রম্যরচনা || জীবনের সরনী পাল্টে || চন্দন চক্রবর্তী
জীবনের সরনী পাল্টে
চন্দন চক্রবর্তী
এই ডাক্তার,ডাক্তার ! দেখতো ছেলেটা ঘুমিয়ে আছে কিনা!
কি বললে ও নেই!
ও কি আমার ওপর রাগ করে চলে গেল ! আমিই কারন?
বৌটার সুগার। আমার প্রেসার । ওষুধেই অনেক টাকা লাগে । দিন দিন ব্যাংকে সুদ কমছে । বয়স হল । দোকানটা বেচে দিয়ে টাকাটা ব্যাংকে রেখেছিলাম। সেই সামান্য কটা টাকার সুদে সংসারটা গড়াতে আর চায় না! মাঝে মাঝে ওষুধ কেনা বাদ দিতে হয়।
বয়স্ক ছেলে,এমএ পাস। কোথায় বাবাকে দেখবে,তা নয় !
পাস করে কিছুদিন দোকান করল । পারল না । বাড়িতে ছেলে পড়াতো । তাও জমল না । শেষে সব ছেড়ে তিনবেলা গিলে,খালি বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ানো !
আমি এখন বুড়ো হয়েছি । উপায় না দেখে দোকানটা বেচে টাকাটা ব্যাংকে রাখলাম । সেওতো তোর কারণেই ! দোকানদারের ছেলে হয়ে তুই তাও পারলি না !
বলার মধ্যে শুধু বলেছিলাম,আর খাওয়াতে পারব না । আর তাইতে তুই বাবা কে শাস্তিটা দিলি !
এই যে পুলিশ আমাকে নিয়ে যাও । আমি জেলে যেতে রাজি । নির্দ্বিধায় শাস্তি মাথা পেতে নেব । জেলের ভাতটাতো পাবো !
বৌটার কথা ভাবব না !
না ! কি আর করা !
শেষে বৌটার কথায় আস্বস্ত হলাম । ছেলে নাকি বেলা করে ঘুমোচ্ছে ! আমারই ভুল। আজ ও আর বেরোবে না ।
ও নাকি কাল থেকে ভ্যানে করে তরকারী ফেরি করবে ! তা মধ্যবৃত্ত ঘরের ছেলে খোলস পাল্টে গরিব সাজবে ! সময় তাতে লাগবেই ! তবে আজকের মত ঘুমিয়েই নিক ।
বাজারে ঢুকতে রাস্তার পাশে যে হাই ড্রেনটা আছে,সেখানে একটা পাঁচ ফুট বাই আট ফুট জায়গার জন্য ধরা করা চলছে । ব্যবস্থা হলে না হয় দুই কামড়ার অসমাপ্ত বাড়িটা বেচে বস্তিতে ঘর ভাড়া নেব । ওই টাকায় একটা কাঁচা দোকান ঘর হয়ে যাবে ।
আমিও আজকে ভালো করে চান করবো । সব ধুয়ে মুছে সস্তার সেটিমেন্ট ঝেড়ে নাবাবো ।
এত লড়াই আর ভালো লাগে না । আমি নিম্ন মধ্যবৃত্ত,সারাজীবন সংগ্রাম করে আজ শ্রান্ত । এখন থেকে না হয় গরিব হয়ে শুধু পেটের লড়াইটাই চালাব!
----------