বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

ধারাবাহিক উপন্যাস ।। মাধব ও মালতি ।। সমীরণ সরকার


মাধব ও মালতি

সমীরণ সরকার 

 
পর্ব - ষষ্ঠ

কালীসায়রে স্নান শেষ করে মাধব  প্রত্যেকদিন রাজপুর থানার পিছনে চন্দ্রশেখর শিব মন্দিরে যায়। এই অভ্যাসটিও মাধব পদ্মাবতীদেবীর কাছ থেকে পেয়েছে। 
পদ্মাবতী  প্রতিদিন সকালে স্নান শেষ করে বাড়ি থেকে হেঁটে চন্দ্রশেখর শিব মন্দিরে যেতেন। সঙ্গে নিয়ে যেতেন মাধবকে। মাধবের হাতে থাকতো গঙ্গাজল ভর্তি তামার ঘটি। মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার আগে পদ্মাবতী হাতের পিতলের সাজিতে মন্দির সংলগ্ন প্রাচীন বিল্ববৃক্ষ থেকে  বিল্বপত্র সংগ্রহ করতেন, সংগ্রহ করতেন আকন্দ ফুল আর ধুতরা ফুল।
মন্দিরের ভিতরে ঢুকে সুর করে জোরে জোরে মহাদেবের ধ্যান মন্ত্র আওড়াতেন,"ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং-রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রবতংসং,রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং........।
ধ্যান মন্ত্র  শেষ করে পদ্মাবতী তামার ঘটি থেকে শিবলিঙ্গের মাথায়  জল  ঢালতেন। তারপর মাধবের হাতে ঘটি  দিয়ে শিব লিঙ্গের মাথায় জল ঢালতে বলতেন। জল ঢালার কাজ শেষ হলে পদ্মাবতী শিবাষ্টকম আওড়াতে আওড়াতে শিব লিঙ্গের মাথায় এক এক করে বেলপাতা, আকন্দ ফুল, ধুতরা ফুল ইত্যাদি চাপাতেন। তারপর হাত জোড় করে চন্দ্রশেখর মহাদেবের উদ্দেশ্যে প্রণাম মন্ত্র  আওড়াতেন , " নমস্তুভ্যং বিরুপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুষে।.........।।
                পদ্মাবতী দেবী অনেক বছর আগে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকে গড়ে তোলা সেই অভ্যাস আজও ভুলতে পারেনি মাধব  । তাই কালিসায়রে স্নান শেষ মাধব আজও উপস্থিত হয় চন্দ্রশেখর মহাদেবের কাছে  ।
এই মন্দিরটি অনেক পুরনো। চূন ও সুরকির সাহায্যে পাতলা ছোট ছোট ইঁট গেঁথে তৈরি মন্দির। সুউচ্চ চূড়া। মন্দিরের গায়ে অসংখ্য চিত্র খোদিত  । সময়ের ছোবলে যা ভগ্নপ্রায় । জনশ্রুতি এই যে, রাজা হরি সিংহ নাকি বর্গীদের হারানোর পর এই মন্দির তৈরি করিয়ে চন্দ্রশেখর শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। কুন্দ ফুলের মত শুভ্র বর্ণ  শিবলিঙ্গ ।শ্বেত বর্ণের সঙ্গে হালকা নীল বর্ণের আভাস। অর্থাৎ নীলকন্ঠ শুভ্র বপু মহাদেবের জাজ্জ্বল্যমান রূপ এই চন্দ্রশেখর শিবলিঙ্গ। 
অন্যান্য দিনের মতো আজকেও মন্দিরের সামনে দাঁড়াতেই মন্দিরের ভেতর থেকে সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ পুরোহিত নৃপতি চক্রবর্তী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মাধব কে বললেন,"এসো  বাবা  মাধব,ভিতরে এসো। আমি তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। তুমি বাবার মাথায় জল ঢালার পর নিত্য পূজা শুরু করবো আমি।
আজকে কী একটু দেরি হল তোমার?
------- আজ্ঞে হ্যাঁ। মন্দিরে আসার পথে জেলে পাড়ার মদন কাকার সঙ্গে দেখা হলো । মদন কাকার সঙ্গে কথা বলার জন্যই দেরি হল। আমার জন্য অপেক্ষা করতে হলো আপনাকে। ছি ছি! খুব খারাপ লাগছে আমার। আসলে ওর ছোট ছেলেটা।
-------- কী হয়েছে মদনের ছেলের?
------ গত প্রায় পনের দিন যাবত জ্বরে ভুগছে।
------ কাউকে দেখায়নি?
------ কমল ডাক্তার দেখেছে। প্রথমদিকে নাকি কমল ডাক্তার বলেছিলেন,দিন তিনেকের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এখন আর ভালো হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলছেন না। উপরন্তু ওই ডাক্তারবাবু সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছেন। তাই মদন কাকা আমার সঙ্গে পরামর্শ করছিল। আর তাই আমার একটু দেরি হয়ে গেল ।

