উপন্যাসিকা ।। হিমযুগ ।। সুূদীপ ঘোষাল
হিমযুগ
সুূদীপ ঘোষাল
হিমযুগ বা মৃত্যুপুরির
নাম শুনেছি এতদিন কিন্তু আমি যে মৃত্যুপুরীতে যেতে পারবো এ কথা ভাবতে পারিনি কখনো।
ছোটবেলায় মা ভয়
দেখাতেন বাড়ি থেকে বেরোবি না বাইরে। বেরোলেই
তোকে ধরবে আর আঘাত করে মেরে দেবে।
মায়ের কথা কোনদিন
মিথ্যে হয় না না তাই না? আজ দেখি বাইরে বেরোনো কত ভয়, বাইরে বেরোলেই মৃত্যুভয় ।
এক কালো থাবা নিয়ে বসে আছে বিরাট দৈত্য তার নাম, করোনা।
মৃত্যুভয় আমার শুধু নয় পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী ঘরের মধ্যে সেঁদিয়ে
গেছে কোন এক ভয়ে। এক দৈত্যের ভয়ে।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি
দেশ লকডাউন পালন করছে। লকডাউন মানে ঘরে বসে থাকা।। ঘরে বসে থাকো, বাইরে বেরোবে না বাইরে
বেরোলেই মৃত্যুর করাল থাবা বা মহা কাল তোমাকে
গ্রাস করবে।
কিছু মানুষ সাহস
দেখাচ্ছে তারা বাইরে বেরিয়ে কেউ চা খেতে যাচ্ছে কেউ আড্ডা মারতে যাচ্ছে কিন্তু তারা
মূর্খ তারা ভেবেও দেখছে না তাদের জন্য তার পরিবার টাও ধ্বংস হবে।
বাইরে ঘুরে ঘুরে
বেড়াচ্ছে তারপর রোগ নিয়ে ধুঁকছে বাড়িতে হাসপাতলে গিয়ে দেখছে করোনা। টেস্ট করলে
করোনা পজেটিভ তখন বাড়ির সমস্ত সদস্যকে কোয়ারান্টিনে রাখা হচ্ছে কে যে কখন মরবে তার
কোন গ্যারান্টি নেই।
কেমন রূপকথার মতো
শোনাচ্ছে তাইনা আমাদের পরের যুগে যে যুগ আসবে তখন কার ছেলেমেয়েরা এইরূপকথা শুনবে আর
ভাববে কি সুন্দর লিখে গেছে লেখক। রূপকথা ভুলবার নয়। এ রূপকথা যে সত্যিই তারা বিশ্বাসই
করতে চাইবে না।
আমরা যেমন বলি তেপান্তরের
মাঠ ছিল না তারপর রূপকথাও ছিল না। সব বানানো গল্প হয়তো সেগুলো ঠিক ছিল, হয়তো সত্যি
সেগুলো, আমরা তাদের মিথ্যা বলি কিন্তু এখন যেগুলো ঘটনা ঘটছে সেগুলো তো একদম রূপকথার
মতোই তাই বিশ্বাস না করে উপায় নেই।
জানালা দিয়ে দেখছি
কিছু লোক ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে কত কায়দায় কত আর্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা ঘরে যারা
আছে তাদের মূর্খ প্রতিপন্ন করছে। তাদের নামে কুৎসা রটাচ্ছে আর দেখা যাচ্ছে কিছুদিন
পরে তারা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চলে যাচ্ছে। তোমাকে ভয় নেই করোনা তাদের, যারা বাইরে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আইন অমান্য
করে। আর তারাই রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
তবে হ্যাঁ বাইরে
যেতে হবে বৈকি। খাবারের জোগাড় করতে হবে তার জন্য অস্ত্র চাই তার জন্য বর্মা পরতে হবে। বর্মা কি? মুখে মাক্স নিতে হবে N95, তারপর
হাতে গ্লাভস নিতে হবে পায়ে জুতো পরতে হবে সারা অঙ্গ ঢেকে রাখতে হবে তবে গিয়ে বাইরে
বেরোতে হবে বাড়ি থেকে আসার পর সেসব সম্পূর্ণ চেঞ্জ করে তাদের সাবান দিয়ে ধুয়ে বালতিতে
ডুবিয়ে রাখতে হবে তারপর নতুন কাপড় পরিধান করে এমনকি সবজিগুলো কেউ ধুয়ে নিতে পারলে
ভালো হয়।
কিন্তু এত কিছু তো
করা যায় না মানুষ তো অলসের জাতি তাই বলে থাক অত কিছু হবেনা আর ওইখানেই তো গন্ডগোল
ওইখান থেকেই ছিদ্রপথে করোনাভাইরাস হাসতে হাসতে ঢুকে যায় আর ঢুকে গিয়ে ধ্বংস করে পৃথিবী।
অংশুমান আর মিলন
বাবু জানলায় দুটো বাড়ি পাশাপাশি থাকে তারা জানলা দিয়ে কথাবার্তা বলছে মিলন বাবু
তার বক্তব্য রাখছেন যে কিছু লোক আছে যারা বেপরোয়া হয়ে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের
রোগের ভয় নেই কিন্তু অজান্তেই তাদের অজান্তেই বের হতো তাদের শরীরে প্রবেশ করেছে। মিলন
বাবু জানলা দিয়ে বলছেন, করোনা ভাইরাসের জেরে বিশ্বদুুয়োর বন্ধ। লকডাউন শুরু হল বিশ্বজুড়ে
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে। দোকান, বাজার, হাট স্কুল, কলেজ সব বন্ধ।তবু মিলনবাবু দোকানে
গেলেন একবার। তিনি বলেন, আমার কিছু হবে না',।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ভাবনাটাই করোনাকে, বিশ্ব মহামারীতে, পরিণত
করার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং নিয়ে বারবার বলা সত্ত্বেও এ দেশে
বাজার-ঘাটে সেই দৃশ্য খুব কমই দেখা যাচ্ছে। অথচ দেশে ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার একটি ঘটনা রীতিমতো আশঙ্কার সৃষ্টি করতে পারে। লকডাউন চলাকালীন
মাত্র একবারের জন্য দোকানে গিয়েই করোনা আক্রান্ত হলেন এক ব্যক্তি। অথচ তিনি মাস্ক,
গ্লাভস সমস্ত কিছুই পরে গিয়েছিলেন।
মিলনবাবু জানিয়েছেন, তিনি লকডাউন সম্পূর্ণই মেনে চলছিলেন।
কিন্তু ঘরে খাবার শেষ হতেই তাঁকে যেতে হয়েছিল দোকানে। তাও একটি দোকানেই গিয়েছিলেন তিনি।
সেদিন পর থেকেই শরীর খারাপ হতে থাকে। জ্বর, শরীরে অসহ্য ব্যথা। এরপরই প্রশাসনের সঙ্গে
যোগাযোগ করলে তাঁর করোনা টেস্ট হয়। সেখানেই তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
মার্কিন এক যুবককে
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া হসপিটালে ভরতি করা হয়েছে। ৩১ বছর বয়সী সেই যুবকের নাম বেনজি
হা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাস ছড়ায়। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির
সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখলেও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট অন্য
কারও নাক, মুখ, চোখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই ভাল মাস্ক, চশমা পরাটা আবশ্যক
বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বেনজির ক্ষেত্রেও সেভাবেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে বেশি।
এই কোভিদ নাইনটিন
বা করোনা রোগ আসার আগে অংশ মানে জীবন ছিল সহজ সরল তারা বাইরে ঘুরে বেড়াতো নিজের কাজ
করতো টিউশনি পড়াতে কোনো বাধা ছিলনা কিন্তু করোনাভাইরাস আসার আগে আসার পরে আর উন্মুক্ত
পরিবেশে ঘোরাফেরা করা যায়না তার আগের ঘটনা এখন কিছুটা আমরা বর্ণনা করছি। জীবন এক আশ্চর্য
অনুভূতি। মহাপুরুষরা বলে গেছেন পৃথিবী একটা নাটকের মঞ্চ। নাটকে অভিনয় শেষে সবাইকে
প্রস্থানের পথে ফিরতে হয়। মানুষ মরে গলে কোথায় যায়? মরে যাওয়ার পরে তার সেই অনুভূতি
কি কাজ করে? লকডাউনের আগে অংশুমানের মনে হত, স্বজনের কান্না-কথাবার্তা-ভালােবাসা-ঘৃণা
কিছুই কি বুঝতে পারে? সজীব প্রশ্ন। উত্তর জানা নেই। আমার মনে হয় যখন আমরা ঘুমােই তখন
কি কোনাে পার্থিব বিষয় আমাদের মনে থাকে? কে বাবা, কে মা, কোথায় কে মনে আঘাত দিয়েছে
কিংবা আমার প্রেমিক আমার প্রেমিকা কোথায় কি করছে কিছুই মনে থাকে না। এক নিরুত্তর জীবন্ত
প্রাণী শুয়ে থাকে তার সমস্ত চেতনা জলাঞ্জলি দিয়ে। আশ্চর্য মানবদেহ, তার চাহিদা আর
তার রসায়ন। কোন রসায়নবিদ রচনা করেছেন এই রক্তমাংসের সজীব দেহ। মূর্তিমান অংশুমান
রায় এখন তিপান্ন বছরে পা দিয়েছে। সে বসে বসে এইসব ভাবছে। এখন নন্দনপাড়ে বাস। বর্ধমান
জেলার কাটোয়া শহরের একটা বস্তি নন্দনপাড়। নন্দনপাড়ে গরিব লােকের বাস। আর তার চারধারে
বেশ কয়েক বর্গ কিলােমিটার জুড়ে গড়ে উঠেছে শহর। নন্দনপুকুর বলে একটি পুকুর আছে। তার
পাড়ে গড়ে উঠেছে এই বসতি। অংশুমান নন্দনপাড়ের কাছেই দু-কাঠা জমি কিনে তার শখের বাড়িখানা
তৈরি করেছে। মােটামুটি দু-খানা ঘর, একটা ডাইনিং আর বাথরুম। অংশুমানের একটি ছেলে ক্লাস
ইলেভেনে পড়ে আর তার স্ত্রী দেবী সারাদিন ব্যস্ত থাকে সংসারের কাজে। অংশুমান একটা উচ্চ
বিদ্যালয়ে পার্শ্বশিক্ষকের কাজ করে। বেতন সামান্য। তবু সংসার চলে যায় আনন্দে। আজকে
অনেক পরিশ্রমের পরে অংশুমান। নন্দনপাড়ে এসে বাড়ি করে শান্তিতে বাস করছে। নন্দনপাড়ের
বাসিন্দারা। সবাই তাকে খুব ভক্তি-শ্রদ্ধা করে। কিন্তু কিছু লােক থাকে তারা চিরকাল নিজেদের
একইরকমভাবে চালাতে চায়। মানুষের প্রতি ভালােবাসার, প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করতে চায়
না। নিজেকে গুটিয নন্দনপাড়ের এইরক আসর এই গথম। এখনকার লােক দু-চারটে মূর্তি এনে গুজা
করে শাস্তি। দিন আনা দিন খাওয় লাকে বাস এখানে। এখানে সাহিত্যের অনুপ্রবেশ মন ব্যাপার। এ একদিন ছিল, যখন এই নন্দনপাড়ের নামে
লোকে ভয় পেত। এই পাড়া মানেই কিছু অসামাজিক
প্রকৃৃতির লােকের বাস। সবাই এই মনে করতেন।
সত্যি যা রটে তা কিছুটা বটে। তখন বেশ কজন ছিল, যারা চুরি-ডাকাতি করত। নেশা করে নিজেদের
মধ্যে মারামারি করত। অপরের বউকে নিয়ে টানাটানি
করত। কিন্তু চিরকাল একভাবে চলে না। অন্যায়-অত্যাচারের মাত্রা যখন বেড়ে যায় তখন মানুষ
তার প্রতিকার করে। এক নতুন পথের চিন্তায় থাকে।
এ যেন মানুষের সহজাত চিন্তা। পাপী লােক দু-দিন আর গুণবান যুগে যুগে অবস্থান করে মানুষের
অন্তরে। অতীতের স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত অংশুমানের মন।। | অংশুমান ভাবে, যখন সে এল নন্দন
পারে, তখন তার বাড়িঘর হয় নি। ফাঁকা মাঠে
এসে বাড়ি করে ফেলল অংশুমান। চিতাভাবনা মা
করে, বাড়ি ভাড়া করে থাকত গ্রথমে। তারপর ভাবনা করল।কম দাম দেখে অংশুমান একটা ঘর তৈরি
করল। বাঁশের বেড়া দিল চারিদিকে। ন ছেলে পাঁচ বছরের। স্ত্রী দেবী খুব সাহসী মহিলা।
তার সাহস না থাকল তো অংশুমানের এখানে এসে থাকা হত না। মানুষ মরে যাওয়ার পরে পেট ভরে ভােজনের রীতি আমাদের
সমাজে। এই খাওয়ার পর্ব হয়ে আসছে পুরোনো কাল
ধরে। ক্ষমতা থাক বা না থাক এই খাওয়ার রীতি।
অংশুমান ভাবছে পাঁচজন মানুষকে খাওয়ালেও
শান্তি।বেঁচে থাকতে যে মা ছেলের কষ্টে চোখের জল ফেলতেন, মমতা বলতে কিছু থাকে তাহলে চোখের আড়ালে থেকেও ছেলের
কষ্ট সম্বরণ করতে পারবেন না। ভারতবর্ষে অনেক ছেলে আছে যা মায়ের ঠিকমতাে দাহকরতে, শ্মশানে
আনার ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খেয়ে যায়। অংশুমান ভাবে, তবুসমাজে থাকতে গেলে সমাজের
নিয়ম মানতেই হয়। চাকরি-বাকরি পেলেও শুধু বসে থেকে মাথার চুল ছিড়লে হবে না। ব্যবসা
করতে হবে, ভগবান যে দু-হাত দিয়েছেন, কর্মের মাধ্যমে সেই দুই হাতকে কাজে লাগাতে হবে।
মূলধন নেই বলেই তাে অংশুমান ভাবে, টিউশনি আরও বাড়াতে হবে। সকালবেলা সাইকেল নিয়ে চা-মুড়ি
খেয়ে বেরােয়। অংশুমান, সাতটা থেকে সাড়ে আটটা একটা তারপর সাড়ে আটটা থেকে দশটা অবধি
আর একটা দল ছাত্র পড়ায় অংশুমান। আবার রাত্রিতে দুটো ব্যাচ। এইভাবেই অংশুমানের সময়
কেটে যায় কর্মের মাধ্যমে। বাড়ি ফেরার পথে সবজি-বাজার, মুদি-বাজার সব করে নিয়ে আসে।।
অংশুমান কাটোয়ার বাড়িতে বসেছিল। আজ রবিবার, টিউশনি নেই। হঠাৎ গ্রামের বাড়ি পুরুলে
থেকে ফোন এল মায়ের, "অংশু, একবার বাড়িতে আসতে পারবি? আমার ওযুধ ফুরিয়ে গেছে,
সঙ্গে নিয়ে আসবি।" অংশুমান। ফোনে বলল, "আমি তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে তােমার
কাছে যাচ্ছি।" স্ত্রী দেবীকে বলল, "পুরুলে থেকে একবার ঘুরে আসি। এখানে আজ
ভাত খাব না। মায়ের কাছেই খাব।" এই বালে অংশুমান সাইকেল নিয়ে ওষুধের দেকানে ওযুধ
আর তার সঙ্গে কিছু ফল-মূল, মিষ্টি নিয়ে পুরুলে মা-র কাছে গেল। অংশুমানরা চার ভাই,
দুই বােন। দুই বােনের বিয়ে হয়ে গেছে। তারভাই এখন পৃথক হয়েছে। যে যার নিজের সংসার
নিয়ে ব্যস্ত। বাবা নেই। মা যেখানে থাকতে ইচ্ছা করেন সেখানেই থাকেন। চার ছেলে চার জায়গায়
থাকে। বাবার চাকরি সূত্রে মাকে যেতে হল হাওড়া জেলার লিলুয়া শহরের পটুয়াপাড়ায় মা
তিনভাইকে নিয়ে বাবার কাছে চলে এলেন। বড়দা অংশুমানের কাকাবাবুর কাছে থেকে গ্রামে পড়াশোনা
করে। অংশুমান ভাবে, তখন তার বয়স মাত্র সাত বছর। গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে এতদিন ইলেকট্রিক আলাে দেখেনি অংশুমান। সন্ধ্যাবেলায়
তার বাবা বাবা সুইচ অন করে দিয়েছেন। আলােতে
চোখ বন্ধ হয়ে এল।কোথা থেকে আলাে আসছে অংশুমান
বা তার ভাইরা বুতে পারল না। বাবা দেখিয়ে দিলেন আলাের উৎস। উপরে বাতি ঝুলে রয়েছে।
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। অংশুর এখনও মনে আছে। তারপর সকাল বেলা বাবা প্রাইমারি স্কুলে
নিয়ে গেলেন অংশুমানদের। অংশুমানের ছোটভাই তখন মাত্র দুই বছরের ছেলে। অংশুমান এবং তার
মেজদা মাত্র তিন বছরের তফাত। দু-জনে মিলে স্কুলে ভর্তি হতে গেল। দাদা তৃতীয় শ্রেণিতে
ভর্তি হল কিন্তু অংশুমান অঙ্ক একটু ভূল করায় একেবারে নার্সারি এসে ভর্তি হল। গ্রামের
স্কুলে ক্লাস ওয়ান-এ ভর্তি হলেও এখানে নার্সারিতে ভর্তি হল। তখন থেকেই ভালাে করে পড়াশােনা
করার জেদ মাথায় জাকিয়ে বসল। তারপর থেকে সে প্রত্যেকবছর ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার
করে এসেছে। এসব কথা তার মনে আছে। অংশুমানের বন্ধু ছিল অশ্বিনী, মােহিনী, হার, গৌতম,
গােরা, শঙ্কর প্রভৃতি বালকেরা। ধীরে ধীরে অংশুমানের পরিবার লিলুয়া শহরের পটুয়াপাড়ায়
বেশ সুন্দরভাবে সবার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। অংশুমান ছােটবেলায় ক্রিকেট খেলতে খুব ভালােবাসত।
ছােট ছােট বন্ধুদের নিয়ে পাড়ায় একটা ভালাে ক্রিকেট দল গঠন করেছিল, ক্যাপ্টেন ছিল
সে নিজেই। একটা শুকিয়ে যাওয়া পুকুরের ভিতরে সবাই মিলে কোদাল, কুড়ি, ঝাটা নিয়ে শীতকালে
ক্রিকেট খেলার জন্য "পিচ তৈরি করা শুরু করত। সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল সবার সঙ্গে
অংশুমানের। মাঝে মাঝে ক্রিকেট ম্যাচও খেলা হত। বন্ধুরা সবাই মিলে মাঘ মাসে সরস্বতী
পূজার জন্য চাদা তােলা শুরু করল। নিজেরাই বাঁশ পুঁতে নিজেদের মায়েদের, দিদিদের শাড়ি
এনে সুন্দরভাবে প্যান্ডেল তৈরি করে ফেলল। এখন ঠাকুর আনার পালা। একটা রিকশাভ্যান ভাড়া
করে সামনের পটুয়াপাড়া থেকে মূর্তি আনা হল। মূর্তি বসানাে হল বেদিতে। সারারাত জেগে
প্যান্ডেলের কাজ করা হল। অংশুমান দেখেছে বড় বড় পুজো প্যান্ডেলে সারারাত জেগে প্যান্ডেল
তৈরি হয়। তাই ওরাও সারারাত জেগে প্যান্ডেল তৈরি করবে। কিন্তু রাত যে অনেক বড়। প্যান্ডেল
তৈরি হওয়ার পরে অফুরন্ত সময়। এখন কি করবে? ওরা भান করল ডিম-ভাত খাওয়া হবে এখানে। সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু জোগাড় করে ওয়া-পাওয়ার
জোগাড় শুরু হয়ে গেল। খেতে বসার সময়ে অংশুমানের মনে পড়ল, সরস্বতী পুজোর আগের দিন
'বারের উপােস না করলেও কোনাে আঁশ জাতীয় খাবার খেতে নেই। পরে কাউকে কিছু না বলে ডিম-ভাত নিয়ে মাকে দিল। আর কোনাে ছেলের কথাটা মনে নেই। কষ্ট দিতে
মন চাইল না অংশুমানের। ডিম-ভাত অংশুমান খেল।ঘড়িতে দেখল এগারােটা বাজে। রাতের বেলা
