ফুটবল
অনিন্দ্য পাল
বটতলার মোড়ের কাছে এসে গাড়িটা থামালো কিঙ্কর। এখানেই আশপাশে কোথাও বাড়ী হবে শঙ্কর ওরফে তেঁতুলের। গাড়ি থেকে নেমে সামনের মুদির দোকানদার কে জিজ্ঞাসা করতে দেখিয়ে দিল।তেঁতুলদার বাড়ির সামনে ঝুপসি অন্ধকার। গ্রামের সন্ধ্যে সাতটা মানে যেন নিঝুম রাত! মোবাইলের আলোটা জ্বেলে অন্ধকার হাতড়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখলো, ইট গাঁথা তিন ইঞ্চি দেওয়াল, মাথায় বাঁশের ফ্রেমে অ্যাসবেসটস। ঘরটাতে ঢুকতে গেলে মাথা নীচু করে ঢুকতে হবে। অবাক হয়ে গেল কিঙ্কর!
হাতের ব্যাগটা কোনমতে দরজার সামনে রেখে কড়া নাড়া দিল। ভিতরে জড়ানো গলার শব্দ। এই গলার জন্যই তো আজ সে অতলান্তিকের ওপারে ধনকুবের।
এই গলাই তো বলেছিল, ' ফুটবল তোর হবে না, কেন সময় নষ্ট করছিস, তোর ভাগ্যে ওই কলম পেষাই আছে। ' ভেঙে গেছিল কিঙ্কর। তার ফুটবলার হবার স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছিল সেদিন। আর মাঠে যায় নি। পুড়িয়ে দিয়েছিল বুট, হোর্স সব। তারপর জয়েন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিদেশ, চাকরি শুধু উত্থান আর উত্থান।
কিন্তু ফুটবলার না হতে পারার যন্ত্রনা আজও তাকে খেয়ে চলেছে। আজ সে এসেছে সেই প্রতিশোধ নিতে।
ব্যাগটা খুলে ফুটবল, বুট, হোর্স বার করে হাতে নিল।
এটাই তার প্রতিশোধ।
দরজা খুলে যে মানুষটা বের হল, তাকে চেনে না কিঙ্কর। কঙ্কালসার দেহ, রোদে পোড়া রং, আর অদ্ভুত চাউনি। 'আরে কিঙ্কর যে? বাপরে, এত দিন, না বছর পর! ব্যাপার কি?'
মুখে দেশী মদের গন্ধ। একটা ভাঙাচোরা অতীত অহঙ্কার তার সামনে। জ্বলন্ত চোখে দেখছে তার হাতে ধরা ফুটবলটার দিকে।
তারপর হঠাৎ হেসে উঠলো হো হো করে। আরে এসব কি হবে? ওসবে আর আমি নেই। নিয়ে যা, নিয়ে যা ওসব। আমার জীবনটাই শেষ করে দিল ওই শুয়োরের ...। হাসতে হাসতেই কখন যেন বদলে গেছে শঙ্কর। হঠাৎ একটা তীব্র রাগে ফুটবলটা কিঙ্করের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দূরে অন্ধকারের মধ্যে ছুঁড়ে দিল। বিড় বিড় করে বলতে লাগলো, ' আমার সব খেয়েছিস, ছিবড়ে করে দিয়েছিস আর নয়, আর নয়। এবার আমাকে আমার মতো থাকতে দে। ' বলতে বলতে দরজার বাইরে কিঙ্কর কে রেখেই ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল শঙ্কর।
ভিতরে ভিতরে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে কিঙ্কর। এই মানুষটার উপর প্রতিশোধ নিতে সে এই সন্ধ্যা রাতে তিরিশ কিলোমিটার একাই ড্রাইভ করে এল। একটু দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরলো কিঙ্কর। চেঁচিয়ে বললো, 'শঙ্করদা আসছি আমি।'
গাড়ির দিকে হাঁটছিল কিঙ্কর। হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে দুদ্দাড় করে ছুটে এসে তার পা দুটো জড়িয়ে ধরলো। টালমাটাল কিঙ্কর নিজেকে সামলে নিয়ে মোবাইলের আলোতে দেখলো, শঙ্কর!
হঠাৎ তীব্র কাতর গলায় শঙ্কর বলে উঠলো, ' ক্ষমা কর আমাকে, ফুটবল তোর খুব হতো। আমি চাইনি। আর কারো হোক আমি চাইনি। ক্ষমা করে দে, আমাকে ...'
কিঙ্করের বুকের গভীর থেকে পনেরো বছরের পুরোনো একটা পুঁজরক্তময় দীর্ঘশ্বাস হঠাৎ মুক্তির আনন্দে আত্মহারা হয়ে কোথায় চলে গেল।
=============================
ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল
গ্রাম -- জাফরপুর
পোঃ-- চম্পাহাটিি
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
Mob: 9163812351
ধন্যবাদ অনেক।