Click the image to explore all Offers

আত্মকথা ।। রোগসজ্জায় দশ দিন ।। অশোক দাশ

 

রোগসজ্জায় দশ দিন 

অশোক দাশ


হঠাৎ করেই মাথা কপালে প্রচন্ড যন্ত্রণা। সিটি স্কানে ধরা পড়লো ব্রেন স্ট্রোক। এই অবস্থায় আমাকে ভর্তি করা হলো স্টুডেন্ট হেলথ হোম (মৌলালি, কলকাতা) হসপিটাল আইসিইউ বিভাগে। চার দিনের দিন বিকালে আমাকে জেনারেল ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হলো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড। বিভিন্ন বয়সের রোগী আছেন। আর আছেন রোগীদের দেখভাল করার জন্য একদল শিক্ষানবিশ sister এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ। এবং দুইজন সুইপার আর খাবার দেওয়ার জন্য একজন মহিলা এবং ঘর মোছা পরিষ্কার করার জন্য একজন মাসি।
সকলে সহৃদয়তার সঙ্গে সব সময় কাজ করে চলেছেন। এদের যখন যে প্রয়োজনে ডেকেছে তখনই তারা ছুটে এসেছেন রোগীর পাশে।
    আমার ডান পাশের সিটে ছিলেন একজন সত্তরোর্ধ্ব বয়স্ক মানুষ নাম সর্বেশ্বর ভট্টাচার্য। বাড়ি কলকাতা টালিগঞ্জ এলাকায়। অকৃতদার মানুষ। পৈতৃক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। হসপিটালে ভর্তি অবস্থাতেও তিনি তার ব্যবসার কথা ভোলেননি, প্রতিদিন তার ব্যবসায় যুক্ত কর্মচারীবৃন্দকে রিপোর্টিং করতে আসতে হতো সর্বেশ্বর বাবুর কাছে। তিন দিদি এক বোন সকলেই উচ্চ শিক্ষিতা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতা। তিনি করোণা আক্রান্ত রোগী। মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট হয়। চিকিৎসা চলছে। সর্বেশ্বর বাবু খাদ্য রসিক মানুষ বলে মনে হয়েছে, হসপিটালের দেওয়া খাবার ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে তার আত্মীয়দের খাবার আনার পরামর্শ দিতেন। লক্ষ্য করে দেখেছি তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ম্যাগাজিন পড়তে ব্যস্ত থাকতেন। কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি তাই জানালাম।
   আমার বাম পাশের বেডে ভর্তি ছিল একজন আদিবাসী চৌদ্দ বছরের কিশোর। জেনেছি দু বছর আগে তার পা অপারেশন হয়েছিল এই হসপিটালে। সেই অপারেশনের স্টিলের পাত বের করার জন্য পুনরায় অপারেশনের প্রয়োজন। গরিব আদিবাসী ছেলে টাকার অভাবে অপারেশন করা যায়নি এই খবর শুনে স্টুডেন্ট হেলথ হোম এর কর্মকর্তাগণ বিনা পয়সায় তার চিকিৎসা‌ এবং অপারেশনের দায়িত্ব নিয়েছেন। মনে মনে ধন্যবাদ জানাই স্টুডেন্ট হেলথ হোমের কর্মকর্তাগণকে। জানতে পারলাম রূপচাঁদরা তিন ভাই ও সবার বড়। ওর বাবা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে, মা গৃহবধূ হলেও মাঠে খেতমজুরের কাজ করেন। ওদের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ ব্লকে। ওদের ওখানে প্রচুর আমবাগান আছে ও বাগানের আম কুড়িয়ে ডাক্তারবাবু এবং নার্স দিদিমনিদের জন্য নিয়ে এসেছে। সবাই ওকে স্নেহ ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে। 
   এখানে ডাক্তারবাবুরা পরম যত্নে রোগীদের চিকিৎসা করেন ,খোঁজখবর নেন সঠিক সময় মতো।
নার্সরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। রোগীদের সেবাশষ্যূষার জন্য সদা ব্যস্ত থাকেন। আর যারা এখানে শিক্ষা নবীশ হিসেবে কর্মরতা তাদের জিজ্ঞাসা করে জেনেছি এখানে ওরা নার্স ট্রেনিং নিচ্ছেন কোন অর্থ দিতে হয়নি। ওদের ডিউটি করতে হয় এই পর্যন্ত। ওরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত, কারো বাড়ি মুর্শিদাবাদ কারো বাড়ি কোচবিহার তো কারো বাড়ি ডায়মন্ড হারবার। 
 একদিন কৌতুহল বসে  শিক্ষানবিশ কয়েক জন নার্সকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমাদের এম ইন লাইফ কি? তাঁরা হাসতে- হাসতে প্রায় সকলেই উত্তর দিয়েছিল একটা সরকারি চাকরি করবো ভালোভাবে সংসার টা চলবে। 
  আমার মনকে প্রশ্ন করলাম! হায়রে এই অভাগা দেশে এখন আর কেউ সেবা ব্রতী হতে চায় না ,কেউ চায় না মাদার টেরেসা হতে, কেউ চায় না সিষ্টার নিবেদিত হতে, সবাই চায় সুখের সংসারে অবগাহন করতে। চলমান সভ্যতায় এরা ব্যক্তি স্বার্থ কেই প্রাধান্য দিতে চায়।
  ভালো মন্দ মিলিয়ে এই জগত সংসার। আর এই নার্সিংহোম তার বাইরে নয়। তবুও এখানকার কর্মকর্তা থেকে  আরম্ভ করে চিকিৎসক বন্ধুগণ, নার্সগন, শিক্ষানবিশ  সিস্টারদের আন্তরিক ভালবাসা তাদের সেবা যত্ন আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। 
  তাদের সময় মেনে, রোগীদের সেবায় নিরলস প্রচেষ্টায় ,অনেক রুগী সুস্থ হয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আমিও দশ দিন এদের সঙ্গে কাটিয়ে সুস্থ হয়ে , সকলের মঙ্গল কামনা করে,বাড়ি ফিরে এসেছি আবার আমার প্রিয়জনের সান্নিধ্যে । স্টুডেন্টস হেলথ হোম এর সার্বিক সাফল্য কামনা করি, আর প্রার্থনা করি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য। তাদের এই সেবা ব্রতী মানসিকতা, মানুষের মঙ্গল সাধনায় নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত থাকুক।
 
========================== 

 

 To Know More Deals & Offers : CLICK HERE
 
 
 
 
 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.