প্যান্ডেলে সারারাত কাটানাে মুখের কথা নয়।
কিন্তু বন্ধুরা যখন এসবে মাতে তখন কোনাে বাধাই বাধা নয়। সব সমস্যা যার নতে যায়। বন্ধুত্বের
শক্তি এতটাই শক্তিশালী যে প্রত্যেক মানুষই তার জীবন মাধ্যমে এই তত্ত্ব বুঝে থাকেন।
মশার কামড়েও যেন আনন্দের সুর। দাগ কাটে না বালক অংশুমানের মনে। পরের দিন সকালবেলা
সবাই স্নান করে পুজো মণ্ডপে হাজির।ফল কাটা সব হয়ে গেছে। পুরােহিত এসে গেছেন। পুষ্পগুলি
দিয়ে । পুরােহিতের সঙ্গে সবাই একসুরে বলছে, ভদ্রকালী নমঃ নিতং সরসত নমঃ নমঃ"—ভুল
ইত্যাদি মন্ত্র। ঢাকের বাজনার সাথে সকলের নাচ হল। প্রসাদ বিতরণের পর মণ্ডপের সামনে একটা বেড়ার আড়াল দেওয়া
হল। তারপ স্কুল যাওয়ার পালা। স্কুলে গিয়ে প্রসাদ খেয়ে তারপর বাড়ি ফেরা। আবার পরের
দিন সকালে দধিকর্মার পূজা। পূজাশেষে পুষ্পাঞ্জলি। রাত্রিতে ঠাকুর বিসর্জন। ঠাকুর থাকবে
কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন ঢাকের বােলে তালে তালে সবাই নাচতে নাচতে গিয়ে হারুদের
পুকুরে ঠাকুর বিসর্জন দিয়ে এল। এইভাবে ভালাে-মন্দে সুখে-দুঃখে অংশুমানের জীবন কাটছিল।
ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্লাসও বাড়ছে। ক্লাস সেভেনে উঠে টি.আরজি.আর খেমকা
উচ্চবিদ্যালয়ে সিক্সে প্রথম স্থান অধিকারীর জন্য অংশুমান এক বই' পুরস্কার পেয়েছিল।
বাড়িতে এসে বাবা-মাকে দেখিয়ে সে কি আনন্দ তার। এখনও সব কথা মনে আছে। অংশুমান বন্ধুদের
সাথে রেইনের পাশের রাস্তা ধরে স্কুলে যেত। কোনােদিন স্কুল কামাই ত না। তার জন্য শিক্ষক
মশাইরা তাকে খুব ভালােবাসতেন।
দুই
সকলের জীবন তো সমানতালে
চলে না। ছন্দপতন ঘটে যায় নিয়তি আসার মতাে। কে যে আড়ালে থেকে সুতাে ধরে পুতুলের নৃত্যে, নাচায়, তা একমাত্র জগাই ক্ষ্যাপা' জানে। অংশুমানের
কাকা যিনি গ্রামের বাড়িতে থাকতেন, তিনি মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে মরে গেলেন। তড়িৎ, আলাককাকা,
বাবলুকাকা, , বুলুকাকা, দিলীপদা, অমরকাকা, টুলাদা, বুলাদা সবার নাম মুখে মুখে হেমন্তবাবু
অকলে চলে যাওয়ার দূঃখ।দিলীপদা তুলে নিলেন সংসারের সমস্ত দায়িত্ব। আর যে পথিক গােপনে
গােপনে নীরবে সংসারের দায়িত্ব পান করে গেছেন তিনি আর কেউ নন, অংশুমানের মেজদা। তার
নাম রিলিফ। সকলের, যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেওয়ার
হাত আছে। অংশুমান স্বীকার করে মনের গােপনে নীরবে হাসিমুখে। যাই হােক সেবার ক্লাস সেভেনে
দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে অংশু। গ্রামের
বাড়ি পুরুলেতে সদলবলে পুনরাগমন। অংশুমানের বাবা জমি-জায়গা দেখাশোনা করেন আর লিলুয়া
থেকে দুই দাদা সুবিধা-অসুবিধায় বাবাকে সাহায্য করেন।
আংশুমান এবার গ্রাম
থেকে চার মাইল দূরে অবস্থিত একটা স্কুলে, বিল্বেশ্বর
উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে তার বাবার সাথে স্কুলে গেল পায়ে হেটে। তখনকার দিনে পাকা
পথ ছিল না। জমির আলরাস্তা ধরে স্কুলে গেল অশুমান। পায়ে ব্যথা ছিল। ধানের শিষে পা কেটে
গিয়েছিল অংশমানের। স্কুলে একটা পরীক্ষা নেওয়া হল। প্রধান শিক্ষক মহাশয় খাতা দেখে
বললেন, ভর্তি পরীক্ষায় অংশুমান সফল। আমরা ওকে ভর্তি নেব। ভর্তি হয়ে গেলাস এইটে। এবার
অন্য এক জীবন। শহর থেকে এসে গ্রামের পরিবেশে খাপ খাওয়াতে হল এবার।পরের দিন থেকেই স্কুলে
যাওয়া শুর করল অংশু। আল রাস্তা ধরে কাবে কােনাে ব্যাগ নিয়ে বন্ধুদের সাথে হাঁটতে
হাঁটতে স্কুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নতুন। মাঝে একটা কদর আছে। শীতকালে হাঁটু জল। কিন্তু
হলে সর না হলে পার হওয়া যাবে না। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন শ্রী অম্বুজাক্ষ
দত্ত মহাশয়। ইংরাজি স্যার ছিলেন শ্রী দিলীপ উট্টোপাধ্যায়। কিছুদিনের মধ্যেই অংশুমানের
বন্ধু জুটে গেল অনেক। অমল, রবীন্দ্রনাথ, বিনয়, টাদ, বিশ্বরূপ, মিল, অধীর, পিনু, শ্যামল
ও আরও অনেক ৭। সবার সঙ্গে মেশার এক সহজাত স্বভাব অংশুমানের ছিল চিরদিন। একদিন অমল বলল-সবাই
আমরা একসাথে দুর্গাপুর শহরে বেড়াতে যাব।" অংশুমান বলল-"তাহলে কথাটা প্রথমে
আমাদের ভূগোল সার, মহিম বাবু কে বলি।" ক্লাসে মহিম কুমার সাধু মহাশয় পড়াতে এলে
অংশুমান। বলল-"স্যার, দুর্গাপুর শিল্পনগরী। যদি আপনি নিয়ে যান, তাহলে ভালাে হয়।" মহিমবাবু নিয়ে
গিয়েছিলেন দুর্গাপুর। সারাদিন ঘোরার পর তারা রাত্রিবেলায় ফিরেছিলাম নদীর ধারে। তখন।
বর্যাকাল। অজয় নদীতে প্রবল জলের ঢেউ। রাত্রি মাঝিরা ওপারে ঘুমাচ্ছে। তাহলে নৌকা আনবে
কে? মহিম বাবু বলামাত্রই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বিখেশ্বর গ্রামের তিনটি সাহসী ছেলে।
ভরা নদীর বুকে অতি সহজেই সাঁতার কেটে চলল তিনটি বালক। অংশগুরা পাড় থেকে চিৎকার করে
বলছে, "তােরা। সবাই নিরাপদে আছিস তার?" উত্তর আসছে মাঝের নদী থেকে নেই। আমরা
ঠিক আছি।" এইভাবে সাড়া দিতে দিতে ওরা ওপ গেল। তারপর নিজেরাই দড়ি খুলে নৌকা নিয়ে
আসতে শুরু করল। নৌকা। এপারে এলে অংশুমান জিজ্ঞাসা করল-"কি রে, মাঝিদের ডাকলি ।ওরা
উত্তর দিল—"সারাদিন খাটুনির পর ওরা একটু নিদ্রামগ্ন, কি করে, কোন লজ্জায় ওদের
ঘুম ভাঙাই বল। ওরা আমাদের চেনে। আমরা ওদের ঘরের লােক।"অংশুমান চিন্তা করল, মানুষকে
কতটা ভালােবাসে এরা, তারই প্রমাণ এই বাক্য। আবার নতুন করে মানুষকে ভালােবাসতে ইচ্ছে
করল অংশুমানের। দশজন করে একটি নৌকায় মােট পাঁচবারে সমস্ত ছাত্রবৃন্দ নিরাপদে সেই রাত্রে
নদীর এপারে চলে এল, ওই তিনজনের অসীম সাহসের ফলে। স্কুলে অংশুমানেরা সেই রাত্রি বেঞ্চিতে
শুয়ে কাটালাে। পরদিন ছিল রবিবার। সকালে উঠেই হাঁটা রাস্তা ধরে চলে এল একেবারে নিজের
বাড়ি পুরুলে'-তে। গ্রামের নাম 'পুরুলিয়া'। কেতুগ্রাম থানায় অবস্থিত। সবাই ছােট করে
গ্রামটিকে 'পুরুলে' বলেই চেনে। অংশুমানের স্বপ্নভূমি এই পুরুলে গ্রাম। -অংশুমান জানালার
ধারে বসে ভাবছে গ্রামের কথা। পুরুলেতে পূজা বাড়ি আছে। এই বাড়িটি মােটামুটি দুইশত
বছরের পুরােনাে বাড়ি। এখন ভগ্নস্তুপে পরিণত হয়েছে। একটি হাইস্কুল আছে। এটি দান করেছিলেন
অতুলবাৰু তার বাবা মহেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নামে। স্কুলটির নাম বর্তমানে মহেন্দ্র
বিদ্যাপীঠ। তখন স্কুলটি মাধ্যমিক পর্যায়ে অনুমােদন পায়নি। ফলে অনেক ছেলেমেয়ে বাধ্য
হয়ে বাইরের স্কুলে পড়াশােনা করতে যেত। অংশুমান এইভাবেই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস
বর্ষা-গ্রীষ্ম-শরতে হেঁটেই স্কুলে যেত। সময় তাে আর থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে অংশুমানের
মাধ্যমিক পরীক্ষা চলে এল। মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সমাপ্তও হল। শিবলুন স্টেশনে
নেমে অংশুর মন খুশ।। আমের আর মাটির গন্ধে মন
ভরপূর আনন্দে দিশেহারা হয়ে উঠত। সেখান খেকে
পুরলে প্রায় তিন মাইল পথ। কিন্তু রাস্তার দু-ধারের আখ আর ফাঁকা মাঠ অংশুমানের পথের
ক্লান্তি দূর করে দিত। এক পা করে আর সৰ পরিচিত লােকের কস্বর কি গাে দাদাবাবু, অনেকদিন
পরে লেখার মধ্যে আন্তরিকতার ছোঁয়া। এই কথার মায়া আর মাটির আর আমি কোথাও পাওয়া যাবে
না। হটিতে হটিতে আুমানের মনে পড়ে কবির লেখা সেই বিখ্যাত লাইন, "এইটি আমার গ্রাম
আমার স্বর্গপুরী এইখানেতে হদয় আমার গেছ়ে চুরি।"
বাবু বসে আছে বাইরের
বারান্দায়। হঠাৎ একটি ছেলে এসে বলল, বাবুদা! ৩াড়াতাড়ি চলো, ও পাড়ায় একজন গলায়
দড়ি দেবে বলে দোর বন্ধ করেছে, কিছুতেই খুলছে
না।"
বাবু চোখের পলক পড়ামাত্রই
সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়ি গিয়ে হাজির। গোলার তলায় শাবল ছিল, শাবল দিয়ে দরজাটা ভেঙে
দেখল, একটা টুল এনে ছেলেটি গলায় গামছা বেঁধে কড়িকাঠে বাঁধছে। প্রায় ঝুলে পড়ার অবস্থায়
বাবু ওর পা-দুটি কাঁধে রেখে বলল, "যা বলছি কর, গলা থেকে গামছা খোল।ছেলেটি বলল, "বাবুদা আমাকে মরতে দাও।"বাবু
বলল, "তাের সুবিধা-অসুবিধার বিচার আমরা করব। তুই আগে দড়ি খােল।"বাবুর কথার
অবাধ্য হওয়ার সাধ্য ছেলেটির ছিল না। দড়ি খুলে শান্ত ছেলের মতাে কাঁধ থেকে নেমে এল।
ছেলেটির বাবা-মাকে একটু বকাঝকা করার পরে বাবু ছেলেটিকে নিজের সঙ্গে নিয়ে এল। বাবুর
সঙ্গেই খাওয়া-দাওয়া করল ছেলেটি। মন শান্ত হলে বাড়ি গেল সে। এরকম অসংখ্য কাণ্ডকারখানা
বাবুর সামাজিক জীবনে মিলেমিশে আছে। বড়দার বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে বৈশাখ মাসে। বিয়ে
হবে লাভপুরের আবাায়। বড়দা ও রিলিফদা চাকরি করে। প্রভাতবাবু দুই ছােট ছেলে বাবু আর
অংশুমানকে নিয়ে যাবতীয় জোগাড় করলেন। সাঁইথিয়ার কাছে মথুরাপুরে একটি বিয়ে বাড়িতে
প্রভাতবাবু মেয়েটির রুটি বেলা দেখে পছন্দ করেছিলেন। নিজের বড় ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার
প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার ফলেই এই বিবাহ অনুষ্ঠান। অংশুমানরা ছােট লাইনে ট্রেনে করে
বরযাত্রী গেল। আর বড়দা গেলেন জিপ গাড়ি করে। খুব আদর-আপ্যায়ন হল বিয়ে বাড়ি আবাভায়।
পরের দিন সকালবেলায় প্রভাতবাৰু সদলবলে চলে এলেন পুরুলেতে। আর একঘণ্টা পরে এল বরের
গাড়ি। কন্যাকে নিয়ে এসে মা রক্ষাকালী'র ধুলাে মাথায় দেওয়া হল। বেশ ধুমধামের সঙ্গে
অংশুমানের বড়দার বিবাহ হয়ে গেল। তখন দিলীপের
গ্রামের বাড়ি খড়ের চাল, মাটির দেয়াল। দিলীপ মনে মনে স্থির করল পাকা বাড়ি করতেই
হবে। দিলীপ বাবাকে বলল, "বাবা দেখে নিয়াে, দু-বছরের মধ্যে আমি পাকা বাড়ি করব।"
বাবা প্রভাত বললেন, "মা রক্ষাকালীর কৃপা থাকলে সবই হবে। মধুসূদনের কি অশেষ কৃপা। দু-বছরের মধ্যেই দিলীপ
পুরুলেতে পাকা বাড়ি গড়ে তুলল। বাবা আশীর্বাদ করলেন, "তুই আরও বড় হৰি। বার,
অংশুমান, বড়দার স্ত্রী, প্রভাতবাবু আর গীতাদেবী এই পাঁচজনকে নিয়ে সংসার। দুই বােনের
বিয়ে দিলীপ দিয়ে দিয়েছে। আর রিলিফ ও দিলীপ নিজে দুজনে লিলুয়ায় স্টিল ফ্যাক্টরিতে
চাকরি করে। প্রভাত বাবুর সংসার ভালাে-মন্দে, সুখে-দুঃখে বেশ ভালােভাবেই চলে ছিল। এখন
আর বন্যায় বাড়ি ভেঙে পড়ার ভয় নেই। ছেলে পাকা বাড়ি করেছে। প্রভাত বাবুর কষ্টের
জীবনে এটা বিরাট বড় ঘটনা।
পাঁচ
গ্রাজুয়েট হওয়ার
পরে অংশুমান সুরেন্দ্রনাথ ল কলেজে ভর্তি হল। রাত্রিতে কলেজ আর দিনে টিউশনি করে রােজগার
করে। সঙ্গে সাহিত্য চর্চা। বিভিন্ন লেখকের বই পড়াশােনা করা আর তার সঙ্গে নিজে লেখার
অভ্যাস চালিয়ে যেতে লাগল অংশুমান। জোয়ার বলে একটি দেওয়াল পত্রিকা অংশুমান চালিয়েছে
প্রায় দশ বছর ধরে। বন্ধু গৌতম এসে বলত, "ব্যাটা পড়াশুনার বেলায় নেই, চাকরি
পাবি কি করে?
সত্যিই একটা সামান্য
চাকরি যে জীবনে কত প্রয়ােজনীয় তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পায় অংশুমান। লিলুয়ার বন্ধুদের
মধ্যে গােরা, গৌতম একই স্ট্যান্ডার্ডের ছাত্র হয়েও ভালাে চাকরি পেয়েছে। কারণ একটাই,
নিয়মিত চাকরি সংক্রান্ত বই নিয়ে পড়াশুনা এবং তার অনুশীলন। অংশুমানের সাহিত্যচর্চা
করতে গিয়ে কোনাে ভালাে চাকরি হল না। টাকাপয়সা না থাকলে,সম্মানও নেই। কিন্তু শুধু
অর্থকেই যারা জীবনের মাপকাঠি করে তাদের জীবনে সুখ অধরাই থেকে যায়। নিজের মনুষ্যত্ব
দিয়ে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে যে আনন্দ সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সামান্য অর্থে কিন্তু
সেই আনন্দ কেনা যায় না। অর্থই অনর্থের মূল কথা মাঝে মাঝে আমরা ভুলে যাই।
অংশুমানের বন্ধুদের
মধ্যে অনেকেই প্রেম করে সুন্দরী মেয়েদের সাথে এই বয়সে সব মেয়েই ছেলেদের কাছে সুন্দরী।
রমেন অংশুমানকে একদিন এসে বলল, "আমার একটা কাজ করে দিবি? অংশুমান বলল,কি?"
রমেন বলল, "শুধু ফেসবুকে কথা বলে বা হােয়াটস আ্যপের যােগাযােগে কাজ হচ্ছে না।
আমি একটু নিরালায় প্রীতির সঙ্গে কথা বলতে চাই।" অংশুমান বলল, "কি করতে হবে
বল?
"তুই বলবি রমেন
তােমাকে চন্দন হলের কাছে থাকতে বলেছে,ঠিক আছে বলব। কিন্তু কখন ?
"বিকাল তিনটের
সময়।"
ঠিক আড়াইটে থেকে
অংশুমান প্রীতির কলেজ যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে আছে। এখন কলেজ থেকে বাড়ি আসবে। হঠাৎ দেখল
সবুজ শাড়ি পরে প্রীতি ফুটি চালিয়ে আসছে। অংশুমান বলল, "এই যে ম্যাডাম, একটু
দাঁড়ান।"
প্রীতি অংশুমানকে
চেনে রমেনের বন্ধু হিসাবে। প্রীতি বলল, "কি বলছেন বলুন।"
অংশুমান বলল,
"তিনটের সময় চন্দন সিনেমা হলের কাছে তােমাকে পাড়াতে বলেছে রমেন।" প্রীতি
বলল, "ঠিক আছে। আমি এই কুড়ি মিনিটের মধ্যে বাড়ি থেকে একটু চেঞ্জ করে আসছি।"
রমেন সেইদিন অংশুমানকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিল এতবড় একটা উপকার করার জন্য। কারণ রমেন
একটি লাজুক, মুখচোরা ছেলে। কোনােদিন প্রীতির সঙ্গে পাঁচ মিনিটের বেশি কথা বলতে পারেনি।
আজ চুটিয়ে প্রেম
জীবনে অনেকরকম অভিজ্ঞতা
সঞ্চিত করে একটি মানুষ তার চলার পথকে অভিজ্ঞ করে তােলে। পৃথিবীর এই রঙ্গমঞ্চে সবাই
আমরা এক একটা অভিনেতা। প্রতিনিয়ত অভিনয় করে চলেছি। আবার কাল এসে সমস্ত নাটকের যবনিকা
টানে একদিন। তবু মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন আশা করতে থাকে। এই আশা মানুষকে বাঁচিয়ে
রাখে। আশা, এগিয়ে চলার লক্ষ্য নির্দিষ্ট না থাকলে একটা মানুষ জড় পদার্থে পরিণত হয়ে
যায়। তাই যত দুঃখই আসুক, যত বাধাঁই পথ আটকে দাঁড়াক আমাদের এগিয়ে যেতে হবে নির্ভীকভাবে,
স্থিরচিত্তে। মানুষকে ভালােবেসে মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে হবে আমাদের। মহাপুরুষরা
বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ, কোরান, বাইবেল সব ঘেঁটে দেখেছেন মানুষের চেয়ে বড় আর কিছু পৃথিবীতে
নেই। মানুষের মাঝেই দেবতা, তাদের মাঝেই শয়তানের বাস। মানুষের মাঝেই স্বর্গের আর নরকের
যন্ত্রণা বিদ্যমান। প্রভাত বাবুর আবার একটি কন্যাকে পছন্দ হয়েছে। ধীর, স্থির শান্ত কন্যা। এই কন্যা তিনি মেজছেলে রিলিফের জন্য ঠিক
করেছেন। মখারীতি সমস্ত নিয়ম মেনে রিলিফের সঙ্গে শান্ত কন্যাটির বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের
পর রিলিফ বৌকে বাবা-মার কাছে রেখে চলে গেল। প্রভাতবাবুর শরীর খুব একটা ভালাে নেই। তাই
তিনি সকলের সংসার গুছিয়ে দিয়ে যেতে চান। ছেলেরা সবাই সুখে থাকবে, এটা কি কম কথা
!
