Click the image to explore all Offers

জমিলোভী জগনবাবু ।। উত্তম চক্রবর্ত্তী



জমিলোভী জগনবাবু

উত্তম চক্রবর্ত্তী 


ওরে বাবারে ,কে আছ গো, খালভরাকে টেকাও গো, হামকে ফেলা কাঠে কইরে মাইরে ফেইলল্য গো। মর-মর আঁটকুড়ির বেটা, হামি নাঁড় হব -
কে কুথায় আছঅ গো, লদীভরা, কামান্যা, লিব্বইংস্যা কে টেকাও, হামকে আইজ মাইরে ফেইলবেক্ গো -- তুই মর্ - মর্ মারিভয়া।
                 বলেই মাতনের বউ ক্ষেন্তি হাউমাউ করে কেঁদে সারা বাউরী পাড়াকে সচকিত করে তুলল। মাতন মদের ঘোরে একটা ফালা কাঠ নিয়ে অপুষ্ট মেয়েটার পিঠে বার বার আঘাত করতে করতে বলতে থাকে, মাগি পিরিত হছ্যে, বাহুন বুঢ়ার সঙে পিরিত, উ-শালা হামার ঐ গুঢ়া জমিটর লালচে তুর সঙে পিরিত জমকাত্যে আস্যেছিল। আর তুই শালি উয়ার ব্যাঁতের ভাকিতে ভুল্যে গেলহি? তুকে আইজ কেউ নাই টেকাত্যে লাইরবেক্। 
ব্যাপারটা তা হলে খুলেই বলি। মাতন বাউরী গ্রামের প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ।প্রায় বিঘাটেকের মত রাস্তার ধারে জমি থাকলেও ,তা একেবারে টাঁইড়। রিক্সা টেনে দিন গুজরান করে। এভাবেই দিনরাত কাটলেও ইদানীং গ্রামের উপর দিয়ে সড়পটি বেশ চওড়া হচ্ছে। সবাই বলছে সড়পটা না কি চার নম্বর জাতীয় সড়প। পাশাপাশি গাঁয়ের লোক, যাদের টাকা আছে তারা রাস্তার ধারে জমি কিনে বাড়ী করছে। ঘটনার ঘনঘটা এখানেই নিহিত আছে। 
জগন মাস্টার রিটায়ার করেছেন। বেশ কয়েক লাখ টাকাও পেয়েছেন। তিনি গ্রামের রিক্সা স্টান্ডের বটুর চা দোকানে চা খেতে যান। একদিন মাতনকে আড়ালে ডেকে চুপিচুপি বললেন, হ্যাঁ রে মাতন, সারা জীবন রিক্সা টেনেই কাটাবি? 
মাতন হাত জোড় করে বলে, আঁইজ্ঞা, কি আর হবেক্ ঠাকুর, প্যাট চইলবেক্ ক্যামনে? 
               জগনবাবু তাঁর প্রথামত মাতনের সাথে ক্লাসিক গল্প জুড়ে দিলেন। দেখ্ মাতন, তোর বাবা আমার বাবাকে গুরুর মত শ্রদ্ধা করত। দাদাঠাকুর ছাড়া বলত না। কি মান্যিটাই না করত। তাই ত বাড়িতে বলি, মাতনের মত ছেলে হয় না। তুই ব্যবসা কর মাতন, টাকা আমি দেব। আহা, সকাল থেকে রিক্সা টেনে কি পোষায়? 
       মাতন, বলল আপনি টেকা ক্যানে দিবেন কত্তা। আপনার হাতের লে জল গঢ়ায় নাই, ত হঠাৎ টেকা দিব ক্যানে বইলছেন ?
জগনবাবু মিহি সুরে বলেন, আহা, খামোখা কেন দেব? সড়প ধারে তোর টাঁইড়টা পড়্যে আছে, ওটা তুই আমাকে লিখে দিবি। আমার ইচ্ছা আছে, গাঁ ঘরের ছেলেগুলো নদীধারে খেলতে যায়। তোর ঐ জমিটুকু পেলে আমি ওদের একটা খেলার মাঠ অরে দেব। তোর ও দোকান হবে, ছেলেরাও মাঠ পাবে । কত নিবি ,তুই কাল ভেবে বলিস্। 
এরপর প্রায় প্রতিদিনই জগনবাবু মাতনকে বোঝাতে থাকেন, জমিটা গাঁয়ের স্বার্থে চাইছে। অবশ্য মাতনকে সে ঠকাবে না। এ বাবদ বিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেবে। তাতে ফুটপাতের উপর মাতন দোকান দিতে পারবে। 
মাতন বুঝে গেছে, জগনবাবুর ধূর্তামি। সে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁতন করতে করতে জমিটি দেখতে থাকে, ভাবে কি আছে এই জমিতে, যে জগন মাস্টারের এত লোভ! 
          মাতন রিক্সা নিয়ে প্রতিদিন এলেই জগনবাবু মাতনের সাথে আবডালে শলাপরামর্শ করেন। কিন্তু মাতন কে গলাতে পারেন নি। 
তাই আজ মাতন রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে গেলেই জগনবাবু মাতনের বৌ ক্ষেন্তির শরণাপন্ন হন। ক্ষেন্তিকে বলেন, দেখ ক্ষেন্তি ,মাতনকে বোঝা। তোদের ঐ তাঁইড় টা আমাকে দিয়ে দে। যেটুকু টাকা লাগবে আমি মাতনকে দেব। একটা দোকান করুক। ওর কষ্ট আর দেখতে পারছি না। ওকে ভাইয়ের মতোই দেখি কি না! রিক্সা টেনে টেনে কি চেহারা হয়েছে। এত কষ্ট করবে কেন? ওকে আমি দাড়িয়ে থেকে ফুটপাতে খুঁটি গেড়ে দখল নিয়ে একটা দোকান করে দেব। আর তুইও আমার স্ত্রীর সাথে গিয়ে বসনের কাপড় দোকান থেকে গোটা চার কাপড় কিনে নিস্, টাকা আমি দেব। মানকের মণিহারী দোকান থেকে চুড়ি মালাও কিনে নিস্। তবে সাতদিন সময় দিলাম। তুই মাতনকে রাজী করা। 
                 দুপুর বেলা মাতন ঘরে এলে ক্ষেন্তি কথা কটা বেশ ভালো করে সাজিয়ে গুছিয়ে বলল, -- লুলহুর বাপ্, বডঠাকুর দমে ভাল লোক, কত ভাল ট হামদের বাসে। তুমহি রাজী হয়্যে গেলে, হামরাও টেনকাই যাব। কুনঅ দুঃখু আর নাই থাইকবেক্। সাঁঝের সমুই যখন ফিরব্যে, উনাকে সঙে লিহেই আইসব্যে। আহা! দেবতার মতন মানুষ। তুমার দুঃখু দেখ্যে খিল টাঁইড়টা লিব বইলছ্যে ।উটা ত হামদের পঢ়্যেই আছে। দাও ক্যানে বডঠাকুরকে। গাঁয়ের ছাল্যা গিল্যান খেইলবেক্। মাতন গোঁ মেরে চুপ করে থাকে। 
সন্ধ্যা বেলা একপেট মদ খেয়ে মাতন ঘরে আসে। ঘর থেকে হাসিমুখে ক্ষেন্তি জিজ্ঞাসা করে - বভ ঠাকুর নাই আসে? 
মদের তাড়সে মাতন উগ্রমূর্ত্তি হয়ে ওঠে। তারপর -- এই একশেন । ক্ষেন্তির পিঠে পড়তে থাকে ধূর্তদের থেকে বাঁচার মহৌষধ। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.