়,জিৎ এদের থেকে যত না আদান প্রদান ছোট থেকে তোমার সাথে, টিটোর সাথে কৃষাণু দা কুশল এদের সাথেই বেশি আদান প্রদান কারণ আমরা এক জায়গাতে বেড়ে উঠেছিলাম। ও পাড়াতে কৃষাণু দার বাড়ি হলেও এ পাড়ায় মামার বাড়ি চলে আসতো সে বেশির ভাগ সময় । মনে পড়ে ডলি দি কৃষাণু দা কি সুন্দর ছবি আঁকতো ! আমরা সবাই পরীক্ষার সময় ওয়ার্ক এডুকেশন পরীক্ষায় ওকে দিয়ে আঁকিয়ে নিতাম।
বিশ্বকর্মা পুজোতে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা তে প্রত্যেক বার কৃষাণু দা প্রথম হতো।
সেই বিকাল হলেই আমরা হাজির হতাম ফুটবল মাঠে মনে আছে তোমার ডলি দি ? ফুটবলের নিয়ম সব ঠোঁটস্থ না থাকলেও যেতাম স্ট্রাইকার কৃষাণু ভট্টাচার্য এর জন্য, বাড়িতে দেখা হলেই বেশির ভাগ সময় ঝগড়া খুনসুটি রাগারাগি কিনতু মাঠে গিয়ে সব ভুলে যেতাম । বল যখন তার কাছে পৌঁছতো এমনি গলা দিয়ে ওর হয়ে চিৎকার বেরিয়ে আসতো।
বর্ধমানে র আসে পাশে তখন কৃষাণু দার নাম ছড়াচ্ছে ফুটবলে। গাঙ পুরের সবাই ওকে নিয়ে গর্ব করছে । খেলার জন্য স্কুল কামাই হচ্ছে। পড়াতেও ঢিলেমি । বাড়ির লোকের চেঁচানির চোটে এ পাড়ায় মামার বাড়ি পালিয়ে আসত পরীক্ষার সময় । দেখতাম অনেক রাত অব্দি কৃষাণু দার ঘরে আলো জ্বলছে পড়ছে সে ।
মাঠে খেলা চললে বেশি চেঁচাতেন পিশে মশাই। ভাগ্না র খেলা বলে কথা ! একদিন কলকাতায় ডার্বি ম্যাচে এমনি খেলবে স্বপ্ন মামা ভাগ্না র। সেদিন শিমূলতলার মাঠ না যুবভারতী তে ।
মনে পড়ে তোমার ? সেই কাকে নিয়ে হাসপাতাল যেতে হবে , কে খেতে পায়নি ,কার ঘর ভেঙে পড়েছে ঝড়ে মেরামতের দায়িত্ব নিতে হবে ,কে মারা গেছে দাহ করতে শ্মশানে নিয়ে যেতে হবে সবে পুরোধা সে আর পিছনে তখন কার বাউন্ডুলে সেই ছেলেগুলোর দল । আমায় বলতো কিরে খুব যে আমায় পাত্তা দিচ্ছিস না আজকাল দেখিস একদিন চলে গেলে কলকাতা কি কোথাও তখন খুব মনে করবি । আমার মাধ্যমিকের ঠিক দুমাস আগেই কৃষাণু দা ইস্টার্ন রেল ফুটবল ক্লাবে চান্স পেয়ে চলে গেল কলকাতা । ওর তখন বিকম পড়া শেষ প্রায় । বলেছিল চিঠি দিস ঠিকানা রেখে গেলাম । জানাস কেমন রেজাল্ট হল । ফার্স্ট ডিভিশন শুনে কৃষাণু দা খুব খুশি হয়েছিল।বলে ছিল যাক আমার সেকেন্ড ডিভিশন হয়েছিল তোর তো হলো। ভালো করে পড় একদিন কলকাতায় ঘুরিয়ে দেবো।
তখন ও ল্যান্ড ফোন আসেনি বাড়ীতে। তার এক বছর পরে এসেছে মনে আছে আমার ।
তখন আমার ক্লাস ইলেভেন । কোনো এক পৌষালী দুপুর । হটাৎ টিফিনে মৌটুসী এসে বলে তোর কৃষ্ণ দাঁড়িয়ে গেটের ওদিকে ।আমার কৃষ্ণ মানে! কে সে ?
