ঋভু চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্প- ছায়ার চাপান
রজতের মনটা বেশ খুশি খুশি। কয়েকদিন আগে থেকেই প্রায় সব কিছু গোছানো হয়ে গেছে, এবার যা আছে শুধুই টুক টাক। তবে হাসপাতালের কাজ গুলোই বাকি। অফিসে বসে বসেই ল্যাপটপে নিজের মেলটা একবার চেক করে নার্সিংহোমের সাইডে গিয়ে একবার সব কিছু দেখে নিল। যাক নামটা না লিখলেও বাকি সব কিছু লিখে দিয়েছে।একবার ওদের ম্যানেজারকে ফোন করতে হবে, শুক্রবার আর শনির বিকালটা এখানে বসবে না, বাড়ির আর একটু কাছে আরেকটা নার্সিংহোমেও কথা হয়েছে, সকালটাতে এখানে বসবে সেই সঙ্গে ঐ দুদিনের বিকালটাও।সকালেই আদিতির সাথে কথা হয়েছে।কথায় কথায় বলেছে,'তাহলে ডাক্তার বাবু গ্রামের মায়া শেষ?' একটু থতমত খেলেও উত্তর দেবার চেষ্টা করেছে,'তা কেন হবে? কাজ করলাম তো, এবার তো একটু নিজের কথা ভাবতে হবে। তাছাড়া মা আছে, তুমিও আছো।'
-আমি! হাসালে।
-কেন ?
-বাদ দাও, কলেজ আছে।
আর কথা না বাড়িয়ে রজত মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে নেয়, সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। কিছু সময় পর একবার মাকে ফোন করবার জন্য মোবাইলটা বের করতে যাবে এমন সময় সেন্টারের একজন এএনএম সিস্টার মহুয়া ম্যাডাম রুমের দরজাটা খুলে জিজ্ঞেস করলেন, 'স্যার আসব?'
রজত ঘাড় তুলে বলে, 'ও হ্যাঁ আসুন, কি ব্যাপার ?'
-একটা পেসেন্ট এসেছে, ইনজুরি আছে।
মোবাইল ঘাটতে ঘাটতেই রজত বলল, 'মেল না ফিমেল?'
-আদিবাসীদের মেয়ে।
একটু চমকে উঠল রজত। নামে হেল্থ সেন্টার হলেও এটা আসলে একটা গ্রামের ছোট স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তবে গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী মানুষের জন্য প্রতিদিন চব্বিশ ঘন্টাই ডাক্তার থাকেন। এখন যেমন রজত থাকছেন। তবে সেভাবে তো আদিবাসীরা এই সেন্টারে ডাক্তার দেখাতে খুব একটা আসে না। জিজ্ঞেস করল,'লোকাল?'
-সম্ভবত না, বাইরের।
কিছুটা পরিষ্কার হল।এই গ্রামে বাইরের রাজ্য থেকে অনেক আদিবাসী চাষবাসের কাজ করতে আসে।তাদেরই কেউ এসেছে হয়ত।জিজ্ঞেস করল, 'ছোট না বড়? গৌতম নেই? কিছু ফুটলে বা কাটলে স্টিচ করে দিতে বল।' গৌতম এই হেল্থ সেন্টারের গ্রুপ ডি কর্মী হলেও কিছু কিছু কাজ দারুন শিখে নিয়েছে, যা স্টিচ করছে বড় কম্পাউন্ডার কেও হার মানাবে। কয়েকদিন আগেই এক মন্ত্রী সপরিবারে এই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় কোন কারণে মন্ত্রীর স্ত্রী একটু অসুস্থ হয়ে সন্ধ্যেবেলা এই হাসপাতালে আসতে বাধ্য হন। গৌতম যেভাবে তাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেন তা একরকম অবিশ্বাস্য। গৌতমের খুব নামও হয়, সেদিন আবার রজত কোন একটা মিটিং এ কলকাতায় ছিলেন।
স্বভাবতই গৌতম নেই শুনে মেজাজটা একটু বিগড়ে গেল রজতের, একটু ঝাঁঝিয়ে বলে উঠলেন,'তাহলে নতুন ডাক্তার বাবুকে বলুন, আমার তো আজকের দিন টাই।'
–স্যার উনি তো স্কুল হেল্থের ডিউটিতে গেছেন।
–ফেরেন নি ?
-না, স্কুলটাতে অনেক স্টুডেন্ট, আমি ঐ গ্রামের সেকেন্ড এ.এন .এমকে ফোন করেছিলাম, হাইস্কুল এমনিতেই দুদিন লাগবে, তারমধ্যে উঁচু ক্লাসের কিছু স্টুডেন্টের কাউন্সিলিং আছে।
–তাহলে আপনিই ড্রেসিং করে ছেড়ে দিন।
শেষের কথাগুলো শুনেই এ.এন এম ম্যাডাম একটু বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন, 'স্যার, সেটা পারলে তো কোন সমস্যাই নয়, মেয়েটির ভ্যাজাইনাল পেনিট্রেশন হয়েছে।'
শেষের কথাগুলো শুনেই রজত একটু চমকে ওঠেন,'পেনিট্রেশন! আপনি ভুল বলছেন না তো ?'
মহুয়া ম্যাডাম একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলে উঠল,'স্যার. জেনিটাল পার্টে ভালো রকমের ইনজুরি, তলপেটে রক্তের সাথে আরো কিছু থাকতে পারে।'
-থাকলেও কিছু করবার নেই। আমার হাতে তো কিছু নেই, বি.এম ও এইচ, সেখান থেকে সি এম ও এইচের কানে খবর যাবার আগেও অন্য খবর হয়ে যাবে। মেয়েটার সেন্স আছে?
-সেন্স আছে, তবে খুব টেনস্ড, কেমন যেন গুটিয়ে আছে ।
-সেটাই স্বাভাবিক, বয়স কত ?
-এগারো বারো।
একটা লম্বা শ্বাস ফেলে রজতবাবু এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন, 'চলুন।'
রজতবাবু এই গ্রামে বছর দুই পোস্টিং পেয়েছেন। বাইরের রাজ্য থেকে মাস্টার ডিগ্রি করে আসার পর বাবার কথা মত এই সরকারি চাকরি নিয়ে কিছুতো অভিজ্ঞতা তো হয়েছেই, কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা আগে হয় নি আশেপাশের বেশ কয়েকটা গ্রাম থেকে পেসেন্ট আসে, ভিড় হয়।কয়েকটা পলিটিক্যাল ঝামেলা হয়েছে।মাথা ফাটা, হাত ভাঙা এসব বেশ কমন ব্যাপার।কিন্তু এই রকম ঘটনা তো এখানে কোন দিন শোনেনি।রজত আর সময় নষ্ট না করে ছোট অপারেশন থিয়েটারের দিকে যান।অবশ্য কয়েকটা ল্যানসেট, মসকিউটো ফরসেপ আর কয়েকটা নিডল হোল্ডার থাকলেই যদি কোন ঘরকে অপারেশন থিয়েটর বলা যায়।
২
জানলার ওপাশেই আস্তে আস্তে বিকাল নামছে।নিজের অফিসের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে একটু দূরে মাঠ গুলোতে চোখ আটকে গেল।এবছর ভালো জল দিয়েছে।কয়েকদিন আগেই গ্রামের একটা লোককে ডেকে পাঠাতে হয়েছিল।ব্যাটা কিছুতেই তার মেয়েটাকে বড় হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল না। কিশোরী মেয়ে কয়েক মাস ধরে সাইকেল বন্ধ।রজত সিস্টের সন্দেহ করছিল। কিন্তু ডেকে ধমকাতেই লোকটি কিরকম অদ্ভুত ভাবে বলে উঠল,'সবই তো বুঝলম ডাক্তার বাবু, কিন্তু লিয়েট কে যাবেক, উয়ার মা তো যেতি পারবেক নাই, আমি ইখন তো যাবো নাই, বোরোর জল দিছে, রোয়া টো হয়ি যাক, না হলে তো লেবারগুলো পালাবেক।'
–কিন্তু তার আগে তোমার মেয়ের সমস্যা তো আরো বাড়বে, এটা নিয়ে টানা চার মাস হল।
–ডাক্তার বাবু আপনি কি বুঝবেন? কেউ যদি জেনে যায় বিটিটর মেয়েলি কোন রোগ আছে, বিয়েই হবেক নাই। আপনিই দেখে ওষুধ দেন।