বই তিনি স্ত্রী গীতাদেবীকে
বললেন, "অংশুমানের বয়সও তিরিশ পেরিয়ে গাছে। যদি তার বিয়েটাও দিয়ে দেওয়া যায়
তা ভালাে হয়।"
অংশুমান এখন কলকাতার
একটা নার্সিংহােমে ভর্তি হয়েছে। অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হবে। কত রােগী শত যন্ত্রণা অবজ্ঞা
করে আনন্দে আছে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। একটি বছর পঁচিশেক ছেলের অর্শ অপারেশন
হয়েছে। আজ অংশুমানের হবে। একটু ভয় ভয় ভাব। ছেলেটি অংশুমানকে নিজের ব্যথা নিয়েও
একটি গান শােনাচ্ছে, 'তাোমার হল শুরু আমার হল সারা', এই গান শুনে অংশুমানের চোখে আনন্দে
জল এল, কত যন্ত্রণা সহায করে ছেলেটি শুধু তাকেই আনন্দ দিতে গান গাইছে। এ তাে মহাপুরুষের
হৃদয়। এটিও এক ধরনের সমাজসেবা। সমস্ত ভয় কাটিয়ে অংশুমান অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ
করল।
অংশুমানের বড়দা
দিলীপের পর পর ছয় বছরের মধ্যে তিন কন্যাসন্তান হল। মেজদা রিলিফের গত চার বছরে একটি
কন্যা ও একটি পুত্রসন্তান জন্ম নিল। বড়া লিলুয়া থেকে এসে অংশুমানকে বলল, "কি
রে বিয়েটা সময়ে সেরে ফ্যাল, যদি বিয়ে করতেই হয় তাহলে দেরি করে লাভ নেই।"
অংশুমানের অপারেশন
হওয়ার পর চার বছর কেটে গেছে। মনে মনে ভাল, বিয়েটা বাবা বেঁচে থাকতে করে নিলে ভালাে
হয়। বাবার চোখে গ্লুকোমা। ভালাে দেখতে পান না। শরীরও খুব একটা ভালাে নেই। তাই বিয়েটা
করে নেওয়াই স্থির করল অংশুমান। অংশুমান দেখতে কনেপক্ষ থেকে লােক এলেন। অংশুমনি
বাবা-মার সঙ্গ বেশিদিন
মিজি পায়নি। পুরুলেতে এসে দিলীগ বাড়ি দোতলা করাকাজগে নেনে পল। থেকে তিন মাসের মধ্যে
দোতলা কমিটি। এখন আর খালার কথা । নেই। উপরের ঘরে একটিতে আগুন ও মা, মাটিতে মি । পরিবার।
নিচে বাবা, মা ও বাৰু। বাু এখন ব্যবসা করে। সঙ্গে মিছিল-মিটিং অ্যাটেন্ড করে। বেশির
ভাগ সময় না বাইরে কাটা। পলি পরে ভুল কুড়ি বাসস্ট্যান্ডে একটি জুতার দোকান করে। জুম
চাষ দেখাশােনা করেন। দুটি মেয়ে এামের হইলে পড়ে। আর ছোট মেয়ে, এখনও ভর্তি হয়নি।
প্রভাতবাবুর শরীর আরও ভেঙে পড়ল। যে সংসারকে তিনি কি সিরে আগলে রেখেছেন সেই সংসারকে
ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রভাতশাষতে পেরেছেন আর বেশিদিন নয়। চোখে মুকোমা হওয়ার ফলে একলম
দেশ পান না। অংশুমানের স্ত্রী দেবী ছয়মাস হল এক পুতসস্তানের জন্ম দিয়েছেন। প্রভাতবাবুর
বড় আশা ছিল নাতিকে স্বচক্ষে দেখলেন। কিন্তু হয়। নিয়তি কেন বাধ্যতে'। তিনি নাতিকে
কোলে নিয়ে আদর করেন। বিয়ের পরে অংশুমান তারাপীঠে মা তারার কাছে পুত্রস্তান প্রার্থনা
করেছিল। মা তারা দয়া করেছেন, বড়দার তিন কন্যা, মেজদার এক কন্যা আর এক পুত্র। অংশুমানের
এক পুর। সবাইকে সুস্থ অবস্থায় রেখে প্রভাত একদিন গভীর রাতে লীঘরে শেষ নিশ্বােস ত্যাগ
করলেন। বটগাছের ছায়া থেকে বঞ্চিত হল সমগ্র পরিবার। দুঃখে-বেদনায় সকলে কান্নাকাটি
আরম্ভ করে দিল। কিন্তু মৃত্যু তার নিষ্ঠুর সত। যুগে যুগে মৃত্যু তার আপন এর পতাকা উড়িয়ে
সদ্পে চলেছে, চলবে। এর কোনো শেষ নেই। প্রভাতবাবুর শ্রাদ্ধ হয়ে গেল। দশদিন কঠোরভাবে
পুরাে সাদা কাপড় পরে শোক পালনের মাধ্যমে পিতার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি জাপন করে তার আত্মার
বাবার মৃত্যুর পর
তার চার ছেলের মধ্যে সব থেকে ছোট ছেলে বাবুর বিয়ে বাকি আছে। আর সবাই নিজেদের সংসার
নিয়ে ব্যস্ত। বাবু নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।। একদিন বাবু শিবলুনে কোনাে একটা
কাজে গেছে। বাবুর এক বন্ধু বলল, "বাবু, এখানে একটি ব্রাহ্মণের মেয়ে আছে। যদি
পারাে একবার দেখে যেও, তােমার এবার বিয়ে করা উচিত।" বাবু অত গুরুত্ব না দিয়ে
বলল, "দেখা যাবে"। বন্ধু বলল, "তাহলে শুক্রবারে শিবলুন এর একটি অনুষ্ঠান
আছে। অনুষ্ঠানে মেয়েটি গান করবে, তুমি তখন দেখে নিতে পারবে।"বাবু শুক্রবারে ঠিক
সময়ে শিবলুনে গিয়ে হাজির হল। ঠিক দশটায় অনুষ্ঠান শুরু হল। উদ্বোধনী সঙ্গীত গাইবে
বেলা চ্যাটার্জি। মাইকে ঘােষণা শুনে বাবু সামনের চেয়ারে বসল। বেলা একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত
গাইল, সুন্দর হে সুন্দর। বাবুর পছন্দ হয়ে গেল মেয়েটিকে। মেয়েটির বাড়িতে বড়দা ও
বৌদিকে পাঠিয়ে দিল কথাবার্তা বলার জন্য। সবরকম কথাবার্তা পাকা করে বড়দা ও বৌদি ফিরে
এলেন।। | অগ্রহায়ণ মাসের একটা শুভ দিন দেখে বিবাহ সুসম্পন্ন হল। চার ভাই, সকলের বিয়ে
হয়ে গেল। সাজানাে সংসারে সকলে প্রাণমন খুলে থাকত। অভাব থাকলেও সংসারে সকলে হাসিখুশি
থাকত। অংশুমান খাবার খেত খুব বুঝেশুনে। কানে মশলাযুক্ত খাবার সে পছন্দ করত না। একবার
এক বিয়েবাড়িতে গিয়ে অংশুমান খাওয়া-দাওয়ার পর বড় এল। বাড়িতে এসে সেবার সে অসুস্থ
হয়ে পড়লো।
অনুষ্ঠান বাড়িতে
সে সহজে যেতে চায় না। যে কোনাে অনুষ্ঠানে চলে যায় বাবু। একদিন বাবু ফোন করে জানালাে, অংশুমান আমাদের স্কুলে
শিক্ষকের পদ খালি আছে। তুমি একটা দরখাস্ত দিয়ে যাও। অংশুমান সেই দিনই একটা দরখাস্ত
লিখে জমা দিয়ে এল। এক সপ্তাহ পরে ইন্টারভিউ।
বাড়িতে এসে পড়াশােনা করল। তারপর স্কুলে। ইন্টারভিউ দেওয়ার দু-দিন পরে জানতে পারল
চাকরিটা অংশুমানের হয়েছে। পার্শ্বশিক্ষকের চাকরি হওয়ার পরে অংশুমান বাবুর কাছে কৃতজ্ঞতা
স্বীকার করল। আর বাবু তাে এইরকমই ছেলে। কত ছেলে, কত পরিবারের উপকার করেছে তার হিসাব
কে রাখে। পার্শ্বশিক্ষকের কাজ হওয়ার পর থেকে অংশুমান মায়ের ওযুধপত্র খাওয়া গ্রামের
বাড়িতে কিছু টাকাপয়সা দেওয়া সবকিছুই করে। বাড়িতে মায়ের কাছে স্কুলের টিফিনের সময়ে
ভাত খেয়ে আসে। দেবীকে সকালবেলায় রান্না করতে হয় না। সকালে উঠে চা-মুড়ি খেয়ে ওই
স্কুলের আর এক শিক্ষক মহাশয় বিশ্বরঞ্জনবাবুর বাবুর মোটর সাইকেলে চেপে স্কুলে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালাে লাগে অংশুমানের।
আর অবসর সময়ে কিছু লেখালেখিও করে। এইভাবে বেশ চলে যাচ্ছিল অংশুমানের। অংশুমান কাটোয়ার
নন্দনপাড়ে বাড়ি করেছে। কিন্তু সেখানে রাস্তাঘাট বা ইলেকট্রিকের আলাে নেই। অংশুমানের
ছেলে সৈকত হারিকেনের আলােয় পড়াশােনা করে। প্রত্যেক বছর স্কুলে সে প্রথম স্থান অধিকার
করে থাকে। সে পড়ে জানালাল শিক্ষা সদনে। পড়াশােনার ক্ষেত্রে নিজে বাড়িতে পড়ার পিছনে
সময় দিয়ে, বাবার কাছে বিষয়গুলি বুঝে নিয়ে সৈকত এগিয়ে যেত, কিন্তু ইলেকট্রিক আলাের
অভাবে বেশি রাত অবধি পড়তে পারত না। অংশুমান ঠিক করল যে করেই হােক বৈদ্যুতিক আলাের
ব্যবস্থা করবে। অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে অংশুমান তার নিজের পাড়ায় বৈদ্যুতিক
আলাের ব্যবস্থা করল। এই ব্যাপারে দেবীর বাবা কল্যাণবাবুও খুব সাহায্য করেছিলেন। অংশুমানের
বাড়ির সামনে একটি গরিব লােকের পাড়া আছে যাকে অনেকে ভক্তি বলতে ভালােবাসেন। অংশুমান
ওই পাড়ার ছেলে-মেয়েদের পড়িয়ে সাক্ষর করে তােলার চেষ্টা করে। একটা সুস্থ সংস্কৃতি
গড়ে তােলার চেষ্টা করে অংশুমান। কিন্তু তার জন্য অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে।
বাবুর বিয়েতে এবার
বরযাত্রীরা খেতে বসেছে। এমন সময়ে পাশের বাড়ির পুলিশের বেশে এসে বলছে, "আমি মহিলা
পুলিশ। আমাদের মেয়ের কোনো অযত্ন হলে আমি কিন্তু রেগে যাব।" শেষে আমাদের সকলকে
খাওয়ালো। খেতে খেতে আমার গান। বললেন, "আমি একটা গান শোনাবো। আপনারা খেতে আমার
গান শুনুন।।
"আহা কি আনন্দ
আকাশে বাতাসে "গানটি ক রতে করতে তিনি নাচতে লাগলেন। সবাই ভালাে ভালাে বলে চিৎকার
করছেন। তিনি বিয়ের বাড়ির পরিবেশটা আরও সুরময় করে দিলেন। পরের দিন কন্যা বিদায়ের পালা।
অংশুমান আগে থেকেই সরে পড়েছে। সবাই কান্নাকাটি করছে। মেয়ে যাওয়ার সময় এই দৃশ্য
সতি বড়
দুঃখের। পাড়া-প্রতিবেশী-গাছপালা
সবাই যে বিষাদের সুর গাইছে। বর-কনে চলে যাওয়ার পরে একটা অঘটন ঘটে গেল বাড়িতে। পাশের
বাড়ির পুলিশ দিদিটা হঠাৎ করে স্ট্রোক হয়ে মারা গেল। চারিদিকে কান্নার রােল।
অংশুমান, বাবু ছুটে
ওদের বাড়ি গেল। আরও অনেক লােকন ডেকে শশানে নিয়ে যাওয়া হল। গত রাতে যে মেয়েটি নিজে
পুলিশ সেজে গান করে সবাইকে আনন্দ দিয়েছে, সেই মেয়েটি আজ হঠাৎ করে কোনােরকম চিকিৎসার
সুযােগ না দিয়ে অকালে চলে গেল ! জীবন এইরকমই। পদ্মপাতার জলের মতাে। কখন যে ঝরে পড়বে
কেউ জানে না। তবু এত ঘৃণা, মানুষ বুঝেও বােঝে
না। অবুঝ মন।। গতরাতে বাবুর শ্বশুর বাড়ি থেকে ফোন এসেছে, বাবুর বউ কে হাসপাতালে ভর্তি
করতে হবে। লেবার পেইন উঠেছে। বাবু গতরাতে মােবাইলে ফোন করে সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ডাক্তার বাবু ফোন করেন। আজ নার্সিংহোমে গিয়ে একবার দেখে আসতে হবে। অংশুমান
বলল, তুই তাে শ্মশানে যাচ্ছিস যা, আমি না হয় নার্সিং হােমে যাই।
নেমে আসতেই আনা গেল, মা ও নবজাতক তালে আছে। ফোন এর
অংশুমান মেয়ে হবার খবরটা জানিয়ে দিল। আতমান নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে সােজা কাটোয়ার
শশান চলে গেল। কানে গিয়ে তাকে ছেড়ে দিল। বাবু গঙ্গারান করে আনলে সােজা মিগ্রোমে চলে
গেল। অংশুমান শ্মশানে বসে যোয়ার কুণ্ডলী দেখছে আর ভাবছে মানুষ এভাবে ধীরে ধীরে ছাই
হয়ে যায়। ধোয়া হয়ে যায়। জীবনের আশা-নিরাশা, গখ-দুখ, আনন্দ-বেদনার সমস্ত কিছুর
ছেদ টানে এই শ্মশানের চিতা।
আট
ইলেকট্রিক আলাে আসার
পর অংশুমানের বাড়ির চারপাশে অনেকগুলি বাড়ি হয়ে গেল। প্রতিবেশী বলতে সামনের পাড়াটা
আর দু-চারটি ঘর ছিল। কিন্তু এখন পােলে লাইট ঝুলছে। কল হয়েছে, জলেরও অভাব নেই। এখন
লােকে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করছে এইসব সুবিধার জন্য। জায়গার মালিক যারা তারাও ভালােরকম
দাম পাচ্ছেন। ফলে অংশুমানের বাড়ির চারপাশে একটা পাড়া গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু বেশিরভাগ
লােক এখানে পড়াশােনা না জানা দলের। জানলেও হয়তাে সামান্যই জানেন। অংশুমান এদের ছেলেমেয়ের
নিয়মিত পড়ায়। লেখাপড়া শিখলে নিশ্চয় কিছুদিনের মধ্যেই পরিবেশ ও পাল্টে যাবে। প্রায়
কুড়ি বছর হল অংশুমান কাটোয়ায় এসেছে। এখন পার্শ্বশিক্ষকের কাজ করে। ছেলে ক্লাস ইলেভেনে
পড়ে। দেবী সংসারের কাজকর্ম নিয়েই থাকতে ভালােবাসে। অংশুমানের পিসির ছেলে কালীচরণ
সি.আর.পি.এফ-এ কাজ করে। হঠাৎ ফোন করে বলল, "অংশুমানদা তােমার বাড়ির সামনে পাকা
রাস্তার ধারে একটা মহাকালী লজ আছে। তুমি অগ্রহায়ণ মাসের বাইশ তারিখে লজটা বুক করে
এসে। অংশুমান সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে লজ বুক করে এল। ছুটিতে এসে কালীচরণ অংশুমানের বাড়ি
এল, কথাবার্তা বলার জন্য। কালীচরণ বলল, "তােমার বাড়ি মাঠের মাঝে হলেও শান্তি
আছে। শুধু পাকাবাড়ি, বড় বাড়ি দেখলেই হবে না। শান্তিটাই তাে আসল কথা। এই শান্তি আর
ভালােবাসাটা ধরে রাখাই
কাজ।"
কালীচরণ মেয়ের বিয়ে
দিল এই মহাকালী লজ থেকেই। বাড়ি থেকে
সব দায় এসে লজে
বিয়ে দেওয়াটা বেশ পরি..
