কাটা বটতলা // অনিন্দ্য পাল
************
একটা হঠাৎ ঝাঁকুনিতে ঘুমটা চটকে গেল আমলার।
ট্রেনটা ভয়ানক ক্যাঁচকোচ আওয়াজ করতে করতে কোনো মতে ফুট পঞ্চাশেক গড়িয়ে এসে থেমে গেল।
হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো, রাত এগারোটা চল্লিশ। ট্রেনটা প্রায় কালিকাপুর স্টেশনের কাছে আসার কথা। কিন্তু হলো টা কী? এরকম দাঁড়িয়ে গেল কেন? প্রথম দিনই এই বিপত্তি! কী করে এক বছর কাটাবে কে জানে। এই ডিউটিটাতে জয়েন করলো সবে আজ। এখানে মাইনেটা একটু বেশী বলে ২টো ১০টার ডিউটিটাতে না করে নি আমলা। রাতুলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ,এত রাতে ফেরার অনেক অসুবিধা আছে জেনেও রাজি হয়ে গেল। কিন্তু ট্রেনটা এমন ভাবে থেমে গেল কেন? আশ পাশে তাকিয়ে দেখলো কামরায় সে ছাড়া আর মাত্র একজন বসে আছে। তাও অনেকটা দূরে। জেগে আছে না ঘুমিয়ে আছে বোঝা যাচ্ছে না। ইতস্ততঃ করতে করতে উঠেই পড়লো। নাহ্। কী ব্যাপার দেখা যাক। দরজায় ঝুঁকে এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলনা। আবার সিটে এসে বসবে না ওই লোকটার কাছে গিয়ে কিছু জানতে চাইবে ভাবছে, এমন সময় লোকটা যেন তার মনের কথা জানতে পেরে গেল। " এই ট্রেন আজ রাতে আর ছাড়বে না, সামনে লাইন বসে গেছে। এক হাত গর্ত। "
বেশ ধারালো কিন্তু শান্ত গলার স্বরে বললো লোকটা। যেন আমলার প্রশ্নের জবাবে বললো কথাগুলো। আমলা বেশ অবাক হয়ে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় বাইরে একটা কথাবার্তার শব্দ শুনে ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে দেখলো, জনা কয়েক লোক কি সব বলতে বলতে আসছে। " ও দাদা, ট্রেনের কী খবর? যাবে না নাকি? " বেশ চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল আমলা। উত্তরে ওদের মধ্যে কেউ একজন বললো, "না ,ট্রেনের লাইন বসে গেছে। সারতে কাল বেলা দুপুর গইড়ে যাবে। চল, সক্কলে মিলে হেঁটে হেঁটে চোল যাই। যাবে তো লেবে পড় খরখর। " লোকটাও তো তাই বলেছিল। আবার অবাক হয়ে গেল আমলা। জানলো কি করে ? যতদূর মনে পড়ে, ঘুমের চটকা ভাঙার পর লোকটাকে এই কামরার ওই খানেই বসে থাকতে দেখেছিল। এত তাড়াতাড়ি নেমে দেখে এসে আবার বসে ঝিমানো কি সম্ভব? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে নামার কথাই ভুলে গেছে। ততক্ষণে লোকগুলো হাঁটতে হাঁটতে অনেকটাই দূরে। যাই হোক, লাফিয়ে নামলো কোন মতে।"উঃ মাগো " - বড় একটা খোয়ার উপর বুটটা পিছলে গিয়ে বাঁ পাটা মচকে গেল। কোনমতে উঠতে যাবে, ঠিক তখন দেখলো একটা হাত তার দিকে এগিয়ে আসছে। " উঠে আসুন -- ওভাবে কেউ লাফ দেয়! " সেই ধারালো গলার স্বর। আমলা তাকিয়ে দেখলো সেই লোকটা। কালচে হলুদ চাদর মুড়ে এতক্ষণ বসে ছিল। কখন নেমে দাঁড়িয়েছে কে জানে! হাতটা ধরে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারলো, পায়ের গোড়ালিতে বেশ ভালোই চোট হয়েছে। ব্যথায় টনটন করে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে খেয়াল হলো, লোকটার হাতটা কি ভীষণ ঠান্ডা। এত ঠান্ডা কি পড়েছে এখনও? এত অন্ধকার যে লোকটার মুখটাও