ছোটগল্প ।। লাস্ট লোকাল ।। কানুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
1
অক্টোবর ১০, ২০২০
লাস্ট লোকাল
কানুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
তারকেশ্বরে গেছি নিমন্ত্রন রক্ষা করতে। অফিসের এক কলিগের বিয়ে , প্রায় বারো জনের টিম ।
খেতে বসতে বসতে দেরী হয়ে গেলো, প্রায় সাড়ে নটা। ঠিক করলাম দশটা পঞ্চাশের লাস্ট লোকালে হাওড়া ফিরবো। আমাদের সঙ্গে ছিল বাসববাবু। উনি লাস্ট লোকাল শুনেই আঁৎকে উঠলেন , " না ভাই লাস্ট লোকাল নয় , তার আগের অন্য কোনো ট্রেন ধরো"।
অনিকেত বলল , " দাদা এটা বনগাঁ লোকাল নয় যে চুরি ডাকাতি ছিনতাই হবে"।
আমি বললাম , " তাছাড়া আমরা এতজন আছি । চোর-ডাকাত কিচ্ছু করতে পারবে না। আপনার ভয় নেই দাদা"।
বাসববাবু গাঁই গুঁই করতে লাগলেন , " তোমরা ভাই ওতেই এসো, আমি এগোচ্ছি"।
আমরা চেপে ধরলাম , "এক যাত্রায় পৃথক ফল হয় না। দরকার হলে আপনাকে বস্তায় ভরে নিয়ে যাব"।
আগত্যা বাসববাবু নিমরাজি হলেন। কিন্তু মুখ দেখে বুঝলাম পছন্দ হল না এই ব্যাপারটা । খেতে বসে বার কয়েক মুখে প্রকাশও করলেন সেটা , " তোমাদের মত ছেলে ছোকরাদের পাল্লায় পড়ে বেঘোরে যাব"।
আমরা ভেবেছিলাম ট্রেনে উঠে উনি ভয়ে একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকবেন, ঘন ঘন ঘড়ি দেখবেন আর আমরা ক্রমাগত সাহস জোগাব। কিন্তু সে রকম কিছুই হল না। বেশ বহাল তবিয়তে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যেতে লাগলেন।
অপু ভয় দেখানোর জন্য বলল, " দাদা সামনে ডাকাতি হয়"।
বাসববাবু বললেন , " তোমরা যা ভাবছ, তা নয়। চোর ডাকাত ভূত-প্রেতের ভয় আমার কোনোদিনই নেই। আটবছর সেলসে কাজ করেছি। রাত বেরাতে বাসে ট্রেনে রাস্তা ঘাটে ঘুরেছি। ডাকাত, বাটপার, পকেটমার অনেকের সাথে মোলাকাত হয়েছে"।
আমরা অবাক হয়ে বললাম , " তাহলে লাস্ট লোকালে আপনার এত এলার্জি কেন?"
বাসববাবু চোখ বুজে বললেন , " সে ভাই এক ইতিহাস আছে"।
আমরা তাস খেলার আয়োজন করছিলাম। সমস্বরে বললাম, "তা হলে তাস থাক। ইতিহাসটাই শুনি"।
বাসববাবু বললেন, " দুটি শর্তে বলতে পারি। এক, গল্প বলার মাঝে কেউ কোন মন্তব্য করবে না। দুই, গল্প বলার শেষে কেউ কোন মন্তব্য করবে না"।
ঘটনাটা বাসববাবুর মুখ থেকেই শোনা যাক , " সে প্রায় দশ বছর আগের কথা। তখনো সরকারী চাকরিতে ঢুকিনি। একটা মিক্সার কোম্পানিতে সেলসে চাকরী করি। প্রায়ই মেন লাইনের দিকে যাই। মেমারীতে কোম্পানির একটা ব্রাঞ্চ খোলা হবে, তাই সার্ভে করতে যাচ্ছি। চেপেছি বর্দ্ধমান লাস্ট লোকালে। পান্ডুয়া আসতেই ট্রেন পুরো ফাঁকা। শুধু আমরা দু জন গোটা কামরায় বসে।
আমি ছাড়া আমার উল্টোদিকে তেইশ চব্বিশ বছরের এক তরুনী বসে। ফরসা , কাটা কাটা চোখ মুখ , বেশ সুশ্রী । আমি তখন আঠাশ উনত্রিশ, একদম তরতাজা যুবক। গোটা কামরায় একা একটা তরুনীর সাথে বসে থাকলে মনে রোম্যান্টিসিজম আসার কথা। কিন্তু আমার তার সাথে চিন্তাও এল । এমনিতে আমার কোন ভয়ডর নেয়, কিন্তু মেয়েটির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। মনে মনে ঈশ্বরকে বললাম, ঈশ্বর কোন দূর্ঘটনা যেন না ঘটে। তা হলে আমার পৌরুষত্ত্বের বারোটা বেজে যাবে।
মেয়েটিরও মুখ দেখে বুঝলাম বেশ টেনশনে আছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করল ,আমি কোথায় নামবো।
মেমারী শুনে আবদার করে বসলো , " দাদা , আমার সঙ্গে শক্তিগড় অবধি যাবেন । গোটা কামরায় আমি একা ।"
দাদা ডাক শুনে রোম্যান্টিসিজম নেতিয়ে পড়েছিল , আবদার শুনে আকাশ থেকে পড়লাম।