আজল নজে বিয়ে দেওয়ার
পক্ষপাতী। কারণ অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার প চaদিন খরে প্রায় পক্চাশ থেকে সতরজন লােকের
খাবার ব্যবস্থা, শে ৰ ক সবার পক্ষে কিন্তু সহজ নয়। লজে বিয়ে হলে প্যান্ডেল অনেক কমে
যায়। আর লজে বিয়ে মানে বেশ একটা ধনী লােকের এসে যায়। আবার স্টাইলের মাত্রাও বজায়
থাকে। সবজি সবদিক থেকে কি করলে লজ বিয়ে দেওয়া সুবিধা বেশি। | অওমান ভাবে বড় বােনের
বিয়েতে বাড়িতে দু-চারদিন লােক আসতে শুরু করেছিল। বিয়ের পরেও দু-দিন ছিল। সে। আজীবনের
সঙ্গে প্রাণ খুলে মেশার সুযােগ, গানবাজনা, হৈ-হল্লোড়ে যে থাকত সারা বিয়েবাড়ি। কোথায়
যেন একটা আলাদা সুর আছে বাড়িতে বিয়ে বা কোনাে অনুষ্ঠানের। লজে যেটা থাকে না, একটা
কৃত্রিম আধুনিকতার গদ্ধতি এই সজ। অংশুমান ভাবে তার বড়দা দিলীপের কথা। নিজের ছেলে সৈকত
বড়গার কথা বলে। বাবার মায়ের কথা, বাবার কথা শুনে শুনে সৈকতে মুখ হয়ে গেছে। বড়া
গল্প বলত ভাইদের। একবার তিনি ছােটবেলায় ত বস হবে খেলে কি সতেরাে বছর, সেই সময় শ্রীরামপুরে
বড় পিসির বাি যাচ্ছিলেন। বড় পিসির বাড়ি কেতুগ্রাম হয়ে গীতা ভবনের পাশ দিয়ে আহত
সতীপীঠ বাঁদিকে রেখে সাইকেলে যেতে হত। তখন পাকা রাস্তা হয়নি। রেখে সাইলাম হয়ে দী
মাঠর ধান তােলা হয়ে গেলে অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে গরুর গাড়ির চাকার দাগে রাস্তার মতাে
হয়ে যেত। সেই রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল বড়। কতকগুলি রাখাল গরু নিয়ে মাঠে
ঘাস খাওয়াচ্ছিল। রাখালরা প্রায় শ বারােজন ছিল। ওরাও তাে ছােট। মনে করল সাইকেল নিয়ে
একটা ছেলে যাচ্ছে, ওর সাইকেল কেড়ে নিলে ভালাে হবে। তারা একসাথে থাকে আক্রমণ করল। হাতে
তাদের লম্বা লম্বা পাঁচন। বড়দা দেখল অব সুবিধের নয়। সাইকেল স্ট্যান্ড করিয়ে ওদের
একজনের হাত থেকে নয়, वौংশের পাচন কেড়ে
নিয়ে বো বো করে ঘােরাতে লাগল। ভয়ে রাখল সরে গেল। তারগর বড়দা পাঁচন মাটিতে দুম দুম
করে মেরে বলল, আসবি আয় দেখি, সাইকেল নিবি আয়।" দাদার রুদ্রমুর্তি দেখে সবাই
উ গালিয়ে গেল। হােট থেকেই বড়পা খুব সাহসী, পরােপকারী ও হৃদয়ব মানুষ। হাতে টাকা-পয়সা
থাকলে বেশিরভাগ সময়ে তিনি দুঃস্থ গরিব পাখি করতেন। এই গুণের জন্য এখনও অনেকে তাকে
শ্রদ্ধা করে।
নয়
এমন ছেলের ত্রিকেট
খেলা দেখতে সুপার মার্কেট গেছে। এখানে বুড়ো, সৈকত ভালাে ক্রিকেট খেলে। তার বন্ধুরা
সবাই সৈকতকে ডেকে যায় বিকালবেলায় খেলাধুলা করলে শরীর ও মন দুটোই ভালাে থাকে। অংশুমান
মাঝে মাঝে নিজে খেলা দেখতে যায়। মাঠের ধারে বসে মন ফিরে গেছে নিজের ছেলেবেলার যুগে।
পুরুলে গ্রামের বাড়িতে এই ক্রিকেট দল ছিল। মিলুদা, টুলাদা, রিলিফদা, বিশ্বরূপ, অংশুমান,
ভাল, বুড়াে, তাপস, সঞ্জয়, বাবন, চনা ও আরও অনেকে মিলে ক্রিকেট অংশুমানের মনে আছে।
একবার বেলুনগ্রামে ছােট পিসির বাড়ির পাশে
মাঠে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে দলবল নিয়ে গিয়েছিল। বেলুনগ্রামের দলকে শােচনীয়ভাবে হারিয়ে দেওয়ার পরে শ্লোগান
দিতে দিতে বাড়ি ফিরেছিল। শ্লোগান ছিল, "বেলুন ফুটো করল কে? পুরুলে ছাড়া আবার
কে?" ছােটবেলার সেইসব স্মৃতি এখন মনের কোণে সােনার ফ্রেমে বাঁধানাে আছে অংশুমানের।
আবার একবার এই ক্রিকেট দল নিয়ে বিশ্বেশ্বরের মাঠে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল। ম্যাচে
জেতার পর মাস্টারমশাই সুধীন কুমার মণ্ডল মহাশয় পেট ভরে মিষ্টি খাইয়েছিলেন। তখন তিনি হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক ছিলেন। এখন তিনি কাটোয়া
কে, ডি আই-এর প্রধান শিক্ষক। তার এই পুরস্কারে অংশুমান খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিল। যতীনপুর
গ্রামেও একবার অংশুমান ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল। অংশুমানের হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে এল। মাঠের
ধারে বসে সে এতক্ষণ বাল্যকালের সময়ে চলে গিয়েছিল। সৈকতকে নিয়ে সন্ধেবেলায় অংশুমান
ফিরে এল ঘরে। নন্দনপাড়ের আশেপাশে বাড়িঘর কম বলে ফাকা লাগে। তবু এখানে থেকে আনন্দ
আছে। এখানে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ সবই কম। লােকালয় থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় এখানে সর্বদা
গ্রামের পরিবেশ বিরাজ করে।অংশুমান বাড়ি এসে হাত-পা ধুয়ে ঘরে বসল। সৈকত অন্য ঘরে গিয়ে
পড়তে বসল। দেবী রান্না করছে। বিয়ের পর থেকেই দেবী অংশুমানের প্রতি হা ও ভক্তি দেখিয়ে
আসে। ভারতবর্ষে পতিরা দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত কে। দেবী কথায় কথায় আজ অংশুমানকে নিজের
কিশােরীবেলার কথা ।ৈ দেবী একজনকে ভালােবাসতাে বিয়ের আগে। এও কি ভুলতে পেরেছে তার প্রথম প্রেম। আশ সখে প্রথম
শ্রেমকে মনের এককো সতের লালিত করে ॥ সারাজীবন। আজ তিপাম বছর খাওে সেই প্রেম মনের কোণে
কলি সু্যের আলাের মতো আলােকিত করে হৃদয়। সৈকতের পড়া হয়ে গে,। প্রায় সাড়ে আটটা
বাজে। এরপর কি সিরিয়াল দেখে খাওয়া-দাওয়া করে তিনজনে শুয়ে পড়ল। শুয়ে দেরি কথা
মনে করে অংশুমান। নাবা-মাকে ছেড়ে একা স্বামীর ভরস্য মেয়েরা চলে আসে। সংসারে তারাই
থান কাণ্ডা। যে ঘরে কোনাে মহিলা নেই সে ঘরে শান্তি থাকা সম্ভব হয় না। পৃথিবীতে মেয়েদের
অবদানই বেশি। তারাই তাে গড়ে তােলে ভবিষ্যতের সুস্থ নাগরিক। পুরুষ তার ছায়াসঙ্গী।
মেয়ে-পুরুষের সমবেত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠুক সােনার পৃথিবী। আর বন্ধ হােক ধর্ষণ, খুন,
পারিবারিক অপরাধ আর জাতিভেদ। অংশুমান মাঝে মাঝে ভাবুক হয়ে পড়ে। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে
তার আশা অনেক। পরের দিন সকালবেলা দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। দেবী উঠে পড়েছে। বলছে,
"কে? কে?" উত্তর এল, "আমি আমিনা"। ছোটবেলার বান্ধবী আমিনা। একসাথে
ওকড়সা হাইস্কুলে পড়ত। দেবী ওকে ডেকে এনে বসালাে। চা খাওয়ালাে, তার সঙ্গে চলল গল্প।
অংশুমান সৈকত উঠে পড়েছে। আমিনার সঙ্গে পরিচয় হয়ে ভালাে লাগল অংশুমানের। অংশুমান
আজ ঠিক করল দেবী আর সৈকতকে নিয়ে মায়াপুর ঘুরতে যাবে। চান করে সবাই রিকশা করে স্টেশনে
চলে এল। ট্রেন ধরে নবধীপ স্টেশনে নেমে সােজা গঙ্গার ধারে। সেখান থেকে নৌকা করে ওপারে
গিয়ে মায়াপুরে ইসকনের মন্দির। মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখার পর ওখানেই খাওয়া-দাওয়া করল।
একটা বনভােজনের মতাে আনন্দ হল। নবদ্বীপে এসে শ্রীগৌরাঙ্গর স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান, বাড়ি সব দেখা হল। বিকাল পাচটায় ট্রেন ধরে আবার
কাটোয়া শহরে,ফিরে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছিল। দেবী বাড়িতে এসে খুব তাড়াতাড়ি স্টোভে খিচুড়ি রান্না করল বিভিন্নরকম সবজি দিয়ে
তারপর গরম গরম খেয়ে ওরা তিনজনে শুয়ে পড়ল। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আবার শুভ সংবাদ, বাবা আসবেন। ফোন করে জানিয়ে দিলেন তিনি। দেবী খুব
খুশি। বাবা এলে দেবীর মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে
ওঠে। বাবা চলে এলেন বেলা দশটা নাগাদ। উৎসবের
আবহাওয়া শুরু হয়ে গেল। দেবীর বাবা কল্যাণ বাবু বিডি.ও, অফিসের কাশিয়ার ছিলেন। তিনি
খুব ঈশ্বরবিশ্বাসী। সকালে তিন ঘন্টা রহিতে তিন एলটা আহ্নিক করেন নিয়মিত। সমাজসেবক হিসাবেও তার নাম আছে। কল্যাণবাবু একবার শিলিগুড়িতে
ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছিলেন চকরি প্রথমদিকে। তখন মাইনে বেশি ছিল না। একদিন অফিস থেকে
ফিরে এসে দেখেন বয় চাল নেই। রান্না কি করে হবে? হােটেলে বা বাইরের কোনো
দোকানে খান না। যাই
হােক একগ্লাস জল খেয়ে নিলেন। সামনে কোনাে দোকান ছিল না, কোনো কারণে বন্ধ ছিল। অন্য
কোনাে খাবারও নেই। আশা ছেড়ে তিনি মশারি টানিয়ে শুয়ে পড়লেন। একটু পরেই দরজায় ঠক
ঠক আওয়াজ। দরজা খুলে দেখেন পাশের বাড়ির ভহিলা একটি পায়েস নিয়ে এসেছেন। তার বাড়িতে
আজ কৃপূজা হয়েছে। কল্যাণবাবু হাসিমুখে পায়েস খেয়ে পেট ভরালেন। কল্যাণ বাবুর জীবনে
আর একবার প্রমাণিতহল জীব দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি। ঈশ্বরবিশ্বাদী কল্যাণবাবু
দু-হাত কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম জানালেন ঈশ্বরকে কল্যাণবাবু কাটোয়ায় মেয়ের বাড়িতে
এলেই অংশুমানকে এইসব গল্প শুনিয়ে থাকেন। গল্প হলেও সত্য ঘটনা। দেবী বাবার ব্যাগ খুলে
তার শাড়ি, সৈকতের জামা, মিষ্টি সব বের করল। এবার বাবার জন্যে চা বসালাে গ্যাস সটোভে।
অংশুমান ছাদ থেকে চেঁচিয়ে বলল, "আমার জন্য এক কাপ জল বেশি ও।" দেবী বলল,
ঠিক আছে।" অংশুমান চা-পাউর লেলিয়ে গেল। দেবীর বাবা এখন দু-দিন থাকবেন। উনি বাড়িতে
এলে করে খুব ভালাে লাগে। সাধু মানুষের সঙ্গ। স্কুল ছুটি হওয়ার পর সময় কাটে সাহিত্যসভা বা কোন ধর্মীয় সভায়। উপস্থিত থাকতে
পারলে অংশুমানের মন খুব ভালো থাকে। অর্থের প্রয়ােজন থাকলেও আমাদের মনে রাখা উচিত এটাই
মূল নয়। তবু অর্থই এখন সমাজের শাসনকর্তা। যেদিন অর্থের চেয়ে মানুষের গুণের সমাদর হবে,
তখন মানুুষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ হবে।সৈকতের উপর যত্ন এবার হওয়া প্রয়োজন। বারো পেরিয়ে
তের ওসবের প্রয়ােজন নেই। পৈতেটা দিয়ে দেওয়াই
ভালাে। বড়িতে জায়গা। আবার খরচও বেশি। তাই ওরা সামনের খাজুরডিহি প্রেমের ও বর আশ্রমে
পৈতে-টা দেওয়া মনস্থির করল। উপনয়নকে চলতিথেয় পৈতে নেওয়া' বলে। ঠিক হল ১৫ই অগ্রহায়ণ
হবে। অনুষ্ঠানের আগের দিন সমস্ত বাজার করে অংশুমান আশ্রম পৌছে দল। পরের দিন সকালে আশ্রমে
চলে গেল সপরিবারে। আয়োজন আসতে শুরু করেছে। অংশুমানের মা সীতা দেবী, বডদ দিলীপবাব চলে
এসেছে। দেবীর বাবা সমস্ত ব্যবস্থা ঠিকমতাে হয়েছে বিশ্বে গেল। উপনয়নের সাজ সৈকতকে
দর শেখা একটা বড় কাজ হয়ে গেল। এবার অংশুনানের মায়ের চোখ অপারেশ করতে হবে। দেবী মাকে
নিয়ে আনতে বলল। মা নীতাদেবী উপনয়নের দশদিন পরকাটোয়া এলেন। তারপর সকালবেলা অংশুমান
ও বাবা কতদিন গিয়ে চোখ অপরেশন করিয়ে মা-কে
নিয়ে এল।
এমন হল তার যার বিজ্ঞান পরিষদ, সাহিত্যের স্থানে মাসে সাহিত্য বাবাও এসেছেন। বাড়িতে এসে তিন ঘণ্টা আহ্নিক করার পর ভাত খেলেন।
আজ রবিবার, তাই সৈকত আজ বাবার সাথে বিকেলবেলা স্টেডিয়ামের মাঠে লে দেখতে গেল। বাড়িতে
ফিরে দেখে অসংখ্য লােকের ভিড়।
একদিন ভিড় দেখে,
অংশুমানের বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠল। কাছে এসে দেখল কি উঠোনে একটা শাঁখামুটি সাপ ঢুকেছে।
সাপকে কি করে। তাই লােকজন চেষ্টা করছে। সাপটা বেশ বড়। শাঁখামুটি সাগ থাক আশেপাশে অন্যান্য
বিষধর সাপ থাকে না। কারণ, রাজসাপ সব সপে গিলে খায়। তাই অন্যান্য সাপগুলাে ভয়ে পালায়।
রাতে অংশুমান খবর পেল রিলিফ অনেকদিন পরে গ্রামের বা এসেছে সপরিবারে। স্ত্রী চন্দ্রাণী
ওই গ্রামেরই মেয়ে। তাই । চন্দ্রাণীরও খুব আনন্দ হয়। বাবা-কাকা-মা-ভাই সবাইকে দেখে
মনে শৰ পায়। রুদ্কা আর ইন্দ্র মামার বাড়িত এসে খুব আনন্দ করে। আবার যখন খুব ভালােবাসে।
খুশি নিজেদের বাড়িতে চলে আসে। ঠাকুমাকে ওরা খুব ভাল ঠাকুমাও অনেকদিন পরে ওদেরকে পেয়ে
আনন্দে আত্মহারা হয়ে রিলিফ বরাবরই ভ্রমণপিপাসু লােক। কোথাও গেলে সে স্থির হয়ে থাকার
লােক নয়। দু-দিন পরেই বৌদি রুণাকে বলল, "চলাে সবাই ৪ একসঙ্গে আমরা অট্টহাস ঘুরে
আসি। আর অট্টহাসের কাছেই শ্রীরাম বড় পিসির বাড়ি, সেখানেও দেখা করা যাবে।" |
পুরুলে গ্রামেই ভুলু বাঁড়ুজ্যের একটা সুমাে গাড়ি আছে। সেই গাড়ি ভাড়া করে ওরা সবাই
অট্টহাস যাবার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল। এক ঘণ্টার মধ্যেই ওরা পৌছে গেল। পঞ্চমুণ্ডির আসন,
মন্দির, গাছপালা সব ঘুরে ঘুরে ওরা দেখল। রিলিফের ছবি তােলা চিরকালের অভ্যাস। ও ছবি
তুলল সবার। তারপর দুপুরে আশ্রমেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হল। ফিরে আসার পথে শ্রীরামপুরে
বন্য পিসির সঙ্গে দেখা করে ওরা সন্ধ্যাবেলা পুরুলে ফিরে এল।। রিলিফ পুরুলে এলেই এরকম
ব্যবস্থা করে থাকে। হৈ-হুল্লোড় লােকজন ও খুব পছন্দ করে। রিলিফ মুখে বলে, আমি নাস্তিক।
কিন্তু জ্ঞানী যারা তারা একটু কথা বলেই জানতে পারে রিলিফের ভিতর গভীর জ্ঞানের পরিচয়।
ছােট থেকেই বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করে রিলিফ বড় হয়েছে। প্রচুর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে
মেশে। ফলে বাস্তব জ্ঞান অনেক বেশি। এই বাস্তব জ্ঞানকে পাথেয় করে রিলিফ লিলুয়ায় বাড়ি
করেছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দু-একবার মিতালি সংঘের সম্পাদকও হয়েছে। ও দোখন দিয়েছে
বাপকা বেটা, সিপাহি কা ঘোড়া, কুছ নেহি তো থােরা থােরা। অস্বীকার করার কোনাে জায়গা
নেই। রিলিফের বন্ধু হারু এসেছে সঙ্গে, হার বলল, "আমি আজকে লিলুয়া যাচ্ছি। তােরা
দু-দিন পরে চলে আয়।"লিলিফ আজকে মা-কে ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে বেলুনগ্রামে ছােট
পিসির বাড়িতে গেল। পিসির বাড়ি বলছি। কিন্তু ছােট পিসি আর বেঁচে নেই মনে করতে বলল
রিলিফ। মা রিলিফের কথা শুনে কাদতে শুরু করল। রিলিফ পালটে বলল, মা দেখো আমরা বেলুন চলে
এসেছি।" বেলুনে সোশায় ও তার ছেলেদের সঙ্গে দেখা করে মা শান্তি পেল। মা পিসেমশায়কে
লন, "মাঝে মাঝে পুরুলে যেও ঠাকুরজামাই।" পিসেমশায় রাশভারী লোক। মাকে খুব
শ্রদ্ধা করেন। উনি বললেন, "নিশ্চয়ই যাবো।"রিলিফ বেলুনে থেকে মায়ের সঙ্গে
পা-ভ্যানে ফিরে আসছে। মা বললেন, ছােট পিসি মারা যাওয়ার পর থেকে পিসেমশায়ের শরীরটা
ভেঙে পাড়েছে।" রিলিফ বলল, "এই তাে ক-দিনের নাটক মা। অভিনয় শেষ হলে প্রত্যেককেই
ফিরে যেতে হবে যথাস্থানে। ওর জন্য বেশি চিন্তা করে লাভ নেই।মা চোখের জল ফেলেন। আর ছােটকাকা,
পিসি, চণ্ডীদা, বাঁটুলদা সবার কথা মনে করেন। মা বলেন, "যারা মরে যায় তারা তাে
ভালােই যায়। কিন্তু যারা বেঁচে থাকে তাদের স্মৃতি বুকে করে, তাদের হয় জীবন্ত অবস্থায়
মরণ। এই তাের বাবাকেই দ্যাখ, কেমন ড্যাং ড্যাং করে চলে গেলেন আর আমি বেঁচে থেকে তােদের
গলগ্রহ হয়ে রইলাম।" রিলিকের চোখে জল এসে গিয়েছিল। সহজে রিলিফ কাঁদে না, তবু
মায়ের কথা শুনে অশ্রু সম্বরণ করতে করতে পারেনি। মাকে আড়াল করে চোখ মুছে নিল। | রিলিফ
ভাবছে, সংসারে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, তার পিছনে মানুষের হাত থাকে না। অবস্থার বিপাকে পড়ে
রিলিফ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিজের বাবা-মার কাছে থেকে দিতে পারেনি। সবাই দই-এর ফোঁটা দিয়ে
আশীর্বাদ দিয়ে ছেলেকে পরীক্ষায় পাঠায়। কাজের জন্য অনেক সময় রিলিফকে লরির তলায়
শুয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। এখন ছেলেমেয়ে সবাই আছে। স্ত্রী আছেন। কিন্তু মনের এই গােপন
কথা রিলিফ অন্যদের মতাে ফলাও করে বলতে পারে না। এখনও জগতে অনেক ছেলে দুঃখকে সহজমনে
মেনে দেয়া জগতে আর কিছু না পারি মানুষের মতা মানুষ যেন হতে পারি'—মনে ন এই প্রার্থনা
করে রিলিফ। আদির, দোকানে এসে অংশুমান দেখা পায় বিখ্যাত সব সাংবাদিক, শ্রী দীপ্তিকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌলাল পত্রিকার
সম্পাদক ও গবেষক ড স্বপন ঠাকুর, কবি রাজকুমার রায়চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে অংশুমান ভাববিহ্বল হয়ে
পড়ে। আজ কবি ও গবেষক শ্রী তারকেশর চট্টরাজ মহাশয় বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছেন প্রসাদ
