Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প || জীবনের হিসেব নিকেস || চন্দন চক্রবর্তী

 

 জীবনের হিসেব নিকেস


 চন্দন চক্রবর্তী 
 

দ্বিজেনবাবু রিটায়ার্ড । সারা জীবন সময়ের অধীন ছিলেন । এখন সময়কে তার অধীন বানাতে মনস্ত করেছেন । 
 
প্রথম প্রথম সকাল বিকেল দুবেলা হাঁটছিলেন । কিন্তু কিছুদিন যেতেই মনে হল যেন জোর করে তেঁতো গিলছেন । 

এইতো দিনদুয়েক আগে বাচ্চাদের বলটা পড়ল তার পায়ের কাছে । বেশ আনন্দই বলটাকে শট করে মাঠে পাঠালেন ঠিকই  কিন্তু পাটাও চিন চিন করে উঠল !  

ছোটবেলা সকাল বিকেল ছোটাছুটি করেছেন,ফুটবল খেলেছেন । কখনো গাদি,হাডুডু খেলেছেন । আর আজ !

আজকাল দ্বিজেনবাবু বাইরে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। লাইব্রেরি থেকে বই এনে পড়ছিলেন।  চোখে অসুবিধা শুরু হওয়ায় সেটাও কমিয়ে দিলেন। 

দ্বিজেনবাবুর ঘরে শুয়েই বেশির ভাগ কাটে। ছাদের দিকে তাকিয়ে ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে ভাবেন।

আজকাল রাতের স্বপ্নে ছোটবেলার  দিনগুলো ফিরে আসছে । স্বপ্নেই কোনদিন হাডুড খেলছেন,কোনদিন ফুটবল ।  শৈশবের মাঠের সব চেনা মুখ ফিরে ফিরে আসছে ।  নামগুলো মনে আসছে ।

দ্বিজেনবাবুর আজ শরীরটা ভালো নেই। শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছে । সকাল সকাল শুয়ে পড়লেন । 

শুয়ে পড়েও দুচোখের পাতা এক করতে পারছেন না । মাথার মধ্যে আবল তাবল ছবি ভাসছে ।  তিনি এখন একটা টিভি স্ক্রিন দেখতে পাচ্ছেন । স্ক্রিনে ভেসে উঠলো পর পর কয়েকজন । ঐতো সুনীল ! গেল বছর মারা গেছে । আরে ঐতো নির্মল ! মাস দুয়েক আগে মারা গেল । গলটা শুকিয়ে গেল । উঠে বসলেন । টেবিলে রাখা জলটায় চুমুক দিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন । না কিছুতেই ঘুম আসছে না । কি যে ছাই পাশ ফিরে ফিরে আসছে !

অনেক রাত পর্যন্ত এপাশ ওপাশ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । ভোরের দিকে আবার ঘুমটা ভেঙে গেল । এবার টিভিতে তিনি একটা চেনা নদীর পার দেখতে পেলেন ।  দ্বিজেনবাবু ঘামতে লাগলেন । 

ঐতো  পাপিয়াকে দেখছেন । তিনি ভয়ে চোখ ঢাকলেন । 

গলায় কে যেন এসে চেপে ধরল। একি পাপিয়া ! পাপিয়ার চোখের নিচে কালি । জিভটা বেরিয়ে এসেছে । শাড়ির আঁচলটা মাটিতে লুটাচ্ছে । অনেক রোগা হয়ে গেছে ! 

কিন্তু হাত দুটো যেন গলায় সারাশীর মত চেপে ধরেছে । তার দম বন্ধ হয়ে আসছে ! পাপিয়ার এখনকার মুখটা কি ভয়ঙ্কর ! 

পাপিয়ার সাথে তার ঘনিষ্ঠতা তার প্রথম কর্মস্থলে । নিতান্ত গরিব বিধবা মায়ের একমাত্র মেয়ে পাপিয়াকে তিনি পড়াতেন । পড়াতে পড়াতে হল প্রেম । শেষে দেহের সম্পর্ক  । 

একদিন সন্ধ্যায় পাপিয়া জানালো ও মা হতে চলেছে । দ্বিজেনবাবু এ্যাবর্সান করতে জোর দিয়েছিলেন ।  অবুঝ মেয়েটা খুব ঠান্ডা,অভিমানী । একদিনের জন্য তাকে জ্বালায় নি । সুইসাইড করেছিল । সে যাত্রা কি ভাগ্গিস ! কপালের জোরে রক্ষা পেয়েছিলেন !

পরের দিন সকালে দ্বিজেনবাবুর বাড়ির সামনে একটা জটলা । এইমাত্র স্বর্গরথ এসে থামল ।
 
------------------- 
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.