জম্বুগড় মুখোশ
বদরুদ্দোজা শেখু
হারুর বাবা ভূষণ আর তার স্ত্রী চন্দনা খুব সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। ওরা বাড়ি বাড়ি দিন মজুরী করে। হারু তাদের একমাত্র সন্তান। তার দাদু আদর ক'রে নাম দিয়েছিল হারাধন । সে এখন হারু হয়েছে।
প্রাইমারী পর্যন্ত স্কুলে গেছিল। তারপর আর ভালো লাগেনি। গাঁয়ের যেসব বখাটে ছেলেরা ঘুরে বেড়ায় , মাচায় ব'সে গুলতানি করে , বাপমা-র রোজগারে খায় আর আলস্যে বিড়ি ফুঁকে' ধোঁয়া ওড়ায় যেন তার কোনো চিন্তা-চৈতন্য নাই, খেয়েদেয়ে বুলি ঝেড়ে জীবনটাকে ধোঁয়া ক'রে উড়িয়ে দিবে ,সে সেখানে নাম লেখালো। তারপর সে একটা কালীসাধনার আখড়ায় ভিড়ে গেল।
সবরকম পূজার সময় ওরা সক্রিয় হ'য়ে উঠে। চাঁদা তোলা থেকে শুরু। বিশেষ ক'রে কালীপূজার সময়। বাড়ি বাড়ি তো আছেই,
রাস্তার লোকজনের থেকেও চাঁদা আদায় করে। ওরা নিজেদের একটা কালীসাধনার আখড়া বানিয়ে ফেললো। ভৈরব নদীর পাশের জঙ্গলে। নাম দিলো জম্ভুগড় ।
হারুকে আর গাঁয়ের মাচায় দেখা যায় না।
সে এখন বিভিন্ন খেলনার ফেরিওয়ালা আর জম্ভুগড়ের সদস্য। সে সব দিন বাড়ি ফিরে না । কিন্তু শুধু তো খেলনা ফেরি ক'রে দিন চলে না।তাই তারা অন্য পথ ধরলো। প্রথম প্রথম জঙ্গলের পাশ দিয়ে যে রাস্তা গেছে সেখানে সন্ধ্যা রাতে ছিনতাই শুরু করলো।হাত পাকালো। সেই রোজগারে সবার পোষাচ্ছে না, বড়ো কিছু করা দরকার যাতে থোক মালকড়ি হাতে আসে।এখন তারা দূরের গ্রামে ডাকাতি করতে যায়।জম্ভুগড়ের আখড়ায় সাধনা করে, গাঁজা খায় , গায়ে মুখে রঙ কালি ভূষো মাখে, মাথায় লাল ফেট্টি আর হাতে থাকে ধাঁ-চকচকে রাম-দা ছুরি ভোজালি লাঠিসোঁটা ।আর জম্ভুগড়মার্কা কিম্ভুতকিমাকার ডাকাতির মুখোশ। দেখেই মানুষে ভিরমি খাবে। ডাকাতির সময় ওরা এসব হাতিয়ার ব্যবহার করে।দিনের বেলায় ওরা সবাই ফেরিওয়ালা , সবাই চর, ডাকাতির রাতে সবাই ডাকাত।ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে ডাকাতির গয়নাগাঁটি সোনাদানাও পাচার করে।
প্রথম প্রথম লোকে বলতো, চুরি ছিনতাই খুব বেড়ে গেছে। তারপর শোনা যেতে লাগলো ভয়ঙ্কর সব ডাকাতির ঘটনা। ওরা মাঝরাতে আচমকা ধনী বাড়িতে হানা দিয়ে মেরেধ'রে রাম-দা ভোজালি দেখিয়ে তাদের হাত পা মুখ চোখ বেঁধেছেঁদে তাদের টাকাপয়সা গয়নাগাঁটি লুঠ ক'রে বোমা মারতে মারতে চ'লে আসে। সাহস ক'রে কেউ বাধা দিতে পারে না। তারপর আখড়ায় কয়েকদিন হাওয়া হ'য়ে থাকে।
হারুর চালচলনে ক্রমশঃ পরিবর্তন দেখা দিল। পূজোর সময় বাবা-মার জন্য কতো কী আনলো। এতো টাকা কোথায় পাচ্ছিস? ---ওর বাবা-মা শুধালে বললো, কেন , এইসব খেলনাপাতি ফেরী ক'রে । বেশ চাহিদা আছে। বাপ মা সরল মানুষ, বিশ্বাস করলো।
কিন্তু কিছুদিন থেকে গাঁয়ে একটা রটনা উঠলো, হারু একটা ডাকাত হয়েছে।জম্ভুগড় কালীর আখড়ায় অন্যগ্রামের কতকগুলো যুবকের সাথে ওর দহরম-মহরম।আশেপাশে যে সব ভয়ঙ্কর ডাকাতি হচ্ছে তা ওদেরই কাণ্ড। ওর মা বাবা বিশ্বাস করে না। তবে মুখ ফুটে হারুকে শুধাতেও সাহস হয়না। যখন বাড়ি আসে সবসময় চোখগুলো কেমন ঘোর হ'য়ে থাকে। তারা ভাবে সত্যিই কি সে ডাকাত হয়েছে?
একদিন হঠাৎ হারু বিয়ে ক'রে বউ আনলো। সবাই বললো ওটা ডাকাতের মেয়ে। ওই বিয়ে নিয়ে জম্বুগড় আখড়ায় চরম বিবাদ বাধলো। হারু বড়ো ডাকাতের জামাই। পাত্তা দ্যায় না। একদিন বিকেলে হারু আর ওর বউ গেলো কালীর আখড়ায় মানত দিতে। পরদিন দেখা গেল, ভূষণের বাড়ির দরজায় হারুর সারা গায়ে কোপানো রক্তাক্ত লাশ প'ড়ে আছে, মুখে জম্ভুগড় মুখোশ বাঁধা, ভয়ঙ্কর মুখ-ব্যাদান ক'রে আছে। - - - সেদিন জম্বুগড় ডাকাত-জোটের রটনা ঘটনা হলো। লোকে বলাবলি করলো, হারুর বউকে ডাকাতরা দখল করেছে। ভূষণ-চন্দনা বোবার মতো চেয়ে রইলো, কোনো কথাই তাদের কানে ঢুকলো না । -----এটা কি তাদেরই নয়নমণি হারাধন !
সবাই বলাবলি করছে,এখন পুলিশ আসবে। পুলিশের কথা শুনে ভূষণ চন্দনা জ্ঞান হারালো। হারুর বউ আর ফিরলো না ।
----------------------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট
লেখকের নাম-- বদরুদ্দোজা শেখু
ঠিকানা-- 18 নিরুপমা দেবী রোড , বাইলেন 12 ,
শহর+পোঃ- বহরমপুর , জেলা--মুর্শিদাবাদ,
PIN -742101
পঃ বঙ্গ , ভারত ।
হো• অ্যাপ নং 9609882748
-------------------