খাওয়ার জন্য। তিনি অংশুমানকে করেন। তারকেশরবাবু ক্লেহের চোখে ছােটদের লেখেন ও ভালো
তিনি বলেন, "সকলকে নিয়ে একসাথে চলার যে সুখ তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
কবি অনিলবাবু বলেন,
আমার সম্বন্ধে কোনো প্রশংসার কথা বলবেন না , "আমি ওসব পছন্দ করি না।" অমায়িক লােক। তিনি বলেন, আমার নামের আগে যেন কবি লিখ না। কাটোয়া তথা পশ্চিমবঙ্গের এক বিখ্যাত সাহিত্যিক
কবি তারকেশ্বর চট্টরাজ মহাশয়। অংশুমান বাড়িতে অবসর সময় পেলেই লেখালেখি করে আর যখন
ডাক পায় তখন সাহিত্য আসা গিয়ে বসে। কিছু ভালাে কবিতা, ভালাে গান বা ভালাে কথা শুনতে
যাওয়াই তার লক্ষ্য। সে জানে সে তারই মতাে। বলে, আমার ক্ষমতা যতটুকু, ততটুকই আমার পক্ষে
সম্ভব। এর বেশি আমি কোথা থেকে পাই। আর মনে করে আদিত্যর কথা "কিছু নাই পারেন অংশুদা,
অন্তত একজন ভালাে মানুষ তাে হতে পারেন।
রুদ্রজ ব্রাহ্মণ
সম্মেলন অনুষ্ঠানে অংশুমান সৈকতকে নিয়ে গেছে। প্রণব আর আদিত্য নিমন্ত্রণ করেছে। বড়
স্টেজে অনুষ্ঠান হচ্ছে। অনুষ্ঠানে এসেছেন মধা শ্রী স্বপন দেবনাথ, আসাম ও পুরী থেকে
দু-জন সাধুবাবা, পৌরপ্রধান অমর রাম, বিধায়ক শ্রী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, গবেষক
স্বপন ঠাকুর, কবি তারকেশ্বর চট্টরাজ প্রমুখ বিশিষ্টজন ছাড়াও আরও অনেকে। সবাইকে মালা-চন্দন
দিয়ে বরণ করা হল। উদ্বোধনী সংগীত হল। ডঃ স্বপন ঠাকুর গবেষণধর্মী একটি বক্তব্য রাখলেন।
সমবেত সুধীজনের হাততালিতে ভরে উঠল সভাপ্রাঙ্গণ। এবার একটি সংগীত গাইছে একজন কিশোরের।
ইতিমধ্যে রােমাঞ্চিত হল। এতবড় একজন পণ্ডিত মানুষ আমার পাশে-বলল অংওমান দেখি
"আমার পাশে ত্রিপলে মাটির মানুষ ডঃ স্বপন ঠাকুর। আমার দেই আদিত্যকে। আদিত্য বলল,
"অবাক হচ্ছেন কেন? পৃথিবীতে যারা বড় তার এইরকমই হন। এটাই স্বাভাবিক। আমি মঞ্চে
উপবিষ্ট মানেই আমি সব। এসব নিচু মানসিকতার লক্ষণ। আদিত্য আবার আলাদা। এই ধারণা শুনিলে প্রাণপাগল করা সেই গান-
যারা সুজন নাইয়া, উজান বাইয়া বােকাই করে মাল স্বদেশে ফিরে গেছেন তারা, থাকিতে সকাল,
থাকিতে সকাল রে, থাকিতে সকাল। এমনি কত গান পাগল আদিত্য, অংশুমানের পাড়ার ভাই। বার্তাসূচী
সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক শ্ৰী দেবাশীষ রায়ের সঙ্গে আশুমানের এখানেই পরিচয়। আদিত্য
অংশুমানকে বলল, "বার্তাসূচীর সম্পাদক মহাশয় কে লেখা দেবেন। আপনার লেখা ছাপা হবে।"
সম্পাদককে বলে দেখে অংশুমান। শ্রী দেবাশীষ
রায় সমস্ত লেখককেই সম্মান দেন। তার পত্রিকা এখন বাজারে বেশ নাম করেছে। পত্রিকাটিতে
সম্পাদকের ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। আত্যি এখন সরস্বতী পূজার প্রস্তুতি নিয়ে খুব ব্যস্ত।
প্রথ্যাত জি, খ্যাত কবি অসীম সরকারকে নিয়ে আসছে আদিত্য। প্রায় দশহাজার লোক জমায়েত
হয় এই কবির গান শােনার জন্য। যুবকদের সঙ্গে থেকে আদিত্য এইসব অনুষ্ঠান পরিচালনা করে
থাকে। আদিত্য অংশুমান বলল, এবার সরস্বতী পুজোর সময় কবি অসীম সরকারকে দেখতে আসবেন,
দেখবেন ভালো লাগবে।এবার অনেকদিন পর কাটোয়ায় অংশুমানের বাড়িতে এল। সঙ্গে পরেশ তার
মাসীর ছেলে। অংশুমান ও পরেশ ছােটো থেকেই বন্ধুর মতাে। ওরা একসঙ্গেই থাকত কোনাে বিয়ে
বা অনুষ্ঠান বাড়িতে। অংশুমানের পিসির ছেলে কালীচরণ ও বড়পিসির ছেলে অপু। ওরা সবাই
সমবয়সি। যখন কোনাে বিয়েবাড়িতে ওরা একসাথে থাকে তখন বিয়েবাড়িও যেন আলাদা একটা মাত্রা
পেয়ে যায়।। বাৰু পরেশকে সঙ্গে এনেছে কারণ পরেশের ছােট দিদির ছেলের জন্য এক পার্থ
প্রয়ােজন। বিয়ে দিতে হবে। ছােট দিদির ছেলে রমেশ। রমেশ অরে। কিন্তু পছন্দ মতো মেয়ে
পাওয়া যাচ্ছে না—বলল পরেশ। পরেশকে বলল, "চলাে অংশুমানের বাড়ি ঘুরে একবার ছােট
মামীর গিয়ে বলে দেখি।" পরেশ বলল, "হ্যা, যা করেই হােক এক বছরের নয় বিয়ে
দিয়ে দিতে হবে। পরেশ সাঁইথিয়া হোমিওপ্যাথি দোকানের মালিক। খুব সৎ, সত্যবান ও পরিশ্রমী।
ফুটবল খেলতাে ভালো। এখন বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। পরেশ বলে, কত, জানিস অংশুমান জীবনে
লােভে আদর্শ ভ্রষ্ট হয় নি । আমি আমার আদর্শ
নিয়ে সঠিক এ জীবনে পরেশ কারাের সাথে খারাপ ব্যবহার কোনোদিন করেনি। সবাই তাকে সৎ, সাহসী
ছেলে বলেই জানে। ওদের এ ডাকাতের উপদ্রব। রাত্রি হলেই সবাই ভয়ে ভয়ে কাটাতে। এই হয়-এরকম
ভাব। পরেশ ও তার বন্ধুরা নিয়ম করে লাঠিসেসাঁটা নিয়ে রাত পাহারা দিয়ে চিৎকার করে
সমস্যার শুরু করল। ওরা হাঁক দিত, 'ও-ও-ও হ্যাৎ'-চিৎকার করে । কিছুদিনের মধ্যেই ডাকাতদের
অত্যাচার কমে গেল। সবাই । ঘুমুতে পারল। অংশুমান মাসির বাড়ি গেলেই পরেশের সঙ্গে ময়ূরাক্ষী
নদীর তীরে যেত। ওখানে বালির চরে ফুটবল খেলা হত। অংশুমান বলত, পরেশ আ তােদের এখানেই
থেকে যাবাে। পরেশ বলত, "নিশ্চয়ই থাকবি।" সেসব ছােটবেলাকার কথা মনে পড়ে
আর ভালাে লাগে—অংশুমান বলল দেবীকে। সব ছােটবেলার কথা অংশুমান তার ছেলে সৈকতকে বলে।
সৈকতের এসব শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গেছে। সৈকত আজ মন দিয়ে বাংলা পড়ছিল। বাংলা বইয়ে
ভালাে ভালাে লেখকের গল্প-কবিতা আছে। লালন ফকিরের একটা কবিতা আছে, ওটাই সৈকত পড়ছে,
"বাড়ির কাছে আরশিনগর, ও এক পড়শি বসত করে।" অংশুমান সৈকতকে থামিয়ে বলল,
এর অর্থটা জেনে নিস। শেষে অংশুমান নিজেই বলল, আরশি হল আত্মদর্শনের এক মাধ্যম অর্থাৎ
যা নিজেকে দেখা যায়। তাই আরশি' হল মানুষের মন। আর 'পড়শি বলট বােঝানাে হয়েছে প্রত্যেক
মানুষের মধ্যে বাস করা আর এক মানুষ বা ঈশ্বর বা মনের মানুষ। যাকে অন্য গানে লালন অধর
মানুষ', 'সহজ মানুষ। অলখ সাঁই ইত্যাদি বলেছেন। সৈকতের খুব ভালাে লাগে বাবার কথা।
অংশুমানের ক্লাসমেট'
সুলেখক ডা রবীন্দ্ররনাথ মণ্ডল খুব ভালোবাসে তাকে। তার কাছে অনেক প্রয়োজনে অংশুমান
উপকার পেয়েছে।কিছু লোক যদি এইরকম হৃদয়বান হতেন, তাহলে মানুষের উপকার হত। সুলেখিকা
সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অংশুমান লেখা
পড়ে অনেক অনা তথ্য জানতে পেরেছে। বিবেকানন্দবাবু ও আরও লােকজনের সঙ্গে দেখা হয় ।
টিফিনে বাড়িতেই থাকে। মানুষ কেন খাওয়া-খাওয়া করে। আর মাসে যতটুকু পারে সাহায্য করে।
বড়দার হাতে দেয়, মায়ের ওষুধ দেয়। আজ কবি বলছেন সভায় "গুরুজনদের প্রণাম। সবাইকে
যথাযােগ্য সম্মান জানিয়ে আমি দু-চারটে কথা বলব। ধর্ম কথার অর্থ, । ধারণ করে থাকে।
সমাজের শান্তি, সুস্থ মন ও কর্ম হচ্ছে ধর্মের ফল।
কথাটি সন্ধিবিচ্ছেদ করলে অন্যের কথা আসে। কিন্তু সেই নিয়ম। সুস্থ নিয়ম পালন
পুর্বক আমরা যদি প্রত্যেক কর্ম করি, তাহলে ধরে সেটা হল সনাতন ধন অনুশাসন সার্থক হয়।
সনাতন ধর্ম। ধর্ম একটাই। সেটা হল সনাতন আর বাকিগুলাে হল সম্প্রদায় বা গােষ্ঠী। এক-একটি
গােষ্ঠি করে চলতে ভালােবাসে। আমরা একদম প্রাচীন যুগে যদি চলে যখন মানুষের সৃষ্টি হয়
নাই, তাহলে দেখা যাবে, এককোষী প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ এসেছে।
আর একজন মানুষ পিতা থেকে আমাদের সৃষ্টি। একজন পিতা আর একজন মাতা থেকেই ধীরে ধীরে এই
বিশ্বের মানুষরা এসেছেন। অনেকে বলেন এই পিতামাতার নাম আদম ও ঈভ। তাহলে প্রশ্ন আমরা
মানুষ হয়ে তাহলে আলাদা ধর্মের হতে পারি কি করে? আমরা লড়াই করি কেন? এসব প্রশ্নের
উত্তর জানার জন্য আমাদের। শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের উন্নত করতে হবে। অংশুমান বলছে, আমি
অনেক কথা বলেছি। আর কিছু বলব না। আপনারা সকলেই বুদ্ধিমান। সবাই আমার প্রণাম নেবেন-এই
বলে অংশুমান সভা থেকে নিচে নামল। চা-বিস্কৃত খেলাে তারপর সভা শেষ হলে বাড়ি ফিরল। তখন
প্রায় দশটা বাজে। পরের দিন স্কুল আছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে শােয় অংশুনান। মা ও ছেলে
তখনও টি.তি, দেখছে। দু-দিন পরে ডঃ স্বপনকুমার ঠাকুর, আদিত্য ও অংশুমান একটি গ্রামে
যাবে ঠিক করল। ডঃ ঠাকুর প্রত্নগবেষক। তিনি বললেন, "ভারতবর্ষ নদীমাতৃ দেশ। বড়
বড় নদীর ধারে বড় বড় বসতি তৈরি হয়েছে। আমরা যেখালে যাব সেই গ্রামটিতে গঙ্গা নদীর
নিকটবর্তী গ্রাম। আদিত্য বলল, "শুনেছি ওই গ্রামে একটা পুরােনাে বাড়ি আছে। ও বাতে
অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন আছে। আমরা তার ছবি তুলে নিয়ে বললাম, "তাই হবে। এই পুরােনাে
বাড়িতে রাজরাজেশ্বরীর মূর্তি আছে। আবার ওখানে একটি পরিবার বাস করেন। তারা বলেন, এইটি
পাঁচশাে বছর আগেকার বাড়ি।"
শঙ্কর বললেন,
"তথ্য থাকলে তবেই এসব কথা বিশ্বাস করা যাবে। | ঠাকুর বললেন ,
কথা দিয়ে উপন্যাসের মতাে এইসব কথা বলা যায় না। তার জন্য উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণাদি
প্রয়োজন।"
ওরা সবাই গিয়ে একবার গ্রামে ঘুরে আসার মনস্থির করল। অংশুমান আবার আদিত্যর কাছে গেল। আদিত্য খুব ভালাে
গান করে। "নির্মল বাংলা' নিয়ে একটি গান লিখেছে খুব সুন্দর। অংশুমান গান গাইতে
জানে। তবু একবার গানটি গাইবার চেষ্টা করল।
অংশুমানকে উৎসাহ দেয় সবাই খুব। গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখতে বলে। অংশুমান উৎসাহ পেয়ে বাড়ি এসে অনেক পড়াশােনাও
করে। বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে তার বর্ণনা করতে গেলে খুন, ধর্ষণ লেগেই
আছে। সংবাদপত্র খুললেই শুধু রক্তারক্তির খবর। মানুষে মানুষে হানাহানির খবর। অংশুমানের
ভালাে লাগে না। দেশে শান্তি আসবে। সবাই সুস্থভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে। বাঁচো এবং
অন্যকে বাচতে দাও'—এই আদর্শ নিয়ে সবাই চলবে। তবে হবে সুস্থ। দেশের সুস্থ নাগরিক। অংশুমান
জানে সেই দিন নিশ্চয়ই আসবে। এখনও শাসকদলে অনেক ভালাে লোক আছেন। তারাই একদিন ছাত্র-যুব
সবাইকে এক ছাতার তলায় এনে একতার গান গাইবেন। আজ অংশুমান পুরুলেতে এসেছে। বড়দা দিলীপ
বলল, "সৈকত আর বৌমাকে একদিন পাঠিয়ে দিস। অনেকদিন আসেনি ওরা।" অংশুমান বলল,ঠিক
আছে।"
রিলিফ লিলুয়া থেকে
স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ পুরুলে এসেছে। অংশুমানের স্কুল। বর। ভাবল বড়দা মাঝে মাঝেই সৈকতকে
যেতে বলে। এইসময় পাঠালে বর সঙ্গেই দেখা হয়ে যাবে। অংশুমান দেবীকে বলল, "যাও
তুমি আর সৈকত একবার পুরুলে থেকে ঘুরে এসে।"সে বলল, "তাহলে তুমি চলে যেও না
ঘর ফাকা রেখে। যা চোরের ম" অংশুমান বলল, "না না, আমি বাড়ি থেকে বেরােব না।
দু-দিন সবাই যাও তােমরা ঘুরে এসো। পর আর সৈকত সকালবেলা বেরিয়ে পড়ল। অংশুমান নিশ্চিন্ত
হল,আর নয় এখন বেড়াতে যেতে পারে না। যখন মায়াপুর গেছি তখন মনে আছে, নজনেই গেছিল। তখন
একটা ঘরে ছিল তিনজন । এখন যা হােক দুটো-একটা
জিনিস হয়েছে। চোর। এসে নিয়ে তাহলে আর বােধহয়
অংশুমান ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। পুুরুলেতে গিয়ে সৈকত আর ইন্দ্র দু-দিন খুব ঘুরে বেড়ালাে।
সেই নতুনপুকুর , হাড়ি পাড়া, পুজো বাড়ি, হাইস্কুল আর দক্ষিণের খােলা মাঠ। সেখানে।
গিয়ে কি করে যে সময় কেটে যায় পাখির গান শুনে, বাতাসের শিহরনে। তা ওরা বুকতেই পারল
না। সৈকত আর ইন্দ্র যেন অংশুমান আর বিডি ছােটবেলার ছবি। তারা যেভাবে যীতলায় বেলগাছের
ডালে উঠে খদের গায়ে লাফ মারত। সৈকত আর ইন্দ্র আরও অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে একইরকমভাবে
খেলে বেড়াচ্ছে। সেই ছোটবেলা, ছোলামুড়ি আর লুকোচুরি খেলার দিন ফিরে এসেছে। ঘেঁটুফুল,
ঘাসফড়িং সবকিছুই নতুন করে চেনা এক ধারাবাহিক পদ্ধতি। এত শিশু আসে আর এক শিশু বড় হয়ে
যায়। আবার তার জায়গায় আর এত শিশু এসে ফনি ধরে, লুকোচুরি খেলে, ডিগবাজি খায়, হাওয়াতে
দোলে। এ-এক চিরন্তন প্রবাহ জেগে ছিল, জেগে আছে, জেগে থাকবে। এক অসীম নিরবছিন্ন খেলা।
দু-দিন পরে আবার ওরা কাটোয়াতে ফিরে এল। কাটোয়াতে এসে প্রায় দু-দিন ধরে সৈকত বলছে,
"বাবা, ঠাকুমার জন্যে মন খারাপ করছে, ইন্দ্র জন্যে, বাড়ির সবার জন্যে, ষষ্ঠীতলার
জন্যে, নতুন পুকুরের জন্যে মন খারাপ করছে?"অংশুমান বললাে, "মন খারাপ কোরাে
না। আবার সুযােগ পেলে ওখানে চলে যাবে। অংশুমান বাবার চাকরিসূত্রে বিভিন্ন জায়গায়
কাটিয়েছে। অংশুমান ও তার বন্ধুরা অনেক জায়গায় ঘােরাঘুরি করেছে। পুরী, দার্জিলিং,
দিঘার সব জায়গায় গেছে। এখন ঘরে বসে অবসর সময়ে এইসব কথা লেখে। একটা জীবন একটা উপন্যাসের
মতাে।
অনিলদার বাড়ি। অনিলদা
বলেন "চলো অংশুমান, আজ আয়ের সাহিত্য আসর। চলো ঘুরে আসি। অংশুমান বলল,
"চলুন ভালােই হবে, একটা কবিতা পাঠ করব। আজয়ের আসরে গিয়ে ওরা দু-জনে কবিতা পাঠ
করল। তারকেশ্বর বাবু বললেন ,, "পরবর্তী মাসের আসর কাটোয়া মহুকুমা মন্দিরে অনুষ্ঠিত
হবে। সাহিত্য আসরেই পরবর্তী মাসের আসরের দিন ঘোষণা করা হয়। আবার মাসের প্রথম শনিবার
বিজ্ঞান পরিষদে অনিল ঠাকুর সাহিত্য আসরে গিয়ে
অনুগল্প পাঠ করল। অনিল ঠাকুর বললেন, আমরা একসঙ্গে বাড়ি যাবাে। তুমি চলে যেও না।"
অনুষ্ঠান শেষে ওরা বাড়ি এল, কবি ও গবেষক অনিল ঠাকুর সতিই খুব গুণী মানুষ।
অংশুমান কথা বলে
মোবাইল রেখে দিল। তারপর দেবীকে বল,পুরুলেতে জেঠুমা মারা গেছেন। এই দশ মিনিট আগে।"
তখনও খিচুড়ি, ডিমভাজা, আলুভাজা খাওয়া হয়নি। সব কুকুরকে খাওয়ানো হল। সঙ্গে সঙ্গে
তিনজনেই রওনা হল পুরুলে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রায় ধু-ঘন্টা পরে ওরা পুরুলে
পৌছে গেল। পাশের বাড়িতে জেুমা থাকতেন। সুই ছেলে বুড়ো আর ভােম্বল। ভবদেব মারা গেছে
আগে। ওরা মোট তিত এক বোন। বড়দা, বাবু, অংশুমান সবাই কাটোয়ার শানে যাওয়ার নিল। বিলিফদাকে
ফোন করে দেওয়া হয়েছে। রিলিফদা বলল, "আ বোলপুর এসেছি। রাস্তায় ঠিক দেখা করে
নেব। তারপর তোমাদের স ববাে।" বাবা মারা যাওয়ার সময় সব ভাইরা একত্রে শাক পালন
করেছেন। আবার জ্যাঠাইমা মারা যাওয়াতে সবাই এক হল। কাটোয়ার শ দাহকার্য সমাপ্ত করে
সবাই গঙ্গান্নান করার পর সাদা কাপড় পড়শীরা
যারা এসেছিলেন সবাই গঙ্গন্নান করে নিলেন। গ্রমের বাবু বাবন , মলয়, নিতাইদা, গোপালদা,
, প্রশান্ত, ও আরও অনেকে এসেছেন।এইভাবে কথাবার্তা
চলছে। এদিকে দেবী, বড় বোন মামণি, ছােটো বােন পপন ও তাদের ছেলেমেয়েরা, জমাইরা সবাই
এসেছে। ঘর মানেই তো মানুষের সমাহার। যে ঘরের মানুষ যত ভালো, সেই ঘর ততটাই সুন্দর। বাই
একসাথে এখন থাকবে দু-চারদিন। কারণ চলে গেলে আবার যে লেগে যাবে। আবার কবে দেখা হবে কেউ
নিয়ে খুব তাড়াতাডল বাণুর বন্ধু মলয মণল মলয় ও অংশুমানের ভাই-এর ম।। প গাশানে গিয়ে
অনেকক্ষণ হরিনাম হয়েছিল। হরিনামের মল যে ছিল ভইা। কাটোয়া শশান গঙ্গার প্রায় কাছাকাছি।
তখন ইংলফটিক In tv না। কাঠের আগুনে বা কয়লার আগুনে দাহকার্য সমাপ্ত এ। । ভবা পাগলার
সেই বিখ্যাত গান মাইকেে বাজছে। " ও আমার ব্যথা এভাবে চলে গেলেন তা নয়, যেতে হবে
আমাদের আমরা শুধু আমার আমার করেই কাটিয়ে দিই সময়। বৈরাগ্য হলেই তো হবে না।এমন আবেগ আমাদের, মানুষদের
করা হল হিংসা,, লোভ পাপ করে সতিকারে মানুষ এখন। আর কিছু হতে না পারি এক এ কারও মাথা
নেই। ফলে থেকে সবাই যে যার চলে গেল। পুরুলেতে
থাকল বাকি সংসার পরিজন। অংশুমান নিজের পরিবার। । শহরে চলে এল। দেবী তাে ঘরে এসেই বুল
ঝাড়া, ঝটি দেওয়া করতে লাগল। সৈকত একটা গল্পের বই নিয়ে বিজ্ানায় পড়তে । অংওমান
বাজারে গেল কিছু বাজার করে আনার জন্য। ঠিকঠাক করে রবাি হতে প্রায় বেলা দুটো বোঝা গেল।
দেবী কল, "সৈকত আয় খাবি আয়।সৈকত ডাকল বাবাকে। খওয়া-াওয়া হয়ে গেল। দুপুরে
একটু শুয়ে সকলে বিশ্রাম করে নিল। বিলকেলায় দেখি ও অংশুমান হাঁটতে বেরােয় আর সৈকত
খেলতে যায়। নাড়ের প্রতিবেশীরা সকলে খুব ভালােবাসে। তারা বলে, "আপনারা সকলে বেড়িয়ে
যাবেন না। একজন ঘরে থাকবেন।"
ঘরে মানুষ
