গল্প ।। দেরি হয়ে গেছে ।। চন্দন চক্রবর্তী
দেরি হয়ে গেছে
চন্দন চক্রবর্তী
নন্দাকে জলঢোঁরা সাপের মত লাগল। ও আমার ঘরের জানলার পাশ দিয়ে তীর্যক চাহনি ছুঁড়ে গটগট করে আমার মায়ের ঘরে গেল। ওর হলদে পিওরশিল্ক শাড়িটার সারা গায়ে কালো রঙের বুটি। সাপের সঙ্গে তুলনাটা হয়তো তাতেই মনে এলো। রোজই তার নিত্য নতুন সাজা চাই। যেন বর্ণচোরা গিরগিটি!
আমার নাক উঁচু। নিজে আমি বেঁটে,মাথায় টাক,অথচ কোন মেয়েকেই মনে ধরে না। কত যে মেয়ে দেখেছি! তাদের কার কী ত্রুটি তাই নিয়ে হাসি তামাশা করেছি। নন্দার সাজগোজ নিয়ে আমি যে ঠাট্টা তামাশা করি বন্ধুরা তাও জানে। ওরা আমাকে মাথামোটা ষাঁড় বলে ক্ষেপায়। কণিকাকে আমি ভালোবাসি। ও নাকি আমাকে মাথামোটা বলে! বন্ধুরা জেনে সঙ্গে ষাঁড় যোগ করে নিয়েছে। শুনে খুব খারাপ লেগেছিল,তবু হাল ছাড়িনি। বরং কণিকাকে বিয়ে করবোই জেদ চেপেছিল।
আজ ছুটির দিন। মা বলল,নন্দাকে ছেলে নিজে দেখতে আসছে। এর আগে ছেলের পরিবার থেকে বার কয়েক এসে গেছে। নন্দারা আমাদের একতলায় ভাড়া আছে বছর দশ এগারো হয়ে গেল। ও তখন সম্ভবত নাইনে পড়তো। পড়া জানতে প্রায় রোজই আসতো। এখন মাঝে মধ্যে আসে। গল্প করে চলে যায়। কিছু একটা বলতে চায় বেশ বোঝা যায়।
বিকেলবেলা আড্ডায় গেলাম। শুনলাম কণিকার বিয়ে,অজয়ের হাতে কার্ড পাঠিয়েছে। অজয়ের বাড়ি আর কণিকাদের বাড়ি পাশাপাশি। বলেছে মাথামোটা অর্থাৎ আমি যেন বিয়েতে অবশ্যই যাই। মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। আর ফিরেই শুনলাম নন্দার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে।
দিন বসে থাকে নি। কণিকার বিয়ে হয়ে গেল। আমি যাইনি। বন্ধুরা হাসাহাসি করেছে। নন্দার বিয়ে হয়ে গেল। কদিন খুব খাটাখাটনি করলাম। বন্ধুরা মাথামোটা ষাঁড় বলে আমাকে ক্ষেপালো।
নন্দা চলে যাবে। বাড়ির দরজায় গাড়ি দাঁড়িয়ে। এতগুলো বছর চোখের সামনে ঘোরাফেরা করল মেয়েটা,ওকে বোঝার চেষ্টাই করলাম না! আফসোস হচ্ছে। গাড়ির জানলা দিয়ে এখনও দেখা যাচ্ছে। বউয়ের সাজে ওকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। মুখ ঘুরিয়ে নিজের ঘরে ফিরে এলাম। এখন মনে হচ্ছে বন্ধুরা ঠিকই বলে আমি মাথামোটা ষাঁড়ই বটে।
ঠিকানা : রোড নাম্বার টু, গ্রাম: প্রীতিনগর, পোস্ট অফিস: প্রীতিনগর, থানা : রানাঘাট, জেলা : নদীয়া।