সোনালি দিনের উপাখ্যান ।। পর্ব ৩ ।। দেবব্রত ঘোষ মলয়
0
অক্টোবর ১০, ২০২০
পূর্ব-কথাঃ
পরদিন সকালে গ্রামের মেয়ে ঝিনটির সাথে প্রাচীন বিশালক্ষিতলায় বেড়াতে যায় মনন। সেখানে নির্জন আমবাগানে ঝিনটির সারল্য আর সৌন্দর্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে মনন। জীবনে এই প্রথমবার কান্নাভেজা ঝিনটিকে জড়িয়ে ধরে মনন।
এরপর .....
কাহিনীর অভিমুখ কলকাতায়, মননের নিজের বাড়িতে .....
**************************
তৃতীয় পর্ব
ক্রিং ক্রিং ....
একতলার অফিসঘরে সাবেকি টেলিফোনটা বেজেই চলেছে। মানদা দোতলার বারান্দায় সোফায় বসে নিহাররঞ্জন রায়ের নতুন উপন্যাসটায় ডুবে ছিল। সর্বক্ষণের কাজের লোক পুঁটির মা রান্নাঘর পরিষ্কার করতে করতে বলে ওঠে - ও মাসীমা, মেসোমশাই গেল কোথায়? ফোনটা বাজছে তখন থেকে।
মানদা বিরক্ত মুখে বইটা ভাঁজ করে সামনের সেন্টার টেবিলে রেখে সিঁড়ির দিকে এগোলেন। উকিলবাবু তো অফিসেই থাকে এসময়, ফোনটা ধরছে না কেন। পৃথুলা শরীর নিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে মানদা একতলার অফিস ঘরে এসে ক্রেডেল থেকে রিসিভার তুলে বলে - হ্যালো।
ওপাশ থেকে গম্ভীর গলা ভেসে আসে - আমি কি ব্যারিষ্টার এ.কে.ঘোষের সঙ্গে কথা বলতে পারি?
মানদা কিছু বলার আগেই ঘরে প্রবেশ করেন অখিলবাবু। মানদা রিসিভারটা ওঁর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন - তোমার ফোন। অখিলবাবু রিসিভার কানে অভ্যাসমতই বলেন - কে বলছেন? ওপার থেকে কি কথা হয় আন্দাজ করতে পারেন না মানদা। কিন্তু এরপরই ক্রোধে ফেটে পড়েন অখিলবাবু - তুমি আমাকে ধমকি দিচ্ছ। কান খুলে শুনে রাখো, একটা পয়সাও আমি দেব না তোমায়। তোমার সঙ্গে কোর্টেই দেখা হবে আমার। - সশব্দে নামিয়ে রাখেন টেলিফোন।
মানদা নরম গলায় জিজ্ঞাসা করেন - সেই হারাধন চাটুজ্জে নিশ্চয়।
- তাছাড়া আবার কে। এতবড় সাহস রাস্কেলটার, আমাকে ব্ল্যাকমেল করে।
মানদা চুপ করে থাকে। এ বাড়িতে সে বউ হয় এসেছে সেও প্রায় ছাব্বিশ বছর। এঁরা উকিলের বংশ। মানুষ খুব ভালো হলেও পেশাগত কারণে শত্রুর অভাব হয় না। এ বাড়ির পুরুষরা সে শত্রুতার জের কখনো বাড়িতে আনেন না, সেরেস্তাতেই মিটিয়ে ফেলেন। কিন্তু এবারের ঘটনা অন্যরকম, মানদা যে সে ঘটনা জেনে ফেলেছে সে কথা অখিলবাবু আজও জানেন না।
সে দিনটা ছিল রবিবার। অখিলবাবুর দেশের বাড়ি আমতায়। একসময়ে সেখানে তাঁদের সম্পত্তি ছিল বেশ কিছু। প্রায় সবই ভাগ বাটোয়ারা হয়ে গেছে। অখিলবাবু তাঁর ভাগের সামান্য সম্পত্তি দান করে দিয়েছেন গ্রামের স্কুলে। সেইসব কাগজপত্র সই সাবুদ করতেই তিনি গিয়েছেন আমতা। সঙ্গে গিয়েছে মনন। শেষবারের মত ছেলেকে দেশের বাড়ি দেখাবেন তিনি। বাপ ছেলেকে নিয়ে বাড়ির ড্রাইভার রতন সাতসকালেই রওনা দিয়েছে আমতার উদ্দেশ্যে।
তখন দুপুর তিনটে। ফাঁকা বাড়িতে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর একটু গড়িয়ে নেবেন ভাবছিলেন মানদা, সে সময়ই কলিং বেলের শব্দ।
পুঁটির মা দরজা খুলেই চেঁচিয়ে বলে - মাসীমা একজন দিদিমণি এয়েছেন, তোমাকে খুঁজছে।
মানদা বলেন - ঠিক আছে, ওনাকে ওপরে নিয়ে আয়, আর দরজা বন্ধ করে আসবি।
সিঁড়িতে হালকা পায়ের শব্দ হয়। দোতলায় প্রবেশ করেন এক ভদ্রমহিলা, মধ্যবয়স্কা।
মানদা জিজ্ঞাসু চোখে প্রশ্ন করেন - আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
সে কথার কোন উত্তর না দিয়ে ভদ্রমহিলা হাতের শান্তিনিকেতনী ঝোলা থেকে একটা মিষ্টির বাক্স মানদার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন - এক গ্লাস জল হবে? বাইরে আজ রোদ খুব চড়া, এতটা পথ উজিয়ে এলাম তো।
শশব্যস্ত হয় মানদা বলে ওঠেন - আপনি মিষ্টি এনেছেন কেন? পরিচয় হবে, আগে আপনি বসুন এখানে। মানদা ...