থাকলে চোর সাধারণত ঢুকতে সাহস পায় না। | প্রায় মাস হয়ে গেল জেঠাইমা মারা
গেছেন। সবই ঠিকঠাক চলছে। একদিন সকালে উঠে দেবী বলল, "ওঠো, দেখাে আমাদের জলের কল
চুল নিয়ে গেছে। রাত্রে চোর এসেছিল।"আমি রাতে কোনাে শব্দ পাই নি। কিন্তু কি করে
যে চোরে কল তুলে নিল কোনাে শব্দ না করে তা আজও রহস্য থেকে গেল ওদের কাছে। সংসারে। আলো-মন্দ
লোক আছে। সবাই তাে আর দয়ালু মানুষ হয় না। জল দেওয়ার জন্য একটা লােক রাখল অংশুমান।
সে দু-বেলা রােজ খাবার জল দিয়ে যায়। আসনপন্ন যে, কাপড় কাচা প্রভৃতি কাজের জন্য একটা
কুয়াে আছে। দেবী। এখানেই মায়। আ রাত্রে অংসুমান একবার ছাদে এল। আকাশে অসংখ্য তারা।
শ কে তাকিয়ে অংশুমানের মনটা ভালাে হয়ে গেল। কোনাে ব, কোনো সমস্যা এখন আর নেই। তার
অন্তরে এখন আকাশের সুর। গছে। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নক্ষত্রের দিকে। তার মন
সে টিনিন আকাশের নক্ষত্র ছুঁতে চায়। তখন আরও স্বল্প দেখে। সে নক্ষত্র রয়েছে। সারা
বিশ্বের ভালো মন্দ র আর তার উপর ন্যস্ত হয়েছে। সেই অবস্থায় অংশুমান পৃথিবীর। নর মানচিত্র
মুছে ফেলে একটা গ্লোবে পরিণত করতে চায়। পৃথিবীর ওয়েব থেকে আর মােবাইলে গান পাঠানাে
যায় ঠিক সেইরকম মানুষের হৃদয়ের মিলনের সুর সারা দুনিয়ার মানুষের মন সেনানে যাবে
না কোনাে হন্দ, ইবা কিভাবে জাতের নামে বতি। ভারতবর্ষের সনাতন ধর্ম, ঐতিহ্য, সংস্কার
পৃথিবীতে , ভারতবর্ষের আদর্শে অনুপ্রাণিত সারা পৃথিবী, সেখানে সবাই কে ক, মহিলার সম্মান
আর শিশু-যুবকের অধিকার। অংশুমান আয় নিচে শুয়ে ভাবছে তার অতিক্রম করে আসা জীবনের কথা।কতউল
জীবন-মৃত্যুকে উপেক্ষা করে আজও এই বয়সে নবীন সবুজ মনে পৃথিবীর আজ তার কোনো দুঃখ নেই,
শােক নেই। সারা জীবনের অভিজ্ঞতাই তার আজ পাবো। এক দুর্নিবার আকর্ষণে তার মন ছুটে চলেছে
অজানা অসীম আনন্দের সরােবরে। সেখানে সে রাজহংসের মতাে শুধু দুধের বুকে, জীবনের সার
বস্তুর কথা ভাবে।ও মন সওদাগর / কেন মিছে লত র / দেশের মানুষ দেশে ফিরে চল"। সারা
পৃথিবীর মানুষ আহ তার সুরে সুর মিলিয়ে বলে চলুক এক মন্ত্র, আমরা এখানে এসেছি দু-দিনে
অতিথি হিসাবে। এখানে হিংসা, মুগার কোনাে জায়গা নেই। চলে যেতে হবে আমাদের সকলকে। পৃথিবী
ছেড়ে চলে যাবার আগে এসাে আমরা সবাই মানুষের কল্যাণের জন্য পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে
তুলি। সারা পৃথিবী জুড়ে মানব-মনের ভাব প্রকাশের জন্য একটা ভাবা হােক, যে ভাষা ভৌত
জগতের মর্ম সীমা অতিক্রম করে যাবে। মরমে প্রবেশ করে নামী মনের গভীরে সুর তুলবে। স্বপ্ন
দেখার তাে কোনাে বিধিনিষেধ নেই। বু আগমনের মনে হয় এই স্বপ্ন একদিন সত্য হবে। রাষ্ট্রবিরােধী,
সন্ত্রাসবাদী শব্দগুলি অবলুপ্ত হয়ে রাষ্ট্রকল্যাণকারী, আশাবাদী মানবিক পৃথিবী এক হয়ে
যাত্রা শুরু করুক। অংশুমান যখন ছোট ছিল তখন দেখেছিল মানুষের মনে হিংসা, ঘৃণা কম ছিল।
কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে আলট্রা ভায়ােলেট রে যেন সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস কর শেষ করে দিতে
চাইছে। আমিন সহজে পৃথিবীকে ধ্বংস হতে দেবে না। তার জন্য সে তার সমস্ত দিতে প্রস্তত,
ধবধবে সাদা পােশাকে আজ অংশুমান মন্দিরে বলে প্রার্থনা করছে পৃথিবীবাসী শাস্তির জন্য।
তক্তিপনূত সামাজিক এবং নান্দনিক জন আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথিবীতে শুভ হবে। স্বেচ্ছা পরিশ্রমের
ফসল পাবে পৃথিবী। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অবলুপ্তি ঘটবে। স্বেচ্ছা পরিশ্রমের অতীন্দ্রিয়তার
স্পর্শ পেতে বেঁচে থাকার সমস্ত সামাজিক এবং সঙ্গে সঙ্গে অতীন্দ্রিয়তার স্পন গুণাবলির
প্রকাশ ঘটবে। গােলােকায়নের এই সুন্দর সাবলীল স্বপ্ন সাংস্কৃতিক গুণাবলির প্র অংশুমানকে
আচ্ছন্ন করে তুলেছে। আজ সে রাত্রিতে স্বপ্নে দেখেছে একদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আর থার উপর শ্রীকৃষ্ণ ভগবান অংশুমানকে সাহস দিচ্ছেন, অভয়বাণী শােনাচ্ছেন এগিয়ে যাওয়ার
মন্ত্রে। অংশুমান বুঝে গেছে আর বেশিদিন নয়। সমগ্র পৃথিবী সংঘবদ্ধ হবে। পৃথিবীজোড়া
মানবজাতি ধীরে ধীরে একত্র হবে। বিশ্ব মানবতার এক ধর্মে, এক ভাবনায়। এই আত্মিক শক্তির
আড়ালেই রয়েছে মানুষের প্রাণের স্পন্দন, শাশ্বত সুন্দরের বীজমন্ত্র।আমাদর ছোটবেলার বন্ধু বিশু একবার জাপান দেশ ভ্রমণ করার আবেদন করল বন্ধু কমিটিকে। রমেন বললো, খরচ অনেক। আদৃজা বললো, এক একজনের বিমানে
আসা যাওয়া আশি হাজার টাকা ভাড়া লাগবে। বিশু বললো, আমাদের বন্ধু কোঅপরাটিভে অনেক টাকা
জমেছে। পাঁচবছর কোথাও যায় নি। এবার টাকাগুলো ভ্রমণে খরচ হবে আর বাকিটা দান করা হবে,
গরীবদের, ফিরে এসে।বিশুর মুখের উপর আমরা কেউ কথা বলি না। তার কথাই ফাইনাল হলো। আদৃজা,
রমেন, বিরাজুল, বিশু ও আমি দমদমে পৌঁছে গেলাম এক শুভদিন দেখে সকালবেলা। অবশ্য আগে থেকে ভ্রমণ সংক্রান্ত ভিসা সমস্যা ও আনুষঙ্গিক
আইনি কাজ মিটিয়ে নিয়েছে বিশু। বিশু লাগেজগুলো একসঙ্গে বিমানবন্দরে ট্রলারে চাপিয়ে পৌঁছে
গেল ওয়েটিং রুমে। চেকিং পর্ব সেরে আমরা নিশ্রাম নিচ্ছি। হঠাৎ গোপাল ভিন্ডার সঙ্গে দেখা।
আমাদের রাজস্থানী বন্ধু। একসাথে আমরা মেসে ভাড়া থাকতাম কলকাতার আমহার্ষ্ট স্ট্রীটে।
গলির ভেতরে ভাঙ্গাচোরা, স্যাঁতসেতে এক ভুতুড়ে বাড়িতে আমরা থাকতাম কয়েকজন বন্ধু। গোপাল
বললো, ক্যায়সা হো তুমলোগ?
বিশু বললো, বাড়িয়া
ভাইয়া। আপলোগ ঠিক হো তো।
গোপাল আমাদের সকলকে
কফি খাওয়ালো। কফি পানের পরে বিদায়পর্ব। আমাদের বিমান ছাড়ার সময় হয়েছে। গোপাল এখানে
কাজ করে। সে সবকিছু ঠিকমত বলে আমাদের অসুবিধা দূর করলো।
বিমানে আদৃজা বিশুকে
ভিসা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে চাইলো। বিশু বললো,ভারতীয়দের ভিসা লাগে ইউরোপীয় দেশগুলো ভ্রমণের ক্ষেত্রে। আশা করি সবদেশেরই
হয়ত লাগে। ভিসা-মুক্ত বা আগমনের পর ৪৯ টি দেশে ভিসা প্রাপ্তির ভিত্তিতে বৈশ্বিকভাবে
ভ্রমণ স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ভালো। ভারতীয়রা বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে পাড়ি
জমায় বিশেষভাবে ইউরোপ-আমেরিকাতে, সেইজন্যে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণে
কড়াকড়ি আরোপ করা আছে। ৮ আগস্ট ২০১৭ তারিখ থেকে ভারতীয় টুরিস্ট এবং ব্যবসায়ীরা বা
চিকিৎসা সেবা নিতে ইচ্ছুক মানুষরা রাশিয়াতে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবে। ভারতীয় ভ্রমণকারীদের
ভূটান এবং নেপাল ছাড়া অন্য রাষ্ট্রে ভ্রমণকালে অপরিশোধযোগ্য কাজে লিপ্ত হতে হলে একটা
ভিসা বা কাজের স্বীকৃতিপত্র নিতে হয়। রাজ্যের
বাসিন্দা নয় এমন ভারতীয় নাগরিকদের জন্য এইসব রাজ্যে ভ্রমণকালে ইনার লাইন পারমিট
(ILP) নিতে হয়। আইএলপি অনলাইন বা এইসব রাজ্যের বিমানবন্দর সমূহ থেকে সংগ্রহ করা যেতে
পারে।বিরাজুল বললো, এত খুঁটিনাটি আমরা জানতে পারি না কেন?
বিশু বললো, জানতে
হয় না হলে পিছিয়ে পড়তে হয়।
আমরা জাপানের টোকিও
-র চিবা বিমানবন্দরে নেমে একটা গাড়িতে করে
খোঁজ নিয়ে চলে এলাম হোটেলে। বিশাল হোটেল তেমনই তার সুব্যবস্থা।
রমেন বলল উদীয়মান
সূর্যের দেশে আমরা এলাম। এ আমার কল্পনার বাইরে ছিলো। বিরাজুল ও আদৃজা বললো, খুব ঘুরবো
কয়েকদিন। আমি বললাম, জাপান দেশের বিবরণ কিছু দিতে পারবি। আসার আগে পড়াশুনা করেছিস কিছু।
বিরাজুল বললো, জানি অল্প। তবে বিশু আছে। ও একাই একশ। আমরা সকলে বললাম, তা বটে তা বটে।
একদম হককথা কইছে বিরাজুল। বিশু বললো, পূর্ব
এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হল জাপান । এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর,
পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে
ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত। যে কাঞ্জি অনুসারে
জাপানের নামটি এসেছে, সেটির অর্থ "সূর্য উৎস"। জাপানকে প্রায়শই "উদীয়মান
সূর্যের দেশ" বলে অভিহিত করা হয়।জাপান একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরীয় দ্বীপমালা। এই
দ্বীপমালাটি ৬,৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল হোনশু, হোক্কাইদো,
ক্যুশু ও শিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের
জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়ন। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জাপানের
রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন। এই শহরটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন
সংস্থার ২য় বৃহত্তম মূল শহর। টোকিও ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত বৃহত্তর
টোকিও অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মহানগরীয় অর্থনীতি।
আমি বললাম, প্রেমেন্দ্র
মিত্রের ঘনাদা সাগালিন দ্বীপের কথা বলেছিলেন। মনে আছে তোর বিশু। বিশু বললো, জাপানের
সাগালিন এবং ওহোতস্ক সমুদ্র দ্বারা সাখালিনটি ধুয়ে ফেলা হয়, এটি জাপান থেকে লা পেরুজের
তলদেশে তাতার তীর দ্বারা মহাদেশ থেকে পৃথক হয়। সাখালিনের মোট এলাকা 76 হাজার বর্গ
কিমি। এবং ফর্ম, এটি একটি মাছ অনুরূপ, এশিয়ার তীরে বরাবর প্রসারিত। দ্বীপটির দক্ষিণে,
পাহাড়গুলি আয়ত্ত করে, উত্তরের কাছে, তাদের নিম্নভূমি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, এবং
শুধুমাত্র শ্মিট্ট উপদ্বীপে, সাখালিনের চূড়ান্ত উত্তর দিকটি হ'ল পাহাড়ের শিখরগুলি
আবার দৃশ্যমান। যেমন একটি জটিল ত্রাণ, পাশাপাশি সমুদ্র এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী, উদ্ভিদ
এবং প্রাণী বিশ্বের মৌলিকত্ব নির্ধারিত।সাখালিন বৃহত্তম রাশিয়ান দ্বীপ। জাপানীরা এই
দ্বীপটি করাফুতোকে উপভোগ করে, যার অর্থ "ঈশ্বরের ভূমি মুখ।" দ্বীপটি
1643 সালে ডাচম্যান দে ভ্রিসের আবিষ্কৃত হয়েছিল। এবং দীর্ঘদিন ধরে, সাখালিনকে উপদ্বীপ
বলে মনে করা হয়েছিল। সম্ভাব্য কারণ দ্বীপটি মূল ভূখন্ড থেকে পৃথক হওয়ার স্রোত শীতে
ঠান্ডা হয়।জাপানের সাগালিন এবং ওহোতস্ক সমুদ্র দ্বারা সাখালিনটি ধুয়ে ফেলা হয়, এটি
জাপান থেকে লা পেরুজের তলদেশে তাতার তীর দ্বারা মহাদেশ থেকে পৃথক হয়। সাখালিনের মোট
এলাকা 76 হাজার বর্গ কিমি। এবং ফর্ম, এটি একটি মাছ অনুরূপ, এশিয়ার তীরে বরাবর প্রসারিত।
দ্বীপটির দক্ষিণে, পাহাড়গুলি আয়ত্ত করে, উত্তরের কাছে, তাদের নিম্নভূমি দ্বারা প্রতিস্থাপিত
হয়, এবং শুধুমাত্র শ্মিট্ট উপদ্বীপে, সাখালিনের চূড়ান্ত উত্তর দিকটি হ'ল পাহাড়ের
শিখরগুলি আবার দৃশ্যমান। যেমন একটি জটিল ত্রাণ, পাশাপাশি সমুদ্র এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী,
উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিশ্বের মৌলিকত্ব নির্ধারিত।কারণ সাখালিন তাহা তার প্রজাতি বৈচিত্র্যের
মধ্যে রাশিয়াতে সবচেয়ে ধনী। নিজের জন্য বিচারক - দ্বীপে প্রায় ২00 টি প্রজাতির গাছ
ও ঝর্ণা বেড়ে যায়।সখালিনের প্রধান গাছটি জিমেইলিন লার্চ। অন্যান্য ধরনের গাছগুলি
খুব কমই প্রতিনিধিত্ব করা হয়: পাতলা লেইড লার্চ, আইয়ানস্কি স্প্রুস, সখালিন ফির।
হোয়াইট এবং পাথর birches, aspens, সুগন্ধি poplars, শিশির উইল, জাপানি elms, হলুদ
ম্যাপেল, এবং alder hardwoods মধ্যে prevail।সাখালিন ফল এবং বেরিতে সমৃদ্ধ। চেরি, ক্যারাট,
ব্লুবেরি, রাস্পবেরি, ব্লুবেরি, রেডবেরি এবং ক্র্যানবেরি এখানে বেড়ে যায়। এবং দ্বীপের
দক্ষিণে এক অনন্য প্রাকৃতিক সমন্বয় পালন করতে পারে: সাখাওয়ালীন বাঁশের ঝোপঝাড় দ্বারা
বেষ্টিত একটি শঙ্কু বন। এই ধরনের ইউনিয়ন বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। বাঁশ, অবশ্যই,
এখানে উচ্চ নয়, তবে এর ঝড় আসলে সবচেয়ে দুর্বল, যেহেতু ইলাস্টিক টুকরাগুলি সবচেয়ে
আশ্চর্যজনক ভাবে আটকে থাকে এবং ছুরিগুলির মত তীক্ষ্ণ পাতাগুলি সহজে ত্বকে কাটাতে পারে।দুর্ভাগ্যবশত,
গত কয়েক বছরে সাখালিনের প্রাণীরা উল্লেখযোগ্যভাবে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। একবার দ্বীপে,
ঘুর্ণিমান হরিণ চারপাশে লাফিয়ে পড়েছিল এবং বন্য ডোরা তাদের কান্না দিয়ে পার্শ্ববর্তী
বনগুলিকে পড়েছিল। না যারা অন্য বা বাকি আছে। পরে এল্ক এবং লাল হরিণ বিনষ্ট হয়। শেষ
শতাব্দীর মাঝামাঝি বর্ধমান বনজনিত কারণে, সযোগ্য এবং র্যাকুন কুকুর অদৃশ্য হয়ে যায়।
পর্বত ভেড়া এবং নদী otters চিরতরে দ্বীপ ছেড়ে। এক স্টাফ নেকড়ে, একবার একবার সাখালিনে
ভডিভিশগো, যাদুঘরে একাকী একাকী। সমুদ্রের নিকটবর্তী, উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিশ্বের মৌলিকত্ব
নির্ধারিত। আমাদের ক্যাপটেন বিশু আরও বললেন,
টোকিও বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলির একটি। এর আয়তন প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার।
মূল শহরে প্রায় ৯০ লক্ষ লোকের বাস। বৃহত্তর টোকিও মহানগর এলাকাতে প্রায় ১ কোটি ৩০
লক্ষ লোকের বাস, যা জাপানের মোট জনসংখ্যার এক দশমাংশ; এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল বৃহত্তর
মহানগর এলাকা।টোকিও থেকে বন্দরনগরী ইয়াকোহমা পর্যন্ত অঞ্চলটি অবিচ্ছিন্নভাবে জন-অধ্যুষিত
বলে কিছু বিশেষজ্ঞ টোকিও ইয়োকোহামাকে একটিমাত্র মহানগর এলাকা হিসেবে গণ্য করেন, যার
জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ। জাপান হচ্ছে একটি দ্বীপদেশ যা মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত।
এখানকার মানুষ সবসময় প্রচুর সীফুড খাওয়ার সুবিধা গ্রহণ করেছে। এটি কিছু খাদ্যবিদদের
মতামত যে জাপানি খাদ্য সর্বদা উপর নির্ভর করে প্রধানত শষ্যের উপর সাথে থাকে শাকসব্জি
বা সামুদ্রিক আগাছা, দ্বিতীয়ত পাখিজাত মাংস এবং সামান্য পরিমাণ লাল মাংস। বৌদ্ধধর্ম
প্রসার লাভের আগ থেকেই জাপানে মাংস গ্রহণের এই অনীহা ভাব ছিলো। ইদো যুগে ইয়োতসুশি
বা চারপেয়ে জন্তু খাওয়া নিষিদ্ধ ছিলো। এই সত্ত্বেও জাপানে লাল মাংস ভোজন সম্পূর্ণরূপে
অদৃশ্য হয়ে যায়নি। গৃহপালিত পশুদের বিপরীতে বন্য খেলা খাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছিলো।
বিশেষ করে ফাঁদ পেতে খরগোশ শিকারের জন্য এমন শব্দ (ওয়া) ব্যবহার হতো যা সাধারণত একটি
পাখির জন্য সংরক্ষিত শব্দ। সাধারণ খাদ্যদ্রব্যগুলির ক্রমবর্ধমান খরচের কারণে জাপানী
পরিবারের প্রক্রিয়াকৃত খাবারগুলি র ব্যবহার আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিয়োটো সবজি
বা কিয়াইয়াই জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং বিভিন্ন ধরনের কিয়োটো সবজির ব্যবহার আবারো ফিরে
আসছে। বিশুর কাছে জাপানের কথা শুনে আমাদের একটা মোটামুটি ধারণা হলো। টোকিও ঘোরার ব্যাবস্থা
করলো বিরাজুল। সে গাড়ি ঠিক করে আসার পরে আমরা সকলে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে আমরা একজন
গাইডকে পেয়েছি। তিনি একটু আধটু বাংলা জানেন। তিনি বললেন যা সেটি আমরা ভালো বাংলাতেই
বলব।তিনি বললেন, মূল টোকিও শহরটি ২৩টি বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের রাজকীয়
প্রাসাদটি টোকিও শহরের হৃৎকেন্দ্রে অবস্থিত। প্রাসাদটি পাথরের প্রাচীর, পরিখা ও প্রশস্ত
বাগান দিয়ে পরিবেষ্টিত। রাজপ্রাসাদের পূর্ব-দিক সংলগ্ন বর্ণিল মারুনোউচি এলাকাটি জাপানি
ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র। প্রাসাদের দক্ষিণে আছে কাসমিগাসেকি এলাকাটি, যেখানে বহু জাতীয় পর্যায়ের সরকারী কার্যালয়
অবস্থিত। তার পশ্চিমে রয়েছে নাকতোচো উঁচু এলাকা, যেখানে জাপানের জাতীয় দিয়েত বা সংসদ
ভবনটি অধিষ্ঠিত। টোকিওতে কোনও কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকা নেই। শহরটি অনেকগুলি গুচ্ছ