পাকা মৌটুসী চোখ নাচায় এসে দেখি ওমা ! কৃষাণু দা নতুন রাজদূত বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে।বলল আজই কিনলাম বর্ধমান থেকে চল ঘুরিয়ে নিয়ে আসি ।কি খাবি বল ? দামোদর এর ধারে যাবি? সিনেমা দেখবি কিছু? চল দেখি কিছু চলছে কিনা ।
বললাম কখন এলে? জানিনা তো এসেছ। বললো হঠাৎ করেই ।বলিনি কাউকে বাইক টা কেনার কথা ছিল ।
যা তোর ব্যাগ নিয়ে আয়।
আরে এই ভাবে কোথায় যাব ? দূর এই স্কুলের শাড়ি তে? দিদি মণি রা ছাড়বেন না । অন্য রকম ভাববেন
কি ভাববে ?আরে এই স্কুলে আমিও পড়েছি ভুলে যাস না তুই তো এখানে গার্লস থেকে এসে দু বছর পড়বি আমি সেই ফাইভ থেকে টুয়েলভ অব্দি পড়েছি। কৃষাণু ভট্টাচার্য কে সবাই চেনে ।সব ম্যাডাম স্যার রা চেনে ।
ততক্ষণে দোতলার স্কুল বারান্দা থেকে উঁকি ঝুঁকি ইলেভেন টুয়েলভ এর ছেলে মেয়েদের । কমার্সের সেকশন থেকে জানালা দিয়ে কেউ কেউ মন্তব্য ছুঁড়ছে।
- দূর আমি এলাম ! সবাই দেখছে।
- আরে..
তুমি ভাই ফোঁটা তে এলে না কৃষাণু দা ? আর তো নাও না ফোঁটা !বোধায় আমি হাই স্কুলে ওঠার পর থেকেই ।
আসোনা তো ? কোনো পাতানো বোনের কাছে যাও শুনেছি। সবাই কে বলো গরীব বোন না গেলে দুঃখ পাবে কেউ নেই মা , দিদা ছাড়া তার।
কৃষাণু দা বাইকের আয়নায় নিজের চুল টা হাতে করে ঠিক করতে করতে বললো জানিনা। কেন আসিনা বুঝিসনা তুই ?
কেনো?
কিছু না ।যাবি কি বল ? কাল কিন্তু চলে যাব আমি দুপুরেই তখন যেন বলিস না কৃষাণু দা বাইকে একবার ঘোরালে না !
ঠিক তখন মৌটুসী ডাকল বারান্দা থেকে রা... ই.!
দুজনেই চোখ তুলে তাকালাম ওর দিকে। ইশারায় মৌ বোঝাল ঘণ্টা পড়বে।
কৃষাণুদার দিকে ফিরে বললাম পছন্দ হয় মৌ কে ?
- কে সে?
-- চেনো না যেনো ? মৌটুসী লাহিড়ি কে চেনে না এমন আছে কেউ? বলো তো বলবো বাড়িতে । খুব ইচ্ছা আমার সুন্দরী বান্ধবী আমার বৌদি হোক ।
- খুব পেকেছিস যা হোক । তোকে আর ঘটকালি করতে হবে না । ওটার তিনটে প্রেমিক আছে ।
- আরে দূর ! সুন্দরী দের এমন থাকে । তোমার সাথে বিয়ে হলে ঠিক হয়ে যাবে । তোমার যা রাফ অ্যান্ড টাফ মেজাজ।
ঢং ঢং করে ঘণ্টা পড়ল। আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম চললাম গো।যাবো পরে।তুমি নেক্সট টাইম যখন আসবে আগে থাকতে বোলো। আজকে বিমান দার কোচিংয়ে যাওয়া আছে ।ভূগোল পড়াবে।
- বিমান দার কোচিংয়ে ঢুকেছিস বুঝি ।মাল টা থেকে সাবধান কিন্তু। মেয়ে দের একটু বেশি ই ভালোবাসে ।তার ওপরে যদি কেউ সুন্দরী হয় । আর কোথাও কাউকে পেলি না ভূগোল পড়ায়?
- আমি সুন্দরী নই তো ,চিন্তা নেই ।
- তুই তো শীতের স্নিগ্ধ সুন্দর ক্যামেলিয়া..