মানদা বহুদিন আছে এ বাড়িতে। একটি ট্রের উপর জলের গ্লাস ও প্লেটে মিষ্টি এনে ভদ্রমহিলার সামনে রাখে। আলতো হাতে একটি মিষ্টি খেয়ে পুরো গ্লাস খালি করে তিনি বলেন - আঃ। এরপর মানদার দিকে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করেন - বিল্টুর বউ তো খুবই সুন্দরী হয়েছে, পড়ন্ত রোদেও সকালের আভা বোঝা যায়
মানদা ভ্রু কুঁচকে বলেন - মাপ করবেন, আপনি কি আমাকে কিছু বললেন? আর বিল্টুই বা কে?
ভদ্রমহিলা এবার সচকিত হয়ে বললেন - নমস্কার। আমার নাম বিন্দুবাসিনী মিত্র। আপনার স্বামী অখিল ছোটবেলায় আমার সহপাঠী ছিল আমার থেকে দু ক্লাস বড় ছিল। ওকে আমরা বিল্টু বলেই ডাকতাম।
এবার মনে পড়ে মানদার। বিয়ের পর সে বার দুয়েক আমতায় গিয়েছে, ওখানে ওদের দেশের বাড়িতে সবাই অখিলকে বিল্টু বলত। তবে সে অনেকদিন আগের কথা। ও ভুলেই গিয়েছিল সে কথা।
ভদ্রমহিলা আবার শুরু করেন - বিল্টুদা একসময় আমাদের বাড়ি এসে আমাকে পড়াতে শুরু করে। আসলে আমার বাবা বিল্টুদাকে খুব ভালবাসত। ও গ্রামের সব থেকে মেধাবী ছাত্র ছিল। তাই বাবাই বিল্টুকে বলে আমাকে পড়াতে।
ভদ্রমহিলা একটু থামতেই মানদা ভাল করে তাকিয়ে দেখেন তাঁকে। পরমাসুন্দরী না হলেও একটা আলগা চটক ও লালিত্ব আছে চেহারায়। পরনে পরিপাটি করে পড়া ঢাকাই শাড়ি। দু হাতেই হালকা গহনা।
বিন্দুবাসিনী আবার শুরু করেন - আমার হাতে সময় খুব কম। আপনাকে পুরো ঘটনা না বলতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাব না। যাই হোক, বিল্টুদা আমাকে পড়াতে শুরু করে। এক বছরের মাথায় আমার রেজাল্ট খুবই ভালো হয়। বাবা বিল্টুদাকে একটি ঘড়ি উপহার দিয়ে বলেন - আমি জানতাম বাবা তুমি আমার মেয়ের দায়িত্ব নিলে ও খুব ভালো রেজাল্ট করবে। আমি চাই তুমি ভবিষ্যতেও ওর দায়িত্ব নাও এভাবেই।
বাবার এ কথার অর্থ সেদিন আমি বা বিল্টুদা কেউই বুঝে উঠতে পারি নি। তখন আমি ক্লাস টেন আর বিল্টুদা বি কম এর সেকেন্ড ইয়ার। বাবার কথার উত্তরে বিল্টুদা বলে - আপনি ভাববেন না মেসোমশাই। বিন্দুকে আমি এ বছরও পড়াবো।
এবার মানদা জানতে চান - আচ্ছা ভাই, আপনার বাবার নাম কি বলুন তো? উনি কি করতেন?