তখনই ধমকায় রজত।'কয়েকদিনের মধ্যে যদি বড় হাসপাতালে না নিয়ে যাবে তবে আমি নিজেই গ্রামের সবাইকে বলে দেবো।'
এই লেবার গুলোই খুব সমস্যার। বাইরের রাজ্য থেকে এসে এখানে চাষের কাজ করে।সকাল সকাল ওরা মাঠে কাজে নেমে পড়ে।সবাই নাকি ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসে।শাড়ির উপর একটা জামা পরে মাঠে নেমে ধান পোঁতে, কাটে, ঝারে, মাথায় করে নিয়েও যায়। কাজ করতে করতেই কোন এক পাশে বসে নিজেদের দুধের ছেলে মেয়েকে দুধ খাওয়ায়। এদের পুরুষগুলোকে মদ খেয়ে বিভিন্ন জায়গায় শুয়ে থাকতেও দেখা যায়।তবে হেল্থ সেন্টারের সিস্টার দিদিমণিদের ওরা এলেই একটু রাগ হয়। রজতকে সোজাসুজি কিছু না বললেও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে, 'ঐ এলো, এবার কথায় কথায় ওষুধ দাও, না হলে প্যাড দাও। এদের আবার একটা দিলে মন ভরে না।'
কিন্তু এইরকম সমস্যা তো কোন দিন হয় নি। নাকি বলেনি ?
অদিতি অবশ্য সব কিছু শুনে বেশ গম্ভীর ভাবে বলে, 'ব্যাপারটা কিন্তু খুব গোলমেলে। আমি কয়েকদিন আগে একটা খবর পড়ছিলাম, একটা পুরো হাসপাতাল নাকি এইরকম একটা ঘটনার জন্য ভেঙে তছনচ করে দেয়। ওদের কারোর নাম বেরিয়ে গেছিল। তুমি কিন্তু সাবধানে থাকবে।'
সেই সময় ওতটা পাত্তা না দিলেও পরে মাথায় কথাগুলো নাড়াচাড়া করবার সময় একটু অন্য রকম লাগল। তবে বি এম ও এইচ স্যার সব শুনে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে বলেন, 'শুনুন, একটা অফ দ্যা রেকর্ড কথা বলি এ দেশে এই ধরণের ঘটনা যত হয় সব যদি ব্যবস্থা করতে হয় তবে আমাদের অন্য কোন কাজ আর করতে হবে না। তার থেকে ট্রিটমেন্ট করে ছেড়ে দিন।'
কথাগুলো রজতের ভালো লাগেনি। একটু জোর দিয়ে বলেও ছিল, 'এটা কি করে হবে স্যার, ফুল পেনিট্রেশন, মনে হচ্ছে সিমেন লেগে আছে, বিভিন্ন জায়গায় ইনজুরি আছে, এটা তো ঠিক কথা নয়।' বি এম ও এইচ স্যার সব কিছু শুনে বলেন, 'আপনি এক কাজ করুন মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দিন, ওরা প্রয়োজন পড়লে ফরেনসিকও করতে পারবে।'
কথাগুলো ঠিকই বলেছেন, কিন্তু তার জন্য তো একটু থানাতেও খবর দিতে হবে। বিরক্তিকর অবস্থা, শেষ দিন আর যত উটকো ঝামেলা। থানাতে ফোন করবার আগেই একবার গৌতমের সাথে কথা বলা দরকার। কিন্তু গৌতমকে ফোন করতেই ওদিক থেকে শুনল, 'হ্যাঁ দাদা. আপনাকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম। আমাকে আজ রাতে একটু বাড়ি যেতে হবে, ফোন এসেছিল। বাবার শরীরটা ভালো নেই, আমি আমার এক বন্ধুকে ফোন করেছি, তাও একটু যেতে হবে। আপনি কোন চিন্তুা করবেন না, আমি কাল সকালের মধ্যে ফিরে আসবো।'
রজত আর কোন কথা বলতে পারে না। গৌতমের বাড়িটা কাছেই এটা ওর কাছে একটা সুবিধা। কিন্তু অফিসিয়ালি তো এই সেন্টারের ….।