দেখতে পায়নি এখনও। "তা যাবেন কোথায়? বেনিয়াবহু নাকি? " আবার অবাক হবার পালা আমলার। লোকটা কি অন্তর্যামী? জানছে কি করে সব কিছু? চেনা কেউ তো মনে হচ্ছে না। আর এই অঞ্চলের লোকজন তো বেনেবউ বলে, ওরকম শুদ্ধ ভাষায় বেনিয়াবহু কাউকে বলতে শুনেছে, তেমনটা তার মনে পড়লো না। একটু ইতস্ততঃ করে বললো " হ্যাঁ, তাইতো যাবো, কিন্তু আপনি কেমন করে এসব জানলেন? আমাকে কি চেনেন আপনি? আর..." তাকে থামিয়ে দিয়ে ধারালো গলার লোকটা বলল " আমিও ওদিকেই যাবো কিনা। তা হলে চলুন, হাঁটা শুরু করা যাক। বেশী দেরী করলে আবার পৌঁছতে সাড়ে বারোটা বেজে যাবে। আর একবার সাড়ে বারোটা বেজে গেলে ..." লোকটা যেন একটু উৎকন্ঠিত হয়ে উঠলো। কি হবে সাড়ে বারোটা বেজে গেলে? প্রশ্নটা যেন নিজেকেই করে বসলো আমলা। লোকটা ততক্ষণে একটু এগিয়ে গেছে। কিন্তু ওই দিক দিয়ে যাচ্ছে কেন? মাঠ ভেঙে যাওয়ার প্ল্যান আছে নাকি? এই ঘুরঘুট্টি অন্ধকার রাতে ওই জমির আলপথ দিয়ে যাবার কথা ভেবেই কেমন একটা শিরশিরানি খেলে গেল শরীরে। এই পশ্চিমবাদায় এককালে কত যে খুন করে ফেলে রেখে গেছে ডাকাতরা। বেশ ভয় করছে আমলার। লোকটা ডাকাত নাকি? একটু চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল "আরে ওদিকে কেন যাচ্ছেন?রাস্তা তো এই দিক দিয়ে। না হলে লাইন ধরেই তো যাওয়া যায়। " লোকটা না থেমেই বলল " আরে আপনি জানেন না, এদিকটা দিয়ে একটা শর্টকাট আছে। আমি যখন যাই এই পথেই যাই। চলে আসুন। আমি ডাকাত টাকাত নই ,রীতি মত ভদ্র লোক। ডাকাত কি কখনো একা থাকে! " সেই ক্ষীণ কিন্তু ধারালো স্বর। আবার সেই একই ঘটনা। লোকটা প্রতিবার তার মনের কথা বুঝে ফেলছে কিভাবে? এও কি সম্ভব!
এত জোরে হাঁটছে কেন লোকটা? মচকানো বাঁ পাটা টেনে হাঁটতে একেই কষ্ট হচ্ছে, তার উপর ওরকম জোরে হাঁটতে গিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছিলো আমলার। ঠিক যেন রণপা পরে হাঁটছে। এবড়ো খেবড়ো ধানজমি পেরিয়ে, কখনো নরম কাদামাটি মাড়িয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটছিল। একবার তো কিছুতে, সম্ভবতঃ কুলকাঁটায় প্যান্ট এর ফোল্ট আটকে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল, আবার সেই লোকটা তখন সামনে। আমলাকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আবার সেই হাওয়ার গতিতে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেল। ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে আমলা তখন নিজের হাত পা ও দেখতে পাচ্ছে না কিন্তু তেনার যেন কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। চলেছেন তো চলেছেন। আর এই শর্টকাট রাস্তাটা আমলার একেবারেই জানা নেই, ফলে লোকটাকে অনুসরণ করা ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই তার। কিন্তু লোকটার পিছন পিছন এলোই বা কেন? দিব্যি লাইন বরাবর হেঁটে যেতে পারত। গেলনা কেন? একথা ভাবার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ ধক করে উঠলো বুকটা । কেমন একটা গা ছমছমে অনুভূতি চেপে ধরলো আমলাকে । চারদিকে গাঢ় অন্ধকার, আকাশে একটা তারা পর্যন্ত নেই। এ কার সঙ্গে কোথায় চলেছে? ঘামতে শুরু করেছে আমলা। মনের মধ্যে একটা অশুভ ইঙ্গিত উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে কি করেনি-- হঠাৎ করে মনে হল ঠিক তার পাশাপাশি কেউ একটা হাঁটছে। একবার ডানপাশে তো পরক্ষণেই বামপাশে। অথচ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না কাউকেই। সামনের দিকে তাকিয়ে সেই লোকটাকেও আর দেখতে পেলনা। হঠাৎ একটা খসখস শব্দ ডান কান থেকে শুরু করে বাম কানের দিকে যেতেই সারা শরীরে যেন হিম শীতল স্রোত বয়ে গেল আমলার । ভালো করে ঠাহর করার জন্য একটু দাঁড়াতে যাবে ঠিক তখনই তার হাতটা কেউ চেপে ধরলো। কিছুই দেখা যাচ্ছে না ঠিক করে, একটা জমাট অন্ধকার যেন কখনো ডান দিকে কখনও বামদিকে সরে সরে যাচ্ছে। তখনি কেমন একটা অদ্ভুত গন্ধ নাকে এল আমলার। অনেক পুরোনো একটা বিদেশী পারফিউমের মত গন্ধ।"চলুন, একটু পা চালিয়ে" আবার সেই ধারালো গলার স্বর, এবার যেন একটু বেশী কঠিন শোনালো। এবার দেখা গেল একটু খানির জন্য, চাদরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো সেই শরীরটা । লোকটা ততক্ষণে তার হাতটা চেপে ধরে এক অসম্ভব গতিতে ছুটে চলেছে। ঘসটাতে ঘসটাতে যাচ্ছিল, সম্বিৎ ফিরলে দেখলো একটা বিরাট গাছের তলায় এসে পৌঁছেছে । ভাল করে ঠাহর করার চেষ্টা করে মনে হল বট গাছ।কয়েকটা ঝুরি হাতেও লাগলো। তখনো সেই লোকটা তার হাতটা চেপে ধরে আছে। লোকটার হাতটা যেন বড্ড শক্ত। যেন হাড় ছাড়া অন্য কিছু নেই হাতে। আমলার হাতটা ততক্ষণে যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে । ভয়ে ককিয়ে উঠল " উঃ মাগো" ।শিরদাঁড়ার মধ্যে দিয়ে হিম শীতল স্রোতটা এবার কুল কুল করে বয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনি সেই অন্ধকারের ভিতর থেকে লোকটা আবার ঠিক আমলার পাশে, এবার সেই ধারালো স্বর যেন হেসে উঠলো। খনখনে গলায় বললো, "আরে এটাই তো আমার ঠিকানা, গত সত্তর বছর ধরে আমি তো এখানেই থাকি। ভালো হয়েছে এখনো সাড়ে বারোটা বাজেনি, দুমিনিট বাকি আছে। তোমার সঙ্গে একটু আলাপ আলোচনা করা যাবে। কি বলো অমলেশ? " চমকে উঠে সভয়ে পিছিয়ে এল অমলেশ ওরফে আমলা। একটা ভয়ানক অস্থির কাঁপুনিতে কথাও বলতে পারছিল না সে। ঠিক তখনই চাদরটা একটা দমকা হাওয়ায় উড়ে কোথায় চলে গেল কে জানে। কোথা থেকে অসংখ্য জোনাকি লোকটার সমস্ত শরীর জুড়ে বসে গেল। কিন্তু একি! একি দেখছে আমলা? কোনো মানুষের এমন শরীর হতে পারে? পা থেকে যত উপরের দিকে দেখছিল শুধু যেন হাড় কখানা আটকানো আছে। একি ভয়ানক চেহারা! কিন্তু লোকটার মুখটা দেখতে পাচ্ছে না কেন? হঠাৎ মনে হলো ঘাড়ের উপর থেকে মানুষটার শরীরে আর কিছু নেই। একটাও জোনাকি ঘাড়ের উপরে বসেনি সেই জন্যই। "কৈ আসুন , আমার সাথে, এবার তো দেখতে পাবেন আমার মুখটাকে! ওই সাড়ে বারোটা বাজবে এবার। আবার সেই ঝড়টা আসবে। ওহ আবার সেই যন্ত্রনা। আবার সেই ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা। " লোকটার কঙ্কালসার শরীরের ভিতর থেকে ভয়ানক একটা বিলাপ বেরিয়ে এল! আর ঠিক তখনই ঘটলো সেই ভয়ানক কাণ্ডটা। হঠাৎ করেই যেন ভয়ঙ্কর একটা