বিন্দুবাসিনী লজ্জিত স্বরে বলে ওঠেন - এই দেখুন, আমি এত কথা বললাম, বাবার পরিচয়টাই দেওয়া হয় নি। আমার বাবা আমাদের গ্রামের প্রভাষ তীর্থ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে উনি বিল্টুদাকে খুবই স্নেহ করতেন। আমার মা তিন দিনের জ্বরে মারা গিয়েছিলেন তখন আমি ক্লাস সেভেনে। বাবাই আমাকে মা হয়ে বড় করছিলেন।
একটু থেমে আবার শুরু করেন বিন্দুবাসিনী - এরপর আরও দু বছর কেটে যায়। আমি খুব ভালো রেজাল্ট করে কলেজে ভর্তি হয়েছি। আর বিল্টুদা ওকালতি পড়তে কলকাতার পথে রওনা দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সময়েই হঠাৎ বাবার ম্যাসিভ হার্ট এটাক হয় এবং কোন সময় না দিয়েই আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নেন আমার বাবা। আমি অনাথ হয়ে পড়ি। কিন্তু গ্রামে জ্ঞাতি ও প্রতিবেশীরা আমার পাশে এসে দাঁড়ায় এই দুঃসময়ে। সবাই জানত আমার বাবা চেয়েছিলেন বিল্টুদা আমার দায়িত্ব নিক। কিন্তু আমি চাইলেও বিল্টুদা আমাকে খুবই স্নেহ করত, কিন্তু সে স্নেহ দাদার দৃষ্টিতে, সে আমাকে বোন ছাড়া কিছুই ভাবত না। এরপর কলকাতায় বিল্টুদার অনেক বন্ধু বান্ধব হয়, শুনেছি সে সময়েই আপনাদের পরিবারের সঙ্গে ওর আলাপ হয় এবং ধীরে ধীরে আপনার
সঙ্গে ওর সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর একদিন আপনাদের ধুমধাম করে বিয়ে হয়।
মানদা অন্যমনস্ক হয়ে যান। সে কতদিন আগের কথা । হোস্টেলে থেকে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ত অখিল। ওকালতি পাশ করে মানদার কাকা শুভঙ্কর বসুর জুনিয়র হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করে অখিল। এরপর তাদের বাড়ি যাওয়া আসা, আলাপ মানদার সঙ্গে। সেই আলাপ থেকে ঘনিষ্ঠতা, দু বাড়ির সম্মতিতে বিয়ে। বিয়ের পর এই দীর্ঘ সময় অখিলের কাছে কোনদিনই সে একটি কথাও শোনেনি বিন্দুবাসিনীর বিষয়ে।
এবার বলে ওঠেন মানদা - বুঝলাম। কিন্তু আপনি কি এই কথা বলতেই আমাদের বাড়ি এলেন?
টেবিল থেকে ঝোলাটি কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন বিন্দুবাসিনী। বললেন - আমাকে এবার উঠতে হবে ভাই। যে কথা বলতে আসা সেটা বলি এবার। আমি বিয়ে করিনি। গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা থেকে এখন প্রধান শিক্ষিকা। আমার জীবন খুবই সাদামাটা, তাই চাহিদাও কম। নিছক ঘর গুছাতে গিয়ে এত বছর পর আমি আবিষ্কার করি আমাদের বাড়ি ও জমির দলিলপত্র। এবং দেখি আমার স্বর বাবা সমস্ত সম্পত্তি দু ভাগে ভাগ করে উইল করে গেছেন। এক ভাগ আমার নামে, আর ওপর অর্ধেক তাঁর প্রিয় ছাত্র বিল্টুদার নামে।
চোয়াল শক্ত হয় মানদার। বাইরে প্রকাশ করেন না তাঁর উত্তেজনা। শান্ত স্বরে বলেন - আপনি দু মুঠো খেয়ে যান এখানে।
বিন্দুবাসিনী মৃদু হেসে বলেন - সে আরেকদিন হবে ভাই। আজ আমার তাড়া আছে। একটা অনুরোধ করি, একদিন বিল্টুদা আর আপনি আমাদের গ্রামে আসুন আর দয়া করে গ্রহণ করুন বাবার দেওয়া অর্ধেক সম্পত্তি। এ কাজ আমি করে যেতে না পারলে বাবা যেখানেই থাকুন, শান্তি পাবেন না।
নমস্কার করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান বিন্দুবাসিনী।
ক্রমশঃ
Apply for SBI's Simply Click Credit Card and Earn upto 10x SBI Rewards on all online purchases and also on all offline purchases! You can get 5%-20% instant discount on Flipkart, Amazon etc. online sites in different times. You can purchase things with no cost EMI using this card. It takes only 5 mins to apply. 0 |
SAMSUNG-এর নিজস্ব সাইট থেকে SAMSUNG-এর মোবাইল কিনুন। পাবেন 50% পর্যন্ত ছাড়। সঙ্গে ব্যাঙ্কের ছাড়। নো কস্ট ইএমআই। বিশদ জানতে আগ্রহীরা এখানে ক্লিক করুন SAMSUNG-এর মোবাইল ছাড়াও হেডফোন, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি সব কিছুতে পাবেন অতিরিক্ত ছাড়। |
Get Medicine delivered to your doorstep! Also save 30% Off on First Medicine Order. 18% Off (up to Rs 2,000) + 12% cashback (up to Rs 200) Code - CK30 |
Buy Latest Fashion at 50-90% Off only on Ajio!CLICK HERE to Visit Ajio Store Now!
|
Enjoy Upto 50% Off on Sports Merchandise and Accessories reebok. |
Amazing Discounts on Addidas Website! Get Upto 50% Off. Click here To Shop Now! |