এবার মাথা ব্যথা করছে। আর কোন উপায় নেই, আবার সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। থানাতে ফোন করে একটা ব্যবস্থা করতে হবে।কিন্তু অফিসার ফোন ধরেই বলে উঠলেন, 'শুনুন ডাক্তার বাবু, দুটো গাড়ি, একটা ডেপুটেশনে গেছে আরেকটা পেট্রোলিংএ, তবে ওটাও ....।ঠিক আছে। বুঝতেই তো পারছেন অনেকটা দূর, তাও দেখছি।'
পুলিশ দেখবার আগেই অবশ্য পঞ্চায়েত অফিস থেকে প্রধান সাহেব ফোন করলেন, 'ডাক্তার বাবু পুলিশ ফুলিশ কেন টানছেন, কি এমন হয়েছে, ওসব ছোটখাটো ব্যাপারে পুলিশ এলে গ্রামের বদনাম হবে।আপনারা শহরের লোক কি বুঝবেন।'
–কিন্তু ওটাতো ছোট খাটো ব্যাপার নয়, গ্রামের কাজ করতে আসা একটা আদিবাসী মেয়েকে আপনাদের গ্রামের একজন রেপ করে দিয়েছে, মেয়েটার সারাটা শরীরে কাটার দাগ, সিমেনের দাগ, সেটা কিভাবে ছোট ঘটনা হবে? মুচকি হাসলেন প্রধান সাহেব। 'ডাক্তার বাবু, ওরা আসে ঠিকই কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের গ্রামেই তো ওরা কাজ করে না, আশে পাশে চল্লিশটা গ্রামে ওরা কাজ করে। আপনি কি গ্রামের সব ছেলেদের বীর্য পরীক্ষা করে বেড়াবেন?'
–তা কেন ঐ মেয়েটি তো লোকটিকে চেনে, দেখেওছে।
–ধরুন মেয়েটি দেখে নি, ধরুন চেনে না, ধরুন মেয়েটি চোখে কম দেখে, অথবা মেয়েটি বলবে না। আপনি কিভাবে সব কিছু ম্যানেজ করবেন? তাছাড়া ডাক্তার বাবু আরেকটা কথা বলি, আপনি মাত্র এই কয়েক বছর আছেন, কেউ কিছু ঝামেলা ঝঞ্ঝাট করে না, কিন্তু আজ করবে না বলেই যে কাল করবে না এটা তো কেউ বলতে পারেনা। করতেই পারে, ধরুন কোন একটা ওষুধ খুঁজতে এল আপনার সেন্টার দিতে পারল না। গ্রামের লোক একটু বোঝে কম, ভেঙে দিল সব। কিই বা করতে পারবেন বলুন।তারপর দেখুন পেসেন্ট আসে, তাদের মধ্যে কেউ যদি বড় কোন জায়গায় অথবা ধরুন আমার কাছেই এসে বলে,'ডাক্তার বাবু এক্কেবারে ভালো নয়, শরীরে খুব বেশি হাত দেয়। তখন তো সেই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে আপনার সেন্টারে যেতে হবে।'
তখন কথাগুলো শুনে সাময়িক একটু ভয় লাগলেও অদিতিকে ফোন করে কথাগুলো বলবার পর তার কথা শুনে একটু ভরসা পায় রজত, জোর পায়।
গ্রামের কয়েকজনকে ফোন করে গাড়ি ব্যবস্থা করতে বলে।প্রথমে সবাই শুনে গাড়ি দিতে রাজি হলেও পরে একে একে সবাই জবাব দিতে আরম্ভ করে।রজত সেন্টারের সিস্টারদের সাথে কথা বলে সবাইকে বোঝানোর কথা বলে।সবাইকে এরপর কোনদিন গ্রামের কোন মেয়ের এই রকম হলে কি করা যাবে ভাবতে বলে। ফোনে সবাই সব কিছু শুনে হ্যাঁ হ্যাঁ বললেও কিছু ক্ষণ পরেই কেউ আবার ফোন করে কোন একটা বাহানা করে, কেউ আবার আর কোন জবাবই দেয় না রজতের খারাপ লাগে, ভয় লাগে। মেয়েটার কিছু হয়ে যাবে নাতো ?