গুচ্ছ শহুরে এলাকা নিয়ে গঠিত; এই এলাকাগুলি মূলত রেল স্টেশনগুলিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে,
যেখানে দোকান, বিপণীবীথি, হোটেল, ব্যবসায়িক কার্যালয় ভবন এবং রেস্তোরাঁগুলি ঘন সন্নিবিষ্ট
হয়ে অবস্থান করছে। এই গুচ্ছগুলির মাঝে মাঝে অপেক্ষাকৃত কম ভবনবিশিষ্ট অনাধুনিক এলাকাগুলি
অবস্থিত, যদিও এগুলিতেও একই ধরনের ভবনের দেখা মেলে। টোকিওর ভবনগুলি বিভিন্ন ধরনের হয়ে
থাকে। এখানে এখনও প্রাচীন জাপানি কাঠের বাড়ির দেখা মেলে, যদিও এদের সংখ্যা ধীরে ধীরে
কমে আসছে। এছাড়া এখানে মেইজি পর্বে (১৮৬৮-১৯১২) নির্মিত অনেক পাথর ও ইটের তৈরি ভবন
আছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে শহরে কংক্রিট ও ইস্পাত দিয়ে অনেক গগনচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ
করা হয়। শহরকেন্দ্রের পূর্বভাগে অবস্থিত আলোয় ঝলমল করা গিনজা নামক কেনাকাটার এলাকাটি
বিশ্বখ্যাত। রাজপ্রাসাদের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত কান্দা এলাকাটিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়,
বইয়ের দোকান ও প্রকাশনী অবস্থিত। টোকিওর নগর-উদ্যানগুলি ইউরোপ-আমেরিকার মত বড় না
হলেও সংখ্যায় প্রচুর এবং এগুলিতে প্রায়ই মনোরম সুদৃশ্য বাগান থাকে।টোকিও জাপানের
প্রধানতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। টোকিও শহরে অত্যাধুনিক জীবনধারার সাথে ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ
ঘটেছে। এখানে নিয়নের আলোয় উদ্ভাসিত গগনস্পর্শী অট্টালিকা যেমন আছে, তেমনই আছে ঐতিহাসিক
সব মন্দির। সমৃদ্ধ মেইজি সিন্ত এর সুউচ্চ প্রবেশদ্বার এবং চারপাশ ঘিরে থাকা বৃক্ষশোভিত
এলাকার জন্য পরিচিত। টোকিও জাদুঘর জাপান ও
এশিয়ার ধ্রুপদী শিল্পকলা ও ইতিহাস বর্ণনাকারী অনেক প্রদর্শনী আছে। একই এলাকাতে একটি
বিজ্ঞান জাদুঘর, একটি চিড়িয়াখানা এবং দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকলা জাদুঘর অবস্থিত।
রাজপ্রাসাদের আশেপাশেও বেশ কিছু বিজ্ঞান ও শিল্পকলা জাদুঘর আছে। এছাড়া শহর জুড়েই
অন্যান্য আরও অনেক ধরনের জাদুঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পুনর্নির্মিত
নাট্যমঞ্চ পরিদর্শন করা সম্ভব। টোকিওর নাট্যশালাগুলিতে নিয়মিতভাবে ঐতিহ্যবাহী
কাবুকি নাটকের পাশাপাশি আধুনিক নাটক পরিবেশন করা হয়। এছাড়া ঐকতান, গীতিনাট্য, ইত্যাদি
পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীত ও নৃত্যকলা সর্বদাই পরিবেশিত হয়। এদের মধ্যে বিশ্বববিদ্যালয়
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গাইড বললেন, এলাকার পুরাতন, সরু রাস্তাগুলি দিয়ে হাঁটলে দোকানপাট,
-পরিহিতা নারী ও ৭ম শতকে নির্মিত চোখে পড়বে।
এর বিপরীতে এলাকাতে গেলে উদ্দাম উচ্ছ্বল নৈশক্লাব
ও গান গাওয়ার বার দেখা যাবে। এলাকায় পাওয়া
যাবে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির দোকানের সমাহার। মদ্যপান করার জন্য ইজিকায়া
নামের ঘরোয়া জাপানি ধাঁচের পাবগুলি টোকিওর সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শহরের কেন্দ্রের
কাছে আছে যেটি টুনা মাছের নিলামের জন্য বিখ্যাত।
সুউচ্চ নামক স্থাপনার শীর্ষে জনসাধারণের জন্য
উন্মুক্ত পর্যবেক্ষণ মঞ্চ থেকে গোটা টোকিও শহরের বিস্তৃত পরিদৃশ্য অবলোকন করা সম্ভব।
টোকিওর খাবারের দোকানগুলি সবসময়ই জমজমাট থাকে।
ও এলাকাতে গেলে হালের কিশোর-কিশোরীদের
পোশাকশৈলী সম্বন্ধে ভাল ধারণা পাওয়া যায়।টোকিও জাপানের পরিবহনের প্রধান কেন্দ্র।
এছাড়া এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পরিবহন কেন্দ্র। বৈদ্যুতিক রেল, পাতালরেল,
বাস ও মহাসড়কের এক ঘনসন্নিবিষ্ট জালিকা টোকিওর সেবায় নিয়োজিত। রেল সমগ্র জাপানের
জন্য কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন।আমরা হিকারি এক্সপ্রেস নামে উচ্চগতিসম্পন্ন রেলগাড়িতে চাপলাম। এখান দিয়ে যাওয়া যায় টোকিও থেকে উত্তর জাপান অভিমুখী
সমস্ত রেললাইনগুলি,' উয়েনো' এসে মিলেছে। অন্যদিকে
হনশু এবং টোকিওর পশ্চিমের শহরতলী থেকে আগত রেলগাড়িগুলির শেষ গন্তব্যস্থল পর্যন্ত।
আমরা ঘুরছি আর গাইডের গল্প শুনছি, কিছু
বেসরকারী মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক রেলপথ নগরে পরিবহন সেবা দান করে। টোকিওর, চিবা বন্দর
শহরে অবস্থিত। অন্যদিকে টোকিও উপসাগরের কাছে অবস্থান আভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহন সেবা
প্রদান করে।টোকিও সারা বছরই ব্যস্ত থাকে। জানুয়ারির ১ তারিখে গ্রেগরিয়ান মতে নববর্ষ
উদযাপন করা হয়; এসময় সমাধিমন্দিরগুলিতে অনেক তীর্থযাত্রীর ভিড় হয়। এপ্রিলে সারা
টোকিও শহর জুড়ে চেরি পালিত হয়। মে মাসে উৎসব
পালিত হয়, যেখানে বহনযোগ্য সমাধির শোভাযাত্রা হয়। জুলাই মাসে সুমিদা নদীর আতশবাজি
উৎসব হয়। আগস্ট মাসে ওবোন নামে একটি বৌদ্ধ ছুটির দিবসে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা হয়।
একই মাসে উৎসবে কোয়েঞ্জি রেলস্টেশনের আশেপাশে শোভাযাত্রা-মিছিলের আয়োজন করা হয়।২০১৪
সালে নামক পর্যটকদের সহায়তাকারী ওয়েবসাইটে
"স্থানীয়দের সাহায্যদানকারী মনোভাব", "নৈশজীবন", "কেনাকাটা",
"স্থানীয় গণপরিবহন" এবং "রাস্তাঘাটের পরিচ্ছন্নতা"-র ক্ষেত্রে
"শ্রেষ্ঠ সামগ্রিক অনুভূতি। গাইড বয় আমাদের
সাখালিনের বনভূমির কথাও শোনালেন। সাখালিনের বনভূমিগুলির বৈশিষ্টসূচক প্রতিনিধিরা প্রধান
ভূখণ্ডের প্রাণী, চরিত্রগত ও দুধ চাষের দুধঃ এইগুলি অনেকগুলি ভেজাল এবং তরমুজ। দ্বীপের
দক্ষিণে কলাম পাওয়া যায়। এই প্রাণী জাপান থেকে আনা হয়েছিল, কিন্তু তাদের সংখ্যা
এত ছোট।সাখালিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রবল শত্রু বাদামী ভালুক। এই দৈত্যগুলির বৃদ্ধি
দুই মিটার এবং ওজন - 500 কেজি পর্যন্ত পৌঁছায়। লাল, ধূসর এবং রৌপ্য-কালো বনের মধ্যে
অনেক লাল শিয়াল আছে। নদী প্লাবনভূমিতে সর্বত্র হরেস এবং গহ্বর পাওয়া যায়, আপনি নদী
otters দেখতে পারেন। আমাদের গাইড আমাদের কৌতূহল দেখে হিমবাহ ও সাগালিন সম্পর্কে অনেক
অজানা কথা বললেন। জাপান এসেছি বলে কি আর অন্য অজানা খবর শুনব না। হতেও তো পারে কোনদিন
হিমবাহের সামনাসামনি হলাম। অতএব, "জানার কোন শেষ নাই "....কিন্তু সাখালিনের
হরিণটি বেশিরভাগ পেঁচা দ্বারা পালিত হয়। বন্য দ্বীপ শুধুমাত্র উত্তর অংশে পাওয়া যায়।
Srenely দ্বীপ এবং musk হরিণ প্রায় migrates। এটি রেড বুক তালিকাভুক্ত করা হয়।হিমবাহ হল বরফের বিরাট চলমান স্তুপ বা নদী। সাধারণত পার্বত্য
অঞ্চলে শীতকালে তুষার পড়ার হার গ্রীষ্মে গলনের হারের চেয়ে বেশি হলে পাহাড়ের উপরে
তুষার জমতে শুরু করে এবং জমে শক্ত বরফে পরিণত হয়। এই বরফজমা এলাকাটিকে বরফক্ষেত্র
(Ice field) বলে। যখন এই জমা বরফ নিজের ওজনের ভারে এবং মাধ্যাকর্ষণের টানে ধীরগতিতে
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে শুরু করে, তখন তাকে হিমবাহ বলে। তবে জমা বরফ এত পুরু
হয় এবং এর নিম্নগতি এতই ধীর যে তাকে স্থিরই মনে হয়।বিশু হিমবাহ সম্পর্কে কিছুকথা
বললো, ভারতের উত্তরে পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালাতে অবস্থিত গ্রেট বালটোরা পৃথিবীর
দীর্ঘতম হিমবাহ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় আটান্ন
কিলোমিটার। হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের কাছে রংবুক ও কাশৃঙ্গ হিমবাহ অবস্থিত।
অস্ট্রিয়া-ইতালি সীমান্তে আল্পস পর্বতমালার সিমিলাউন হিমবাহে উনিশশো একানব্বই সালে
একজন মানুষের অবিকৃত দেহের সন্ধান পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় দেহটি প্রায় পাঁচহাজার
বছর সেখানে সমাহিত হয়ে ছিল।হিমবাহ ও সাকালিনের বর্ণনা শুনে আমাদের আশ্চর্য অনুভূতি
হল। পৃথিবী একটা ছোট গ্রহ। তার সব খবর জানা কঠিন। আর মহাকাশ বা ব্রম্ভান্ডের কথা বাদই
দিলাম। অসীম এই মহাকাশ। কত বিচিত্র। তার কিছুই কি আমরা জানি? নিজেকে খুব বোকা লাগে যখন জ্ঞানের অহংকারে মত্ত
হয়ে আস্ফালন করি ডাঁহা আহাম্মক আমরা।
প্রথমে প্রশ্ন হচ্ছে
তাঁত বলতে কি বুঝি? তার অংশগুলির নাম ও পরিচয়
জানতে ইচ্ছে করে। পানুহাটে আমি তাঁত দেখেছি। দেখে মনে প্রশ্ন জেগেছে তাঁত যন্ত্রের
বিভিন্ন অংশের নাম কি?
তাঁত হচ্ছে এক ধরণের
যন্ত্র যা দিয়ে তুলা বা তুলা হতে উৎপন্ন সুতো থেকে কাপড় বানানো যায়। বাংলার অনেক
জায়গায় তাঁতশিল্প দেখা যায়। কাটোয়ার তাঁত,শান্তিপুরি
তাঁত, সিঙ্গিগ্রামের তাঁত, ঘোড়ানাশ মুস্থুললর তাঁত আমাদের কাছাকাছি। তাছাড়া বাংলার
অনেক গ্রামে তাঁতশিল্প আছে। আমরা তার কতটুকু জানি? এবার আলোচনা করব তাঁতের প্রকারভেদ।
তাঁত বিভন্ন রকমের
হতে পারে। খুব ছোট আকারের হাতে বহন যোগ্য তাঁত থেকে শুরু করে বিশাল আকৃতির স্থির তাঁত
দেখা যায়। আধুনিক বস্ত্র কারখানা গুলোতে স্বয়ংক্রিয় তাঁত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সাধারণত তাঁত নামক
যন্ত্রটিতে সুতা কুণ্ডলী আকারে টানটান করে ঢুকিয়ে দেয়া থাকে। লম্বালম্বি সুতাগুলিকে
"টানা" এবং আড়াআড়ি সুতাগুলিকে "পোড়েন" বলা হয়।
যখন তাঁত চালু করা হয় তখন নির্দিষ্ট সাজ অনুসারে
সুতা টেনে নেয়া হয় এবং সেলাই করা হয়। তাঁতের আকার এবং এর ভেতরের কলা কৌশল বিভিন্ন
রকমের হতে পারে। বাংলা তাঁত যন্ত্রে ঝোলানো হাতল টেনে সুতো জড়ানো মাকু (spindle) আড়াআড়ি
ছোটানো হয়। মাকু ছাড়াও তাঁতযন্ত্রের অন্যান্য প্রধান অঙ্গগুলি হল - "শানা",
"দক্তি" ও "নরাজ"। শানার কাজ হল টানা সুতার খেইগুলিকে পরস্পর পাশাপাশি
নিজ নিজ স্থানে রেখে টানাকে নির্দিষ্ট প্রস্থ বরাবর ছড়িয়ে রাখা। শানার সাহায্যেই
কাপড় বোনার সময় প্রত্যেকটি পোড়েনকে ঘা দিয়ে পরপর বসানো হয়। শানাকে শক্ত করে রাখার
কাঠামো হল দক্তি। একখানি ভারী ও সোজা চওড়া কাঠে নালী কেটে শানা বসানো হয় আর তার পাশ
দিয়ে কাঠের উপর দিয়ে মাকু যাতায়াত করে। শানাটিকে ঠিক জায়গায় রাখার জন্য তাঁর উপরে
চাপা দেওয়ার জন্য যে নালা-কাটা কাঠ বসানো হয় তাঁর নাম "মুঠ-কাঠ"। শানা
ধরে রাখার এই দুখানি কাঠ একটি কাঠামোতে আটকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই সমগ্র ব্যবস্থাযুক্ত
যন্ত্রটির নাম "দক্তি"।
শানায় গাঁথা আবশ্যকমত
প্রস্থ অনুযায়ী টানাটিকে একটি গোলাকার কাঠের উপর জড়িয়ে রাখা হয়, একে বলে টানার
"নরাজ"। আর তাঁতি যেখানে বসে তাঁত বোনেন, সেখানে তাঁর কোলেও একটী নরাজ থাকে-
তাঁর নাম "কোল-নরাজ"। টানার নরাজের কাজ হল টানার সুতাকে টেনে ধরে রাখা আর
কোল-নরাজের কাজ হল কাপড় বোনার পর কাপড়কে গুটিয়ে রাখা।
"তাঁত বোনা"
শব্দ কটি এসেছে "তন্তু বয়ন" থেকে। তাঁত বোনা যার পেশা সে হল তন্তুবায় বা
তাঁতী। আর এই তাঁতের উপর যারা বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে তাদেরকে ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ার
বলা হয়।
তাঁত শিল্পের ইতিহাস
সঠিক বলা মুশকিল ইতিহাস থেকে জানা যায়, আদি বসাক সম্প্রদায়ের তাঁতিরাই হচ্ছে আদি তাঁতি
অর্থাৎ আদিকাল থেকেই এরা তন্তুবায়ী গোত্রের লোক। এদেরকে এক শ্রেণীর যাযাবর বলা চলে-
শুরুতে এরা সিন্ধু অববাহিকা থেকে পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদে এসে তাঁতের কাজ শুরু করেন।
কিন্তু সেখানকার আবহাওয়া শাড়ির মান ভালো হচ্ছে না দেখে তারা নতুন জায়গার সন্ধানে বের
হয়ে পড়েন, চলে আসেন বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে। সেখানেও আবহাওয়া অনেকাংশে প্রতিকূল
দেখে বসাকরা দু'দলে ভাগ হয়ে একদল চলে আসে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, অন্যদল ঢাকার ধামরাইয়ে।
তবে এদের কিছু অংশ সিল্কের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজশাহীতেই থেকে যায়। ধামরাইয়ে কাজ
শুরু করতে না করতেই বসাকরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে ভাগ হয়ে
অনেক বসাক চলে যান প্রতিবেশী দেশের চোহাট্টা অঞ্চলে। এর পর থেকে বসাক তাঁতিরা চৌহাট্টা
ও ধামরাইয়া' এ দু'গ্রুপে স্থায়ীভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েন।
তাঁত শিল্পের ইতিহাস
সম্পর্কে আরো জানা যায় যে তাঁত শিল্প মনিপুরীরা অনেক আদিকাল থেকে এই বস্ত্র তৈরি করে
আসছে মনিপুরীদের বস্ত্র তৈরির তাঁতকল বা মেশিন প্রধানত তিন প্রকার যেমন, কোমরে বাঁধা
তাঁত, হ্যান্ডলুম তাঁত ও থোয়াং। এই তাঁতগুলো দিয়ে সাধারণত টেবিল ক্লথ, স্কার্ফ, লেডিস
চাদর, শাড়ি, তোয়ালে, মাফলার, গামছা, মশারী, ইত্যাদি ছোট কাপড় তৈরি হয়। প্রধানত নিজেদের
তৈরি পোশাক দ্বারা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতেই মনিপুরী সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁত শিল্প গড়ে
উঠেছিল। পরবর্তীকালে তাঁত শিল্পে নির্মিত সামগ্রী বাঙালি সমাজে নন্দিত ও ব্যবহৃত হয়।
বিশেষ করে নকশা করা ১২ হাত মনিপুরী শাড়ি, নকশি ওড়না, মনোহারী ডিজাইনের শীতের চাদর বাঙালি
মহিলাদের সৌখিন পরিধেয় হয়ে ওঠে।
তবে এই শিল্প কিভাবে
বিকাশ লাভ করে সেই ঘটনাবলী বিশেষ আকর্ষণীয়৷ কুটির শিল্প হিসাবে হস্তচালিত তাঁত শিল্প
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পূর্বকালে কেবল দেশেই নয় বহির্বাণিজ্যেও বিশেষ স্থান দখল করেছিল৷
বংশ পরস্পরায় দক্ষতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে বয়ন উৎকর্ষতায় তাঁতিরা সৃষ্টি করেছিল এক অনন্য
স্থান৷ তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট ''নরসিন্দির শেখের মাঠ'' গ্রামে
গড়ে উঠেছিল যা ''বাবুর হাট'' নামে পরিচিত ছিল৷ অবিভক্ত বঙ্গদেশের বিভিন্ন স্থানে হস্ত
চালিত তাঁতে কাপড় বোনা হলেও বাণিজ্যিকভাবে শেখের চরের কাপড়ের সমকক্ষ কেউ ছিল না। সুলতানি
ও মোঘল যুগের উত্তরাধিকারী হিসাবে এখানকার তাঁতিদের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁদের
রং, নকশা ও বনন পদ্ধতি অন্যান্য সমস্ত এলাকা থেকে আলাদা। এক সময় এদের পূর্বপুরুষরাই
জগদ্বিখ্যাত মসলিন, জামদানি ও মিহি সুতি বস্ত্র তৈরি করে সারা বিশ্বে বাংলা তথা ভারতবর্ষের
গৌরব বৃদ্ধি করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে অসম কর গ্রহণ, তাঁতের ওপর আরোপিত নানা বিধি
নিষেধ এবং ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের জন্য ভারতীয় তাঁত শিল্পের সর্বনাশ ঘটে। এরপর
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ও এই শিল্পের বিকাশের জন্য বিশেষ কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি।
বাজার অর্থনীতির সম্প্রসারণ এই অবস্থাকে আরো জটিল করে তুলেছে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির
ফলে নানা ডিজাইনের , নানা রঙের, নানা ধরণের কাপড়ের ভারতীয় বাজারে অবাধ প্রবেশের ফলে
তাঁত শিল্পীরা আরো সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ভারতীয় তাঁত শিল্পের
অবনতির অন্যতম প্ৰধান কারণ হলো কারখানায় তৈরি কাপড়ের ব্যাপক বিস্তৃতি, সুপরিকল্পিতভাবে
নির্মিত এইসব বস্ত্রের মান ও গুণ তুলনামূলকভাবে উন্নত। এই কাপড়ের সাথে প্রতিযোগিতায়
টিকে থাকতে গেলে যে ব্যাবসায়িক ও অর্থনৈতিক সাহায্য প্রয়োজন তা তাঁত শিল্পীরা পাচ্ছেন
না। এই পেশার সাথে জড়িত মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় পেশাগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোনো
ব্যাবস্থা নেই। পরিবর্তিত রুচি ও পছন্দের সাথে সঙ্গতি রেখে তাঁত বস্ত্রেও কিছু পরিবর্তন