ঘূর্ণিঝড় উঠলো, তছনছ হয়ে গেল গাছপালা। ভয়ঙ্কর ভাবে দুলতে লাগল বটগাছটা। আমলা কোনোমতে বটের একটা মোটা ঝুরি ধরে দাঁড়তে চেষ্টা করলো। মুহুর্মুহু বজ্রপাতের আলোতে আমলা পরিষ্কার দেখলো লোকটার হাতে কোথাও একফোঁটা মাংস নেই, শুধু হাড় আর হাড়। ভয়ে সমস্ত শরীর অসাড় হয়ে গেল আমলার, চেঁচাতে গেল কিন্তু গলা দিয়ে একফোঁটা শব্দ বার হল না। একটা ভয়ঙ্কর ধারালো হাসিতে ফেটে পড়ে লোকটা আমলাকে টেনে গাছটার দিকে নিয়ে যেতে দু হাত বাড়িয়ে দিল! ঠিক তখনি আমলা দেখলো একটা টিন ভয়ানক জোরে উড়ে ধেয়ে এল। লোকটা হঠাৎ করেই যেন প্রচন্ড ভয় পেয়ে না না করে চেঁচিয়ে উঠে সেই টিনের ধাক্কায় কোথায় উধাও হয়ে গেল। আর টিনটা বটের মাথাটাকে চেঁছে নিয়ে উড়ে গেল অন্য কোথাও। আমলার সমস্ত শরীর অসাড় হয়ে আসছিল।সে শুধু দেখলো একটা ভাঙা ফাটা মুন্ডু তার দিকে তাকিয়ে হাহা করে হাসছে। হঠাৎ করে চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেল আমলার। কোথায় যেন হারিয়ে যেতে লাগলো, তলিয়ে যেতে লাগলো গভীর অন্ধকারে। শুধু কানে বাজতে থাকলো একটা ভয়ঙ্কর ধারালো হাসি "হা হা হা হা হা।"
আমলা চোখ খুলে দেখলো একটা বিছানায় শুয়ে আছে আর কয়েকটা মুখ ঝুঁকে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অচেনা মুখ গুলো খুব উৎকন্ঠিত, তাকে আবার চেপে ধরে শুইয়ে দিল। একজন কম বয়সী ছেলে কে দেখিয়ে একজন বয়স্ক লোক বললো " ও রফিক, ওই তোমারে ভোরিরবেলায় কাটা বট তলার নিচি পড়ে থাকতি দেখে গেরামে খবর করে, নতো ..."একটা ভয়ের ছোঁওয়া যেন সবার মুখ চোখ ছুঁয়ে গেল। ঘর ভর্তি লোক সবাই কেমন চুপচাপ। আমলা কিছু বুঝতে পারল না। হঠাৎ " কাটা বটতলা " কথাটা তার শরীরে একটা হিম শীতল ভয় বইয়ে দিল। "কাটা বটতলার "নাম শোনেনি এমন লোক আশপাশের দশ বারোটা গ্রামে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। কিন্তু সেটা তো অনেক দূরের আধা জঙ্গল একটা জায়গায়। তার বাড়ি থেকে এতদূর যে সে কি ভাবে পৌঁছালো আমলা বুঝতে পারছিল না । কি করে -কি করে? হঠাৎ করে তখনি তার চোখে পড়লো দেওয়ালে টাঙানো ছবিটার দিকে। মনে পড়ে গেল তার গত রাতের কথা। অবিকল সেই রকম কালচে হলুদ চাদরে মোড়া একটা লোকের ছবি। সেই রকমই রোগা লম্বা। হঠাৎ মনে পড়লো, লোকটা যখন দু হাত দিয়ে তাকে চেপে ধরে ছিল এক ঝলকের জন্য বাজের আলোয় একটা লাল পলা বসানো আংটি দেখেছিল ডান হাতের অনামিকাতে । পলার গোল পিঠে ইংরাজি A অক্ষরটা খোদাই করা ছিল। লোক গুলোর হাত ছাড়িয়ে উঠতে গেল ধড়ফড় করে, বুঝতে পারলো, বাম পায়ের গোড়ালিতে অসম্ভব ব্যথা। সমস্ত গায়ে হাতেও ব্যথা। কোনমতে ছবির কাছে গিয়ে দেখলো যা ভেবেছে তাই। ঠিক অবিকল একই আঙটি, একই লাল পলা, সেই A অক্ষর। কাঁপতে কাঁপতে চেঁচিয়ে উঠলো "এই তো, এই লোকটাই তো কালকে রাতে আমাকে এখানে এনেছে "। সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন একটা ভয়ার্ত মুখে ফিস ফিস করতে লাগলো। তারপর কয়েক মুহুর্ত সবাই চুপ। এবার অন্য একজন বেশ সম্ভ্রান্ত বয়স্ক মানুষ বলতে লাগলেন " উনি আমার ঠাকুরদা, অনাদি নস্কর। পেশায় ছিলেন উকিল, খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। আজ থেকে সত্তর বছর আগে এক দিন মধ্য রাতে ভয়ানক এক ঘূর্ণিঝড় উঠেছিল এই অঞ্চলে। সে এক ভীষণ ঝড়। কত মানুষের মাটির ঘর উড়ে গেল, কত মানুষের সুখের সংখ্যার তছনছ হয়ে গেছিল তার হিসেব নেই। আমাদের ও গোয়াল ঘরের চাল উড়ে গেছিল, ওনার প্রিয় চম্পাগাই ভয় পেয়ে ছুটে পালায়। ঠাকুরদাও ছুটলেন চম্পার পিছনে। ছুটতে ছুটতে ওই বট গাছের নিচে যেই পৌঁছলেন, ভয়ানক ঝড়ে উড়ে এল একটা ছাউনির টিন। বাবাও গেছিলেন পিছন পিছন। ঠাকুরদার মাথাটা ধড় থেকে আলাদা করেই ক্ষান্ত হয়নি, সেই উড়ন্ত টিন বট গাছের মাথাটাও কেটে নিয়ে কোথায় উড়ে গেল, আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। খুঁজে পাওয়া যায়নি ঠাকুরদার মাথাটাও। তখন থেকেই ওই গাছের নাম "কাটা বটতলা "গত কালই ছিল সেই 28শে এপ্রিল। ঝড়ের রাত। প্রতি বছর এই রাতে ঠিক সাড়ে বারোটার সময় অনেকেই ওই কাটা বটতলার আশেপাশে ঠাকুরদাকে দেখেছে।ওই ঘটনাটাও ঠিক সাড়ে বারোটাতেই ঘটে ছিল। অনেকে বলে কাটা মুন্ডু টা খুঁজতেই ঠাকুরদা আসেন। "
আর কোন কথা বলতে পারলো না আমলা। কেমন একটা শিরশিরানি খেলে গেল শরীরের মধ্যে, কাঁপতে কাঁপতে ঢলে পড়লো ঘরের মেঝেতে।
-------------------------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট
===============================
#আমার পরিচিতি // অনিন্দ্য পাল
======================
জন্ম ১৯৭৮ সালে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চম্পাহাটি তে। বাবা পরলোকগত বিশ্বনাথ পাল। মাতা অনিতা পাল। শিক্ষা - পদার্থবিদ্যায় সাম্মানিক স্নাতক, বি এড। পেশা - তাড়দহ হাইস্কুলের শিক্ষক। লেখা লেখি শুরু কলেজের দিনগুলোয় যদিও প্রকাশ অনেক পরে। স্থানীয় অনেক লিটল ম্যাগাজিন এ লেখা প্রকাশিত হয়েছে। দেশ, কৃত্তিবাস, প্রসাদ, তথ্যকেন্দ্র, নিউজ বাংলা, উৎসব, অপদার্থের আদ্যক্ষর, শ্রমণ , বার্ণিক, অন্বেষা, অর্বাচীন, মুখ, দেশিক, সূর্যকিরণ, রোদ্দুর, ব-দ্বীপ বার্তা, নবপ্রভাত, হিরণ্যগর্ভ, হৃৎস্পন্দন, লণ্ডন টাইমস, অভিব্যক্তি(নিউ জার্সি) দৈনিক বজ্রকণ্ঠ(ত্রিপুরা)ইবলিশ(বাংলাদেশ),অলীক পাতা, দক্ষিণের জানালা, কল্পবিশ্ব, বহুধা, প্রজনা, কথাকাহিনি, একলব্য, সিন্ধুলিপি, রা, সাহিত্য কালচার, TechTouchটক, নিকোটিন, ত্রিতাপহারিণী, আঁতুড়ঘর, অক্ষর সংলাপ, আখরকথা, কেয়াপাতা, কৃষ্ণকলি, নীলাঞ্জনা, আবাহনী, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, বিজ্ঞানভাষ, প্রভৃতি অনেক পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
"সুখবর" পত্রিকায় প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। "তোর মত হলে অন্ধকারকেও ভালোবাসি", "জলরঙের ওড়না " ও "সমুদ্রে রেখেছি সময়" ও " আমি এসেছিলাম " নামে চারটি কাব্যগ্রন্থ আছে।
সাপলুডো নামে একটা পত্রিকার সম্পাদনা করেন।
ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল
গ্রাম -- জাফরপুর
পোঃ-- চম্পাহাটিি
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
Mob: 9163812351
ধন্যবাদ।