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যের মুখে সিস্টার মহুয়াদি এসে বলেন, 'স্যার মেয়েটা অনেকটাই ঠিক হয়েছে, উঠে বসেছে। মা বাবার সাথে দেখা করবার কথা বলছে।' এবার রজত একটু শান্তি পায়। কিন্তু কে বা কারা মেয়েটার ওরকম অবস্থা করল সেটা তো জানতে হবে। যেমন করে হোক বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু নিয়ে যাবে কিভাবে? একটু পরেই সন্ধে নামবে, পঁচিশ ত্রিশ কিমি রাস্তা, কিভাবে যাবে? রজত কিছু ক্ষণ বসেই একজন সিস্টারকে ডেকে বলেন, 'ম্যাডাম, আপনার বাড়িতে একবার ফোন করে জানিয়ে দিন, অবশ্য আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে তো।'
–ঠিক বুঝলাম না।
-একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ে রজত।যদি আপত্তি না থাকে আমি মেয়েটিকে আমার বাইকে বড় হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।ওকে মাঝে বসাবো, আপনি পিছনে বসবেন।
-কিন্তু স্যার মেয়েটি তো বাড়ি যাবার জন্যে বায়না করছে, ওর বাবা মাও এসেছে। ওরা আবার বলছে কালকেই ওদের দেশে ফিরে যাবে, আমরা যেন মেয়েটাকে ছেড়ে দি।
–ছেড়ে দি!
- হ্যাঁ স্যার, খুব কান্নাকাটি করছে। আপনার সাথেও দেখা করবার জন্যে খুব জোর করছে। আমি কোনরকমে ঠেকিয়ে রেখেছি।
-সবই বুঝলাম।কিন্তু একে যদি না নিয়ে যায়, আমার পরে যারা আসবে তাদের সমস্যা হবে আরো বেশি। কথাগুলো বলে রজত আবার কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, 'ভিলিয়াম জাতীয় কিছু ইনজেকশন আছে? পুশ করে দিন। তারপর পিছনের দরজা দিয়ো……।'
৩
এবার শান্তি হল রজতের।মেয়েটিকে ভর্তি করা গেল, ট্রিটমেন্ট আরম্ভ হল। হাসপাতালের বাইরের একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রজত সিস্টারকে বলে উঠলেন,'ম্যাডাম দুজনে যেতে ভয় করবে না তো ?'
-কিসের ভয়?
-এই এতটা রাস্তা বাইকে আমার সাথে যেতে হবে তো।
সিস্টার কোন জবাব না দিয়ে হেসে ওঠেন।রজত তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন, 'মহুয়া ম্যাডাম,কাল ফাস্ট হাফে কিছু ওষুধ ড্যামেজ দেখাবে, তারমধ্যে কয়েকটা ভিলিয়াম ইনজেকশনও দেবে। আর ডিসপোসাল সিরিঞ্জটা একটু ধুয়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলবেন।'
চারদিকে তখন অন্ধকার মহুয়া ম্যাডাম রজত স্যারের কথাগুলো শুনে তার মুখের দিকে তাকান। রজতের মুখ তখন সিগারেটের ধোঁয়ায় অস্পষ্ট।
Sougata Chatterjee
B1-85/1, V.K.Nagar, M.A.M.C
Durgapur-713210, Paschim Bardhaman
Phno-9002157241/9732381127
Email-wribhuwriter.dgp@gmail.com