কিছু স্মৃতি মনে রয়
কিছু স্মৃতি মুছে যায়,
বহু স্মৃতির প্রাচীর আছে
এই বিশ্বময়।।
কত গান কত কথা
বুকে আছে কত ব্যথা,
তাহা কি লুকানো যায়?
এক ঝমঝম বৃষ্টির সন্ধ্যায় নুপুর বাড়ির জালনার পাশে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। বাজ পরছে কর কর, আর তার সাথে মুষলধারে অবিরাম বৃষ্টি। সেদিন তা ছিল রোববার ছুটির দিন তার স্বামী প্রত্যুষ ঘরের বিছানার উপর বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলে। এমন সময় সে নুপুরকে চা যাওয়ার কথা বলল, কারণ তার মাথা ধরেছে। কিন্তু অন্যমনস্ক নুপুর কিছুই বুঝতে পারলো না, শুনতে ও পেল না। প্রত্যুষের কাজ শেষ হলে, সে নুপুরের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার দুচোখের জল কনা।
সে কিছু না বলে দু'কাপ চা করে আনল এবং নুপুরকে অত্যন্ত শান্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করল - কি হয়েছে তোমার, মন খারাপ? নুপুর একটু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে - না, তেমন কিছু না এমনি। প্রত্যুষ তার দিকে তাকিয়ে সবিনয় ভাবে বলল - শোনো আমি কিছুটা হলেও তোমার মন পড়তে জানি, আমিতো আছি তোমার কোন ভয় নেই। তারপর নুপুর প্রত্যুষের দিকে তাকিয়ে হাউ হাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করলো। প্রত্যুষ তাকে সান্তনা দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল - শান্ত হও। চাটা খাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তখনো তার ঠোট ও হাত-পা ভয়ে কাঁপছে। নুপুর নুপুর চোখ ভরা জল নিয়ে চায়ের কাপ হাতে তুলে করুন কন্ঠে বলতে লাগলো - আজ সকালে বাজারে গিয়ে ফিরে আসার পথে দেখলাম, বলেই সে আবার কান্না ভেঙে পড়ে। তারপর অত্যন্ত চাপা কন্ঠে কানতে কানতে বলে - আমার প্রিয় মতি তাকে হারিয়ে ফেললাম, কেউ যেন গাড়িচাপা দিয়ে চলে গেল। ছটফট করতে করতে, আত্ম চিৎকার করে জলজ্যান্ত মতি টা চোখের সামনে মারা গেল। সে ছিল আমার বড় আদরের। আদর করে একদিন নাম দিয়েছিলাম তার মতি। সাদার অপর কালো সুন্দর পশমের একটি আদরের ছোট্ট সোনা। বলতে বলতে তার চোখের জল বলতে বলতে তার দুচোখের জল আর বাধ মানে না। কাঁদো কাঁদো গলায় প্রত্যুষ কে বলে - রোজ সকালে আমার মতিলাল একটা নাড়াতে নাড়াতে তার লকলকে জিভ টা বার করে আমার দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমি কিছু খাবার দিলে সেই সোনামুখ করে খেয়ে খুশি হয়ে নাচতে নাচতে চলে যেত। এইতো আজ সকালে একটা পাউরুটি পেয়ে কত খুশি না ছিল সে। এত কান্নাকাটি দেখে প্রত্যুষের মনও খারাপ হতে থাকলেও, সে নুপুরকে এক গ্লাস জল দিল। তারপর নুপুর একটু স্বাভাবিক হলে, কাঁদো কাঁদো গলায় প্রত্যুষ কে বলে - ঠিক দুপুর বেলা সে ঘেউ ঘেউ করতে করতে যেন বলে উঠতো দাও গো আমার খুব খিদে পেয়েছে খেতে দাও। আমি তাকে ভাত নিয়ে যেই না দিতে যেতাম অমনি তার হাত দুটি দিয়ে যেন আমাকে আদর করতে চাইত আর লাফিয়ে উঠতো। মতির এরকম মৃত্যুতে নুপুরের খুব কষ্ট হল। সে তার মতি কে খুব ভালোবাসতো এবং তার প্রাণের চেয়েও প্রিয় ছিল। বিবেকানন্দের ভাষায়-" জীবে প্রেম করে যেইজন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর "। নুপুরের এই জীব প্রেম এবং মতি রুপি কুকুরটা যে কখন এত আন্তরিক হয়ে উঠলো ভেবে তার স্বামী প্রত্যুষের গর্ব বোধ হল। সে উপলব্ধি করতে পারল যে মানুষের মানুষের যেমন আন্তরিকতা থাকে তেমনি করেই ফুলের সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব, যাকে উপলব্ধি করা যায় কিন্তু দেখা যায় না।
--------/-------/-------