ভ্রমণকথা ।। অঙ্কিতা পাল
0
সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২০
সিকিমের সৌন্দর্য
সময়টা ছিল ইংরেজির ৬ ই অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমানে ৫০মিনিটে বাগডোগরা অবতরণ। সেখান থেকে সুমো গাড়ি তে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক। পথে যেতে যেতে কখন যে সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা ছোট ছোট পাহাড় শুরু হলো, বোঝা গেলো না। কলকাতা থেকে গ্যাংটক এর দূরত্ব প্রায় ৭০১. ৮ কিলোমিটার। চড়াই উতরাই পথের একদিকে খাড়া পাহাড় ও অন্যদিকে তিস্তা নদী। এভাবে চলতে চলতে পথ দু দিকে বেঁকে গেছে। একদিক চলে গেল সিকিমের দিকে, অন্যটি দার্জিলিং। পথে সবুজ ঘেরা পাহাড়ের মাঝে কিছু কিছু কাঠের বাড়ি, ঝর্ণা, পাহাড়ি ফুল ও ফলের গাছ, চা বাগান ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রত্যক্ষ করলাম। যেতে যেতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি হয়ে গেল।
চলার পথে একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম _ অন্ধকারে পাহাড়ের ধাপে ধাপে বাড়িগুলোকে দেখতে জোনাকির মতো লাগছিল।
অবশেষে,গ্যাংটক এ পৌঁছতে রাত্রি নটা বেজে গেল। রাতে বিশ্রাম করলাম।
পরদিন সকালে উত্তর সিকিমে লাচুং এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যাওয়ার পথে সাক্ষী রইল _ একটি গাঁদা ফুলের বাগান, সুন্দরী ঝর্ণা, পাহাড়ি ফুল ও ফলের গাছ, পাহাড়ের কোলে ধাপ কেটে কেটে ধান চাষ। পাহাড়ি মানুষেরা খুব পরিশ্রমী হয়। লাচুং পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে গেলো। শরীর ও মন ক্লান্ত হয়ে পড়ল। নৈশ্য ভোজনে ছিল বন মুরগির ঝোল ও ভাত। রাতে শুয়ে শুনতে পেলাম পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর গর্জন ও ঝর্ণা র কুল কুল শব্দ।
পরদিন সকালে দেখলাম লাচুং এর সৌন্দর্য তা, কেউ যেন তুলি দিয়ে ছবি এঁকেছে। বহুদূরে দেখতে পাওয়া গেল এক রূপালী চকচকে বরফ রাশি, যার নাম জিরো পয়েন্ট। লাচুং এ খুব ঠান্ডা ছিল। আমরা চাও জলখাবার খেয়ে লাচুং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথ ছিল খুব সরু ও দুর্গম। একদিকে বড় বড় পর্বত তার গায়ে জন্মেছে ছোট ছোট লালচে ফুলের গাছ, অন্য দিকে খাদ। পৌঁছাতে সময় লাগলো ঘন্টা দুয়েক। সেখানে গিয়ে ঠান্ডায় কম্পন অনুভূত হচ্ছিল। চারিদিক থেকে শীতল বাতাস বয়ে আসছিল। তখনকার উষ্ণতা ছিল - ৫ থেকে - ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুর্ভাগ্যবশত প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। কিছুক্ষণ প্রতীক্ষার পর, আর বরফের দেখা না পাওয়ায় _ আমরা লাচুং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বৃষ্টির কারণে দুর্গম রাস্তা আরো পিচ্ছিল হয়ে গেল, ফিরতে অনেক সময় লেগে গেল। আমরা খাবার খেয়ে আবার গ্যাংটক ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম।
পথে দেখা হল এক সুন্দরী অপরূপা ঝর্ণার সাথে _ যার নাম সেভেন সিস্টার ফলস। সাতটি ঝর্ণা র রাশি মিলিত হয়ে নেমে এসেছে।
ফিরে আসতে অনেক রাত হয়ে গেলো।
পরদিন আর কোথাও যাওয়া হলো না, সে দিনটা ছিল খাওয়া-দাওয়া, কেনাকাটা ও আনন্দ করার দিন। গ্যাংটকের এম.জি মার্কেটি সত্যিই খুব সুন্দর। এই মার্কেটটি সুন্দর সুন্দর ফোয়ারা, ছোট ছোট ফুলের গাছ, বিভিন্ন রকমের দোকান পাশার ও মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি দ্বারা সুসজ্জিত। মার্কেটে বিনোদনের ব্যবস্থা আছে।
বিকালে সাক্ষাৎ করা হলো _ ফুটবল স্টেডিয়াম পালজোর ও গির্জা টির সাথে।
শহরের অনেক বাড়িতে স্কোয়াশ নামক একটা ফল দেখতে পেলাম।
এই শহরে সবচেয়ে সৌন্দর্যের বিষয় হল _ শহর থেকে রূপময়ী রুপালি মুকুট পরিহিতা রানী কাঞ্চনজঙ্ঘা কে দেখতে পাওয়া যায়। এভাবে আরো একটি দিন কেটে গেল, বোঝা গেল না।
১১ ই অক্টোবর যাওয়া হল বাবা হরভজন সিংয়ের মন্দিরে। উনি সৈনিকদের পিতা। শোনা যায় _বাবা হরভজন সিং চীনাদের সাথে যুদ্ধে প্রাণ ত্যাগ করেন। তিনি সৈনিকদের কাছে আজও অমর।
স্পর্শ করলাম নীলাভ_ সবুজ রংয়ের ছাঙ্গু লেক। এখানে চামড়ি গাই এর পিঠে চড়া হলো।
এরপর একে একে যাওয়া হল _ হনুমান মন্দির, গণেশ টক, মিউজিয়াম, সুসজ্জিত গাছও ফুলের বাগানে।
সিকিমের সৌন্দর্য বলে বা লিখে শেষ করা যায় না। এ এক অপূর্ব অনুভূতি। এই পর্বত ঘেরা সিকিম রাজ্যটি,আমার স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকবে।
পরদিন ১৫ ই অক্টোবর নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে রাত আটটার দার্জিলিং মেলে _ সকাল কলকাতা।
Tags