------- না না বাবা,তার জন্য কোনো সংকোচ করো না তুমি। তুমিতো কতোবার  বারণ করেছো
আমাকে অপেক্ষা করতে। কিন্তু তুমি না এলে আমি বাবার অভিষেক শুরু করতে পারিনা। কেন জান?
------- কেন ঠাকুর মশাই?
-------- প্রত্যেকদিন বাবার অভিষেকের সময তুমি যে ভজন গাও, আমার মনে হয় বাবা যেন মন দিয়ে শোনেন সেই গান। আর শুধু বাবার দোহাই দিই কেন, আমারও তো মনপ্রাণ ভরে যায় ওই গান শুনলে। এসো এসো, ভেতরে এসো।
মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায়ে
মাধব। মন্দিরের ভিতরে বসে কে ওই তরুণী? সাদা আকন্দ ফুল দিয়ে আপন মনে মালা গাঁথছে। ওকে তো কোনদিন দেখেনি মাধব।
মাধবের দেহের উর্ধাংশ তো এখন নগ্ন।দেহের নিম্নাংশ সিক্ত বসনে আবৃত থাকলেও সিক্ত বসনের  আড়াল থেকে  সুপুষ্ট যুবক দেহের অনেকটার আভাস সুস্পষ্ট। এই অবস্থায় মাধব অপরিচিত তরুনীর সামনে কেমন করে যাবে?

                   মাধব কে ভিতরে ঢুকতে ইতস্তত করতে দেখে পুরোহিত   নৃৃপতি চক্রবর্তী একবার মাধবের মুখের দিকে তাকালেন, পরমুহূর্তেই মাধবের দৃষ্টি অনুসরণ করে একটু দূরে মন্দিরের ভিতরে বসে থাকা তরুনীটির দিকে তাকালেন। আর তারপরেই অর্থাৎ উচ্চৈঃস্বরে হা হা করে হেসে উঠলেন। তরুণীটি মালা গাঁথা বন্ধ করে নৃপতি চক্রবর্তীর মুখের দিকে তাকালো। বিস্মিত মাধব চক্রবর্তী ঠাকুরের মুখের দিকে তাকিয়ে তার অকস্মাত্ হাসির কারণ বোঝার চেষ্টা করল, কিন্তু বুঝতে পারল না।
কারণটা শিব মন্দিরের পুরোহিত ঠাকুর নিজেই ব্যক্ত করলেন, আরে, ওকে দেখে লজ্জা পাচ্ছো কেন? ও তো তিস্তা,আমার নাতনি। তুমি তো ছোটবেলায় ওকে দেখেছো। পদ্মা মা যখন তোমাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে কোন দরকারে যেত ,তখন তো তোমাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতো।তখন তো তুমি কত কথা বলেছ ওর সঙ্গে, লুকোচুরি খেলেছ---- কিচ্ছু মনে নেই তোমার?
মাধব মনে করার চেষ্টা করো। মনে পড়ে। ও বিস্মিত দৃষ্টিতে আরেকবার তরুণীটির দিকে তাকায়। কিভাবে চিনবে মাধব? সেদিনের সেই রোগা কালো মেয়েটার সঙ্গে চোখের সামনে বসে থাকা সুন্দরী তরুণীটির তো কোন মিলই নেই।

(চলবে)

*****************"******************
From ---Samiran Sarkar,
               Khelaghar Lautore 
                Sainthia Birbhum 
                W.B. PIN--731234
              

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.