Click the image to explore all Offers

গল্পাখ্যান ।। চন্দন মিত্র


প্রজাপতির নির্বন্ধ

 

পূর্বমুখী  তিনটি  প্লাটফর্ম  পশ্চিমে  শেয়ালদার  দিকে  কিছুটা  এগিয়ে  রেলক্রসিং  পর্যন্ত  গিয়ে  থমকে  গেছে ।  তারপর  ছয়টি  লোহার  পাত  নির্দিষ্ট  দূরত্ব  বজায়  রেখে  রেলক্রসিংয়ের  চওড়া  পিচের  রাস্তার  বুক পেষণ  করে  সোজা  উধাও  হয়ে  গেছে  পরবর্তী  স্টেশন  গুরুদাসনগরের  দিকে ।  রেলক্রসিংয়ে  পূর্বমুখী  হয়ে  দাঁড়ালে  বামহাতে  পড়বে  রায়নগর।  ডানদিকে  কালিনগর-রাখালঠাকুরতলা ;  একটি  পিচের  রাস্তার দ্বারা  ডায়মন্ড হারবার  রোড  তথা  স্টেশন  মোড়ের  সঙ্গে  যুক্ত ।  তবে  এই  রাস্তার  বামপাশে  আছে  এফ সি আই- এর  প্রাচীন  গোডাউন ,ডানপাশে  ভারত -সেবাশ্রম  সঙ্ঘ  প্রণব  বিদ্যাপীঠ ,হাবিজাবি দোকানপত্র,মাছের  বাজার,মাংসের  দোকান  তারপর  আবার  বাজার।  সবমিলিয়ে  নরক গুলজার ।  সকালে  দুপুরে  তবু  হাঁটা  যায় ; কিন্তু  বিকালের  পর  থেকে  লরি, টোটো , অটো , মেশিন ভ্যান  ইত্যাদির  দাপটে এই  রাস্তায়  চলাচল  প্রায়  অসম্ভব  ব্যাপার ।  কালিনগর  বা  রায়নগরের  লোকজন  তাই  রেলক্রসিং  থেকে  প্লাটফর্মে  উঠে  পড়েন  এবং  গটগট  করে  সোজা  হেঁটে  গিয়ে  জি আর পি  রুম,  প্রস্রাবখানা  বামহাতে রেখে  টিকিট  কাউন্টার  ও  স্টেশনমাস্টারের  কোয়ার্টারের  পাশ  দিয়ে  গিয়ে  ওঠেন  মেন রোডে ।  টিটিরাও  বিষয়টা  বোঝেন ।  কালিনগর  বা  রায়নগরের  নাম  শুনে  তাঁরাও  টিকিট  দেখা  থেকে  বিরত  থাকেন।

 

                              ইদানীং  সন্ধ্যার  পর  থেকে  প্ল্যাটফর্মের  শেষপ্রান্তে  অর্থাৎ  ক্রসিংয়ের কাছাকাছি  কৃষ্ণচূড়াবেদীতে  কালুর  দলের  ছেলেরা  আড্ডা  দিতে  শুরু  করেছে।  আগে  স্থানীয়  যেসব  ছেলেরা  আড্ডা  দিত  তারা  বিভিন্ন  জায়গায়  ছড়িয়ে  ছিটিয়ে  গেছে । ফলে  কালুর  দলের ছেলেদের  রমরমা । যদিও  তারা  কেউই  স্থানীয়  নয়  চার  পাঁচটা  স্টেশন  দূরের  গ্রামে  তাদের  বাড়ি ।  আড্ডা  দিয়ে  দশটা  আঠারোর  লাস্ট  ট্রেনে  বাড়ি  ফেরে ।  চুরি-রাহাজানিতে  তাদের  নামডাক  আছে।  জি আর পির  টহল  সত্বেও এদের  বাড়বাড়ন্ত  সকলের  নজর  কাড়তে  শুরু  করেছে।  কিন্তু  প্রকাশ্যে  কেউ  উচ্চবাচ্য  করে  না।  মেশিন  দেখলে  কে  না  চমকে  যায় !

 

                             স্টেশন  মোড়  থেকে  ডায়মন্ড হারবার  রোড  উত্তর  মুখো  হয়ে  এগিয়ে গেছে  ধর্মতলার  উদ্দেশ্য।  স্টেশন  থেকে  মিটার  একশো  এগিয়ে  ডায়মন্ড  হারবার  রোড  চেপেছে  নতুন পোল  নামক  একটি  সেতুর  ওপর ।  সেতুর  নীচে  ডায়মন্ড  হারবার - মগরাহাট  খাল ।  সেতু  পেরোলেই  সড়কের  বামদিকে  রামরামপুর,  ডানদিকে  হরিণডাঙা।  বৈশাখ  মাসের  জমজমাট  রক্ষাকালি পূজার  জন্য হরিণডাঙার  যথেষ্ট  খ্যাতি  আছে । এছাড়া  আরও  একটি  বিশেষ  বৈশিষ্ট্য  আছে  এগ্রামের ।  রাজনীতির  টানাপড়েন,ক্ষমতাবদল  কোনোকিছুই  এ  গ্রামের  মানুষের  একতায়  চিড়  ধরাতে  পারেনি।  ভোটের  সময় ভোট  হয় ।  ব্যাস  ওই  পর্যন্ত ।  তারপর  রাজনীতি  নিয়ে  মাথা  ঘামানোর  লোকের  অভাব  দেখা  দেয়।  কিন্তু  কেউ  কোনো  বিপদে  বা  ঝামেলায়  পড়লে  সবাই  আক্ষরিক  অর্থে  একেবারে  ঝাঁপিয়ে  পড়ে । এই একতার  জন্য  আশেপাশের  গ্রামগুলি  হরিণডাঙাকে  সমঝে  চলে ।

 

                              রামরামপুরের  মন্দিরা  ইংরেজি  অ নার্স  নিয়ে  বি এ  পাশ করেছে  বছর কয়েক  হয়ে  গেল।  বাবার  ছোট্ট  এক  মুদিখানা  দোকান ।  বাংলা  এম এ  দাদা  মানস  ফলতা  ফ্রি  ট্রেড  জোনে  চাকরি  পেয়েছে বছর  দুয়েক  আগে । মন্দিরা  সুন্দরী, দেখাশোনা  শুরু  হয়  হয় ।  মন্দিরার  জন্যই  এতদিন  এদিকটা  বন্ধ  আছে ।  আসলে  মনের  গভীরে  তার  একটি  গূঢ় বাসনা  আছে ।  কাউকে  জানানোর  মতো  বিষয়ও  নয় সেটা।  থার্ড ইয়ার  পরীক্ষা  দেওয়ার   সময়  পেপারে  পড়া  একটি  খবর  তার  মনে  এতটাই  প্রভাব  ফেলে  যে  তার  মনের  গহনে  এই  একান্ত বাসনাটি  জন্ম  নেয়।  খবরটি  সামান্য ;  যদিও  নিদারুণ --- কলকাতার এক  নবদম্পতি  মধুচন্দ্রিমায়  গিয়েছিল  পাহাড়ে।  পাহাড়ি  পথে  গাড়ি  থামিয়ে    জল্লাদ  ড্রাইভার  স্বামীকে  খাদে  ফেলে  দিয়ে  স্ত্রীকে  ধর্ষণ  করে।  খবরটি  পড়ার  পর  থেকে  মন্দিরা  মনে  মনে  শপথ  নেয় --- এই ঘাতক- সময়ে  যদি  বিয়ে  করতেই  হয়  এমন  কাউকেই  সে  বিয়ে  করবে  যে  দু-পাঁচজনের  সঙ্গে  অনায়াসে  লড়তে  পারবে।  কিন্তু  তার  এই  বালখিল্য  বাসনার  কথা  সে  কাউকে  বলতে  পারেনি।  বাড়িতে  সে সকাল -বিকাল  টিউশন  করে।  এবছর  আবার  বিশেষ  অনুরোধে  পড়ে  রায়নগরে র  দীনেশ মাস্টারের  মেয়েকে  সন্ধ্যাবেলায়  পড়াতে  যায় ।  সপ্তাহে  তিনদিন --- মঙ্গল ,  বৃহস্পতি,  শনি ।  সন্ধ্যা  ৭ টা  থেকে  ৯ টা । কিছুদিন  হল  প্ল্যাটফর্মের  উপর  থেকে  ফেরার  সময়  তার  বুক  ঢিপঢিপ  করে ।  বিশেষত  শনিবার ।  প্ল্যাটফর্মটা  একেবারে  শুনশান  থাকে । কোথা  থেকে  যে  ছেলেগুলো  জুটল ...

 

                             নাম চণ্ডীচরণ ।  সবাই  ডাকে  চণ্ডী  বলে ।  জন্মের  পর  মরমর  ছেলেটিকে  বাঁচানোর  জন্য  বড়িয়ার  চণ্ডীমন্দিরে  মানত  করেছিলেন  ঠাকুরমা।  সেই  ঋণ  থেকে  ঠাকু রমা   প্রিয় নাতির  এমন  সেকেলে নাম  রেখেছিলেন। হরিণডাঙায়  এমন  ডাকাবুকো  ছেলে  নেই  ব ললেই  চলে ।  চণ্ডী  কিন্তু  দাদা  মৈনাকের  মতো  গ্রামে  মানুষ  হয়নি।  সে  ক্লাস  ফাইভ  থেকেই  ঢাকুরিয়ায়  পিসিমার  বাড়িতে  গিয়ে উঠেছিল।সেখান  থেকেই  সে  হাইস্কুল  ও  কলেজের  পড়াশোনা  চালিয়ে  গেছে।  চণ্ডী , পিসিমাকেও  মা  ডাকে।  পিসিমাও  তাঁর  দুই  সন্তান  অশোক  ও  অশেষের  মতো  ছোটো  ভাইপোকে  মাতৃস্নেহ  দিয়ে  পরম যত্নে  লালন-পাল ন  করেছেন।  ঢাকুরিয়া  স্টেশন  থেকে  প্রায়  ঢিল ছোড়া  দূরত্বে  পিসিমশাইয়ের  রেস্তোরাঁ ---  যশোদা  কেবিন।  পাশের  মাঠেই  মার্শাল  ক্লাবের  জিম।  বক্সিং, কুং ফু,ক্যারাটে  প্রশিক্ষণ  চলে  তাদের তত্ত্বাবধানে।  চণ্ডীর  বায়নায়  নিতান্ত  অতিষ্ঠ  হয়ে  পিসিমশাই  চণ্ডীকে  মার্শাল  ক্লাবে  ভর্তি  করে  দিলেন।  বছরখানেকের  মধ্যেই  সে  সেনসাই  ওকুহারার  প্রিয়  ছাত্র  হয়ে  উঠল ।  ওকুহারা  তাকে  ডাকতেন --- চান্দি  নামে।  ক্লাবে  শুধু  নয়, পাড়ায় ও  সে  ওই  নামে  পরিচিত  হয়ে  উঠল।  উচ্চ মাধ্যমিক  পাশ  করার  আগেই   ব্ল্যাকবেল্টের  পরীক্ষায়  উতরে  গেল  চণ্ডী।

 

                                এইসম য়  ঘটল  একটি  ঘটনা ।  কী  একটা  কারণে  স্কুল  ছুটি  আছে ।  দুপুরে  চণ্ডী  যশোদাকেবিনের  ক্যাশে  বসে  আছে ।  কাজের  লোকেদের  সাহায্য  করছে  দুই  পিসতুতো  ভাই ।  পিসিমশাই গেছেন  বড়বাজারে  রেস্তোরাঁর  জিনিস পত্র  কিনতে।  এমন  সময়  দেঁতোমদন  এল  চার  শাগরেদকে  নিয়ে।  অর্ডার হল --- পাঁচটা  মাটন  কষা  কুড়িটা  পরোটা ।  খাওয়া  শেষ  করে  হাতমুখ  ধুয়ে  মৌরি  আর  দাঁতের কাঠি  নিয়ে  সবাই  ধীরে  ধীরে বেরিয়ে  যাচ্ছে  দেখে  চণ্ডী  অবাক  হয়ে  যায় ।  ততক্ষণে  তারা  রেস্তোরাঁর  বাইরে  বেরিয়ে  পড়েছে ।  চণ্ডী,  দেঁতো মদনের  সামনে  এসে  দাঁড়ায় ।

--- এই  যে  দাদা  বিল  না-মিটিয়ে  চলে  যাচ্ছেন ।

---- তুই  আমাকে  চিনিস ?  দেঁতো মদনার  নাম শুনেছিস ? 

---- আমার  চেনার  দর কার  নেই । অশোক !  বিলটা  দে  তো ।

অশোক  বিল  দেবে  কী  সে  আর  তার  ভাই  দুজনেই  তখন  ঠকঠক  করে  কাঁপছে । 

---- শুয়োরের  বাচ ...

কথাটা  শেষ  করতে  হল  না  মদনের।  চণ্ডী, ক্ষিপ্রগতিতে  দু-পা  পিছিয়ে  গিয়ে  ডানহাতে  মদনের  চুল  ধরে  এক  হ্যাঁচকায়  তাকে  আছড়ে  ফেলে।  বেঁটে  ছেলেটা  দ্রুত  কোমর  থেকে  পিস্তল  বের  করে ।  চণ্ডীর এক  কিকে  তার  হাত  থেকে  পিস্তল  ছিটকে  যায় ।  ঝপাঝপ   ঝাঁপ  পড়তে  শুরু  করে  দোকানে  দোকানে ।  এলাকা  মুহূর্তে  শুনশান  হয়ে  যায় ।

মদনকে  ওঠার  সুযোগ  দেয়  চণ্ডী ।  সে  ধুলো  ঝাড়তে  ঝাড়তে  বলে --- শালা  এক  বাপের  ব্যাটা  হলে  সন্ধ্যায়  থাকিস।

পিসিমশাই  ও  মার্শাল  ক্লাবের  মধ্যস্থতায়  ব্যাপারটা  সেদিন  সন্ধ্যায়  মিটে  যায় ।  দেঁতো মদন  চণ্ডীর  পিঠ  চাপড়ে  দিয়ে  বলেছিল --- দক্ষিণের  ছেলে  তো  একেবারে  বাঘের  বাচ্ছা।

 

                      বাইক  অ্যাকসিডেন্টে  বাবার  মৃত্যুর  পর  চণ্ডীকে  কলেজের  পড়া  অসম্পূর্ণ  রেখে  হরিণডাঙায়  ফিরতে  হয় ।  তবে  ঢাকুরিয়ার  সঙ্গে  যোগসূত্র  ছিন্ন  হয়  না।  পিসিমশাই  আই টি আই  কলেজে  ভর্তির যাবতীয়  বন্দোবস্ত  করে  দেন ।  সেই  কোর্সের দৌলতে  চণ্ডী  এখন  রাজ্যসরকারের  একটি  সংস্থায়  কর্মরত ।  সোম  থেকে  শনি  সকাল  সাতটা  তিরিশের  ডায়মন্ড হারবার  লোকালের  মহিলা  কামরার  পরের কামরা  মানেই  চণ্ডী ও  তার  দলবলের  আসর।  গানেগল্পে তাসখেলায়  বেশ  সরগরম  থাকে  কামরাটি ।   বেশ  কিছুদিন  হল  চণ্ডীর  মন  ভালো  নেই ।  কেমন  যেন  একা  একা  লাগে। বয়সও  তো  কম  হল  না, প্রায় বত্রিশ ।  মা-পিসিমা-বউদি   বিয়ের  জন্য  চাপ  দিচ্ছেন ।  তাঁরা  চণ্ডীকে  এই  বছরটা  ছেড়ে  দিয়েছেন ।  সামনের  বছর  জানুয়ারিতেই  তাঁরা  চণ্ডীকে  বিয়ের  পিঁড়িতে  বসিয়ে  তবে  ছাড়বেন ।  তার  মানে  চণ্ডীর  হাতে একলা  থাকার  মতো  মাত্র  মাসচারেক  সময়  আছে ।  তাই  কী  এমন  মন কেমনের  ভাব ।  মার্শাল  আর্টের  ভূত  এখনও  চণ্ডীর  ঘাড়  থেকে  নামেনি।  হরিণডাঙায়  সে  নিজের  একটি  অবৈতনিক  প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলেছে।  তার  ছাত্রের  সংখ্যা  পঞ্চাশ  ছাড়িয়ে  গেছে।  রবিবার  বিকেলটা  তার  সুন্দরভাবে  কাটছে ।  শনিবারটাও  সুন্দরভাবে  কেটে  যায় । এমনিতে ই  দ্বিতীয় ও  চতুর্থ  শনিবার  ছুটি ।  বাকি  শনিবারগুলো  বেশ  মজায়  কাটে ।   তার  অফিস  বালিগঞ্জে।  ঢাকুরিয়ার  ঠিক  পরের  স্টেশন ।  শনিবার  হাফ -ডে  ;  অফিস-ফেরতা  চণ্ডী  ঢাকুরিয়ায়  নেমে  পড়ে ।  পিসিমার  কাছে  ঘণ্টাকয়েক  কাটিয়ে  অশোক-অশেষের  সঙ্গে  গল্পগুজব  করে  শেষে যশোদাকেবিনে  খাওয়াদাওয়া  সেরে  ফেরার  ট্রেন  ধরে।  ডায়মন্ড হারবারে  নামতে  নামতে  রাত  ন'টা দশ-পনেরো  হয়ে  যায় ।

 

                   আজও  শনিবারের  রুটিনে  এদিকওদিক  হয়নি ।  তবে  পিসিমার  বাড়িতে  আজ  একটা  আশ্চর্য  ঘটনা  ঘটেছে ।  পিসিমা  তাকে  চা  আর  কাজু  খেতে  দিয়েছেন।  বিছানায়  বসে  সে  খবর  দেখছে। এমনসময়  কোথা  থেকে  একটা  প্রজাপতি  এসে  বসল  তার  ডান  কাঁধে ।  সে  মুখ  দিয়ে  নানারকম  আওয়াজ  করে  প্রজাপতিটাকে  উড়িয়ে  দিতে  চাইল।  আওয়াজ  শুনে  আনারস  কাটা  থামিয়ে  পাশের  ঘরে থেকে  ছুটে  আসেন  পিসিমা। ব্যাপারখানা  দেখে  তিনি  যথেষ্ট  উল্লসিত  হয়ে  পড়েন  । 

