টগরি দেবীর মৃত্যু রহস্য
অঙ্কিতা পাল
গতকাল রাতে টগরি দেবী খুন হন। তার এই আকস্মিক খুনের কারন নিয়ে তার আত্মীয়- স্বজন তো বটেই, এমন কি প্রতিবেশি দের মনেও একটা খটকা আছে। যতদূর শোনা যায় তিনি অজাত শত্রূ ছিলেন। তবু কেন যে এই বয়সে এসে এভাবে তাকে চলে যেতে হল, সেটাই বড় আশ্চর্যের ............
শ্যামবাজারের সেই পুরনো লাল রঙের বাড়িটা। বাড়িটার কিছু কিছু অংশ খসে পড়েছে, আর কিছু অংশে জংলা গাছ গাছালিও আছে। এটি কিছুটা পোড়োবাড়ির মতো দেখতে। সেই বাড়িতে থাকতেন আশি বছরের বৃদ্ধা টগরি দেবী, তাঁর বড়ো ভাই নগেন চৌধুরী, ভাইয়ের স্ত্রী ভারতি, দেবী দুই ভাইপো অরুন অরুন, ও তাদের স্ত্রী সবিতা ও কাজল।
শোনা যায় টগরি দেবীর খুব কম বয়সে বিয়ে হয় এবং স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি শ্যামবাজারের বাড়িতে চলে আসেন। শশুর বাড়ির সাথে তার আর কোন যোগাযোগ ছিল না বলেই অনুমান, তিনি শ্বশুরবাড়ি ত্যাগ করার পর চিলেকোঠার ছোট ঘরেতেই থাকতেন।
গতকাল রাতে টগরি দেবী খুন হন, পুলিশ আসে একের পর এক তদন্ত শুরু হয়, তদন্তে উঠে আসে এক রহস্য - এই শ্যামবাজারের বাড়িটার বর্তমান মালিক টগরি দেবী। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় টি হলো সেই বাড়ির দলিল পাওয়া যায় ছোট বৌ কাজলের থেকে, কাজল পেশায় উকিল।সেই জন্য পুলিশের অনুমানের ভিত্তিতে কাজলকে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন পুলিশের বড় কর্তা মিষ্টার সুনীল শর্মা। মিস্টার শর্মা প্রথমে তাকে জিজ্ঞাসা করেন- আপনি কি করেন কাজল দেবী?
কাজল দেবী উত্তর করে- স্যার আমি পেশায় ল ইয়ার।
মিস্টার শর্মা তাকে আবার জিজ্ঞাসা করে- টগরি দেবীর দলিলটা আপনার কাছে কেন? কাজলের চোখে জল টলমল করে তবুও উত্তর এসে বলে _ পিসিমা আমাকে বাড়ির নতুন দলিল তৈরি করতে বলেছিলেন। মিস্টার শর্মা কাজলের উদ্দেশ্যে প্রশ্নের বান ছুড়ে দেন _ কেন? টগরি দেবীর নতুন উইল তৈরি করার কারণ জানতে পারি? কাজল এই প্রশ্নের উত্তর সফলভাবে দিয়ে বললো_ আগেকার দলিলের মালিকানা ছিল বাবার নামে। কিন্তু পিসিমার সিদ্ধান্ত বদল এর কারণ আমি জানি না। নগেন বাবু হঠাৎ রেগে গিয়ে হেঁকে বললেন _ খুনি তুই দিদিকে খুন করে এখন গলাবাজি করছিস। পুলিশ নগেন বাবুকে থামিয়ে কাজল দেবীকে আবার নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন নানান রকম কথোপকথনের পর পুলিশ জানতে পারেন টগরি দেবীর সঙ্গে তার ভাই নগেন বাবু সম্পর্ক ভালো ছিল না। পুলিশ অধিকর্তা মিস্টার শর্মা বাড়ির কর্তা নগেন চৌধুরীকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে, তিনি প্রশ্ন করেন নগেন চৌধুরীকে _ আচ্ছা বলুনতো নগেন বাবু আপনার দিদির মৃত্যু রহস্য টা? ওমনি নগেন চৌধুরী রেখে চোখ লাল করে বলেন _ ওই যে শয়তানি কাজল আমার দিদি কে খুন করেছে, ওর ভারী লোভ ও সম্পত্তির জন্য দিদিকে বিষ খাইয়ে দিয়েছে।পুলিশ সেদিনের মতো চৌধুরী বাড়ির তদন্ত শেষ করে চলে যায়।
