Click the image to explore all Offers

গল্প ।। অনিন্দ্য পাল




দৃষ্টিদান 

==================


অনিমেষ প্লাটফর্মে পা রাখতেই ট্রেনটা ছেড়ে দিল। কোন মতে ছুটতে ছুটতে একটা কম্পার্টমেন্টে পা রাখলো। সাড়ে তিনটেয় মিটিং। এই ট্রেনটা মিস করা মানে এক ঘন্টা লেট হয়ে যাওয়া। তারপর বসের বকুনি, কলিগদের চিটকুনি মারা কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা করবে। তবে এই সময় শিয়ালদামুখি ট্রেনগুলোয় ভিড় কম থাকে বলে উঠতে পারলো, শুধু যা, নাকটা একজনের কপালে ঠুকে গেল। লেখাপড়া জানা ভদ্রলোক বোধ হয়, তাই মনে মনে খিস্তি খেউড় করলেও মুখে কিছু বললো না, অবশ্য এটা অনিমেষের ধারণা। এমনও হতে পারে, লোকটার ব্যথা বোধ হয়নি তাই তাকে গালমন্দ দেবার যোগ্যই মনে করেনি। সামনা সামনি কেউ গালমন্দ করলে অনিমেষ বেশ গর্বিত হয়। লোকে প্রশংসা করুক বা না করুক, অন্তত গালমন্দ করলেই ওর আনন্দ। এটাই অনিমেষের নীতি। 
  যাইহোক কোন মতে ট্রেনে উঠে ভিতরে না গিয়ে একটু সাইড হয়ে দাঁড়ালো। গতকাল কেনা নতুন জুতোটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। নতুন জুতোর উপর অনিমেষের মায়া বরাবর একটু বেশিই। ট্রেনে ওঠার সময় ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে সোলের সামনে একটু ধাক্কা লেগেছিল, অনিমেষের মনে হল, ধাক্কাটা ওর বুকেই লেগেছে। জুতো কেনার ধাক্কা, আজ হোঁচটের ধাক্কা, তারপর ট্রেনে উঠতে গিয়ে নাকে ধাক্কা, ধাক্কায় ধাক্কায় জীবনটা হাওয়া কল হয়ে গেল একেবারে। 
  চোখ তুলে সামনে তাকালো অনিমেষ। তার ঠিক সামনের সারিতে চোখ পড়তেই বুকের ধুকপুক বেড়ে গেল বহুগুন। যাক ট্রেন জার্নিটা আজ ভালোই হবে মনে হচ্ছে। সামনে এরকম একজন সুন্দরী মেয়ে বসে থাকলে অনিমেষ সারাদিন ট্রেন থেকে নাও নামতে পারে। অনিমেষের ভিতর থেকে একটা খুশির দমক কাশি হয়ে বেরিয়ে এল। 
ভিড় বাড়ছে। একটা লোক অনিমেষ আর মেয়টার ঠিক মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। গজগজ করে উঠলো অনিমেষ। আরে এত জায়গা থাকতে ঠিক আমার সামনে কেন? মনে মনে কয়েকটা বাছা বাছা খিস্তি দিয়ে নিজেই একটু পাশে সরে দাঁড়ালো। হ্যাঁ, আবার দেখা যাচ্ছে। নিখুঁত গড়ন, ফর্সা রং, হাত দুটো বেশ লম্বা আর ঢেউ খেলানো। নীল রঙের কাচের চুড়িতে হাতগুলো আরও মোহময় লাগছিল। 
হঠাৎ ধাক্কা। অনিমেষ চমকে দেখলো, তার সামনে এক বেশ মোটাসোটা মহিলা একজন ভদ্রলোককে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলছেন " আরে মহাজ্বালা তো, তখন থেকে আপনি আমার গায়ের মধ্যে ঢুকে আসছেন দেখছি? কেন? কিছু দরকার আছে? কি দেব বলুন? " কামরাময় হাসির রোল উঠলো। 
  অনিমেষ আবার দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল অজ্ঞাত সুন্দরীর দিকে। কিন্তু আবার ধাক্কা! মেয়েটিও যে এদিকেই তাকিয়ে আছে! লজ্জায় পড়ে গেল অনিমেষ। আসলে সে মেয়েটাকে এতটাই মগ্নভাবে দেখছিল যে, মেয়েটাও যে তাকে দেখছে সেটা খেয়ালই করেনি। 