হয়তো আরো একজনেরও যাকে তুই বুঝিস না ।
আমি একটু চমকে গেলাম। বাইকে স্টার্ট দিল ও। ঠিক আছে নেক্সট টাইম নিয়ে যাব তৈরি থাকিস। এখন ক্লাসে যা
আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম । সেই প্রথম মনে হলো কৃষাণু দা আগের থেকে আরও হ্যান্ডসাম হয়েছে দেখতে । ওর হাসিটা ভীষণ সুন্দর ।
হন্তদন্ত হয়ে হয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলাম দেখলাম স্টাফরুম থেকে সুদেষ্ণা দি বেড়িয়েছেন, বায়োলজির ক্লাস আছে । আলগা টিপন্নি ফিসফিসানি তখন এদিক ওদিক। কি ঝামেলা । আরে আমার কেউ আত্মীয় দেখা করতে পারেনা ?তোরা না সত্যি ! ম্যাডাম আসায় সেই তখনকার মতো চুপ হল ক্লাস ।
তার পর আবার সেই দুর্দশার দিন । তখন কলেজে পড়ছি আর বাবার সুইসাইড । বাবা অনেক বিশ্বাস করে শেষ অব্দি ঘর বেঁধেছিল। যাত্রা দলের ই এক অভিনেত্রী কে । তুমি জানো সেসব কিন্তু আজ কেমন সব আবার নতুন করে মনে ঘোরাঘুরি করছে স্মৃতি রা ! সরল বাবা বোঝে নি জীবনের মঞ্চের অভিনয়ে
সে অভিনেত্রী আরোও দক্ষ বাবার চেয়ে । সব টুকুই অভিনয় ছিল । উদ্দেশ্য সম্পদ।বিয়ের স্থায়িত্ব মেরে কেটে এক বছর । জানিনা হতে পারে ,বাবা কোনো কারণে বাধ্য হয়েছিল । কিংবা নিদারুণ একাকীত্ব তে পেয়ে বসেছিল । প্রথমে বিয়ে নিয়ে আমার খারাপ লাগলেও পরে আমি বুঝে বাবা কে দোষ দিই নি ।
অনেক সমালোচনা ও শুনতে হয়েছে বাবা কে।সেই করলো তো মেয়ের ছোট বয়সে করল না কেন ! এখন মেয়ের এই ১৮ বয়সে এসে কেনো! সম্পূর্ণ মিথ্যা গার্হস্থ্য হিংসার মামলা করে কদিন জেল খাটিয়ে অনেক টাকা খোরপোশ নিয়ে বাবার জীবন শেষ করে দিল অভিনেত্রী অনিতা চৌধুরী। আঘাতে অপমানে বিশ্বাস ঘাতকতা তে দিশেহারা হয়ে এক গাদা ঘুমের ওষুধ খেয়ে বাবা টা আমার চলেই গেল ।
অভিনেত্রী মডেল রা কি সত্যি কারো সংসার এর ঘরণী হয় ডলি দি? না সেখানেও চলে অভিনয়?
হাজার হাজার পুরুষের নজর যাদের চাহিদা থাকে তারা কি কাউকে ভালোবাসতে পারে? না আরাম বিলাস টাকা জনপ্রিয়তা ,স্বেচ্ছাচারিতা এগুলোই প্রধান ? কে জানে! কিন্তু কেমন অশ্লীল লাগে ওসব ।ওদের ঐ জীবন যাত্রা।
যখন বাবা চলে গেল ,পুজো র তখন কদিন মাত্র বাকি ।
সেই দিন গুলো আজও ভাসে।মনে হয় এই তো কদিন আগে র কথা । আমার মনে আছে কলকাতা থেকে ছুটে এসেছিল কৃষাণু দা শোনার সাথে সাথেই। সেই বাবা র শেষ যাত্রা ,পুলিশ ! লোক জন...সেই আমার মুখাগ্নি করতে যাবার সময় আর শ্রাদ্ধের সব কাজে সব সময় কৃষাণু দা আমার সাথে ছিল ।
তোমার তখন বিয়ে হয়ে গেছে । লাভপুরে তুমি।
বাড়ীতে একা লাগতো খুব । শূন্যতা শুধু।
না কৃষাণু দা র সাথে বাইকে করে আর বেড়াতে যাওয়া হয়নি কিন্তু বাবা চলে যাবার পর ওই অবসাদের সময় কৃষাণু দা সব সময় আগলে রাখতো। ফোনে,চিঠিতে ছুটিতে বাড়ি ফিরলেই ...
শিমূল তলার মাঠ পেরিয়ে সমাদ্দার দের পুকুর এর ওদিকে একটা বটগাছ ছিল মনে আছে? এখনও আছে হয়তো আর তো যাওয়া হয়না ওদিকে । ওখানে একদিন বসে ছিলাম তখন পড়ন্ত বেলা ।সূর্য্য বিষণ্ণ কমলা রঙ ছড়াতে শুরু করেছে নিচে সর্ষে ফুলের গালিচা পাতা যেন !সূর্যাস্তের সময় কেমন মায়া লাগে পৃথিবী কে দেখবে তুমি ,সেদিন অনেক কথা বলেছিলাম কৃষাণু দা কে । শান্ত বটগাছ হয়ে শুনেছিল। আসলে আমি একটা শান্ত বটগাছ চাইতাম বরাবর। একটা আশ্রয় ।অনেক কেঁদে ছিলাম কৃষাণু দা কে জড়িয়ে ।মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলেছিল পাগলী ।আমি তো আছি তোর পাশে । সবসময় পাবি।
আমার চোখের জল এর বাগ মানছে না । আমি কাঁদছি ডলি দি ।একটু বিরতি নিই।
তখন জানতাম না আর কি কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য পরের বছর...
