করোনার সময়ে ভালবাসা !
মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
রাকিব টগবগে তরুণ । তারুণ্যের উচ্ছ্বাস তার চোখেমুখে । মনের ভেতরে রাকিবের চিরবসন্ত। ভার্সিটি থেকে পাশ করার পর তেমন কাজ নেই। কাজ করার প্রতি তেমন আগ্রহও নেই। সারাদিন ঘুম আর খাওয়ার ধুম।
রাকিব একটু প্রেমিক কিসিমের। যাকে দেখে তাকেই ভাল লাগে। কিন্তু বলতে পারেনা। শুধু স্বপ্ন দেখে কিছুদিন। তারপর ভেঙ্গে যায় । নতুন করে আবার পথচলা শুরু হয়।
মিলি থাকে রাকিবদের পাশের বাড়িতে । সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে মিলি । চটপটে এবং খুব আর্ট করে কথা বলে। রাকিব মিলিকে পছন্দ করে। তবে মিলির তেমন পছন্দ নয়। সেটা আবার রাকিবকে বুঝতে দেয়না। একই গলিতে তাদের বাসা। দেখা হলেই মিষ্টি হাসি দেয় মিলি ।
মিলির ফেসবুকে মাঝে মাঝে উঁকি দেয় রাকিব। ভাল লাগে দেখতে। মিলি প্রায়ই নতুন নতুন ছবি দেয়। দেখে খুশি হয় রাকিব। মিলিকে একদিন সাহস করে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায় । মিলি গ্রহণ করেনা ।রাকিব বিষয়টা তেমন গুরুত্ব দেয়না।
রাকিব একটু নির্লিপ্ত স্বভাবের । সময় কেটে যেতে থাকে। বাবা অবসর নিয়েছেন। চাকুরি করতেন। তেমন একটা অভাব নেই। সংসার চলতে থাকে রাকিবদের তাই ভালভাবেই ।
একদিন ফেসবুকে করোনা সম্পর্কে জানতে পারে রাকিব । কি জিনিস তেমন কিছু বুঝতে পারেনা। পরপর কয়েকদিন একই জিনিস দেখে। ভাইরাসটা বিপদজনক বুঝতে পারে। বাইরে বের হলেই হতে পারে এমন কথা শুনতে পায়। রাকিব ভিতু মানুষ । বাসায় থাকে। ফেসবুক দেখে। এটাই তার বড় কাজ। অন্য তেমন কোন কাজ নেই।
"কি করছেন? কেমন আছেন? কাল একটু বাসার নিচে আসতে পারবেন? " মিলি একদিন রাতে মেসেঞ্জারে প্রশ্ন করে।
রাকিব বেশ অবাক হয়। এতদিন পরে মিলি তাকে একটু পাত্তা দিচ্ছে দেখে আপ্লুত হয়। সাথে সাথেই উত্তর দেয়। মনের ভেতর কেমন কেমন করে।
পরেরদিন মাস্ক পরে সকাল সকাল মিলির বাসার সামনে হাজির হয় রাকিব। মুখে মাস্ক পরার পর তাকে কেমন জানি লাগছে। বাড়ির সামনের কুত্তাটাও তাকে দেখে কয়েকবার ঘেউঘেউ করেছে। মাস্ক পরা ফেসবুক দেখে শিখেছে রাকিব। অনভ্যস্ত তাই কেমন জানি লাগছে রাকিবের। এই বিপদের দিনে পরে থাকতে হবে তাও বুঝে গেছে সে ।
"রাকিব ভাই এসেছেন? একটু বাজারে যেতে পারবেন? আব্বু একটু অসুস্থ। তাছাড়া বৃদ্ধ মানুষদের এখন বাইরে যাওয়া ঠিক না। একটা লিস্ট করেছি। প্লিজ সব দেখে দেখে নিয়ে আসবেন।"বেশ মিষ্টি করে বলে মিলি।
রাকিব একটু হতাশই হয়। ভেবেছিল প্রেমপত্র বা এই টাইপের কিছু পাবে। কিন্তু বাজারের লিস্ট পেয়ে কিছুটা দমে যায় । মিলিকে বুঝতে দেয়না। অনুগত বয়ফ্রেন্দের মতো সামনের দিকে অগ্রসর হয়।
এভাবেই চলতে থাকে কয়েকদিন। মিলি প্রায় রাকিবকে ফেসবুকে নক করে বাজারের জন্য । আস্তে আস্তে রাকিব অনেকটাই প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে।
মাঝে মাঝেই এখন মিলিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে রাকিব। একদিন স্বপ্নে দেখে মালদ্বীপে ঘুরে বেড়াচ্ছে !
আস্তে আস্তে সময় স্বাভাবিক হয়ে আসে। করোনা বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে থাকে।
একদিন মিলির সাথে রাতে কথা বলতে খুব ইচ্ছে হয় রাকিবের। অনেক খোঁজাখুঁজি করে। কোনভাবেই আর খুঁজে পায়না মিলির আইডি । অভিজ্ঞ ফেসবুক ইউজার সে। বুঝতে পারে ব্লক খেয়েছে কোন কারণে । কারণ একমাত্র ব্লক করলেই এরকম হয়। কিন্তু ব্লক করার কোন কারণ খুঁজে পায়না!
-----------------
মোঃ ফজলুল কবির
মির্জাপুর
রাজশাহী