অনিমেষ আবার চোখ তুললো। হ্যাঁ, এখনো মেয়েটা একদৃষ্টে এদিকেই তাকিয়ে আছে। নিজেকে আয়নায় যতটুকু দেখেছে তাতে কোনো মেয়ের মনোযোগ আকর্ষণ করার মত হ্যান্ডসাম তো সে নয়! তাহলে? 
  মনে মনে বিরক্ত হল অনিমেষ। এ যেন তার পাকা ঘুটি কেঁচে যাচ্ছে। এদিকে ট্রেনটাও ফাঁকা হয়ে আসছে। অনিমেষের হঠাৎ মনে হল মেয়েটাও তারমত  ঝাড়িবাজ নয়ত! হতেই পারে! দেখা যাক কোথাকার ঝাড়ি কোথায় গিয়ে পড়ে। 
ট্রেনটা শিয়ালদা ঢুকছে তখন, অনিমেষ লাস্টমিনিট সাজেশন দেখার মত করে দেখছিল মেয়েটাকে। তখনই মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো তার চোখে চোখ রেখেই। তারপর উল্টোদিকের জানালার ধারে বসে থাকা কাউকে ইসারায় ডেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো। মেয়েটা যাকে ইসারায় ডাকলো, তাকে আগে দেখতে পায়নি অনিমেষ। আড়ালে ছিল। এবার সেও বের হয়ে এল। কিন্তু এ কে? সমিতদা না! বড় জেঠামশাইয়ের মেজ ছেলে। দু'মাস আগে রেজিস্ট্রি বিয়ে করেছে। আগামী মাসে রিসেপসন দেবে। সোনারপুর থাকে। মাথাটা যেন ঘুরে গেল অনিমেষের।  এতক্ষণ ধরে হবু বৌদির সঙ্গে ... আরে ছিঃ ছিঃ! 
নিজের গালে চড়াতে ইচ্ছা করছে অনিমেষের। ঘামতে ঘামতে মনে হল, বুকটা যেন হালকা হয়ে গেছে। ট্রেন থেকে নামার কথা ভুলেই গেল। 
--- আরে অনি! তুই কোথায় যাবি? 
সমিত তাকে দেখতে পেয়ে বললো। 
থতমত খেয়ে অনিমেষ কোনমতে বললো, 
-- হ্যাঁ, সমিতদা। শিয়ালদা যাবো, শিয়ালদা, মিটিং আছে। 
-- আরে শিয়ালদা যাবি কি রে? শিয়ালদা তো এসে গেছে। চল! দশ নম্বরে দিয়েছে। 
-- তুমি একে চেনো নাকি? মেয়েটা অবাক চোখে সমিতকে জিজ্ঞাসা করল। 
-- আরে এই তো - অনি। মানে অনিমেষ, সেজকার ছোট ছেলে। রেজিস্ট্রির দিন ও এখানে ছিল না, ওর ওয়াইফের ডেলিভারি ছিল, হসপিটালে ছিল, তাই তুমি ওকে দেখোনি। 
-- ওহঃ, আচ্ছা। নমস্কার অনিমেষবাবু আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগলো। দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললো মেয়েটা, থুড়ি হবু বৌদি। এগোতে গিয়ে আবার পিছন ফিরে একটু বিদ্রূপের স্বরে বললো, রিসেপসনে কিন্তু আসা চাই, সস্ত্রীক, পুচকুটাকে নিয়ে, ভুললে চলবে না কিন্তু! একটা বাঁকা হাসি অনিমেষের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে সমিতদার হাতটা বগলদাবা করে নেমে গেল অনিমেষের হবু বৌদি। 
অনিমেষ তখন কোন মতে টলতে টলতে এসে ফাঁকা সিটে বসে পড়লো। প্লাটফর্মে তখন অ্যানাউন্স চলছে, 
" দশ নম্বরের গাড়িতে কেউ উঠবেন না, এই গাড়ি কারসেড যাবে "। 
====================



অনিন্দ্য পাল 
গ্রাম -- জাফরপুর 
পোঃ-- চম্পাহাটিি 
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর 
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 
Mob: 9163812351




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.