Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। মনীষা কর বাগচী

সবার ভাগ্যে সুখ সয় না

     

    35 বছর বয়সে সাথীর বিয়ে হল। আজ সাথীর খুব আনন্দের দিন। সে একরকম ধরেই নিয়েছিল তার আর বিয়ে হবে না। কারন আজ মানুষ মেয়েদের গুণ দেখে না শুধু রূপ দেখে। সাথীর মধ্যে হাজার গুণ ছিল কিন্তু রূপ ছিল না তাই ওকে কেউ পছন্দ করত না। কিন্তু কথায় আছে না.... "আল্লাহ যব দেতা হেয়, ছাপ্পর ফাড়কে দেতা হেয় ।" ভগবান সাথীকে ছাপ্পর ফেড়ে দিলেন। প্রথমে চাকরি দিলেন কিছুদিনের মধ্যেই সুমনের মত ভাল জীবন সাথীও দিলেন।

         ছোটবেলা থেকেই সাথী খুব পরিশ্রমী ছিল। যে বয়সে মেয়েরা গোলাচ্ছুট খেলে, পুতুলের বিয়ে দেয, কিত কিত খেলে, সেই বয়সে সাথী ভাত রান্না করত, থালা বাসন ধুতো, উঠোন ঝাড় দিত, হাস মুরগি পালত, ছাগলের জন্য ঘাস কাটত। অভাবের সংসার চার বোন এক ভাই বাবা প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। এতগুলো মানুষের পরিবার মাকেই চালাতে হতো। মা রোজ কলকাতায় কাজে যেতেন। সকালের প্রথম ট্রেনে যেতেন আর রাতের শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরতেন। সারাদিন সংসারের সব ঝামেলা সাথীকেই পোহাতে হত। তার মধ্যে আবার পড়াশুনাও করত।

              ভাইটিকে ওরা খুব যত্নে মানুষ করেছে। তাকে কোনোদিন বুঝতে দেয়নি যে ওরা গরীব। নিজেরা না খেয়ে তাকে খাইয়েছে। কত কষ্ট করে তাকে ইন্জিনিয়ার বানিয়েছে। আজ সে মস্ত বড় চাকরি করে।  নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করে আজ সে কলকাতায় ফ্ল্যাটে থাকে। মা বাবা বোন কাউকেই চেনে না এখন। প্রথম প্রথম সাথী আর তার মা দুজনেই খুব কাঁদত ভাইয়ের জন্য এখন আর কাঁদেনা। 
তবে মাঝে মাঝে ভাইয়ের একটা কথা খুব মনে পড়ে সাথীর। সে বলত দিদি আমি চাকরি পেলে তোকে রোজ ডাবের জল দিয়ে স্নান করাব তখন তুই খুব ফর্সা হয়ে যাবি আর কেউ তোকে অপছন্দ করবে না। শুনে খুশিতে সাথীর দুচোখের পাতা ভিজে উঠত আর মনে মনে বলত আমার ফর্সা হতে হবে না আমার সোনা ভাই, তুই ভাল থাকিস তাতেই আমার সুখ।

             ভাই চলে যাওয়ার পর সাথীর আর বিয়ে করার ইচ্ছাই রইল না। সে মন লাগিয়ে পড়াশুনা শুরু করল। বি এ পাশ করল। বি এড করল তারপর হাইস্কুলের শিক্ষিকা পদে নিযুক্ত হলো। বিয়েও করল। খুব আনন্দেই কাটছিল দিন। একদিন জানতে পারল সে মা হতে চলেছে। আনন্দ আর ধরে না। কিন্তু ডাক্তারের ভুল ট্রিটমেন্টে তার সব আনন্দ মাটি হলো। বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো আর দেখতে পেল না। ফুল হয়ে ফোটার আগেই ডাক্তারের নির্মম হাতে কলিটি লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। শত চেষ্টা করেও সাথী আর মা হতে পারলনা।

          নীরবে কান্না করা ছাড়া আর কিছুই তার করার নেই। দেখা হলে একটা কথাই বলে, "আমার সব শেষ হয়ে গেলরে। এত বয়সে বিয়ে করেছিলাম শুধু একটা সন্তানের জন্য। তানাহলে আমার বিয়ে করার কোনো দরকারই ছিল না। ভাইটাকে  ছেলের মত মানুষ করলাম সেও চলে গেল......। ভগবান সব কিছু দিয়েও আবার কেড়ে নিল। আসলে সবার ভাগ্যে সুখ সয়নারে , আমার ভাগ্যেও সুখ সইল না।"

===========








মনীষা কর বাগচী
দিল্লি

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.