Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প।। মুখোশ।। অঞ্জনা দেব রায়




মুখোশ

 অঞ্জনা দেব রায়


গুনগুনকে কে যেন পেছন থেকে ডাকল । গুনগুনের সাথে ওর বন্ধু অভিনন্দন  ছিল । ওরা মাস্টারমশাই অমরপালের কাছ থেকে গান  শিখে টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনে টিকিট কেটে ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে  ঢুকছিল। অভিনন্দন গুনগুনকে বলল মনে হয় তোর নাম ধরে কেউ ডাকছে । গুনগুন পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল রজত । রজতকে দেখে গুনগুন একটু অবাক হল । রজত হচ্ছে কবি, গল্পকার, তবে ওর লেখা দুটো উপন্যাস খুব জনপ্রিয় হয়েছিল । রজতকে দেখে গুনগুন দাঁড়িয়ে পড়ল। আসলে রজত ও গুনগুন কলেজে একসাথে পড়ত ।  প্রায় দশবছর বাদে দেখা হল ।  রজত গুনগুনের থেকে দুবছরের বড় । একসময় দুজনের মধ্যে খুব বন্ধুত্ব ছিল । গুনগুনের গান   শুনতে  রজত খুব ভালভাসত আর রজতের লেখা কবিতার থেকেও গল্প পড়তে গুনগুন বেশি ভালবাসত ।  গুনগুন তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখল, যে রজত কেমন আছিস বলে,  মুচকি হেসে দ্রুত পায়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে । অভিনন্দন  গুনগুনকে বলল তোর সাথে হয়ত কথা ছিল আমাকে দেখে দাঁড়াল না । গুনগুন বলল হয়তো কিছু বলবে ভেবেই ডেকেছিল কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদলায় । 
অভিনন্দন বলল তুই তো বললি উনি লেখালেখি করেন , আসলে যারা লেখক জানিসতো ওরা কখন যে কী ভাবে ,কী করে তার ঠিক নেই । তবে যাই বলিস না কেন , ছেলেটা একটু অস্বাভাবিক ও খামখেয়ালী মনে হয় । এসব বন্ধুদের সাথে চলা খুব মুশকিল । যাই হোক, আসছি বলে অভিনন্দন ওর বাড়িতে যাওয়ার জন্য ট্রেনে উঠে পড়ল । কিন্তু গুনগুন যাবে উল্টোদিকে  ফলে ও যে ট্রেনে উঠবে সেই ট্রেনটা আসতে দেরী করছিল । গুনগুন তাই মেট্রো স্টেশনের চেয়ারে বসে ভাবতে লাগল রজত এরকম ব্যবহার করল কেন  । 
কলেজে পড়ার সময় গুনগুনদের বাড়িতে রজত খুব আসত । আবার রজতদের বাড়িতে গুনগুনও যেত। গুনগুন ছিল সহজ সরল । কিন্তু রজত খুব চালাক আর নিজের প্রয়োজনে যে কোন কারোর  সাথে বন্ধু করে নিত আবার প্রয়োজন মিটে গেলে অনেক সময় তাকে চিনত না । গুনগুনের মা বাবা রজতকে ছেলের মত ভালবাসত ।                                                                                                                       গ্রামের বাড়িতে যখন গুনগুনরা যেত রজত তখন ওদের সাথে যেত । রজতের গ্রামে যেতে খুব ভাল লাগত কারণ গ্রামের  পরিবেশ ও গ্রামের মানুষদের  জীবনধারা নিয়ে গল্প লেখার খুব ইচ্ছে ছিল মনে   মনে ।  এছাড়া রজত একসময় গুনগুনকে বলেছিল যে ওদের গ্রামের বাড়ি এবং ওদের বাড়ির সবাইকে নিয়ে একটা গল্প লিখবে । কিন্তু রজত সেই গ্রামের গল্প লিখে উঠতে পারে নি । তবে রজতের লেখা গল্প , উপন্যাস, কবিতা মাঝে মধ্যেই দেশ পত্রিকা ও খবরের কাগজে ছাপা হয় । সাহিত্য জগতে রজতের বেশ নামডাক হয়েছিল । 
হঠাৎ করে রজত গুনগুনদের বাড়ি আসা বন্ধ করে দিল । বেশ কিছুদিন পরে একদিন গুনগুনের সাথে  রাস্তায় দেখা হলে রজতকে ডাকলে  কথা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল  । গুনগুনের খুব খারাপ লাগল । এরপর একমাস বাদে গুনগুন মা বাবার সাথে  কলেজস্ট্রিটে  কিছু দরকারি বই কিনতে গিয়ে  রজতের সাথে দেখা হয়ে গেল ।  রজত পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার  চেষ্টা করছিল কিন্তু গুনগুনের বাবা রজতের সামনে  গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল আমাদের গ্রামের বাড়ি নিয়ে কি গল্প লিখেছ ? রজত মাথাটা নিচু করে  লিখব বলে চলে গেল।  গুনগুন যেই দোকান থেকে বই কিনছিল সেই দোকানদার  বলল  ও তো রজত দাস  । ওর কয়েকটা গল্প  ও  দুটো উপন্যাসের বই আমার দোকানে আছে । কিছুদিন আগে পর্যন্ত  নামডাক ছিল ছেলেটির  ভালোই । প্রকাশকদের  কাছে ও বেশ কদর ছিল। কিন্তু  শোনা যায় আজকাল লেখালেখির বদলে কফিহাউসে মেয়েদের সাথে আড্ডা দেয় বেশী । কোন পত্রিকার  অনুষ্ঠানে গিয়ে একটা কবিতা বলেই  মেয়েদের সাথে আড্ডা দিতে  চলে যায়  ।  আগে ওর  লেখার মান ছিল খুব উন্নত । এখন সেরকম ভাল লিখতে পারে না । খুব অহংকারী ও স্বার্থপর ছেলে । 
গুনগুন  হাসল আর বাবাকে বলল  শুনেছ রজত এখন আগের মত আর ভাল ছেলে নেই । দেখনা কেমন পালিয়ে বেরাচ্ছে । কিন্তু যতই আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাক রজত নিজেই জানে সবাই ওর মুখোশে ঢাকা মুখটাকে চিনতে পেরে গেছে ।   
 ----------------------- 
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট 

লেখিকা – অঞ্জনা দেব রায় 
ঠিকানা – ৫৫৩ পি মজুমদার রোড 
কলকাতা – ৭৮
                                                                                                                                                                                                                                                                                             

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.