রক্তের সম্পর্ক

অঞ্জনা দেব রায়

অলোকবাবু একবছর হল চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে । স্ত্রী জবা দুবছর হল গত হয়েছেন। অলোকবাবুর একমাত্র ছেলে রজত, বউমা রিঙ্কু, ও একমাত্র নাতি রবি এদের নিয়েই সংসার । দু কামরার ফ্ল্যাটে একটা ঘরে অলোকবাবু থাকেন । নাতি টেনবোর্ড পাশ করার পর তার লেখাপড়া ও আলাদা থাকার জন্য অলোকবাবুর ঘরটাকে ফার্নিচার দিয়ে সাজানো হচ্ছে । অলোকবাবুকে না জানিয়ে করার জন্য তিনি মনে খুব কষ্ট পেলেন ।

চারজনে মিলেমিশে বেশ শান্তিতে ভালোই ছিলেন । হঠাৎ কিছুদিন বাদে ছেলে ও বউমা অলোক বাবুকে ডেকে বললেন বাবা রবিতো এখন বড় হয়েছে তাই রবির থাকার জন্য তোমার ঘরটা দিলাম আর তুমি বরং ড্রয়িং রুমের সোফার উপর রাতে শুয়ে পরো কেমন । এইকথা শোনার পর দুঃখ পেলেন কিন্তু কোন কথা না বলে অলোকবাবু চুপ করে থাকেন ।

অলোকবাবু সারাজীবন অল্প মাইনের চাকরি করে ছেলেকে কষ্টকরে মানুষ করেছেন । ছেলের যাতে কোন অসুবিধা না হয় বরাবর সেইদিকে লক্ষ্য রেখেছন । নিজের জন্য কখনো কিছু ভাবেননি । পরদিন ছেলে বউমা অলোকবাবুকে ডেকে আবার বললেন বাবা যদি তোমার আমাদের এই ব্যবস্থায় অসুবিধা ও কষ্ট হয় তাহলে তুমি বৃদ্ধাশ্রমে যেতে পার আমরা তোমার জন্য সব ব্যবস্থা করে দেব । বৃদ্ধাশ্রমের কথা শুনে অলোকবাবুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল আর মনের ভিতর থেকে শান্তি শব্দটি উড়ে গেল। অলোকবাবু চাকরি থেকে অবসরের পর ভেবেছিলেন ছেলে বউ ও নাতিকে নিয়ে সুখে ও আনন্দে থাকবে । কিন্তু সব ভাবনা ওলট পালট হয়ে গেল । তবে অলোকবাবুর নাতি রবি সব কথা শুনতে পেয়ে মা ও বাবাকে বললে দাদুকে এরকম কথা বলবে না । দাদু যেরকম দাদুর ঘরে স্বাধীন ভাবে ছিল সেরকম থাকবে, আমি শুধু দাদুর ঘরের একপাশে টেবিল চেয়ারে বসে পড়ব আর রাতে ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ব । দাদুকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর নাম করবে না, তাহলে কিন্তু তোমরা যখন বুড়ো হবে আর আমি বিয়ে করে তোমাদের বৃদ্ধাআশ্রমে পাঠিয়ে দেব । রবির কথা শুনে রজত ও রিংকু চুপ করে মাথা নিচু করে ঘরে চলে গেল । রবি অলোকবাবুর চোখের জল মুছিয়ে ঘরে নিয়ে গেল। অলোকবাবু ঘরে গিয়ে নাতিকে জড়িয়ে আদর করতে লাগলেন ।

===========