আমি মেয়েটিকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম , তাকে শক্তিগড়ে অবধি সঙ্গ দিতেই পারি। কিন্তু এত রাতে শক্তিগড় থেকে মেমারী যাবার কোনো ফিরতি ট্রেন নেই । আমাকে সেদিন রাতে মেমারী যেতেই হবে। মেয়েটি জানালো , তাদের গাড়ি আছে। গাড়ি করে কেউ না কেউ আমাকে পৌঁছে দেবে। অগত্যা রাজি হতেই হল। অবশ্য, এটাও সত্যি, একটা যুবতী সুন্দরী মেয়ের কাছে নিজেকে হিরো মনে হচ্ছিল। অন্তত, সেদিন রাতে নিজেকে শাহরুখ খান মনে হয়েছিল।
কথায় কথায় মেয়েটির পরিচয় জানলাম। শক্তিগড়ের পাশে বড়শূলে বাড়ি, বাপ মায়ের একমাত্র মেয়ে, বড় দাদা আছে । জয়েন্ট ফ্যামিলি । বর্দ্ধমানের একটা কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স করেছে, গান জানে , ইত্যাদি ইত্যাদি। গ্রামের মেয়েরা আমাদের কলকাতার মত এত ডিপ্লোম্যাটিক হয় না। মনের কথা বলার মত মানুষ দেখলে সব গড় গড় করে সরলভাবে বলে দেয়।
আমিও আমার পরিচয় দিলাম। বেসরকারি কোম্পানির সেলস এক্সেকিউটিভ , এম বি এ করেছি, সরকারী চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছি , হাওড়ায় বাড়ি , এক বোন আছে এবং আমি অবিবাহিত। শেষ কথাটা কেন বললাম জানি না । তবে মনে হল , মেয়েটি ওটাই সব থেকে মন দিয়ে শুনল।
তারপর আর কি? মনে হচ্ছিল এই পথ যেন শেষ না হয়। প্রেমে পড়ার জন্য পরিবেশের কোন গুরুত্ত্ব আছে কিনা জানিনা, তবে সেদিন আধেক আলো আধেক অন্ধকারে আমি মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেলাম। খুব সম্ভবত মেয়েটিও আমার প্রেমে পড়ল।
ট্রেন শক্তিগড়ে এল। মেয়েটির দাদা স্টেশনে ছিল। তিনিই আমাকে গাড়ি করে মেমারী পৌছে দিলেন। মেয়েটি আমার ফোন নাম্বার নিলো , তারটাও দিলো । বুকে অনেক কষ্ট নিয়ে মেয়েটিকে ছেড়ে এলাম। শেষ দেখায় মেয়েটি যে দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকাল তাকে শুধু কৃতজ্ঞতাসূচক বলা যায় না"।
গল্প শেষ হলে আমাদের বটুক বলল, " ব্যাস এইটুকু, এইজন্য লাস্ট লোকালকে এড়িয়ে চলেন। এরকম প্রেম তো আমাদের বাসে ট্রেনে কত হয়।"
বাসববাবু বললেন, " না ভাই , এর পরেও একটু আছে। তার পরের দিনই মেয়েটির কাছ থেকে ফোন, নতুন করে ধন্যবাদ জানিয়ে । তার পর আবার ফোন । আমিও কি করি, আমিও ফোন করলাম। তার পরের কাহিনী বলাই বাহুল্য" ।
একটা দীর্ঘ নিঃশাস নিয়ে তিনি বললেন , " তার পর থেকে লাস্ট লোকাল দেখলেই আমার মনটা আতঙ্কে ভরে ওঠে। দশ হাত দূর থেকে পালাতে চাই"।
=================
কানুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
রাজগঞ্জ, বর্ধমান
যোগাযোগ-৯১২৬৫৭৩০১০
যোগাযোগ-৯১২৬৫৭৩০১০
Apply for SBI's Simply Click Credit Card and Earn upto 10x SBI Rewards on all online purchases and also on all offline purchases! You can get 5%-20% instant discount on Flipkart, Amazon etc. online sites in different times. You can purchase things with no cost EMI using this card. It takes only 5 mins to apply. 0 |
SAMSUNG-এর নিজস্ব সাইট থেকে SAMSUNG-এর মোবাইল কিনুন। পাবেন 50% পর্যন্ত ছাড়। সঙ্গে ব্যাঙ্কের ছাড়। নো কস্ট ইএমআই। বিশদ জানতে আগ্রহীরা এখানে ক্লিক করুন SAMSUNG-এর মোবাইল ছাড়াও হেডফোন, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি সব কিছুতে পাবেন অতিরিক্ত ছাড়। |
Get Medicine delivered to your doorstep! Also save 30% Off on First Medicine Order. 18% Off (up to Rs 2,000) + 12% cashback (up to Rs 200) Code - CK30 |
Buy Latest Fashion at 50-90% Off only on Ajio!CLICK HERE to Visit Ajio Store Now!
|
Enjoy Upto 50% Off on Sports Merchandise and Accessories reebok. |
Amazing Discounts on Addidas Website! Get Upto 50% Off. Click here To Shop Now! |
Tags
Darun
উত্তরমুছুন