নিশুতি
মণি ভিতরে ভিতরে ছটফট করছে। কখন বিভাস ঘুমুবে। তার মন বড় অস্থির। কদিন থেকে দেখছে বিরাজ তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। যাক। তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না কিন্তু কেন? কেন?
হিসেব তাকে দিতেই হবে। কেন তবে ভালোবাসা?
যখন সে পাত্তা দেয়নি বারবার কত আয়োজন।
আর যখন সে একটু একটু ভালোবাসতে শুরু করেছে ওমনি। না। এটা সে কিছুতেই মেনে নেবে না।বিহিত বিরাজ কে করতেই হবে। বিভাসের অন্যদিন ঘুম আসে সাড়ে দশটায়। আজ রোববার। অফিস নেই। শুতে শুতে এগারোটা। আবার সপ্তাহে একদিন মানে আজ সে মণিকে বিছানায় চাই। আজ মনের মতিগতি বিপরীত। মণি কিছুতেই আজ বিভাসের সাথে শোবেনা। তাহলে সব হাতের নাগালের বাইরে। বিরাজ কাল চলে যাচ্ছে। ওর কাজের যা বহর কবে ফিরবে তার ঠিক নেই। আর এখন তো ইচ্ছে করে ফিরবে না। যা হোক হেস্তনেস্ত একটা করতেই হবে। রাত ছাড়া দুজনের এক হবার উপায় নেই। দেখা করতে পারবে কিন্তু যা বলতে চাই তার সময় ঐ রাতেই।
রাত দশটা। বিভাস বিছানায় বসে। অপেক্ষা । মণি বলল তুমি শুয়ে পড়। আজ শরীর আমার খুব খারাপ। দৃষ্টি খাটো করে তাকাল বিভাস। মণিকে দেখে বুঝল একটু যেন কেমন কেমন। বলল আগে বললে না কেন? সারাদিন বাড়িতে থাকলাম। ওষুধের দোকানে বলে..
তেমন কিছু না। তুমি শোও তো। বিভাসের ইচ্ছে নষ্ট হতে একটু ক্ষুণ্ন হল। ও.কে।
খানিক এপাশ ওপাশ করে নাক ডাকা শুরু। মণি পাশে ঘাতি মেরে ছিল। উঠল। বিড়াল পায়ে এগোতে লাগল বিরাজের ঘরে...
দরজার সামান্য শব্দে বিরাজ না ফিরে বলল এসো। টেবিলে বসে তার ল্যাপটপে কি দেখছে। বুঝলে কি করে? মণি ভিতরে ঢুকল।
বৌদি ছাড়া আমার কে আছে? ঠাট্টা না। আজ তোমাকে উত্তর দিতে হবে তুমি ব্যবস্থা কি করছো?
কিসের রাণী।
তোমার মুখে এমন প্রশ্ন। যেন কিছু বোঝোনা? বল আমাদের ভালোবাসা তবে পরিণতি কি?
সেক্স করবে? তো লেট যাও।
তোমার সে মুরোদ নেই। জানি। তাই ও কথা থাক। বল আমি কীভাবে বাঁচব? তুমি চলে যেতে চাইছ। আর সহজে যোগাযোগ হবেনা তাও জানি। আমাকে কার ভরসায় রেখে যাচ্ছ?
দাদার। তুমি তার বৌ। আমি তোমার ভার শক্ত হাতে দিয়ছি।
বলতে লজ্জা করছে না। আমি কি চেয়েছিলাম তোমার দাদার বৌ হতে। তুমি তো জোর করলে। মরে যাবার ভয় দেখালে।।
সেটা তোমার ভালো জন্য। আমাকে দোষারোপ করছ কেন? দাদার সাথে তো দিব্যি আছ? মণি বলল ঘোর আমার দিকে। কি বলতে চাও। একটা অভিনয় কখনও জীবন সংসার হতে পারেনা।
বিরাজ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। কিছু খাপছাড়া কষ্ট মুখে আটকে মুখটাকে ম্লান দেখাচ্ছে। সেই সময় যখন পড়াশুনা করেছে তখন কত না সুন্দর লাগত এই মুখটাকে। আজও ঘাটতি নেই। বিরাজ অন্যমনষ্ক হয়। তার দাদা বিভাস। তাকে সে কোনোদিন ঠকাতে পারবে না। কাজ পাগল একটা মানুষ। তাদের মা এক কিন্তু বাবা আলাদা। কিন্তু বিভাসের ব্যবহার এত ভালো যে বোঝার উপায় নেই যে তার সহোদর ভাই সে না।
তোমাকে একটা চুমু খেতে দেবে? বিরাজ একটু এগিয়ে এল চেয়ার টেনা। খাটে কোনায় বসে মণি। দুজনে মুখোমুখি।
মণি বিরাজের মুখে কিছু খোঁজার চেষ্টা করল তারপর বলল কথা ঘুরিও না । কি পথ বাছতে বল আমাকে?