আনা প্রয়োজন, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় সামর্থ তাঁতি সমাজের কাছে নেই ফলে তারা সনাতন
পদ্ধতিতে সেই সনাতনী মানের কাপড় উৎপাদন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থা তাঁত শিল্পের
বিকাশের পথে প্রধানতম অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে।
তাঁত শিল্প নিয়ে
এতক্ষন যা যা আলোচনা করলাম তা সমস্তই তথ্যভিত্তিক। তাঁত শিল্পের প্রকৃত অবস্থা জানতে
হলে বাংলার এমন জায়গায় যাওয়া প্রয়োজন যেখানের মানুষরা এখনও তাঁত শিল্পের সাথে সক্রিয়ভাবে
যুক্ত।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের
দুই স্থানের তাঁত বিখ্যাত- ধনেখালি ও শান্তিপুর।
ধনেখালি, নাম শুনলেই
মনে পড়ে যায় তাঁত, বালুচরি আর তসর-এর হাজারো বৈঢিত্র্য, যেমন রং তেমনি তার বাহার। তবে
তাঁতের শাড়ির কদরই যেন সবথেকে বেশি। হুগলি জেলার এই অঞ্চলের কারিগররা নানা সুতোর নিপুণ
বুননে তাঁতের শাড়িকে যেভাবে তৈরি করেন তা এক কথায় অনবদ্য। কিন্তু এই কাজ করতে করতে
আজ তাদের জীবনই রংহীন হয়ে পড়েছে। এনাদের কথা বলতে গেলেসেই পুরোনো কথাই বলতে হবে আবার।
সময় হয়তো অনেকটাই বদলেছে কিন্তু ধনেখালির তাঁতশিল্প ও তাঁতিদের জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন
আসেনি।
ধনেখালি ও মামুদপুর,
পাশাপাশি এই দুই এলাকাকে নিয়ে মোট চারটি তাঁত সমবায় রয়েছে তাঁতিদের। এক সময় প্রতিটি
সমবায়ে চারশোজনেরও বেশি তাঁতি কাজ করতেন। তাদের সবরকম সহায়তা এই সমবায়গুলি থেকেই করা
হতো। কিন্তু বর্তমানে এই সব সমবায়ে তাঁতির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। নতুন প্রজন্ম আর
এই শিল্পে আসছে না। পুরোনোরাও যারা আছেন তারা অনেকে ছেড়ে যাচ্ছেন, আর যারা আছেন তারা
মনে করছেন এই শিল্পে থেকে প্রাপ্য মূল্য তারা পাচ্ছেন না। তাদের দাবি যে একটা শাড়ি
বুনে তারা ১০০ টাকা পান কিন্তু তা দিয়ে সংসার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না, তাই কোনো
তাঁতিই আর চাইছেন না যে তাদের সন্তানরা এই শিল্পে আসুক। আর তাঁতিরা এখন সমবায়গুলি থেকে
সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছেননা, ফলে ধনেখালির তাঁত ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে
আশার কথা হলো নানা সরকারি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে তাঁতিদের জন্য। সেই সুদিনের আশায়
বুক বাধছে নয়া প্রজন্মের তাঁতিরা।
বাংলার আর এক তাঁত
শিল্পের পীঠস্থান শান্তিপুর, তাঁত শিল্পের জন্য যার প্রসিদ্ধি সারা ভারত তথা সারা বিশ্ব
জুড়ে। প্রথমেই শান্তিপুরের তাঁত শিল্পের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানা প্রয়োজন। মোঘল আমলেই
সর্বপ্রথম শান্তিপুরের উৎকৃষ্ট তাঁতের কাপড় সারা ভারত জুড়ে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মহারাজা
কৃষ্ণচন্দ্র রায়ও এই শিল্পের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। শান্তিপুরের তাঁত নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানিও আগ্রহী ছিল, তাদের আমলে বছরে প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড
মূল্যের তাঁত বস্ত্র রপ্তানি করা হতো।
তবে এই শিল্প কিভাবে
বিকাশ লাভ করে সেই ঘটনাবলী বিশেষ আকর্ষণীয় ৷ কুটির শিল্প হিসাবে হস্তচালিত তাঁত শিল্প
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পূর্বকালে কেবল দেশেই নয় বহির্বাণিজ্যেও বিশেষ স্থান দখল করেছিল
৷ বংশ পরস্পরায় দক্ষতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে বয়ন উৎকর্ষতায় তাঁতিরা সৃষ্টি করেছিল এক
অনন্য স্থান ৷ দেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট ''নরসিন্দির শেখের মাঠ'' গ্রামে গড়ে উঠেছিল
যা ''বাবুর হাট'' নামে পরিচিত ৷ দেশের বিভিন্ন স্থানে হস্ত চালিত তাঁতে কাপড় বোনা হলেও
বাণিজ্যিকভাবে শেখের চরের কাপড়ের সমকক্ষ কেউ নেই । সুলতানি ও মোগল যুগের উত্তরাধিকারী
হিসাবে এখানকার তাঁতিদের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা । তাদের রং , নকশা ও বনন পদ্ধতি
অন্যান্য সমস্ত এলাকা থেকে আলাদা । এক সময় এদের পূর্বপুরুষরাই জগদ্বিখ্যাত মসলিন ,
জামদানি ও মিহি সুতি বস্ত্র তৈরি করে সারা বিশ্বে বাংলা তথা ভারতবর্ষের গৌরব বৃদ্ধি
করেছিল । কিন্তু ব্রিটিশ আমলে অসম কর গ্রহণ , তাঁতের ওপর আরোপিত নানা বিধি নিষেধ এবং
ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের জন্য ভারতীয় তাঁত শিল্পের সর্বনাশ ঘটে । এরপর স্বাধীনতার
পরবর্তী সময়ও এই শিল্পের বিকাশের জন্য বিশেষ কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি । বাজার অর্থনীতির
সম্প্রসারণ এই অবস্থাকে আরো জটিল করে তুলেছে । মুক্ত বাজার অর্থনীতির ফলে নানা ডিজাইনের
, নানা রঙের , নানা ধরণের কাপড়ের ভারতীয় বাজারে অবাধ প্রবেশের ফলে তাঁত শিল্পীরা আরো
সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ।
ভারতীয় তাঁত শিল্পের
অবনতির অন্যতম প্ৰধান কারণ হলো কারখানায় তৈরি কাপড়ের ব্যাপক বিস্তৃতি , সুপরিকল্পিতভাবে
নির্মিত এইসব বস্ত্রের মান ও গুণ তুলনামূলকভাবে উন্নত । এই কাপড়ের সাথে প্রতিযোগিতায়
টিকে থাকতে গেলে যে ব্যাবসায়িক ও অর্থনৈতিক সাহায্য প্রয়োজন তা তাঁত শিল্পীরা পাচ্ছেন
না । এই পেশার সাথে জড়িত মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় পেশাগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোনো
ব্যাবস্থা নেই । পরিবর্তিত রুচি ও পছন্দের সাথে সঙ্গতি রেখে তাঁত বস্ত্রেও কিছু পরিবর্তন
আনা প্রয়োজন , কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় সামর্থ তাঁতি সমাজের কাছে নেই ফলে তারা সনাতন
পদ্ধতিতে সেই সনাতনী মানের কাপড় উৎপাদন করতে বাধ্য হচ্ছেন । এই অবস্থা তাঁত শিল্পের
বিকাশের পথে প্রধানতম অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে ।
তাঁত শিল্প নিয়ে
এতক্ষন যা যা আলোচনা করলাম তা সমস্তই তথ্যভিত্তিক । তাঁত শিল্পের প্রকৃত অবস্থা জানতে
হলে বাংলার এমন জায়গায় যাওয়া প্রয়োজন যেখানের মানুষরা এখনও তাঁত শিল্পের সাথে সক্রিয়ভাবে
যুক্ত । চলুন তাহলে যাওয়া যাক সেইসব জায়গায় ।
ধনেখালি নাম শুনলেই
মনে পড়ে যায় তাঁত , বালুচরি আর তসর-এর হাজারো বৈঢিত্র্য , যেমন রং তেমনি তার বাহার
। তবে তাঁতের শাড়ির কদরই যেন সবথেকে বেশি । হুগলি জেলার এই অঞ্চলের কারিগররা নানা সুতোর
নিপুণ বুননে তাঁতের শাড়িকে যেভাবে তৈরি করেন তা এক কথায় অনবদ্য । কিন্তু এই কাজ করতে
করতে আজ তাদের জীবনই রংহীন হয়ে পড়েছে । এনাদের কথা বলতে গেলেসেই পুরোনো কথাই বলতে হবে
আবার । সময় হয়তো অনেকটাই বদলেছে কিন্তু ধনেখালির তাঁতশিল্প ও তাঁতিদের জীবনে তেমন কোনো
পরিবর্তন আসেনি ।
ধনেখালি ও মামুদপুর
, পাশাপাশি এই দুই এলাকাকে নিয়ে মোট চারটি তাঁত সমবায় রয়েছে তাঁতিদের । এক সময় প্রতিটি
সমবায়ে চারশোজনেরও বেশি তাঁতি কাজ করতেন । তাদের সবরকম সহায়তা এই সমবায়গুলি থেকেই করা
হতো । কিন্তু বর্তমানে এই সব সমবায়ে তাঁতির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে । নতুন প্রজন্ম আর
এই শিল্পে আসছে না । পুরোনোরাও যারা আছেন তারা অনেকে ছেড়ে যাচ্ছেন , আর যারা আছেন তারা
মনে করছেন এই শিল্পে থেকে প্রাপ্য মূল্য তারা পাচ্ছেন না । তাদের দাবি যে একটা শাড়ি
বুনে তারা ১০০ টাকা পান কিন্তু তা দিয়ে সংসার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না, তাই কোনো
তাঁতিই আর চাইছেন না যে তাদের সন্তানরা এই শিল্পে আসুক । আর তাঁতিরা এখন সমবায়গুলি
থেকে সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছেননা , ফলে ধনেখালির তাঁত ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে
। তবে আশার কথা হলো নানা সরকারি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে তাঁতিদের জন্য । সেই সুদিনের
আশায় বুক বাধছে নয়া প্রজন্মের তাঁতিরা।
যারা বাইরে কাজ করতে
গেছে তারা পরিযায়ী শ্রমিক তারা ঘর ভাড়া ছেড়ে দিয়ে হয়তো বাড়ি আসবো বলে রাস্তায়
বেরিয়েছে বেরিয়ে দেখে যানবাহন বন্ধ লকডাউন এ কোন যানবাহন নেই সাইকেল কিনে তারা দিনের
পর দিন সাইকেল চালিয়ে কেউ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মাঝ পথে কত পরিচয়
মরে গেছে তার হিসাব রাখে কে?
একদল শ্রমিক দল বেঁধে
হাঁটছিল বাড়ি ফিরবে বলে। তারা ক্লান্ত হয়ে
16 লাইনের উপর হঠাৎ একটা ট্রেন এসে তাদের উপর দিয়ে চলে গেল 16 জন পরিযায়ী মারা গেল।
আর কিছু ক্ষত বিক্ষত হল।
আরো কত পরিশ্রমিক
কেউ কাজ করে আসছে কাঁধে করে নিয়ে আসছে ছেলে-মেয়েদের তারপরে মালপত্র হয়তো রিকশায়
আনছে হেঁটে আসছে তারা এই ভাবে কতজন পথে মারা যাচ্ছে কেউ বাড়ি ফেরার আশায় হয়তো বাড়ি
ফিরছি কিন্তু বাড়ি ফিরেও সেই কোয়ারান্টাইন 14 দিনে কোয়ারান্টিনে থেকে হয়তো পজিটিভ
মরে যাচ্ছে আবার কেউবা বেঁচেও যাচ্ছে।।
হাজারে হাজারে পরিশ্রমী
যখন মারা যাচ্ছে তখন সরকার থেকে সিদ্ধান্ত হলো এবার ট্রেন চলবে পরিযায়ী শ্রমিকদের
আনার জন্য তাদের জন্য ট্রেন চালু হলো কিন্তু সবাই তো তা জানেনা মাঝপথে যারা আছে তারা
তো ট্রেনের খবর রাখে না তারা হেঁটে চলেছে হাঁটতে হাঁটতে তো লাইনে বিশ্রাম নিচ্ছে আর
তখনই তাদের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে ট্রেন তারা কাটা পড়ছে সেই ট্রেনে।
পরিযায়ী যারা তারা
ফিরবার চেষ্টা করছে এবং ফিরতে গিয়ে যখন যানবাহন পাচ্ছে না তখন হেঁটে চলে আসছে সাইকেলে
আসছে।রতন কেরালায় থাকে সে অনেকদিন আগে থেকেই আছে কিন্তু আসবার সময় সাইকেল না পাওয়ায়
খুঁজে খুঁজে বেড়াচ্ছে কোথায় একটা সাইকেল পাওয়া যায় হঠাৎ একটা দোকানের সামনে সাইকেল
গুলো দেখে চারদিক নিজে দেখে বাধ্য হয়ে চুরি করল সে একটা চিঠি রেখে গেল সরি কিছু মনে
করবেন না আমার কোন উপায় না থাকায় আমি সাইকেলটা চুরি করলাম।
এখন সরকারের নির্দেশক্রমে
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ট্রেন চালু হয়েছে বাঁশ কিছু কিছু চালু হয়েছে কিন্তু দুমাস
অব্দি কোনো যানবাহন ছিল না সেই দুমাসে পরিচয় শ্রমিকদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না
।তাদের কষ্ট দেখে
প্রত্যেক রাজ্য সরকার যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে এবং নিজের খরচে তাদের নিয়ে এসেছে এসে
নিজের জায়গায় 14 দিন কোয়ারান্টিনে রেখেছে তারপর তাদের বাড়ি যেতে দিয়েছে।
এখনো পর্যন্ত যা
জানা গিয়েছে তাতে বিজ্ঞানীরা বলছে এটা বাতাসে এই ধরনের সংক্রমণ বাতাসে ছড়ায় না মানুষ
থেকে মানুষে ছড়ায় অতএব মানুষের যে চেইন শিকল সেটাকে বন্ধ করতে হবে লকডাউন এর মাধ্যমে
যদি কিছু লোক যদি ঘরে থাকে তাহলে এই চেনটা ভাঙ্গা যাবে এবং তার ফলে রোগের সংক্রমণ আটকানো যাবে। কিন্তু যথাযথ লকডাউন সকলে না মানায়
এই আক্রান্ত কিন্তু দিনে দিনে বেড়েই চলেছে জানিনা কেউ এর ভবিষ্যৎ কি। কর্ণাটকের এখনো
পর্যন্ত কোন টিকা আবিষ্কৃত হয়নি কোনো ওষুধ নেই শুধুমাত্র নিয়ম ভালো করে হাত ধুতে
হবে বারেবারে হাত ধুতে হবে মাক্স দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে রাখতে হবে হাতে গ্লাভস পড়তে হবে
এবং নিজেকে সতর্ক থাকতে হবে হাঁচি-কাশি যাদের আছে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে এবং কোনো
রকমেই জানো মানুষের সেই সর্দির ড্রপলেট অন্য কোন মাধ্যমে পরিবাহিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য
রাখতে হবে। কিন্তু ভারতবর্ষে 70 পারসেন্ট মানুষ কৃষিজীবী তারা চাষের উপর নির্ভর করে
বেঁচে থাকে তারা লেখাপড়া কম জানে তাহলে এই নীতি মানতে তাদের কতটা অসুবিধা হবে সেটা
আন্দাজ করা যাচ্ছে। আজ অংশুমান খবরে শুনছেন, মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে,
খুব তাড়াতাড়ি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি দল আমফানের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করতে পশ্চিমবঙ্গে
যাবে। আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর ক্ষয়ক্ষতি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে
ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবার নেতৃত্বে একপ্রস্থ বৈঠক করেছে জাতীয় সঙ্কট ব্যবস্থাপনা
কমিটি বা এনসিএমসি। বৈঠকে ক্যাবিনেট সচিব বলেছেন, 'রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি
ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ পরিষেবা, পানীয় জল ও টেলিযোগাযোগ
ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করতে হবে।' তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই রাজ্যকে ১০০০ কোটি টাকা
দেওয়া হয়েছে। সেনা ও এনডিআরএফ রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুনর্গঠনের কাজ
করে চলেছে। প্রয়োজনে আরও বেশি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যকে
দেওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত রেখেছে কেন্দ্র সরকার।
এদিনের ভিডিও–বৈঠকে
উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা। তিনি রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা
করেছেন। জানিয়েছেন, জোরকদমে উদ্ধারকাজ চলছে। সেইসঙ্গে সেনা ও এনডিআরএফ–সহ কেন্দ্রীয়
সংস্থাগুলো যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়েছে, তার জন্য কেন্দ্রকে
ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। এই নিয়ে গত ৫ দিনে চতুর্থবার বৈঠক করল কমিটি।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়
আমফান রাজ্যে আছড়ে পড়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে গত শুক্রবার পরিস্থিতি খতিয়ে
দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজ্যে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখার
পর প্রাথমিকভাবে ১০০০ কোটি টাকা সাহায্য ঘোষণা করেন তিনি। আরও জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির
সঠিক মূল্যায়ন করে কেন্দ্রের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠালে আরও সাহায্য করা হবে।
মহাকাল এবার হয়ত
পৃথিবী ধ্বংস করার পথে,নব সৃষ্টির আশায়।
==============================
সুদীপ ঘোষাল নন্দন
পাড়া খাজুরদিহি পূর্ব বর্ধমান 713150
Apply for SBI's Simply Click Credit Card and Earn upto 10x SBI Rewards on all online purchases and also on all offline purchases! You can get 5%-20% instant discount on Flipkart, Amazon etc. online sites in different times. You can purchase things with no cost EMI using this card. It takes only 5 mins to apply. 0 |
SAMSUNG-এর নিজস্ব সাইট থেকে SAMSUNG-এর মোবাইল কিনুন। পাবেন 50% পর্যন্ত ছাড়। সঙ্গে ব্যাঙ্কের ছাড়। নো কস্ট ইএমআই। বিশদ জানতে আগ্রহীরা এখানে ক্লিক করুন SAMSUNG-এর মোবাইল ছাড়াও হেডফোন, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি সব কিছুতে পাবেন অতিরিক্ত ছাড়। |
Get Medicine delivered to your doorstep! Also save 30% Off on First Medicine Order. 18% Off (up to Rs 2,000) + 12% cashback (up to Rs 200) Code - CK30 |
Buy Latest Fashion at 50-90% Off only on Ajio!CLICK HERE to Visit Ajio Store Now!
|
Enjoy Upto 50% Off on Sports Merchandise and Accessories reebok. |
Amazing Discounts on Addidas Website! Get Upto 50% Off. Click here To Shop Now |