অহনার লকডাউন
অষ্টপদ মালিক
বাবা এসে অহনার পড়ার ঘরে ঢুকে দেখে অহনা খেলা করছে। ঘরের গোটা মেঝেতে তার খেলার সামগ্রী। মাটির পুতুল প্লাস্টিকের পুতুল মোমের পুতুল সব ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে । অহনা বাঁ- হাতে একটা মোমের পুতুল ধরে তার কপালে টিপ পরাচ্ছে , পুতুলের জামা কাপড় জুতো টুপি গয়নাগাটি কত কি ঘরের ভিতর আছে। বাবা যে ঘরের ভিতরে ঢুকেছে সে খেয়াল তার নেই। সে একমনে পুতুল পুতুল খেলছে । বাবা মনে মনে একটু খুশি হলো।মনে মনে ভাবল লকডাউনের এই ঘরবন্দি কষ্টকর অবস্থায় অহনা হয়তো খেলায় মেতে অন্তত একটু ভালো আছে । এখন তো কারো ভালো থাকার সময় নয় ! কি মানুষ কি জন্তু জানোয়ার । হঠাৎ অহনার চোখ পড়লো বাবার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে সে পাশ থেকে একটি বালিশ টেনে নিয়ে তাতে উপুড় হয়ে মুখ গুঁজে রইল । বাবা জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছে অহনা মুখ গুঁজে আছো কেন ? বাবার কথা তার কানে গেলেও অনেক অভিমান আর কষ্টের ভারে মুখ তুলতে পারছে না সে। বাবা শান্ত হয়ে মেয়ের হাত দুখানি ধরে তুললো , সে তখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে বাবা বললো , শান্ত হও কি হয়েছে আমায় বলো । অহনা বলল, বাপি আমার জন্য পিংক কালারের পুতুল এনেছো ? আমার জন্য গ্যাস বেলুন এনেছো ? এক প্যাকেট গার্ডার এনেছ আর দুটি লাল বল ? কত ছোট ছোট চাওয়া আর দাবি তার মনে জমে আছে ।
বাবা অহনার মাথায় স্নেহের হাত বোলাতে বোলাতে বলল , আমি তোমাকে কিছু কিনে দেবো বললে ঠিক এনে দিই আমি কি তোমার কথা ফেলতে পারি ! সঙ্গে সঙ্গে অহনা চোখ দুটি বড় বড় করে বাবার দিকে প্রশ্ন করে
তবে আমাকে এনে দাও নি কেন ?
সঙ্গে সঙ্গে বাবা বলল, লকডাউন ।
লকডাউন কথাটি শুনলেই অহনার কষ্ট অনেক গুন বেড়ে যায় । নেই পড়াশোনা নেই খেলাধুলা বার বার সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া সব সময় মাস্ক পরা। কি যন্ত্রণার জীবন ! ঘরে বসে বসে হাতে পায়ে খিল ধরে আসছে !
বাবা মেয়েকে খুশি করার জন্য বলল, তোমাকে আর কোন চিন্তা করতে হবে না । লকডাউনের এই কটা দিন কেটে গেলে তোমাকে সব কিছু এনে দেবো । বাবার কথা শুনে অহনার চোখে-মুখে খুশি খুশি ভাব দেখা গেল । বাবা বলল এই কটা দিন আমরা মজার মজার জিনিস তৈরি করব ।
কি জিনিস বাবা, অহনা বলল? সঙ্গে সঙ্গে বাবা বলল, ওই যে তোমার পাশের রঙিন কাগজ গুলো দাও আর আঠার শিশি । আজ আমরা কাগজ কেটে নানা রকম ফুল বানাবো । তুমি যদি চাও কাগজের নৌকা, মাছ, পুতুল আরো কত কি । অহনা বলে উঠলো, কি মজা কি মজা !
বিনম্র শ্রদ্ধা সহ
অষ্টপদ মালিক
পাঁচারুল, হাওড়া-৭১১২২৫