--- চন্দু ( পিসিমা আদর করে এইনামে ডাকেন )  তোর  আর  দেরি  নেই  রে।  ভেবেছিলাম  সামনে র  বছর।  এখন  দেখছি  তোর  সময়  এগিয়ে  এসেছে।  কি রে  প্রেমে  পড়িসনি  তো  সোনা ?

--- কি  যে  বল  মা ।  আমি  প্রেম  করব  আর  তুমি  জানবে  না ।

প্রজাপতির  কোনো  হেলদোল  নেই ।  পিসিমার  উপদেশে  চণ্ডী  তাকে  আর  ওড়াল  না।  যশোদাকে  বিনে  ঢুকে  দেখল  সে  আর  নেই ।

 

                       ট্রেনে  চেপে  চণ্ডী  বুঝল  আকাশটা  আজ  ভালো  নেই ।  ঘন ঘন  বিদ্যুত  চমকাচ্ছে ।  যাদবপুর  থেকে  বৃষ্টি  শুরু  হল ।  জানালাটায়  আবার  কাচ  নেই।  বৃষ্টির  ঝাপটা  ঢুকছে ।  যাক  এই  বৃষ্টির  ছোঁয়া  খুব একটা  খারাপ  লাগছে  না।  আজ  চেনা জানা  তেমন  কেউ  নেই।  শনিবারের  বাজার  সবাই  আগেভাগে  ফিরে গেছে ।  চণ্ডীও  একেবারে  শেষ  কামরায়  চাপে  আর  একার  মতো  নানা  বিষয়  ভাবতে  ভাবতে  ফেরে ।ঝমঝম  বৃষ্টির  ভেতর  দিয়ে  ঝিকঝিক  শব্দ  তুলে  ট্রেন  যখন  ডায়মন্ড হারবার  স্টেশন  ছুঁল  তখন  ঘড়িতে  ন'টা  দশ।  নামার  সময়  চণ্ডী  তাড়াহুড়ো  করে  না।  একেবারে  শেষে  নামে ।  কামরা  ফাঁকা  হ ওয়ার  পর  চণ্ডী  প্ল্যাটফর্মে  পা  ফেলল।  বৃষ্টি  এখন  প্রায়  থেমে  গেছে ।  প্ল্যাটফর্মের  দোকানগুলো  সব  বন্ধ ।  আপন মনে  একটি  গানের  কলি  গুনগুন  করতে  করতে  সে  সবেমাত্র  কয়েক  পা  ফেলেছে । এমন সময়  তার কানে  বিঁধল  তীরের  মতো  ছুটে  আসা  নারীকণ্ঠের  আর্তনাদ ।  পিছন  ফিরে  সে  বুঝতে  পারে  কৃষ্ণচূড়াবেদীর  কাছে  ভয়ানক  কিছু  ঘটতে  চলেছে ।  একমুহূর্ত  দেরি  না-করে  এক  ছুটে  চণ্ডী  পৌঁছে  যায় প্ল্যাটফর্মের  প্রান্তে  রেলক্রসিংয়ের  কাছে ।  ছয়টি  ছেলে  ঘিরে  ধরেছে  একটি  মেয়েকে ।  মেয়েটির  হাতে  কয়েকটি  বই । 

--- এই  তুই  কে  রে ?  যা  ভাগ  কালুদার  নাম  শুনেছিস?

--- আমি  কালুর  বাবা রে ।  তোরা  হরিণডাঙার  চণ্ডীর  নাম  শুনেছিস ।

অনেকদিন  পর  চণ্ডী  হাত-পা চালানোর  সুযোগ  পেয়ে  যার  পরনাই  খুশি  হয় ।  মেয়েটির  মনের  গভীরে  মৃতপ্রায়  গূঢ় বাসনাটি  প্রাণ  ফিরে  পেতে  শুরু  করে ।         

             =========000=========


  

চন্দন মিত্র

ভগবানপুর ( হরিণডাঙা ) ডায়মন্ড হারবার , দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা , সূচক --- ৭৪৩৩৩১

চলভাষ --- ৯৩৩২৩৫৮৭৪৭       

       

 

 

 




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.