ধুর। মুড এসছে। একটা চুমু দাওনা। মণিকে বোঝানো বিরাজের দ্বারা সম্ভব না। ওযে কিরকম জেদি। তা বিরাজ জানে। একবার যাই বলুক বিরাজ সেটা করবে তো না উল্টো করবে। এতদিন এ বাড়িতে আছে আর কিছু করব করব করছে তাই ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে। কাল যাবার দিন তাই। আর তর সইছে না। বিরাজ তো জানে তার আয়ু ফুরিয়ে এল। সময় সময় বুঝতে পারে। তার হার্টে যে ফুটো আছে। অপারেশন করেছিল একবার। দিব্যি সুস্থ। এখন আবার তা চাগার দিয়েছে। ডাক্তার বলে দিয়েজে নো হোপ। যতদিন ওষুধে চল। মণিকে বলেনি কখনও বিরাজ। আর নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যতে সাথে তাকে জড়াতে চাইনি। তাই মনে পাথর চাপা দিয়ে নিজের দাদার সাথে তাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এটাই তার ইচ্ছে যতদিন বাঁচে তাও তো চোখের সামনে থাকবে। কিন্তু ব্যাপার ঘোরাল হয়ে যাচ্ছে। মণি মরিয়া হচ্ছে। এবার সে তার প্রাপ্য বুঝে নিতে চাই। বিরাজ বুঝতে পারছেনা কি করবে। তবে এটা নিশ্চিত যে তাকে একটা পদক্ষেপ নিতে হবে। চরম পদক্ষেপ। মনে মনে আকতে থাকে তার চিত্র। একটুভাবছে।
কি এত ভাবছ? মণি বিরাজের হাত ধরল। নাও তুমি আমার সব নাও। নারী হয়ে আমার জীবনের সবচেয়ে ছোট হতে হল। তোমার ইচ্ছে আমি পূরণ করে যাব। দাদার সাথে বিয়ে দেবার পর অনেক বার রাত হলে মণি এসছে। তার মনের কষ্ট দেখাতে। আজও এসছে। ফয়সালা করতে। কিন্তু বিরাজ কখনও তাকে স্পর্শকরেনি। আজ হাত তুলে চুমু খেল উল্টোপিঠে। ভালো থেকো। মণি। সকালে একফাঁকে আমার মত জানিয়ে দেবো। যাবার আগে....
মন অশান্তি থেকে গেল। মণি কিছু বলতে গেল। বিরাজ কঠিন স্বরে বলল যাও।
সমস্ত ঘর আবার নিশুতি। অনেক রাত ঘুম এলোনা চোখে বিরাজের।
চুপ করানো গেলোনা কাউকে। বিভাসের কেউ কাঁদতে দেখেনি। সকালবেলায় এমণ কান্না জুড়ে দিল। আশপাশের অনেকে ছুটে এলো।
বিরাজের জন্য একটা পুলিশ ভ্যান এল। ওর পোস্টমর্টেম হবে। সুইসাইড যদিও। বিষের শিশি পাওয়া গেছে। সমস্ত নিয়ে চলে গেলো গাড়ি।
কান্না কমল। মণি একটুও কাঁদল না। বিরাজের উপর তার রাগ কমছে না। মৃত্যুর পরে।
বিভাস একটা চিঠি মণিকে দিল। মণি দেখল লেখা। দাদা হার্টের অসুখ কিছু দিন খুব বেড়েছে। আমি সহ্য করতে পারলাম না। মণি কিছু বলল না। শুধু বিভাসের দিকে তাকাল।
বিভাস বলল ছোটবেলা থেকেই। ছেলেটা বড্ড চাপা.....
------------------
Balaram Biswaschandpur
nadia
7407052217