শেষ বেলার আলো
বাংলা সাহিত্যের একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম কবি ও ঔপন্যাসিক আবদুস শুকুর খান । বহু কাব্যগ্রন্থ এবং গল্প উপন্যাসের স্রষ্টা তিনি ।আজ পড়ে নেব তাঁর একটি জনপ্রিয় উপন্যাস "দাঁড়াবার জায়গা" । অসাধারণ শৈল্পিক কায়দায় সূচের ফোড় তুলে তুলে সহজ উপমায় বুনতে সক্ষম হয়েছেন বর্তমান সমাজ সংস্কারের একটি জান্তব রূপ । জাতি - বৈষম্য রীতিনীতি- ধর্ম বিভেদ অদম্য লালসা এসব মানুষকে
অসহিষ্ণু এবং ব্যভিচারি করে ফল স্বরূপ যুদ্ধ দাঙ্গা মহামারি আকার ধারণ করে । নির্মূল হয় শিকড় মর্মান্তিক যন্ত্রণা ।
কাহিনির চিত্রণে আমরা দেখতে পাই এই উপন্যাসের মধ্য মণি তিনি হলেন আবদুল জব্বার মসজিদের ইমাম আধ্যাত্মিক অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ একজন মানুষ পঞ্চাশোর্ধ । রাতে তাঁর ঘুম আসে না । চোখ বুজলেই তিনি স্পষ্ট শুনতে পান কাতর কন্ঠস্বর অমনি চোখ খুলে যায় আহত চার দেয়ালে ভয়ঙ্কর নীরবতা । কেবল তিনি শুনতে পান তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম এর নিঃশ্বাসের শব্দ আর পাখা ঘোরার শব্দ ।পুনরায় শুনতে পেলেন সেই আর্তস্বর 'আম্মি দরজা খোলো আম্মি "।সেই স্বর তাঁর জীবন থেকে পরিবার থেকে কেড়ে নিয়েছে সমস্ত সুখ শান্তি ভালোবাসা।
মোহনপুর গাঁয়ের ছেলে আবদুল জব্বার বাপের মতো পহেজগার ,সততায় ভরপুর বছর পঁচিশের এই ছেলের সুখ্যাতি সারা গাঁয়ে।বিয়ে হলো গাঁয়ের মেয়ে রোকেয়া'র সঙ্গে সুন্দরী শিক্ষিতা বুদ্ধিমতি মেয়ে । বিয়ের পর সুখের সংসারে তাদের জন্ম নিল পুত্র রাকিব কন্যা রোফেজা।দুজনেই চান তাঁদের সন্তান মানুষের মতো মানুষ হোক । রাকিব যখন প্রাইমারি পাঠ শেষ করে হাইস্কুলে ভর্তি হবে আবদুল জব্বার চাইলেন হাইমাদ্রাসায় ভর্তি করতে রোকেয়া বেগম বললেন না তথাকথিত ধ্যান ধারণা মুক্ত করে রাকিব বর্তমান শতাব্দীর চিন্তা ধারায় বড়ো হয়ে সৎপথে বেশি টাকা উপার্জন করুক।এই প্রথম স্বামী স্ত্রী তে মতান্তর ঘটলো।শেষ পর্যন্ত আবদুল জব্বার তাঁর স্ত্রীর কথা মেনে নিলেন কিন্তু সমাজে তাঁকে অনেক কটূক্তির সম্মুখীন হতে হলো।ইমামের পদ থেকে বহিষ্কৃত হলন।অনেক কস্ট করে তাঁরা দুই সন্তানকে শিক্ষিত করলেন । তাঁদের মেয়ে রোফেজা কলেজে পড়া কালিন ভালোবেসে বিয়ে করলো তার কলেজে পড়া সিনিয়র একটি ছেলেকে কিন্তু ছেলেটি অত্যন্ত দুর্বিনীত । সুখী হতে পারলো না রোফেজা। রাকিব ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ঘরে ফিরলো।গ্রামের মানুষ তাকে নিয়ে গর্ব বোধ করলো।
একদিন চাকরির জন্য ইন্টার্ভিউ দিয়ে ফিরছিল রাকিব
চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বৃষ্টির পথ হাঁটছিল হঠাত্ নারীর আর্তনাদ শুনতে পেয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য ছুটে গেল রাকিব তাকে বাঁচালে ও দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রেহাই পেল না সে নিজে ।ছুরির আঘাতে দুষ্কৃতীরা ছিন্নভিন্ন করল তার শরীর কোন রকম ঘষটাতে ঘষটাতে বাড়ির দরজায় এসে লুটিয়ে পড়ল মত্যুর কোলে।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষি মানুষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে চাইল। আবদুল জব্বার তখন বুকে পাথর চাপা দিয়ে মৃত্যু যন্ত্রণা কাতর পিতা থামালেন সেই দাঙ্গা গ্রাম বাসি এড়াতে পারল অনেক মৃত্যু তারপর জব্বার সাহেব বিছানা নিলেন।আর সেই আর্তস্বর শুনতে শুনতে নিজে ও মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর এক অসহায় নিঃশ্ব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পাঠালেন আর এক ছেলে । ছেলেটি ও ঘর পেয়ে গেল সঙ্গে একটি বেঁচে থাকার ঠিকানা ।
ডিজিটাল দুনিয়ার দ্বারা বশীভূত না হয়ে ঔপন্যাসিক আবদুস শুকুর খান টান টান উত্তেজনা -- তরঙ্গ অনায়াসেই পাঠককে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যায় সুখ দুঃখের ভেলায়। সাম্প্রতিক কালের ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর অপ্রত্যাশিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনার সামনে দাঁড়িয়ে সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য করেছেন ভাষা শব্দ চয়নে অসাধারণ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন প্রিয় কবি ও ঔপন্যাসিক আবদুস শুকুর খান । শুভ হোক তাঁর সাহিত্য যাত্রা ।
------------0--------
আশি পৃষ্ঠার এই উপন্যাস "দাঁড়াবার জায়গা "।
প্রণেতা ঔপন্যাসিক আবদুস শুকুর খান।
সুন্দর প্রচ্ছদ বেশ ছিমছাম পরিপাটি ।
প্রোরেনাটার পক্ষে রীনা দে কতৃক একুশ ধর্মদাস কুণ্ডু লেন থেকে প্রকাশিত ।
=================
বনশ্রী রায় দাস
শান্তিপুর দক্ষিণ পাড়া মেচেদা পূর্ব মেদিনীপুর