Click the image to explore all Offers

গল্প ।। চালিয়ে নেওয়া সংসার ।। আরতি মিত্র

 

চালিয়ে নেওয়া সংসার

আরতি মিত্র


"এখন প্রায়শই একটা কথা মনে হয় জানিস নীতা  -"
     " কি রে রীতা  ?"
" একটা বয়সের পর জীবনে সখ-সাধ বলে বোধহয় কিছুই থাকে না" 
" ঠিকই বলেছিস রীতা,
তখন শুধু ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে চলতে হয়।"
দুই  বন্ধু রীতা আর নীতার অনেকদিন পর একসঙ্গে  দেখা 
দুজনেই ষাটের দোরগোড়ায়
ফোনে কথা হয় কিন্ত দেখাসাক্ষাৎ হয় না বললেই চলে 
তাই এবার ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসেছে কফি আর ফিসফ্রাই নিয়ে  দুজনেরই খুব পছন্দের খাবার 
যদিও বয়সের কারণে শরীরে নানা ধরণের অসুখ বাসা বেঁধেছে কিন্ত কি আর করা প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে প্রিয় খাবার না খেলে মন ভরে
   ছোটখাটো দুই কামরার  ফ্ল্যাটে  রীতা একাই থাকে  আর নীতা ছেলে বৌমা নাতনী স্বামী সহ বড়ো বাড়িতে থাকে , তবে কারও জীবনই সুখের নয় 
যদিও রীতা একাকীত্ব জীবনকে সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে ,করার তো কিছুই নেই-দুই মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থাকবে - এটাই তো স্বাভাবিক 
   হঠাৎই রীতার মনে হলো ,তাহলে তার মতো নীতাও কি মনে মনে একই  ভাবনা পোষণ করে?
" হ্যাঁ রে নীতা তোর তো চারপাশে সবাই আছে ,
তাহলে তুই তো সর্বদা হাসিখুশীতেই  থাকিস?ঠিক বললাম তো?"
 উত্তরে নীতা জানালো, " না রে রীতা, আমার স্বামীর স্বভাব তো তুই জানিস, স্ত্রীকে চিরকালই  কাজের লোক মনে করে এসেছে,কখনও সম্মান দেয় নি, এ বয়সে নতুন করে আর কি কিছু আশা করা যায় , বল?ছেলে বৌমারও মায়ের জন্য কোন ভালোবাসা বলে কিছু নেই " 
রীতা কিছুটা অবাকই হলো, যে সন্তানকে এতো স্নেহ ভালোবাসা যত্ন করে মা বাবা মানুষ করেন পরবর্তীকালে তাঁরাই বোঝা হয়ে যায়,কি আশ্চর্য!
রীতা কিছুটা সান্ত্বনার সুরেই নেতাকে বললো,
" তোর স্বামী তো ঐরকম,সে তো তোর অজানা নয় ,কি আর করবি বল,কিন্ত ছেলে বৌমার এমন ব্যবহার সত্যিই খুব দুঃখজনক,নিজেই তো বললি ,এখন আমাদের নতুন প্রজন্মের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই রে।"
   " কি দিনকাল এলো বলতো রীতা ,আমরা কি শেষ জীবন পর্যন্ত এভাবেই ত্যাগ স্বীকার করে যাবো! বিনিময়ে সামান্য সম্মানটুকুও পাবো না?"
 নিজের অজান্তেই নীতার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো, বন্ধুর দুঃখে রীতার চোখও অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। নীতা বলে উঠলো , "  রীতা তোর কাছে আমায়   থাকতে দিবি রে  , সংসার থেকে বেরিয়ে গেলে তখন হয়তো  ---"
    রীতা কিছুটা অবাক হয়েই বললো ," তোর এতদিনের সাজানো সংসার ছেড়ে তুই থাকতে পারবি? মন কেমন করবে না?"
নীতা জলভরা চোখে রীতার দিকে তাকালো,
ধরা গলায় জানালো," কেউ কারোর নয় রে ,আমার তো এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যে ,মনে হয়,আপন চেয়ে পর অনেক ভালো রে " 
   নীতার কথায় রীতা খুবই কষ্ট পেলো, সেটা প্রকাশ না করে নীতার যন্ত্রণা ঢাকতে বলে উঠলো ,
 " যাহ্ ,এসব কি যা তা  বলছিস,সবটাই তোর বোঝার ভুল, এরকম হতেই পারে না। তোর নিজের   সন্তান , সে এরকম করতেই পারে না।"

      নীতা কিছুতেই রীতাকে বোঝাতে পারছে না,
যে যার সঙ্গে ঘর করে একমাত্র সেই বোঝে।
সে হাল ছেড়ে দেয়,মনটা হালকা করার জন্য কলেজ জীবনের  কথা শুরু করে -- কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুজনে আনন্দে হাসিখুশীতে মন ভরিয়ে তোলে।
    হঠাৎই পেছনে "মা ওমা" ডাক শুনে ফিরে তাকাতেই দেখলো বাবলুকে, নীতার ছেলে
বাবলু  বলে উঠলো, " কখন বাড়ী যাবে মা?
আজ ছুটির দিন তুমি খেতে না দিলে ভালো লাগে না,সোমা (  বৌমা ) সব রান্না করেছে কিন্ত তুমি না এলে কেউ খাচ্ছে না " নীতা বুঝতে পারলো না যে বাবলু কি করে জানলো যে সে এখানে এসেছে,
সে বাবলুকে জিজ্ঞেস করলো , " তুই কি করে জানলি যে  আমি এখানে এসেছি ?"
কথাটা বলেই নীতার মনে পড়লো ,সে বাড়ী থেকে বেরোনোর সময় স্বপনকে ( নীতার স্বামী ) বলেছিল
বাবলু বললো ," মা এই তোমার বন্ধু, তাহলে আন্টিকেও নিয়ে চলো, একসঙ্গে আনন্দ করে সবাই খাবো।  সোমা অবশ্য তোমার মতো অতো ভালো রান্না করতে পারে না, আজকের দিনটা না হয় চালিয়ে নেওয়া যাবে,কি বলো আন্টি?"
====================
 
Arati Mitra. 
267/3 Nayabad. Garia. 
Kol. 700094


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.