Click the image to explore all Offers

অনুগল্প ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী



ডাক  



বাবা-মায়ের সাথে ব্যাগ গোছানো শেষ ঋজুর।আনন্দ আর ধরে না! স্কুল থেকে এসেই শুরু করেছিল প্যাকিং।সময়মত স্টেশনে পৌছাল ।সরাইঘাট এক্সপ্রেস যথাসময়ে হাজির।ভীষন স্পিড ট্রেনটার ।একটু তাড়াতাড়িই রাতের খাবার খেয়ে নিল তিনজনে।প্রায় রাত থাকতেই নামতে হবে বোলপুরে।মায়ের কাছে শুয়ে রবিঠাকুরের গান শুনতে শুনতে ঘুমোনোর অভ্যাস ঋজুর।তার স্কুলের রবীন্দ্রজয়ন্তীর কথা মনে পড়ছিল । এবার ' বীরপুরুষ ' আবৃত্তি করেছিল সে। সেই রবিঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতন বেড়াতে যাচ্ছে তারা।যেন চোখের সামনে সৌম্যদর্শন প্রাজ্ঞ কবি দাঁড়িয়ে আছেন।মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে ঋজু।প্রায়  ৩-৩০ নাগাদ ট্রেন বোলপুরে পৌছে গেল। ঝটপট লাগেজ নিয়ে নামল তিনজনে। মায়ের হাত ধরে চলছে ঋজু।রাকেশ লাগেজ ম্যানেজ করে,ওয়েটিং রুমে বসল।মিনিট দশেক পরেই হোটেল থেকে লোক হাজির গাড়ি নিয়ে।শীতের রাত, মানে প্রায় ভোর । গাড়ি ছুটল হোটেলের উদ্দ্যেশ্যে। ড্রাইভারের পাশে সামনে রাকেশ।পেছনে মায়ের পাশে ঋজু।কিছুটা দূর যাবার পরেই হঠাৎ চিৎকার ঋজুর- ' গাড়ি থামাও '।
সবাই চমকে উঠল।ড্রাইভারও ব্রেক কষে ফেলেছে ততক্ষণে।
'কি ব্যপার? '
' বাবা দ্যাখো, রাস্তায় একটা লোক পড়ে আছে।'
' কোথায়? '- মুখ বাড়িয়ে রাকেশ দেখল ঠিকই । রাকেশ নামতে গেল।
ড্রাইভার বলল ' স্যার,নামার কি দরকার! কি কেস কে জানে! ফালতু পুলিশ কেসে পড়ব।'
' দাঁড়াও ' বলে নেমে গেল রাকেশ।
সামনে গিয়ে দেখা গেল একটা লোক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে কাতরাচ্ছে।
পেছন পেছন ড্রাইভারও নেমেছে ' নির্ঘাত ঝামেলায় পড়ব। চলুন স্যার ।'
ঋজুর দিকে দেখল রাকেশ। উদগ্রীব হয়ে গাড়ি থেকে তাকাচ্ছে।মুখ ফিরিয়ে চলে গেলে ছেলের কাছে কি জবাব দেবে! এদিকে গাড়িতে স্ত্রী-পুত্র। ড্রাইভারও তাড়া দিচ্ছে। কিছুক্ষণ নির্বাক।
রাকেশ চোয়াল শক্ত করে বলল ' ধরো একে, এখনি হাসপাতালে না নিয়ে গেলে বাঁচানো মুশকিল হবে ।'
' এই গাড়িতে কিভাবে.......'
'কথা না বলে ধরো ওনাকে' ঝাঁঝিয়ে ওঠে রাকেশ।
৩৫ এর মতো বয়স। সুঠাম চেহারা।অনতিদূরে মোটরসাইকেল পড়ে আছে ।ঋজু আর রত্না সামনে বসল।লোকটির মাথা নিজের কোলে নিয়ে পেছনে বসল রাকেশ।জামা কাপড় রক্তে জ্যাবজ্যাবে!
সে যাত্রায় সঠিক সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা হওয়াতে প্রাণে বেঁচে যায় লোকটা।হিট এন্ড রানের কেস। পুলিশের কিছু ফর্মালিটি পালন করে হোটেলে পৌছাতে প্রায় ১১টা।মাঝে ড্রাইভারটা ঋজুর জন্য কেক আর রাকেশদের জন্য চা জোগাড় করেছিল।

হোটেলে পৌছে খুব আনন্দ ঋজুর।সাজানো গোছানো লন, পার্ক।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে। মহানন্দে ছুটে বেড়াচ্ছে ঋজু। আর চায়ের কাপ হাতে ব্যালকনিতে রাকেশ আর রত্না।
হোটেলের মিউজিক সিস্টেমে রবিঠাকুরের গান বাজছে ' যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে ' ।
শান্তিনিকেতনের সেই বেড়ানো ঋজুকে খুব ঋদ্ধ করেছিল।

..................



পার্থ সারথি চক্রবর্তী 
কোচবিহার 
9434169796



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.