মাটি রঙের আকাশ
---------------------
চান করতে গিয়ে প্রায়ই গায়ে মাটি মাখে সুদন। সাবান ছুঁতে ঘেন্না করে তার। সাবান নাকি গায়ে গন্ধের চাদর পরিয়ে দেয়। কিন্তু কেন ? গা থেকে ঘামের গন্ধ সরাবে কেন সে ? এ গন্ধ তো তার অর্জিত। সকাল থেকে কোদাল ধরে দুপুর রোদে পুড়ে গা থেকে ঝরে পড়ে হাড় ভাঙা খাটনির ঘাম। দিনের শেষে সেসব কিছুর ওপরে সাবানের ফেনা ? বরং ঘামের গন্ধ আর সারা শরীর জুড়ে একটা চ্যাটচ্যাটে ভাব তাকে আরও মাটির কাছে নিয়ে আসে।
মাটি মেখে চান করে নদী থেকে উঠে আসার সময় সুদনের মনে হয় সে ঠাকুর ঘর থেকে পুজোপাঠ সেরে বেরিয়ে এলো। অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে খুললে যেমন কিছু দেখা যায় না। সুদনেরও রাস্তা চিনতে যেন ভুল হয়ে যায়। ঠিক পথেই আসে তবুও মনে হয় এতদিন পথটাকে ঠিক ঠিকভাবে পড়া হয় নি। সুদন বুঝতে পারে গায়ে মাটি মাখলে এতদিনের চাপানো সমস্ত রঙ গা থেকে ঝরে পড়ে। নিজেকে কেমন যেন হালকা লাগে। চেনা পথের অচেনা রঙ হয়তো এইকারণেই। এক একসময় সুদনের মনে হয় সে যদি বাড়ির রাস্তা না খুঁজে পায়! এজন্যে খুব একটা চিন্তা হয় না তার। শুধু রাস্তাটা বাড়ি পেরিয়ে যেন আরও অনেক অনেক দূর চলে যায়। একেবারে মাটি রঙের আকাশের কাছ পর্যন্ত। বর্ষার সময় এক একদিন আকাশটা এমন একটা রঙ হয়ে যায় যে, সে মাটি আর আকাশের মধ্যে তফাৎ করতে পারে না। তারপর বৃষ্টি শুরু হলে সে বাড়ি ফেরার কথা ভুলে গিয়ে আকাশ নদীতে গা ডুবিয়ে চান করে।
*************************
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
ময়নাডাঙা ( আশ্রয় অ্যাপার্টমেন্ট )
পোঃ --- চুঁচুড়া. আর. এস.
জেলা --- হুগলী
পিন --- ৭১২১০২
পশ্চিমবঙ্গ
ভারতবর্ষ
ফোন --- ৯৪৩৩৩১২৯৬২