হ্যাঁ এই হেমন্তে ই কার্তিকের শেষে জগদ্ধাত্রী পুজো র পর গাড়ি করে কলকাতা ফেরার পথে হঠাৎ গাড়ি দুর্ঘটনা তে ....! দিনটা সামনেই আসছে !
ইষ্ট বেঙ্গলের আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কৃষানু দে তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠ।আর কোথাও তখন উঠতি তরুণ এক ফুটবলার দু চোখে স্বপ্ন নিয়ে হেমন্তের পথিক হয়ে মিলিয়ে গেল । তার কথা সবাই জানল না আর । কাছের মানুষ দের স্মৃতিতে রয়ে গেল শুধু । ঠাকুমা মণি তার আদরের কৃষ্ণ কে হারিয়ে সে শোক আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি । তার পর কমাস পরে ঠাকুমা মণি ও...!
আভা পিসি,পিসেমশাই কুশল কে আঁকড়ে ধরে বেঁচে রইলেন প্রথম পুত্রের শোক বুকে চেপে নিয়ে ।
কৃষাণু ভট্টাচার্য হেমন্তের আকাশে শেষ নক্ষত্রের কাছে হয়তো! কোটি কোটি আলোক বর্ষ দূরে । আমি তার কাছে শান্তি পেতাম । নিরাপত্তা পেতাম । আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম।
মন ভারী করে দিলাম তোমার তাই না ?লিখতে লিখতে বেরিয়ে এলো অনেক কিছু । অনেক দিন পর দীর্ঘ চিঠি লিখলাম তোমায়।
আমার কাছে রয়ে গেছে সেই বাড়িতে সবার সাথে তোলা কৃষাণু দার একটা গ্রুপ ফটো আর উচ্চ মাধ্যমিকের পর আমায় ওর দেওয়া এখন অচল হয়ে যাওয়া একটা ঘড়ি, ওর ব্যবহৃত একটা মাফলার ফেরৎ দেওয়া হয়নি ওকে । থেকে গেছে।খাতায় কিছু এঁকে দেওয়া ছবি,একটা খবরের কাগজে কাটিং যাতে ওর খেলার খবর আর জার্সি গায়ে দলীয় ছবি আছে । আর আছে ওর ওড়ানো একটা কাটা ঘুড়ি। ঐ টা ছাদে একবার ওড়াতে গিয়ে কেটে গেছিল সেই বার । অ্যান্টেনা তে দোল খাচ্ছিল কদিন ,পরে কৃষাণু দা ই মই বেয়ে উঠে চিলেকোঠার ছাদ থেকে পেড়ে এনেছিল। চেয়ে রেখে দিয়েছিলাম আমি । কি সুন্দর নীল ঘুড়িটি।
সত্যি বলো ডলি দি তুমি জানতে তাইনা ও কেন ভাই ফোঁটা নিতে আসতো না ? তাই তুমি কারো সামনে ঐ নিয়ে অভিযোগ করতে না ।
জীবন এমন ই। প্রতিটা মুহূর্ত যেন ঝরা পাতার মতো! রোজ ই কিছু না কিছু হারিয়ে ফেলি। পিছনে ছেড়ে আসি । জীবন সফর , সম্পর্ক, স্বপ্ন..! সব কিছুই যেন ঝরা পাতার নৌকাতে ভাসছে।আমরা সেই সফরে অংশ নিয়ে কখনও সবার সাথে কি একলাই আনন্দিত কখনও বা উদাস ভীষণ একাকী এলোমেলো। কিন্তু সেই যাত্রার প্রতি পদক্ষেপেই আছে শিক্ষার অমূল্য সুযোগ। ঝরা পাতা যেমন আবার সার হয়ে গাছে নতুন পাতা আনতে সাহায্য করে তেমনি জীবন পথে আমাদের নানা অভিজ্ঞতা শিক্ষা গুলো সার হয়ে জীবন কে আবার গড়তে সাহায্য করে । কিন্তু সত্যিই কি সব জখম ভরে যায়?
