গিফ্ট
অবশেষে তোমার প্রিয় জিনিসটা কিনতে আমার হাতের আংটিটা বন্ধক দিতেই হল। আংটিটা আমার জন্মদিনে মায়ের দেওয়া গিফ্ট।
কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে দুজনে একসাথে পড়ি।বন্ধু বলে তোমার জন্মদিনে তুমি আমায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলে। রোজগারপাতি নেই। আংটিটা বন্ধক দেওয়া ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলনা। হন্যে হয়ে ঘুরলাম গড়িয়াহাট, লেক-মল, ফ্যান্সি বাজার। শেষে গিয়ে কিনলাম নিউমার্কেট থেকে।
একটু রাত হয়ে গেল তোমাদের বাড়ি পৌঁছতে। একটা বিশাল হলঘরে তোমার জন্মদিনের পার্টি চলছে। ভিড়ে ঠাসা। দূর থেকে দেখলাম খুব সেজেছ তুমি। ঝলমলে পোশাক। একঢাল মাথার চুল। মুখে মিষ্টি হাসি। তোমায় দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছিল। এমনিতেই তুমি সুন্দরী।
ফুল দিয়ে সাজান বাড়ি। অতিথিদের আনাগোনা। হেসে কথা বলছ তুমি সবার সাথে। ভিড় ঠেলে আমি দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলাম তোমার দিকে। তুমি আমায় দেখেও দেখলেনা। মনে হল ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাচ্ছ আমাকে।
আমার দুচোখ আটকে গেল তোমার এক বিশেষ অতিথির দিকে তাকিয়ে। স্মার্ট, ছিমছাম স্যুট-বুটপরা চকচকে চেহারা। কলেজের থার্ড ইয়ারের ছেলে - জিৎ চক্রবর্তী। দেখলাম তাকেই তুমি একটু বেশি সময় দিচ্ছ। নিজের চেহারাটা দেখলাম একবার ভাল করে। গরীবি ছাপ স্পষ্ট। পুরান শার্টপ্যান্ট। একটা অব্যক্ত বেদনা অনুভব করলাম।
দারোয়ানের হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে বলে দিলাম - গিফ্টটা নন্দিনী ম্যাডামকে দিয়ে দিতে।
রাত এগারোটা। পিছন ফিরে পা বাড়ালাম....
____________
শক্তিপদ পণ্ডিত
বেহালা, কলকাতা ৭০০০৩৪