সততা
অলোক দাস
রনি বিকালে মাঠে খেলতে যাচ্ছিল। হঠাৎ রাস্তার ধারে কিছু পরে থাকতে দেখে সে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে সাইকেলটা কিছুটা পিছিয়ে এনে দেখলো ভাঁজ করা কিছু টাকা পড়ে আছে। সে রাস্তার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নাই; টাকাটা কুড়িয়ে নিয়ে ভাঁজ খুলে দেখলো, চারশো নব্বই টাকা। রনি সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল; যার টাকা সে যদি খুঁজতে আসে। কিন্তু প্রায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও সে কাউকে দেখতে পেল না। খেলার দেরি হয়ে যাওয়ার জন্য সে মাঠে চলে গেল।
খেলা শেষে রনি যখন বাড়ি ফিরছিল; তখন তার পাশের পাড়ার দশ-বারো বছর বয়সী একটা ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। রনি সাইকেল থামিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল, "কি রে কাঁদছিস কেন?"
-- "মা মেরেছে।" ছেলেটা কান্না থামিয়ে বলল।
-- "কেন মেরেছে? কি করেছিস তুই?"
-- "আমি কিছু করিনি!"
-- "তবে তোর মা শুধুই তোকে মারল?"
-- "না আমি টাকা হারিয়ে দিয়েছি; সেজন্য মেরেছে!"
-- "কোথায় হারিয়েছিস টাকা?"
-- "জানি না! আমি ধান কুড়িয়ে ছিলাম; মা ওই গুলো দোকানে বিক্রি করতে পাঠিয়েছিল। আমি প্যান্টের পকেটে টাকা রেখেছিলাম, কিন্তু ঘরে এসে টাকা দেখতে পাচ্ছি না!"
-- "কত টাকার ধান বিক্রি করেছিলি?"
-- "চারশো নব্বই টাকার।"
রনি ভাবলো আমার কুড়ানো টাকাটা তাহলে এরই টাকা। বলল, "তোর টাকাটা কে কুড়িয়েছে আমি জানি।"
-- "বলো না গো কে কুড়িয়েছে! টাকা না পেলে মা আমাকে আবার মারবে!"
-- "এই নে তোর টাকা।" রনি পকেট থেকে টাকাটা বার করে ছেলেটাকে দিল। তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো অগাধ সুখের এক মৃদু হাসি; যা কোন পূর্ণিমার চাঁদের শোভার থেকে কম নয়।
____________________________________