অনেক মন খারাপের কথা বললাম ।বলো তোমার সেই তিনটে পুষির ছানা মিংকু, মিনু মিঠুর খবর কি? খুব দুষ্টুমি করছে তো ? কি মিষ্টি ওগুলো !
সাদা, বাদামি আর একটা সাদা কালো মেশানো।
চটকাতে মন হয় ওদের ভিডিও দেখে । কি সুন্দর ঘর করে দিয়েছ ওদের ।আবার দোলনাও।তুমি কি সুন্দর হাতের কাজ পারো গো ডলি দি । সুন্দর রবীন্দ্র সংগীত গাইতে তুমি, ছাড়লে কেনো? অবশ্য তোমায় কি বলছি আমি নিজেও তো নাচ ছেড়ে দিয়েছি কতকাল। কত্থক নৃত্য একটা সময় আমার আবেগ ছিল । সেই লক্ষ্মী পুজোর পর গ্রামের থিয়েটার মনে আছে? তোমার গাওয়া গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচ করতাম আমি । কি সব দিন গেছে!
মনে আছে সেই মেয়েদের দলের সাথে ছেলেদের দলের কম্পিটিশন ? ওদের নাচ গান দেখে হেসে মরছে সবাই । আমরা জিতেছিলাম। ওদের দল কে আমরা দেখলেই বেশ কিছুদিন রাগাতাম। কৃষাণু দা কি হেভি খচে যেত শুনলেই । সেই স্টেজে কার আবার পেট খারাপ ছিল যেন! মাত দৌড় স্টেজ থেকে । কে আবার বিড়ি খেতে খেতে উঠে ছিল কার পা জামার দড়ি ছিঁড়ে স্টেজে যাচ্ছেতাই কান্ড !কাদের আবার মারপিট লেগে গেছিল, কে গান ভুলে গেছে ! কি কাণ্ড ! মনে পড়লে হেসে বাঁচিনা । জগু দার চায়ের দোকানে একদিন দেখি কৃষাণু দা ছেলে গুলোকে বলছে ছি ছি তোদের জন্য মুখ দেখানো দায় পাড়ায়। রাই খুব সুযোগ পেয়েছে এবার । আমি মামার বাড়ি অব্দি ঢুকতে পারছিনা।মামা অব্দি রেগে গেছে ।বলছে পুরুষ দের মান সম্মান ডোবালি তোরা! আহা সে সব সোনালী দিন !খুব মিস করি দিন গুলো আর সেই সব মানুষ গুলোকেও!
এখানে স্কুলে পড়িয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে দিই এখন । দেশের ইংলিশ মাস্টার্স ডিগ্রি এখানে কাজে লেগে যাচ্ছে আর কি !
বুলবুলি,বাবলি পড়াশোনা করছে তো ?না বেড়াল নিয়েই মেতে আছে ? জামাইবাবুর সুগার কমেছে গো ? কড়া শাসনে রাখবে ।
কুশলের সাথে সেদিন অল্প কথা হল sms এ, টিটো র সাথেও হয় । ত্রমিলা , খুশি এদের র সাথেও হয় মাঝে সাজে। কুশলের মেয়ে লহমা দুষ্টু মিষ্টি বলো বেশ ! টিটোর ছেলে ডোডো হাঁটতে শিখেছে এক পা দু পা!
বাড়িতে এখন পিসি পিসেমশাই আর টিটো রা । আলো পিসিও আর নেই । আভা পিসি পিসেমশাই এখনও যে আসে মাঝে মাঝে ই..ভালো করে বলো ?একসাথে সময় কাটালে মন ভালো থাকবে ।
তুমি আর আমি দুজনেই মা হারা বাবা হারা এখন। ঐ গাঙ পুরের বাড়ি ই আমাদের বাপের বাড়ি।
তোমায় লিখতে লিখতে সময় কখন গড়িয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। একটা হিম মেশানো হাওয়া যেন পাশ দিয়ে চলে গেল ! আজ বৃষ্টি হয়নি । উঠব এবার ,আজ তবে এই টুকু থাক । বেলা পড়ে এলো! চিঠির উত্তর দিও ।একা পড়বে কিন্তু।
ভালো থেকো ডলি দি ।কথা হবে ।
ইতি
রাই
Doli Ghoshal
C/O Chandan Ghoshal
Vill+ po- Lavpur
PS - Lavpur
Land mark - Fullora Mandir
Dist -Birbhum
Pin code 731303
West Bengal
India
ঠিকানা - পাল্লা রোড। পূর্ব বর্ধমান