পরদিন ঠিক দুপুর বেলা সবাই খাওয়া-দাওয়া করছিল এমন সময় চৌধুরী বাড়িতে পুলিশ কর্তা সুনিল শর্মা ও আরো কয়েকজন পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। পুলিশকে দেখে নগেন চৌধুরী শটাং চেয়ার থেকে উঠে খিটমিট করে বললেন_ আবার কি চাই? পুলিশ কর্তা মিস্টার শর্মা কিঞ্চিৎ হাসলেন, তিনি এও লক্ষ্য করলেন যে; নগেন চৌধুরী উত্তেজনার বশে বলে বললেন _বুড়িটা মরেও শান্তি দিলো না। তারএই কথাটিকে গুরুত্ব দিয়ে মিস্টার শর্মা নগেন বাবুর উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন _ আচ্ছা বলুন তো মিস্টার চৌধুরী আপনার থেকে টগর দেবী ঠিক কত বছরের বড়ো? নগেন বাবু ক্ষেপে গিয়ে বললেন _ আচ্ছা মশাই কি ঠিক চাইছেন বলুনতো? ওই দিন থেকে চার হবে। মিস্টার শর্মা হেসে বললেন _ ও উনি তাহলে বুড়ি আর আপনি কি যুবক? হাহাহা। মিস্টার শর্মা বললেন যাই হোক_ টগরি দেবীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জানা গেছে, ওনাকে কেউ শ্বাসরোধ করে খুন করেছে বিষ দিয়ে নয়। অতএব কাজল দেবী নির্দোষ প্রমাণিত। তাহলে এটি কি আপনার কাজ মিস্টার চৌধুরী? _এই প্রশ্নটিই করলেন মিস্টার শর্মা। সেই সময় তাঁর স্ত্রী ভারতি দেবী পাশেই ছিলেন উনি দরদর করে ঘামতে লাগলেন, তারপর দুজন দুজনের দিকে একটু তাকালেন।
মিস্টার শর্মা সবকিছু প্রত্যক্ষ করে বললেন _ কি হলো মিস্টার চৌধুরী? আপনি কি কোন বিষয়ে চিন্তিত? নগেন চৌধুরী শান্তভাবে বলল_ না, আমি ঠিক আছি।
এমন সময় বাঁচাও বাঁচাও বলতে বলতে ছুটে এলো এক এলোথেলো মহিলা, সে হাঁফাতে হাঁফাতে বলতে লাগলো _ বাবু আমি নির্দোষ। মিস্টার শর্মা নগেন চৌধুরী দিকে তাকিয়ে বললেন _ উনি কে মিস্টার চৌধুরী? লগইন বাবু উত্তর দিলেন _ আমার বড়ো বৌমা সবিতা, একটু মাথার দোষ আছে কখন যে কি বল এটা ঠিক ঠিকানা নেই। সবিতা পাগলের মতো বিড়বিড় করে বলতে লাগলো _ আমি পিসিমার দেখাশোনা করতাম, তার খেতে দিতাম, কতই না গল্প করতাম, তারপর কি যেন ঠিক মনে পড়ছে না। সে আবার হাসতে শুরু করে হাহাহাহা করে, সেই নগেন চৌধুরীর দিকে আঙ্গুল তুলে বলে_ ওই যে ওই লোকটাআমার মাথায় রড দিয়ে মারে তারপর সব অন্ধকার। মিস্টার শর্মা সবিতাকে সবিনয় বললেন _ তারপর কি হল সবিতা দেবী আপনার কি কিছু মনে পড়ছে? সবিতা হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল- পিসিমার ঠান্ডা শরীরটা নিচে পড়ে আছে।
সুনিল শর্মা সবরকম তদন্তের পর নগেন চৌধুরী ও তার স্ত্রী ভারতি দেবীকে গ্রেপ্তার করেন।
-------------------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট