পোড়ো বাড়ি
আবির মুখ তুলে হাঁ-করে চেয়েই থাকল পোড়ো বাড়িটির দিকে। আশেপাশে চারিদিকে সব শহরের হাওয়া লেগে গেল । আর এটা কারো চোখেই পড়ল না । হাজার বার এই পথে যাওয়া আসা করেছে কিন্তু নিজেরও তো চোখে পড়ে নি । কাওকে কিছু না বলে নিজেই দাঁও লাগাবে বলে আজ দু-গাড়ি মাল ফেলেই একা মোটর সাইকেল নিয়ে গলি পথ ধরে এই পোড়ো বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়।
ভেতরে ঢুকে দেখল পোড়ো তবে বেশ পরিচ্ছন্ন । বিকেলের লাল আভায় বেশ মায়াবী লাগছে । মনে হচ্ছে লোকজনের যাতায়াত আছে। পায়ের ছাপ স্পষ্ট । পাখির বসবাস আছে, মাকড়সার জাল বুনেছে। গাছের শেকড় দেওয়াল বেয়ে ছবির মত নেমে গেছে ।
এখন তো বিকেল। নাকি সন্ধ্যে হয়ে এল ? আরে পেছনে কি কেউ আছে ? ভয় কি চেপে ধরছে আবিরকে ?
বাড়ি ফিরে যাবে কি না ভাবছে ? হঠাৎ ভেতর থেকে কে যেন বলল – কাকে চাই ? আগাগোড়া সাদা কাপড়ে মোড়া ঘোলাটে চোখের লোকটাকে দেখে আবিরের ঘোর লেগে গেল ? থতমত খেয়ে বলল – আপনি কি এই বাড়ির থাকেন?
সেই গমগমে গলায় আওয়াজ দিল – কতবার তো একই কথা বলছি, আমাদের থাকতে দিন । ফ্ল্যাট ফ্ল্যাট ফ্ল্যাট । চারিদিকে ঘুপচি । প্রাণ ওষ্ঠাগত । কোটি টাকার মুনাফা । লুটের খেলা । মানুষের বুকের উপর মানুষের নৃত্য। আর শুধু শুধু আমাদের দোষ দেওয়া । মানুষ এমনভাবে ক্ষতি শুরু করেছে যে আমাদের দোষ দিয়ে মানুষই কাজ সারছে । তুমি মানুষ তোমাকেও মজা দেখাচ্ছি ।
এতবার মানুষ মানুষ শুনে আবির ভাবল নিশ্চয়ই এ মানুষ নয়। ভয় পেয়ে তাই দৌড় দিল। দৌড়তে গিয়ে দেখে বাইরে বৃষ্টি ঝড় ঝঞ্ঝা। হাঁ হাঁ শব্দ । মুখ থুবড়ে পড়ে গেল আবির । অজ্ঞান হতে হতে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করল । মুখ তুলে দেখল আরে আকাশ তো একেবারে নির্মল ।
আবির উঠে পড়ল। আর সেই পোড়ো বাড়িটার দিকে পেছন ফিরে দেখল। দেখল সবকটা পোড়ো বাড়ি। তবে তা ফ্ল্যাটের মত।
=====000=====
দীপঙ্কর বেরা, হাওড়া